সংকলন
সালাফদের রমযান
আত্মশুদ্ধি আব্দুল্লাহ তালহা

সালাফদের রমজান ও রমজানের আমল | আব্দুল্লাহ তালহা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মাহে রমযানকে কিছু বিশেষ ফজিলত দিয়ে সাজিয়েছেন। এই ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যগুলো অন্য কোনো মাসের নেই।

রমযান মাসে পবিত্র কুরআন কারিম অবতীর্ণ হয়েছ্। এ মাস সহমর্মিতা ও অপরের প্রতি দয়ার মাস। এ মাস বান্দার তওবা ও আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফেরাতের মাস। এ মাসের সম্মানার্থে আল্লাহ অসংখ্য পাপী-তাপীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। শুধুমাত্র এই একটি মাসকে উপলক্ষ করে জান্নাতের সবগুলো দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং দুর্বিনীত শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। পবিত্র রমযান মাসেই এক অতুলনীয় রজনী আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম- লাইলাতুল কদর।
.
রমযান মাসের ফজিলত সম্পর্কে আবু হোরাইরা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল এরশাদ করেছেন- যখন রমযান মাসের প্রথম রজনী আসে তখন দুর্বিনীত শয়তান ও জিনদেরকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়; কোনো দরজা খোলা হয় না। জান্নাতের সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হয়; এর কোনো একটি দরজাও লাগানো হয় না। একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, হে কল্যাণের প্রত্যাশী কল্যাণের দিকে অগ্রবর্তী হও এবং হে অকল্যাণের অভিসারী থামো, বিরত হও। আর আল্লাহ অসংখ্য জাহান্নামীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং এই মুক্তিদান প্রতিরাতে হয়। ( সুনানে তিরমিযী )
.
ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেছেন, রমযান মাসে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হেদায়েত হলো বিভিন্ন প্রকারের এবাদত অধিক পরিমাণে করতে থাকা। হযরত জিব্রিল আ. প্রতি রমযানে রাসূল সা.এর সাথে কুরআনের দাওর ও আলোচনা করতেন। যখন জিব্রিল আ. তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন তাঁর এবাদত মুজাহাদা আরো বৃদ্ধি পেত, তা সকালের প্রবহমান বায়ু হতেও অধিক গতিশীল হত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদাই দানশীল ছিলেন। রমযান এলে তাঁর দানের পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে যেত। এ সময় রাসূল সা. অনেক বেশি দান-সদকা, যিকির-তেলোয়াত ও নামাজ পড়তেন। প্রতি রমযানে তিনি ইতিকাফ করতেন। রমযানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যত এবাদত করতেন, অন্য কোনো মাসে করতেন না। (যাদুল মাআদ)

এজন্য সালাফে সালেহীন তথা অনুসৃত পূর্বসূরিগণ রমযানকে অত্যন্ত আগ্রহ-উদ্দিপনার সাথে বরণ করতেন। এ মাসকে তাঁরা আমলের প্রতিযোগিতার মাস বানিয়ে নিতেন। এ মাসে সালাফগণের মাঝে এক বিশেষ ঐশী প্রেরণা সৃষ্টি হত যা অন্য কোনো মাসে হত না।

রমযানে সালাফদের কুরআন-প্রেম

আগেই বলে আসা হয়েছে, রমযান মাসের সাথে পবিত্র কুরআনের বিশেষ এক সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, এ মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ এরশাদ করছেন, ‘রমযান মাস, যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে’ (সূরা বাকারা ১৮৫)

এ কারণে সালাফগণ রমযানে পবিত্র কুরআনের প্রতি বিশেষ মনোযোগ ও দৃষ্টি দিতেন। তাঁরা কুরআনের মাঝে যেন ডুবে যেতেন। কুরআন তেলোয়াকে তাঁরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন।
.
* হযরত ওসমান বিন আফফান রা. প্রতিরাতে এক খতম কুরআন তেলোয়াত করতেন। এটা ছিল হযরত যিননুরাইন রা.এর হরহামেশার আমল। তাহলে অনুমান করা যায়, রমযানে হযরতের কুরআন খতমের পরিমাণ আরো কত বৃদ্ধি পেত!

* হযরত আসওয়াদ বিন এযিদ রহ. রমযানের প্রতি রাতে দু‘খতম কুরআন পড়তেন।

* মুসাব্বিহ বিন সাঈদ রহ. মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রহ. সম্পর্কে বলেছেন, তিনি রমযানের প্রতি দিবসে এক খতম করে কুরআন তেলোয়াত করতেন।

* এমন বিবরণ হযরত ইমাম শাফেয়ী রহ. সম্পর্কেও বর্ণিত আছে। তিনি রমযানের প্রতি দিবসে এক খতম কুরআন পাঠ করতেন। আর এ পাঠ ছিল নামাযের বাহিরে।

* হযরত কাতাদা রা. প্রতি সপ্তাকে এক খতম করে কুরআন পড়তেন। এটা ছিল তাঁর সারা বছরের আমল। রমযান মোবারক এলে এর পরিমাণ অনেক বেড়ে যেত। রমজানে তিনি প্রতি তিন দিনে তিনি এক খতম করে কুরআন পড়তেন। আর শেষ দশকে প্রতিরাতে এক খতম করে পড়তেন।

* ইমাম যুহরি রহ. রমযান এলে হাদিসের পাঠদান বন্ধ করে দিতেন। এমনকি আহলে ইলমদের সাথে ওঠা-বসাও ছেড়ে দিতেন। তিনি এ সময় মুসহাফ তথা কুরআন শরিফ দেখে দেখে সারাক্ষণ তেলোয়াত করতে থাকতেন।

* ইবনে রজব হাম্বলি রহ. লিখেছেন, তিনদিনের কম সময়ে কুরআন খতমের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, বিশেষ ফজিলতপূর্ণ সময়গুলো ও স্থানসমূহে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়। যেমন রমযান মাস। মুক্কা মুকাররমা। এসব সময়ে ও স্থানে যত বেশি সম্ভব কুরআন তেলোয়াত করা চাই। যাতে উক্ত সময় ও স্থানের ফজিলত পুরাপুরি অর্জিত হতে পারে। এই একই কথা বলেছেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. ও ইসহাক রহ. প্রমুখ বুযুর্গ ব্যক্তিগণ।

সালাফদের কিয়ামুল লাইল

কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদের নামাজ আল্লাহর নিকট অনেক পছন্দনীয় আমল। এই নামাজ নেক ব্যক্তিদের চরিত্রের অংশ। মুমিনদের আখেরাতের ব্যবসা। সফল ব্যক্তিদের সবসময়ের কাজ। কিয়ামুল লাইলের দ্বারা মুসলমান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। তাঁর সাথে একান্ত আলাপের সুযোগ পায়। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নিকট মনের কথা বলতে পারে। তার দুঃখ দুর্দশার অবস্থার জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করে দুআ করতে পারে।

কিয়ামুল লাইলের অনন্য ফজিলত ও গুরুত্বের কারণে সালাফে সালেহীন এই নামাজের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। তাঁরা কিয়ামুল লাইলের ব্যাপারে কেমন যত্নবান ছিলেন তা বিভিন্ন কিতাবপত্রে বিবৃত আছে। এখানে আমরা বিশেষভাবে তাদের রমযান মাসে কিয়ামুল লাইলের কী অবস্থা ছিল তা তুলে ধরব।

* হযরত হাসান বসরি রহ. বলেছেন, আমি মধ্যরাতে নামাজ পড়ার চাইতে কঠিন কোনো এবাদত দেখিনি।

* হযরত সায়েব বিন এযিদ রহ. বলেন, ওমর রা. উবাই ইবনে কা‘ব ও তামিম দারি রা.কে তারাবীহ পড়ানোর নির্দেশ দিতেন। এ সময় তাঁরা একশত আয়াত করে তিলাওয়াত করতেন। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কখনো আমাদেরকে লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে হতো। এই আমল শেষ করে ফিরতে ফিরতে আমাদের প্রায় ফজরের সময় হয়ে যেত।

* আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রা. বলেছেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, রমযান মাসে আমরা কিয়ামুল লাইল শেষ করে তড়িঘরি বাসায় ফিরে এসে খানা প্রস্তুত করতে বলতাম। কারণ, আমাদের আশংকা হতো হয়তো ফজরের সময় হয়ে যাবে।

* হাফেজ যাহাবি রহ. আবু মুহাম্মদ লাব্বান সম্পর্কে বলেছেন, তিনি তাকে চারশত সাতাশ হিজরীতে বাগদাদে দেখেন।
আবু মুহাম্মদ লাব্বান সেখানে তারাবীহ পড়াচ্ছেন। গোটা মাস এভাবে তারাবীহ পড়িয়েছেন। তারাবীহর পর তিনি কিয়ামুল লাইল শুরু করতেন। এভাবে ফজর পর্যন্ত কিয়ামুল লাইল পড়তে থাকতেন। সাহরি ও ফজর নামাজের পর ছাত্রদের দরস প্রদান করতে বসতেন। তিনি বলতেন, রমযান মাসে আমি আমার পিঠ বিছানার সাথে লাগাই না। তিনি প্রতিদিন সাত পারা করে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত করতেন।

* হযরত শাদ্দাদ বিন আওস রাহ. বিছানায় শুয়ে অস্থির হয়ে এপাশ-ওপাশ করতেন। দেখে মনে হতো গরম পানিতে শস্যদানা সেদ্ধ হচ্ছে। এ সময় তিনি বলতে থাকতেন, জাহান্নামের ভয় আমাকে ঘুমাতে দেয় না। এ বলে তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।

* হযরত তাউস রাহ. বিছানা হতে লাফ দিয়ে উঠে পড়তেন। এরপর ওযু করে নামাজ আদায় করতে থাকতেন। এমন অবস্থায়ই সেহরির সময় হয়ে যেত। তিনি বলতেন, জাহান্নামের দুশ্চিন্তা বান্দাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

* হযরত মালেক আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর থেকে বর্ণনা করেন,
আবু উসমান হিনদি বলেন, হযরত ওমর রা. রমযানে তিনজন হাফেজ ক্বারিকে নির্দেশ দিলেন নামাজ পড়াতে। এদের মধ্যে যে দ্রুত পড়তে পারত তাকে ত্রিশ আয়াত, যার পড়ার গতি মধ্যম পর্যায়ের ছিল তাকে পঁচিশ আয়াত এবং যার পড়ার গতি কম ছিল তাকে বিশ আয়াত করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

* হযরত নাফে বলেছেন, হযরত ইবনে ওমর রা. রমযানের রাতকে এবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছিলেন। তারাবীহ শেষ করে লোকজন মসজিদ হতে চলে যেত। তখন তিনি এক পাত্র পানি নিয়ে মসজিদে নববিতে চলে আসতেন। এরপর একেবারে ফজর নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরতেন।

* হযরত নাফে বিন ওমর বিন আব্দুল্লাহ বলেন, আমি ইবনে আবু মুলাইকাকে বলতে শুনেছি, আমি রমযানে তারাবীহ পড়াতাম। নামাজে আমি সুরা ফাতিরের সমপরিমাণ সুরা তিলাওয়াত করতাম। কিন্তু আমার জানা নেই, এতে কোনো মুসল্লির কষ্ট হতো।

* আব্দুস সামাদ রাহ. বলেন, আমাদেরকে আবুল আশহাব বলেছেন, আবু রাজা রমযানে আমাদেরকে নিয়ে কিয়ামুল লাইলে দশদিনে এক খতম কুরআন পড়তেন।

* হযরত এযিদ বিন হাফসা সায়েব ইবনে এযিদ থেকে বর্ণনা করেন, হযরত সায়েব রাহ. বলেছেন, হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রা.এর শাসনকালে তাঁরা অর্থাৎ সাহাবি ও তাবেয়িগণ রমযানে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। তারাবীহর প্রত্যেক রাকাতে ইমাম একশত আয়াত করে তিলাওয়াত করতেন।

* হযরত ওসমান রা. এর খেলাফতকালে এতো দীর্ঘ হতো সেই নামাজ যে, মুসল্লিদেরকে অনেক সময় লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে হতো।

* হযরত আবু উসমান হিন্দি বলেন, আমি আবু হোরাইরা রা.এর নিকট মেহমান হিসেবে সাতদিন ছিলাম। তখন দেখেছি তাঁরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতকে তিনভাগে ভাগ করেন নিতেন। একভাগে হযরত আবু হোরাইরা এবাদত করতেন। একভাগে তাঁর স্ত্রী এবাদত করতেন। আরেক ভাগে তাঁদের ঘরের খাদেম এবাদত করতেন।

* ইমরান বিন হুদাইর বলেন, আবু মুজলায রমযানে এলাকার মুসলমানদেরকে নিয়ে রাতে নামাজ পড়তেন। এই নামাজে তিনি প্রত্যেক সাতদিনে এক খতম কুরআন পড়তেন।

রমযানে সালাফদের দান-সদকা

দান-সদকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এবং রাসূল সা.এর অসংখ্য হাদিসে দান-সদকার প্রতি অত্যন্ত উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। দান-সদকা ছাড়াও মুসলিম ভাইকে খাওয়ানো, হাদিয়া প্রদান- এসবও আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় আমল।

দানের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। রয়েছে আখেরাতের অফুরান উপকার এবং দুনিয়ারও অনেক উপকার। দানে ধন বাড়ে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এই বৃদ্ধি দেখা না গেলেও, আমলের খাতায়- আখেরাতের বিবেচনায় দান-সদকা অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এক টাকায় অন্তত সাতশত টাকার সওয়াব দান করবেন। অপর আয়াতে বলেছেন, তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত প্রদান কর আল্লাহ তা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেন।

রাসূল সা. ছিলেন সবচেয়ে দানশীল। কেমন ছিল রাসূলে কারিম সা.এর বদান্যতা তার দুয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি। হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সা.এর নিকট কিছু চাওয়া হলে তিনি কোনো দিন ‘না’ বলতেন না। আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, নবী কারিম সা.এর নিকট কোনো সাহায্য চাইলে তিনি অবশ্যই দান করতেন। একবার দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকাভরা ছাগলের একটি পাল তিনি এক ব্যক্তিকে দান করে দেন। লোকটি তার গোত্রে গিয়ে বলল, হে আমার জাতি! তোমরা ইসলাম কবূল করো। কেননা মুহাম্মদ সা. এমন উদার হস্তে দান করেন, যারপর আর ক্ষুধা-দারিদ্রের ভয় থাকে না। একবার রাসূলে কারিম সা.এর নিকট নব্বই হাজার রৌপ্যমুদ্রা এনে জমা করা হলো। তিনি এগুলেকা একটি চাটাইয়ের ওপর রাখতে বললেন। চাটাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সবগুলো মুদ্রা বিলিয়ে দিয়ে তবে স্বস্তি লাভ করলেন। মুদ্রা ফুরিয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কোনো প্রার্থীকেই বিমুখ করেননি।

রমযান মাস এলে রাসূলের দান-সদকার পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে যেত। এ ব্যাপারে হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল সা. সর্বাপেক্ষা বেশি দানশীল ছিলেন। পবিত্র রমযানে হযরত জিবরিল আ. যখন তাঁকে কুরআন পাক পুনরাবৃত্তি করে শোনাতে থাকতেন, তখন হুজুরের বদান্যতা ও দয়া-দাক্ষিণ্য বিপুল পরিমাণে বেড়ে যেত। হুজুর সে সময় প্রবহমান হাওয়ার গতির চেয়ে বেশি মুক্ত হস্তে দান করতে থাকতেন, অর্থাৎ, মুক্ত হাওয়ার অবাধ প্রবাহ যেমন গতিশীল, হযরতের দান ও অনুগ্রহ তখন তারচেয়েও বেশি গতিময়তা লাভ করত।

এজন্য হযরত সাহাবায়ে কেরাম রা. ও দীন ইসলামের পূর্ববর্তী সাধক পুরুষগণও রমযানে দান-সদকা ও হাদিয়া-তোহফার ব্যাপারে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি তৎপর হতেন। রমযান এলে যেন তাদের দিল বর্ষণমুখর মেঘের মতো দানের বৃষ্টি বর্ষণ করতে তৈরী হত।
এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, পুরুষদের জন্য উত্তম হলো রাসূল সা.এর ইত্তিবা করে রমযান মাসে অধিক পরিমাণে দান করা। কারণ, এ মাসে মানুষের প্রয়োজন বেশি থাকে। দেখা যায়, অনেক মানুষ সিয়াম ও সালাতে এতো বেশি নিমগ্ন হয় যে, আয়-রোজগার করার সুযোগ পায় না।

* হযরত ইবনে ওমর রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, রোযা রাখলে তিনি কখনো অসহায়-দরিদ্রদের ছাড়া ইফতার করতেন না। যদি কখনো পরিবারের সদস্যরা এমন করতে নিষেধ করত তাহলে তিনি অভিমানে সে রাতে খানাই খেতেন না।

* হযরত ইবনে ওমর রা.এর বৈশিষ্ট ছিল, যখন কোনো ভিক্ষুক তার কাছে চাইতে আসত আর তিনি খানা খাচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে প্লেটের খাবারটুকু নিয়ে সেই মিসকীনকে দিয়ে দিতেন।

* হযরত হাম্মাদ বিন আবু সুলাইমান প্রতিদিন পঞ্চাশজন করে রোযাদারকে ইফতার করাতেন। আর ঈদের রাত আগমন করলে, সেইসব মানুষকে কাপড় হাদিয়া দিতেন ও প্রত্যেককে একশত করে দিরহাম দান করতেন।

* আবু সাওয়ার আদাবি বলেন, বনি আদির কিছু মানুষ এই মসজিদের নামাজ পড়তেন। এদের কাউকে কখনো একা একা ইফতার করতে দেখা যায়নি।

আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহর দিকনিদের্শনা ও সালাফের আদর্শের আলোকে রমজান অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন।

Facebook Comments

Related posts

আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা, পথ ও পদ্ধতি | মুশতাক আহমাদ

শোকর, সবর ও তাকওয়া মুহসিন মুমিনের তিনটি বড় গুণ | মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

নির্মল জীবন-৮ | ইমরান রাইহান

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!