সংকলন
শিয়াদের-সিরাত-চর্চার-ধারা
ঈদসংখ্যা ২০২০ মাহদি হাসান কাসেমি সীরাত

শিয়াদের সিরাত চর্চার ধারা : যে-কারণে সতর্কতা অতীব জরুরি | মাহদি হাসান কাসেমি

পৃথিবীর বুকে এমন জাতি খুব কমই রয়েছে যারা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিরাত নিয়ে কাজ করেনি। তার মহামন্বীত জীবনচরিত থেকে উপকৃত হয়নি। তার দ্বীপ্ত আলো থেকে জীবন রঙিন করেনি। সমাজ ও রাষ্ট্র আলোকময় করার কথা ভাবেনি। তবে এমন জাতি মেলা ভার, যারা রাসুলের জীবনী জাল করে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করেছে। উদ্দেশিত কাউকে বড় করার লক্ষ্যে মনমতো ব্যাখ্যা করেছে। এমনকি এ জন্য সাহাবায়ে কিরামগণের ওপর অপবাদ আরোপ করতঃ তাদেরকে অতি তুচ্ছভাবে উপস্থাপন করেছে। আমরা যদি শিয়াদের দিকে লক্ষ্য করি, তবে এ চিত্রই আমাদের দৃষ্টিগোচর হবে। তাদের কিতাব মুতাআলা করলে অসহনীয় সব কথা দ্বারা হৃদয় বিচূর্ণ হবে।

মুসলমান ফিরকাগুলোর কথা বাদ, অমুসলিম জাতির সিরাত চর্চাকেও যদি আমরা সামনে নিয়ে আসি, তবে শিয়াদেরকে এ তুলনায় অতি নগণ্যই পাব;—অতি নিশ্চয়তার সঙ্গে এ কথা বললেও কোনো অত্যুক্তি হবে না। এমনকি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উল্লেখ ব্যতীত কোনোভাবে যদি হযরত আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু-এর ফযিলত বুঝান যেত, তবে তারা তার সিরাত আলোচনাকে অতি নগণ্যই গণ্য করত। তা চর্চার কসরত করাকেও অহেতুক বোধ করত। আমার সামান্য উদাহরণেই আপনার এ কথা বুঝতে সহজ হতে পারে।

আমার জানামতে শিয়াদের লেখা স্বতন্ত্র কোনো সিরাতের কিতাব নেই। হলেও হাতগোনা কয়েকটা। অথচ তাদের প্রতি ইমামের ওপরই লেখা গ্রন্থ রয়েছে। শুধু যদি আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর দিকে লক্ষ করি, তবে তার সিরাতের ওপর যে কাজ হয়েছে, রাসুলের ক্ষেত্রে তার শতভাগের একভাগ দেখানোও মুশকিল হয়ে যাবে। আনওয়ারুল ইয়াকিন ফি ইমামাতি আমিরিল মু’মিনিন, আল-আরবাঈনাল মুনতাফা মিন মানাকিবিল মুরতাযা, আসনাল মাতালিব ফি মানাকিবি সাইয়্যিদিনা আলি ইবনু আবি তালিব, জাওয়াহিরিল মাতালিব ফি মানাকিবিল ইমাম আলি ইবনু আবি তালিব, দুস্তুরু মায়ালিমিল হুকমি ওয়া মাছুরাতু মাকারিমিশ শিমি মিন কালামি আলি ইবনি আবি তালিব, ফারাইযুস সামতিন ফি ফাযায়িলিল মুরতাযা ওয়াল বুতুন ওয়াস সাবতিন, ফারহাতুল গারবি ফি তায়িনি কবরি আমিরিল মু’মিনিনা আলি ইবনি আবি তালিব ফিন নাজাফ, কাশফুল ইয়াকিন ফি ফাযায়িলি আমিরিল মুমিনিন, কিফায়াতুল মানাকিব ফি মানাকিবি আলি ইবনি আবি তালিব, মুজামুল আছারিল মাখতুতাহ হাওলাল ইমামি আলি ইবনু আবি তালিব ও মাকতালুল ইমাম আমিরিল মুমিনিন প্রভৃতি কিতাব তাকে নিয়ে লেখা গ্রন্থের সামান্য অংশ মাত্র।

এমনকি যেসব কিতাবে সম্মিলিতভাবে সব ইমামদের জীবনী এসেছে, সেখানেও রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপেক্ষিত হয়েছেন। এটা বুঝানোর জন্য তাদের ইমামদের নিয়ে বর্তমান সময়ে লেখা প্রসিদ্ধ কিতাব ‘কাশফুল গুম্মাহ ফি মা’রিফাতিল আইম্মাহ’—এর দিকে লক্ষ করলেই একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেখানে রাসুলের জীবনী নিয়ে আলোচনা করেছে মাত্র ১০৩ পৃষ্ঠা। অথচ আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর আলোচনা এসেছে ৬৮৪ পৃষ্ঠা। এমনকি হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমাদের জীবনীও এসেছে যথাক্রমে ২০৩ ও ১২৫ পৃষ্ঠা। অন্যান্য ইমামদের আলোচনাও রাসুলের আলোচনার তুলনায় অধিক।

বর্তমান সময়ে শিয়াদের মধ্যে খুব বেশি চর্চিত কিতাব চৌদাহে সিতারা-এর দিকে লক্ষ করলেও এ দৃশ্যই চোখে পড়ে। সংক্ষিপ্ত কিতাব হিসাবে রাসুলের জীবনী ৪৫ পৃষ্ঠা এলেও আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু-এর জীবনী ঠিকই ৫৮ পৃষ্ঠা এসেছে। আর রাসুলের জীবনীর মধ্যেও আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু-এর ফযিলত সাব্যস্ত করা মুখ্য গণ্য করেছে। সে সঙ্গে শাইখাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমাসহ অন্যান্য সাহাবাদের অতি তুচ্ছভাবে উপস্থাপন করেছে। আমার এ লেখার ভিত্তি এ কিতাবের বিভ্রান্তির ওপরই। যদিও ক্ষুদ্রপর্বে দীর্ঘ আলোচনা অসম্ভব, তবুও অল্পস্বল্প বিভ্রান্তি উল্লেখ করতঃ আপনাদের বোধের দুয়ারে আঘাত করার বাসনা ত্যাগ করতে পারছি না।

মূল আলোচনা শুরুর পূর্বে এ কথা খুব নিশ্চয়তার সঙ্গেই উল্লেখ করছি যে, শিয়াদের সিরাত চর্চার মূল হলো আলে আবি তালিব বা আবু তালিবের পরিবারভিত্তিক। এক্ষেত্রে মানাকিবু আলে আবি তালিব ও উমদাতুত তালিব ফি আনসাবি আলে আবি তালিব বই দুটো অতিপ্রসিদ্ধ। এমনকি আবু তালিবের ইমান সত্যায়নের জন্যও তারা বহু কিতাব লিপিবদ্ধ করেছে। যার মধ্যে ইমানু আবি তালিব ও আসনাল মাতালিব ফি নাজাতি আবি তালিব অন্যতমও।

সর্বপ্রথম আসি রাসুলের জন্মবৃত্তান্তে। তখন যেসব অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল তার মধ্যে এটাও ছিল যে, তিনি যে রাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সে রাতে সিরিয়ান ধর্মজাজক মুবিযান স্বপ্নে কতক উটকে কতক ঘোড়া হাকিয়ে নিতে দেখলেন। যেগুলো তাড়া খেয়ে দজলা (টাইগ্রিস) নদি পার হয়ে তাদের জনপদে ছড়িয়ে পড়েছিল। পারস্যের বাদশাহর কাছে এ স্বপ্ন বর্ণনা করলে তিনি তৎকালীন বড় গণক আবদুল মাসিহের কাছে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি ব্যর্থতা প্রকাশ করে সিরিয়ায় অবস্থিত সাতিহের কথা বললেন। তিনি ছিলেন নামকরা গণক এবং বড় আলিম। ইবনুল আসিরের ভাষ্যমতে, তিনি লোকমান ইবনু আদ-এর পরবর্তী যুগের মানুষ। মহাপ্লাবনকালে যার জন্ম হয়েছিলো। যিনি ছিলেন বিস্ময়কর দেহের মালিক। যার দেহে কোনো হাড্ডি ছিল না। মাথায় দুটো চোখ ছিল। কখনো বসতে পারতেন না। কেবল রাগ হলেই বসে পরতেন। আবদুল মাসিহ যখন তার কাছে পৌঁছালেন তখন তিনি মুমূর্ষ অবস্থায় ছিলেন। তিনিই তখন সে রাতে সংঘটিত সব অলৌকিক ঘটনা উল্লেখ করে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের সুসংবাদ দিয়ে ইন্তেকাল করেছিলেন। যে ঘটনা আন-নিহায়াহ ফিত-তারিখ ও আল বিদায়া ওয়াননিহায়ার মধ্যে সবিস্তার উল্লেখ রয়েছে।

প্রথমত, এই ঘটনা সহি নয়। মুহাক্কিক সিরাত গ্রন্থকারগণ এই ঘটনাকে শক্তভাবে জাল বলেছেন। দ্বিতীয়ত এই ঘটনার সাথে তারা আরও কিছু অংশ বাড়িয়ে বলে। শিয়াদের সাফিনাতুল বিহার গ্রন্থের ভাষ্যমতে, তখন তিনি নবুওয়াতের ঘোষণার পাশাপাশি আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত ও ইমাম মাহদির গায়বাতের সংবাদ দিয়েছিলেন।[1]

যখন রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির ব্যপারে শিয়াদের কিতাব দেখা হয়, তখন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রথম ইসলাম গ্রহণ নিয়ে বিশাল বিশাল বাহাছ লক্ষ করা যায়। যেন নবুওয়াতের তুলনায় তার প্রথম ইসলাম গ্রহণ সাব্যস্ত করাই মুখ্য।

নবুওয়াতের তৃতীয় বছর যখন ‘وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ’ আয়াত দ্বারা তার সব নিকটাত্মীয়দের ইসলামের দিকে আহ্বান করার নির্দেশ পেলেন, শিয়াদের প্রসিদ্ধ ইতিহাসগ্রন্থ কিতাবুল মুখতাসার ফি আখবারিল বাশার-এর ভাষ্যমতে তিনি আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে পূর্ণ এক সা’ খাবার, এক ব্যক্তির খাবার পরিমাণ ছাগলের গোস্ত ও এ পরিমাণ এক পেয়ালা দুধ প্রস্তুতের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু সে খাবার পুরো চল্লিশ জনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। তখন আবু লাহাব রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যাদুকর আখ্যা দিয়ে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই সবইকে চলে যেতে বলে এবং মজলিস ভেঙে দেয়। দ্বিতীয় দিন আবারো আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খাবার প্রস্তুতের নির্দেশ দেন এবং উপস্থিতদের সম্বোধন করে বলেন :

ما اعلم انسانا في العرب قومه بافضل مما جئتكم به قد جئتكم بخير الدنيا والاخرة و قد امرني الله تعالى أن ادعوكم اليه فايكم يوازرنى على هذا الامر على أن يكون أخى و وصي وخليفتي فيكم

“আমি তোমাদের জন্য এমন উত্তম বস্তু নিয়ে এসেছি, যা আরবের কেউ তার গোত্রের কাছে নিয়ে আসেনি। আমি তো তোমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিয়ে এসেছি। আল্লাহ তাআলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন তোমাদের সে কল্যাণের দিকে আহ্বান করি। সুতরাং আমার ভাই ও আমার ওয়াছি তোমাদের মধ্যে আমার খলিফা হতে চায়; এ ব্যপারে কে যাচাই করতে চায়”!

আসুন এখন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উত্তর শুনি :

“তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার শত্রুদের বর্শা মারব, তাদের চোখ উপড়ে ফেলব, পেট চিড়ে ফেলব, ঠ্যাং কেটে দিবো আর আপনার মন্ত্রী হবো। তখন রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাঁধে হাত রেখে বললেন : এ আমার ভাই ও আমার ওয়াছি। আর তোমাদের মধ্যে আমার খলিফা। সুতরাং তার কথা শুনো ও তার অনুসরণ করো।”

কুরাইশের লোকেরা তখন ঠাট্টাপূর্বক উঠে গিয়ে আবু তালিবকে বলতে লাগল, তোমার ছেলের কথা শুনো ও তার অনুসরণ করো। এটাই তোমার ওপর নির্দেশ।[2]

এ বর্ণনার প্রথমাংশ ইমাম বায়হাকি রহিমাহুল্লাহ তার দালায়িলুন নবুওয়্যাহ গ্রন্থে ২/১৭৮ এনেছেন। সে হাদিসের সনদে আবদুল গিফার ইবনুল কাসিম ইবনুল মারিয়াম রয়েছে। লিসানুল মিযানগ্রন্থে (৪/৪২) হাফিয ইবনু হজর আসকালানি রহিমাহুল্লাহ তাকে রাফেজি শিয়া ও হাদিস জালকারীরূপে সাব্যস্ত করেছেন। পূর্ণ রেওয়ায়েত তাফসিরে ইবনি কাসিরের ৫/৬৫১ মধ্যে রায়েছে। ইবনু জারির তবারি রহিমাহুল্লাহ ও এ রিওয়ায়েত এনেছেন। সেখানেও এ বর্ণনার ভিত্তি আবদুল গিফার ইবনুল কাসিম ইবনুল মারিয়াম ওপর।

শাস্ত্রীয়ভাবে হাদিসটি জাল হবার হুকুম পেয়েছি আমরা। এবার যদি এ হাদিসকে বিবেকের আদালাতেও দাঁড় করাই, তবে জালরূপেই পাই। আচ্ছা মূর্তিপুজোর সমাজে যেখানে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে শুরুতেই তিনি তার খলিফা নির্ধারণের ঘোষণা দিয়ে দিবেন? সবচেয়ে বিস্ময়কর কথা হলো এ বানোয়াট রেওয়ায়েতের ওপর ভিত্তি করেই শিয়ারা وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ’—আয়াতকে খলিফা বিলা ফসলের বুনিয়াদ বলে অবহিত করে তাদের সব কিতাবে লিপিবদ্ধ করে।

একটি হাস্যকর ব্যাপার হলো আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কানযুল উম্মাল, মানাকিবে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, সিরাতে ইবনু ইসহাক, খাসায়িসে নাসায়ি প্রমুখ কিতাবে এ রেওয়ায়েত উল্লেখের দাবি করে চৌদায়ে সিতারার সংকলক শিয়াদের হুজ্জাতুল ইসলামখ্যাত নাজমুল হাসান কারারবি বলেন : “ইমাম বুখারি তার কিতাবে এ ঘটনা উল্লেখ না করার দ্বারাই তার ব্রেনের দুর্বলতা অনুধাবিত হয়”।[3] আরো বিস্ময়কর কথা হলো তিনি সেখানে তাফসিরে সা’লাবিসহ আরো কিছু কিতাবে এ ঘটনার উল্লেখের দাবি করেছেন, অথচ সেখানে এর চিহ্নমাত্রও নেই।

আসুন এখন আমরা মিরাজ নিয়ে শিয়াদের উদ্ভট কথাবার্তা দেখি। তাফসিরে কুম্মিতে আবুল হাসান আলি ইবনু ইবরাহিম আল কুম্মি (মৃত ৩০৭ হি.) বলেন, “আল্লাহ তাআলা মিরাজের রজনীতে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডেকে নিয়ে আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর ইমামত ও খিলাফত সম্পর্কে হিদায়েত দিয়েছেন”।

এমনকি কুম্মি লেখেন : “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে আলি, আল্লাহ তোমাকে সাত স্থানে আমার সঙ্গে রেখেছেন।

১. মিরাজের রাতে যখন আমাকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে, জিবরিল আ. বললেন : হে মুহাম্মাদ আপনার ভাই কোথায়? আমি বললাম তাকে পেছনে রেখে এসেছি। তিনি বললেন, আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তাকে তিনি আনিয়ে দিবেন। তখন আমি দুআ করলাম এবং তোমার সাদৃশ্যতাকে আমার সঙ্গে পেলাম। ২. দ্বিতীয়বার মেরাজের সময়। তখন (পূর্বক্তভাবে তাকে হাজির করার পর) আমার জন্য সাত আসমান খুলে দেওয়া হলো। সেখানে তোমার অবস্থান ও তোমার অট্টলিকা দেখতে পেলাম। ৩. যখন আমাকে জিনদের কাছে প্রেরণ করা হয়। (তখনও তাকে উপস্থিত করার জন্য পূর্বোক্ত কথা হয়।) ৪. আমাদের জন্যই লায়লাতুল কদরকে বিশেষিত করেছেন। যেখানে অন্যকারো অংশীদারিত্ব নেই। ৫. আমি আমার মধ্যকার সব বিষয় তোমাকে দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। তখন তিনি তোমাকে নবুওয়াত ব্যতীত সবই দেন। ৬. মেরাজে যখন আমাকে আসমানে নিয়ে সমস্ত নবিদের উপস্থিত করা হলো, তখন তাদের ইমামতি করার সময় তোমাকে আমার সাথেই দেখলাম। ৭. আমাদের হাতেই আহযাব তথা বহুবাহিনী পরাজিত হয়েছে”।[4]

রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহাকে তার বিয়ের জন্য বিভিন্ন পাত্রের প্রস্তাব করতেন, তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে নিতেন। তাই শেষমেশ তিনি নিরাশ হয়ে আলি রাদি. এর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার মনস্থ করেন। তখন তিনি খুশি হয়ে বললেন : ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি যাকে দেখেছেন তিনিই উত্তম, তবে কুরাইশের মহিলারা তার সম্পর্কে বলে যে, সে মোটা, বৃহৎ পেট, মোটা উড়ু, মোটা স্কন্ধ, ছোট পা, বড় চোখ ও উটের চুঁটের মত উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট ধনসম্পদহীন এমন ব্যক্তি ,যে সর্বদা অতিরিক্ত হাসে।[5]

তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ফাতিমা! তুমি কি জানো আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়াতে আমার ওছিয়াত দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন! অতঃপর জগতের সব নবিরা তাকে গ্রহণ করেছেন। পুনরায় এ ব্যপারে অবগত করানো হলে জগতের সব পুরুষরা অতঃপর জগতের সব নারীরা তাকে গ্রহণ করেছে। হে ফাতেমা! মেরাজের রাতে যখন আমাকে বাইতুল মুকাদ্দাসে নেওয়া হয়, তখন তার পাথরের সঙ্গে লেখা দেখতে পাই ‘لا إله الله محمد الرسزل الله ايدته بوزيره و نصرته بوزيره’ অর্থাৎ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রাসুল। আমি যাকে তাঁর মন্ত্রী দ্বারা শক্তিশালী করেছি ও সাহায্য করেছি। তখন আমি জিবরিলকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার মন্ত্রী কে? তিনি বললেন আলি ইবনু আবি তালিব। যখন সিদরাতুল মুনতাহায় গেলাম, তখন দেখতে পেলাম : (অর্থ) “আমিই আল্লাহ। আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমার সৃষ্টিজীবের মধ্যে মুহাম্মদই আমার খাঁটি বন্ধু। যাকে আমি তাঁর মন্ত্রী দ্বারা শক্তিশালী করেছি ও সাহায্য করেছি”। তখন আমি জিবরিলকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার মন্ত্রী কে? তিনি বললেন আলি ইবনু আবি তালিব। যখন আরশে গেলাম তখনও তার প্রতিটি খুটিতে এটা লেখা দেখলাম …….।[6]

তাদের ওই রেওয়ায়েত যে পুরোটাই মিথ্যা তা বুঝানোর জন্য আমি ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার থেকে বর্ণিত আরেকটা রেওয়ায়েত পেশ করি।

কুলায়নি বলেন, ফাতিমা আলাইহিস সালাম আলি আলাইহিস সালামের সঙ্গে বিয়েতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। যখন তার কাছে তার পিতা (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এলেন, তখন সে কাঁদছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কাঁদো কেনো? আল্লাহর শপথ! আমার আত্মীয়দের মধ্যে যদি তার থেকে উত্তম কেউ থাকত, তবে তার সঙ্গেই তোমার বিবাহ দিতাম। এ বিবাহ তো আমি দিচ্ছি না, বরং আল্লাহ দিচ্ছেন।

একবার যখন তার কাছে তার পিতা এলেন, তখন তিনি তার দিকে চোখ তুলে তাকানোকেও সহ্য করলেন না। বরং লাগাতার অশ্রু বর্ষণ করে যাচ্ছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আমার কলিজা টুকরা, তুমি কাঁদছো কেনো? উত্তরে তিনি বললেন, কম খাওয়া, অধিক চিন্তে, বড় পেরেশানির কারণে। আরেক বর্ণনায় এসেছে যে, তিনি বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমার চিন্তাভাবনা অনেক হয়ে গেছে আর আমার অসুস্থতাও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।[7]

পাঠক! উভয় রেওয়াতের মধ্যে একটু চিন্তে করুন। এক বর্ণনায় বলা হচ্ছে তিনি অন্যকারো ব্যপারে সন্তুষ্ট ছিলেন না, শুধু আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর কথা বললেই খুশি হলেন। আর পরের রেওয়ায়েতে বলা হলো তিনি আলি রাদি. এর সঙ্গে বিয়েতেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। বরং কাঁদছিলেন এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আচ্ছা আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন তো, ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা কি কখনো রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এভাবে কথা বলতে পারেন? এটা কি ভদ্রতা না অভদ্রতা? আর তিনিও কি আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর ওই সিফাতগুলো বর্ণনা করতে পারেন?

আসুন আমরা এখন হিজরতের আলোচনায় চলে যাই। শিয়ারা এখানে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরত ও তখনকার অবস্থার চেয়ে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর রাসুলের ঘরে ঘুমানোর আলোচনাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এমনকি হিজরতের আলোচনা করতঃ আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রবলভাবে আহত করেছে। আসুন দেখি শিয়াদের হুজ্জাতুল ইসলামখ্যাত নাজমুল হাসান কারারবি কী বলে: ‘মাদারিজুন নবুওয়্যাহে রয়েছে যে, হযরত আবুবকর দুইশ দিরহামের উট রাসুলের কাছে নয়শ দিরহাম বিক্রি করেছে।’[8]

আমরা যদি মাদারিজুন নবুওয়্যাহের দিকে লক্ষ করি, তবে এর দ্বারা নাজমুল হাসান কারারবি সাহেবের সাম্প্রদায়িকতা ও নীতিহীনতাই দেখতে পাই। মাদারিজুন নবুওয়াতের ইবারত দেখুন :

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লিাহু আনহু চারশ দিরহাম দিয়ে দুটো উট কিনেছিলেন। অন্য রেওয়ায়েতে রয়েছে আটশ দিরহাম দিয়ে ক্রয় করেছিলেন। এবং চারমাস তার পরিচর্যা করে মোটাতাজা করেছেন। তিনি দুটো উটের যেকোনো একটি গ্রহণের জন্য রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত করলেন। কিন্তু রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটা এ শর্তে গ্রহণ করলেন যে, তাকে তার মূল্য গ্রহণ করতে হবে। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় শ দিরহাম দ্বারা তা ক্রয় করে নিলেন।[9]

রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উট ক্রয়ের কারণ সম্পর্কে এখানে লেখেন যে, ইতিপূর্বে আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য অনেক মালসম্পদ খরচ করেছিলেন। কিন্তু ‘لاتشرك بعبادة ربه’ আল্লাহ তাআলার ইবাদতের ক্ষেত্রে কাউকে অংশীদার না বানানোর মূলনীতি অনুসারে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা কিনে নিয়েছিলেন।

এটাই হলো শিয়াদের হুজ্জাতুল ইসলামের ইনসাফ। আগে পরে কিছু উল্লেখ না করে, এমনকি রেওয়ায়েতের ভিন্নতাও গোপন রেখে যতটুকুতে তার ত্রুটি প্রকাশ পাবে, কেবল ততটুকুই উল্লেখ করেছেন।

চৌদাহে সিতারার পরবর্তী রেওয়ায়েত দেখুন। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের জন্য রওনা হতেই আবু বকর তার পেছনে চলা শুরু করল। অন্ধকার রাতে কোনো শত্রু আসছেন ভেবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাড়াতাড়ি চলতে আরম্ভ করলেন। তখন পায়ে হোঁচট খেয়ে রক্ত বের হতে লাগল।

আপনাদের জিজ্ঞেস করি, আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু কি নিজের থেকেই রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী হয়েছিলেন না খোদ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই তাকে সঙ্গী বানিয়েছিলেন? যদি তিনিই তাকে সঙ্গী বানিয়ে থাকেন, তবে তার পিছু নেওয়ার কথা উল্লেখ দ্বারা উদ্দেশ্য কি? তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা নয় তো!

প্রথম হিজরিতে সংঘটিত ঘটনা সম্পর্কে নাজমুল হাসান কাররবি লেখেন : এ বছর আযান নির্দিষ্ট করা হয়। যা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বিলাল রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুকে শিক্ষা দেন।[10]

এ ইতিহাস সম্পর্কে আর কী বলব! সীরাতের প্রতিটা বাচ্চামাত্রই জানেন যে, আযান আবদুল্লাহ ইবনু যায়েদ নামক এক আনসারি সাহাবি স্বপ্ন দেখেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুও স্বপ্নে দেখেন। পরবর্তীতে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে আবদুল্লাহ ইবনু যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বিলাল রাদিয়াল্লাহুকে আযানের বাক্য শিখিয়ে দেন।

এবার কিবলা পরিবর্তনের কিচ্ছা শুনাই। চৌদাহে সিতারর মধ্যে লেখে, “কেবলা যেহেতু সাধারণ নামাযের মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে, এ জন্য আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ছাড়া কেউ রাসুলের সঙ্গ দেননি। কেননা তিনি প্রতিটি কথা ও কাজকেই আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশ মনে করতেন”।[11]

অথচ কিবলা পরিবর্তন হয়েছিলো মসজিদে বনু সালামায় যোহরের নামায দুই রাকাত অতিবাহিত হওয়ার পরে। তবে এ কথা কি সুস্থমস্তিস্ক মেনে নেয় যে, নামাযের মধ্যে কিবলা পরিবর্তন হলো। রাসুল বাইতুল মাকদিস থেকে কা’বার দিকে ঘুরে গেলেন। সমস্ত সাহাবিই আপনস্থানে অটল রইলেন আর একজন সাহাবিই কেবল ঘুরে গেলেন? এটাও কি সম্ভব যে সাহাবারা রাসুলের পরিবর্তন দেখেও অটল থাকবেন? তবে তাদের রাসুল-মান্যতা গেল কই? তাদের ইমানেরই বা কী অবস্থা? এমন অমান্যতা সত্ত্বেও কি আল্লাহ তাআলা কুরআনে তাদের ইমানের ঘোষণা দিবেন? তাদের ‘উলাইকা হুমুল মুফলিহুন’ বা তারাই সফলকাম শব্দে অবহিত করবেন? আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে তো এ কথার সায় দেয় না। আপনাদের কী মনে হয়! আসল ব্যপার হলো তাদের কাছে তিনজন সাহাবা ব্যতীত সমস্ত সাহাবাই মুরতাদ এবং কাফির। এখন তারা যেভাবেই সাহাবাদের রাসুল অমান্যতা প্রকাশ করতে পারবে, তাদের হৃদয় ততই প্রশান্তি লাভ করবে।

এবার বদরের যুদ্ধ সম্পর্কে তাদের মনোভাব প্রকাশ করি। হযরত আলি ইবনু আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু তাআলা অনেক বড় বীরযোদ্ধা ছিলেন—এ ব্যপারে সন্দেহকারীর ইমান নিয়েও আমার সংশয় রয়েছে। তবে বদরের যুদ্ধের বিজয়ের ভূমিকা কেবল আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর একার নয়, বরং সম্মিলিত। হ্যাঁ, তার অবদান ও বীরত্ব সবার তুলনায় বেশিই হতে পারে। সে জন্য কি আবু বকর সিদ্দিক রদিয়াল্লাহু আনহুসহ অন্যান্য সাহাবিদের আক্রমণ করতে হবে? দেখুন নাজমুল হাসান কাররবি কী বলেন, “এ যুদ্ধের ঝাণ্ডা হযরত আলি আলাইহিস সালামের হাতে ছিল।… আবু বকর এ যুদ্ধে লড়াই করেনি”।[12]

দেখুন এ দুটো বাক্যের মধ্যে তারা কতবড় মিথ্যাচার করেছে। প্রথমত সমস্ত আহলে সিয়ারগণ এ কথা উল্লেখ করেন যে, বদরের যুদ্ধের ঝাণ্ডা হযরত মুসআব ইবনু উমায়েরের হাতে ছিল। আর আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধ করেছেন কি না সেটা আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর মুখেই শুনুন:

হযরত আকিল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের সম্বোধন করে জিজ্ঞেস করলেন, বলো তো তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বীর কে? সবাই বলল, আমিরুল মুমিনিন! আপনি। আলি রাদিয়াল্রাহু আনহু বললেন, যে আমার মুকাবেলায় এসেছে, আমি তার বদলা নিয়েছি। কিন্তু আবু বকর এর ব্যতিক্রম। আমরা বদরের যুদ্ধে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আলাদা তাবু স্থাপন করি। মুশরিকদের কেউ যেন রাসুলের কাছে না আসতে পারে, তাই আমরা কোনো একজনকে তাঁর কাছে থাকার জন্য আহ্বান করি। আল্লাহর কসম! আবু বকর ব্যতীত সেদিন কেউ এগিয়ে এলো না। তিনি উন্মুক্ত তরবারি নিয়ে রাসুলের শিয়রে দাঁড়ানো ছিলেন। মুশরিকদের কেউ এদিকে অগ্রসর হলেই তাকে ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিতেন। সুতরাং আবু বকরই সবচেয়ে বড় বীর।

আমি দেখেছি কুরাইশরা যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বিরোধিতা করত, আবু বকর জবাব দিতেন ও তাদের মধ্যে আড় হয়ে দাঁড়াতেন। কাফিররা অভিযোগ করত, তুমিই তো আমাদের অনেক মাবুদের স্থানে এক মাবুদের কথা প্রচার করেছ। আল্লাহর কসম! তখন আবু বকর ব্যতীত আমাদের মধ্যে কেউ এগিয়ে যেত না। তিনিই তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতেন। তাদের সঙ্গে তর্ক ও লড়াই করতেন। তিনি বলতেন, তোমরা এমন ব্যক্তিকে হত্যা করতে চাও যিনি বলেন ‘আমার রব আল্লাহ।’ এরপর আলি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু তাঁর গায়ের চাদর খুলে ফেললেন এবং এত কাঁদলেন যে, তার দাড়ি মুবারক ভিজে গেল।

এরপর তিনি বললেন, বল তো দেখি ফিরাউনের বংশের সে মুমিন ব্যক্তি উত্তম না আবু বকর উত্তম? এ প্রশ্নে উপস্থিত সবাই নিরুত্তর হয়ে গেল। তখন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: আল্লাহর কসম! ফিরাউনের বংশের সেই মুমিনের সারা জীবনের পূণ্যের চেয়ে আবু বকরের এক ঘন্টার পূণ্য অনেক উত্তম। কেননা সে তার ইমান গোপন রেখেছিল আর আবু বকর প্রকাশ্যে তাঁর ইমানের ঘোষণা দিয়েছিলেন।[13]

[1] চৌদাহ সিতারা—৪৭

[2] কিতাবুল মুখতাসার ফি আখবারিল বাশার—১১৬-১৭

[3] চৌদাহ সিতারা—৫৫

[4] তাফসিরে কুম্মি—২/৩৩৫

[5] তাফসিরুল কুম্মি—২/৩৩৬

[6] তাফসিরুল কুম্মি—২/৩৩৭

[7] কাশফুল গুম্মাহ—১/১৪৯-৫০

[8] চৌদা সিতারা—৬২

[9] মাদারিজুন নবুওয়্যাহ—২/৮৬

[10] চৌদাহ সিতারা—৬৪

[11] চৌদাহ সিতারা—৬৫

[12] চৌদাহ সিতারা—৬৬

[13] আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া—১/২৭১

লেখক : আলিম, লেখক এবং ফিরাকে বাতেলা বিষয়ক গবেষক

Tijarah-Shop

Facebook Comments

Related posts

হেযবুত তওহীদের মুজেযা বিভ্রান্তি | মাহদি হাসান কাসেমি

তাবুক যুদ্ধ : আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত | আশরাফুল ইসলাম সাদ

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত সম্পর্কে শিয়াদের আকিদা-৩ | মাহদি হাসান কাসেমি

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!