আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন ,
وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ.
অর্থ : তোমরা যে—কোনও সৎকর্ম নিজেদের কল্যাণার্থে সম্মুখে প্রেরণ করবে, আল্লাহর কাছে তা পাবে। নিশ্চয় তোমরা যে—কোনও কাজ করো আল্লাহ তা জানেন।
অপর একটি আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে
مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ.
অর্থ : যারা আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকমÑ যেমন একটি শস্যদানা সাতটি শিষ উদ্গত করে (এবং) প্রতিটি শিষে একশ’ দানা জন্মায়। আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন (সওয়াবে) কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ অতি প্রাচুর্যময় (এবং) সর্বজ্ঞ।
সহিহ হাদিসে হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল صلى الله عليه وسلم সবচেয়ে দানশীল ছিলেন। আর যখন রমযানে হযরত জিব্রিল আমীন আ. তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন পূর্বের চেয়েও অধিক দানশীল হয়ে যেতেন। তখন রাসুল প্রবাহিত বায়ু অপেক্ষা অধিক গতিসম্পন্ন দানশীল হতেন।
রোযা আমাদেরকে আহ্বান করে ক্ষুধার্তকে অন্নদান ও অসহায়কে সম্বল দানের দিকে। রোযা আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে দুঃখী—অসুখী মানুষদের দান করতে।
রমযান মাস সদকাদাতাদের জন্য দানের মওসুম। এ যেন দাতাদের জন্য অঢেল সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।
রাসুল صلى الله عليه وسلم থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু’জন ফেরেশতা প্রতিদিন সকালে ঘোষণা দিয়ে থাকেন। একজন বলেন, হে আল্লাহ! আপনি দাতাকে আরও দান করুন। আরেকজন বলেন, হে আল্লাহ! আপনি সম্পদ সঞ্চয়কারীর সম্পদ বিনষ্ট করে দিন। যখনই কোন বান্দা আল্লাহর পথে দান করে, তখন তার দেহে বরকত লাভ হয়। মনে প্রশান্তি নেমে আসে। রিযিকেও লাভ করে অনেক প্রশস্ততা।
রাসুল صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন, সদকা পাপকে সেভাবে ধ্বংস করে যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়। মূলত পাপাচার যেন অন্তরে প্রজ¦লিত আগুন, জীবনে দাউ দাউ করে জ¦লতে থাকা ভয়ংকর অগ্নি; যে—আগুন সদকা ব্যতীত অন্য কোনো আমল নেভাতে পারে না। সদকা হলো হৃদয়—শীতলতার বরফ। আত্মিক প্রশান্তি লাভের অন্যতম উপায়। সদকা গুনাহকে একেবারে নিঃশেষ করে দেয়।
রাসুলে কারিম صلى الله عليه وسلم আরও বলেছেন, মানুষ কিয়ামতের ময়দানে তার সদকার ছায়ায় অবস্থান করবে। বিস্ময়কর! বড় আশ্চর্যজনক যে, সদকার ছায়া হবে এবং তা দীর্ঘ হবে সদকার মান ও পরিমাণ অনুযায়ী! রোজ হাশরে বান্দা তার সদকার ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করবে।
হযরত উসমান বিন আফফান রা. ছিলেন সম্পদশালী। অনেক অর্থ—বিত্তের মালিক। তিনি তার সম্পদরাজি ব্যয় করেছিলেন আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির মধ্যে। তাবুক যুদ্ধের সেনাবাহিনীকে স্বীয় সম্পদ দিয়ে প্রস্তুত করেছেন। মুসলমানদের কল্যাণার্থে রুমা কূপ ক্রয় করেছেন। সারা জীবন দান করেছেন উদার হস্তে। সদকা করেছেন দু’হাত ভরে। তাই আল্লাহও তাঁর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. ধনী ছিলেন। একবার তিনি সাতশত উটভর্তি ধন—সম্পদ মদিনার মুসলমানদের মাঝে দান করে দেন; যেন বিচার—দিবসে আল্লাহর নিকট থেকে উত্তম বদলা নিয়ে নিতে পারেন।
দেখুন ভাই! মানুষের মাঝে এমন অনেক রোযাদার আছে, যাদের নিকট এক টুকরো রুটি নেই। যাদের নিকট একটি খেজুর বা এক কাপ দুধ নেই। আমাদের আশপাশে এমন বহু রোযাদার আছে, যাদের আশ্রয় নেয়ার মতো ঘর নেই। চলাচলের জন্য যানবাহন নেই। সান্ত্বনা প্রদানের মতো কেউই নেই। এমন অসংখ্য মানুষ আছে যাদের সাহরি ও ইফতার করার মতো সামান্য উপকরণও নেই।
হযরত রাসুলে কারিম صلى الله عليه وسلم বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে তার সেই রোযাদারের সমপরিমাণ সওয়াব হবে। তবে সেই রোযাদারের সওয়াব থেকে সামান্যও হ্রাস করা হবে না।
নেকব্যক্তিদের সম্মান—মর্যাদা রমযানে আরও বৃদ্ধি পায়। কারণ, তারা দান করে, খাওয়ায়, ইফতার করায়। এমন অনেক নেক স্বভাব ব্যক্তি আছেন, যারা বড় বড় জামাতকে ইফতার করানোর দায়িত্বও নেন। এমন অনেক দানশীল আছেন যারা অসহায় দুর্বলদের মাঝে দান—সদকা করতেই থাকেন দু’অঞ্জলি ভরে। এদের মূল উদ্দেশ্য একটিইÑ আল্লাহর নিকট থেকে প্রতিদান গ্রহণ।
সালাফদের মসজিদগুলো খাদ্য—উপকরণে ভরপুর থাকত। অস্বচ্ছলদের জন্য উন্মুক্ত ছিল তাঁদের দস্তরখান। সেখানে কোনো ক্ষুধার্ত পাওয়া যেত না। দেখা যেত না কোনো প্রয়োজনগ্রস্ত।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, মানুষ তার নিজের পানাহার ও প্রয়োজনে যা কিছু ব্যয় করে সবই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যা কিছু ব্যয় করবে তার কয়েকগুণ বেশি পাবে মহান আল্লাহর কাছে। আল্লাহ বলেছেন,
إِنْ تُقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ.
অর্থ : তোমরা যদি আল্লাহকে উত্তমরূপে ঋণ দাও, তবে আল্লাহ তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ অতি গুণগ্রাহী, মহা সহনশীলতার অধিকারী।
হে রোযাদার ভাই! আপনার দান—সদকা যেন রাব্বুল আলামিনকে ঋণদানের সদৃশ। এমন এক দিবসের জন্য এসব দান জমা করে রাখছেন, যেদিন এর বড়ো প্রয়োজন পড়বে। যেদিন মানুষের অসহায়ত্ব ও অস্থিরতার কোনো সীমা থাকবে না।
হে রোযাদার! এক ঢোক দুধ পান করানো বা একটি খেজুর দান করা, সামান্য খাদ্যবস্তু দেয়া, এক টুকরো কাপড় ও কিছু ফল দান করা আপনার হতে পারে আপনার জান্নাতের সরল পথ।
হে রোযাদার! সদকার মতো অন্য কোনো বস্তু সম্পদকে হিফাযত করে না। যাকাতের মতো অন্য কোনো কিছু টাকা—পয়সাকে পবিত্র করে না। অসংখ্য সম্পদশালী মানুষ মারা যাচ্ছে আর রেখে যাচ্ছে অঢেল সম্পদ, কাড়ি কাড়ি টাকা—পয়সা, দিরহাম—দিনার এবং সুউচ্চ সুরম্য অট্টালিকা। কিন্তু এসব কিছু এখন তাদের জন্য শুধুই আফসোসের কারণ, শুধুই অনুতপ্ততার অনুষঙ্গ। কেননা তারা এসবকে সঠিক খাতে ব্যয় করেনি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দান করেনি। আপনি দান করুন। ইনশাআল্লাহ অচিরেই বাহ্যিক এই হ্রাসের মহালাভ দেখতে পাবেন।