৫১.
জ্ঞানার্জনের জন্যে আল্লাহ তা’লা মানুষকে যত মাধ্যম দান করেছেন তার একটি হলো— পঞ্চেন্দ্রিয়৷ চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, স্পর্শানুভূতি— এগুলো একেকটি মাধ্যম৷ কোনো বস্তু দেখার মাধ্যমে, কোনো আওয়াজ শোনার মাধ্যমে, রসনা দ্বারা কোনো খাদ্যের স্বাদ আস্বাদনের মধ্য দিয়ে আবার কোনো বস্তু স্পর্শ করার সাহায্যে মানুষ সেইসব সম্পর্কে তথ্য লাভ করে৷ তার অজানাকে জানায় রূপান্তরিত করে৷ এগুলো তার একেকটি অবলম্বন৷ যা তাকে দান করেছেন তার মহান প্রতিপালক৷
৫২.
উল্লিখিত মাধ্যমগুলো আপন ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ৷ আপনি চাইলেই চোখ দ্বারা শুনতে পারবেন না; চোখ বন্ধ করে কোনো বস্তু দেখে উঠতে পারবেন না কান দ্বারা৷ তদ্রুপ কেউ রসনার ব্যবহারে খাদ্যের স্বাদ আস্বাদনে যতই পারঙ্গম হোক না কেন তা দ্বারা সে দেখা এবং শোনার কাজ চালাতে পারবে না৷ কারণ রসনার কাজ কেবল স্বাদ গ্রহণ৷ যেভাবে চোখ এবং কান সীমাবদ্ধ দেখা এবং শোনার ভেতর৷
৫৩.
মানুষের পঞ্চেন্দ্রিয়ের বাইরে জ্ঞানার্জনের আরেকটি মাধ্যম আল্লাহ তালা তাকে দান করেছেন৷ কিছু বিষয় আছে এমন যা চোখে দেখা যায় না, কানে শোনা যায় না; যার কোনো স্বাদ, রঙ, গন্ধ নেই৷ যা হাত দ্বারা স্পর্শ করেও অনুভূত হয় না৷ সেই সব বিষয়ের জ্ঞান আহরণের জন্যে আল্লাহ তা’লা এই মাধ্যমটি মানুষকে দিয়েছেন৷ আর সেই মাধ্যমটি হলো— আকল৷ মানুষের বুদ্ধি ও বিবেচনাবোধ৷
৫৪.
তবে পঞ্চেন্দ্রিয় ও এই আকলের মধ্যে একটা সাজুয্য রয়েছে: পঞ্চেন্দ্রিয়ের যেমন রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা, আপন ক্ষেত্রের বহির্ভূত বিষয়ের জ্ঞান লাভের জন্যে যেমন সে অবলম্বন হতে পারে না; তেমনি আকলও৷ মানুষের আকল, তার বোধ, বুদ্ধি ও বিবেচনাও একটি নির্দিষ্ট বলয়ে আবদ্ধ৷ তারও একটি সীমারেখা আছে; যা সে উতরে যেতে পারে না৷
৫৫.
তবে জ্ঞান পিপাসু মানুষের নিরাশ হবার কিছু নেই৷ কোনো জিজ্ঞাসার সমাধান যদি তার আকল দিতে ব্যার্থ হয়, যদি সে তার কোনো সংশয়ের উত্তর খুঁজে না পায় তার বোধ, বুদ্ধি কিংবা চিন্তার কাছে তার সংশয় নিরসনের জন্যে আল্লাহ তা’লা তৃতীয় একটি মাধ্যম দান করেছেন৷ তা হলো— ওহীয়ে ইলাহী৷ আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে প্রেরিত ফরমান৷ মূলত আকল যেখানে থমকে যায় সেখানেই শুরু ওহীয়ে ইলাহীর দিক নির্দেশনা৷
৫৬.
কোনো ব্যক্তি যদি গোঁ ধরে— আমি ওহীর কোনো বার্তা মেনে নিব না যতক্ষণ না আমার বিবেক তা সমর্থন করে৷ বিবেক দ্বারা সমর্থিত হলেই কেবল আমি সেই আসমানী ফরমান সত্য বলে মেনে নিব৷ তবে, এটা হবে তার চরম নির্বুদ্ধিতা৷ যেমন এ কথা বলাটা হবে তার নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক যে, কোনো বিষয় আমি তখনই স্বীকার করে নিব আমার কান যখন তা দেখতে পারবে৷ দেখার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন যেমন কানের কাজ নয় তদ্রুপ এমন বিষয় অজস্র যা সম্বন্ধে তথ্যার্জনের মাধ্যম নয় আমাদের বোধ-বুদ্ধি কিংবা আকল৷
৫৭.
বিবেক মানুষের সব চাইতে বড় আদালত— কথাটি সর্বাংশে সত্য নয়৷ সবার বিবেক কি সঠিক সিদ্ধান্ত দানে সমর্থ রাখে? তাহলে?
৫৮.
ভালো-মন্দের চূড়ান্ত ফায়সালা মানুষের বিবেক করতে পারে না৷ বিবেক কিংবা আকল সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কোনটা মানব জীবনের জন্যে কল্যাণকর আর কোনটাতে রয়েছে তার জন্যে অকল্যাণ৷ হালাল-হারামের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও আকলের নেই৷ এসব বিষয়ে ওহীর দারস্থ হতেই হবে মানুষকে৷
৫৯.
পৃথিবীময় যত অকল্যাণের বিস্তার আমরা দেখে উঠি তার সবটার উৎস ওহীর ফরমান বিবর্জিত আকল৷
৬০.
যে বিষয়ে ওহীয়ে ইলাহির নির্দেশনা আছে, প্রত্যক্ষে কিংবা পরোক্ষে কোনো না কোনো সমাধান রয়েছে আসমানী বার্তায় সেখানে বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করতে গেলেই মানুষ বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে পড়বে৷ আর, কোন এমন সমস্যা আছে যার সমাধান দিতে পারে না প্রভূর প্রেরিত ফরমান! চলবে…(ইন শা আল্লাহ)