রাসূলুল্লাহ সা. এক আজিব এরশাদ করেছেন। হযরত রাসূলে কারিম সা. বলেন, যখন তুমি মানুষের মধ্যে চারটি অবস্থা দেখবে তখন অন্য মানুষের ইসলাহর ফিকির বাদ দিয়ে নিজের ইসলাহর ফিকিরে অধিক মনযোগী হও।
সেই চারটি বিষয় হলো
এক, যখন দেখবে মানুষ আখেরাতের উপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
অর্থাৎ তার মাঝে আখেরাতের কোনো চিন্তা-ফিকির নেই। শুধুই দুনিয়ার অর্থ-বিত্তের ধান্দা। সেই অর্থ হালাল পথে আসুক বা হারাম পথে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ধোকা দিয়ে অর্থ কামাই হোক বা কাউকে আঘাত করে, বা কারো হক নষ্ট করে- এভাবেই টাকা-পয়সা কামিয়ে চলেছে। আখেরাতের কোনো চিন্তা-ফিকির নেই তার মাঝে নেই। তাকে দেখলে মনে হয়, সে যেন মৃত্যুর কথা বেমালুম ভুলে গেছে।
.
দুই, যখন দেখবে মানুষ তার প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয়েছে।
অর্থাৎ সে তার অবাধ্য নফসকে নিজের ইমাম বানিয়ে বসেছে। মনে যখন যা আসে তখন তাই করে। সেটা জায়েয না, না-জায়েয সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে চিন্তা করে না, কাজটি করে অপরকে কষ্ট দিচ্ছি না অপরের উপকার করছি। তার মানসিক অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, মানুষের যত কষ্ট হোক, ক্ষতি হোক বা আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘন হোক, আমি আমার মন মতো চলব। যা-তে আমার ফায়দা হয়, আমার ভালো লাগে সেই কাজই করব চাই তা হারাম হোক, বা না-জায়েয।
.
তিন, যখন দেখবে প্রত্যেকেই নিজের রায় নিয়ে আত্মগর্বী হয়ে গেছে।
অর্থাৎ যখন দেখবে মানুষ এভাবে চিন্তা করে যে, আমি যা চিন্তা করছি, যা ভাবছি তাই সঠিক। আমি যা বুঝেছি তাই ঠিক। এছাড়া দুনিয়ার সবকথা বেঠিক। আমার মতের বাহিরে আমি কখনোই যাব না। আমার চিন্তা সবার চিন্তা-ভাবনার চেয়ে উত্তম।
অর্থাৎ, সে অন্য কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়, তা যতই শরীয়তের দলীলভিত্তিক হোক।
.
চতুর্থ, যখন দেখবে মানুষ তার কৃপণতার দাসে পরিণত হয়েছে।
অর্থাৎ দান-সদকা করে না। মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করে না। শুধু অর্থ-সম্পদ জমা করে রাখার প্রচেষ্টা।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন তুমি মানুষের মধ্যে এই চারটি অবস্থা দেখবে তখন তাদের সংশোধনের ফিকির ত্যাগ করে নিজের ইসলাহ ও সংশোধনের ফিকিরে অধিক মনোনিবেশ করো।
.
এই নির্দেশনার কারণ কী?
এই নির্দেশনার কারণ হলো, যখন আপনি মানুষের এসব দোষ-ত্রুটি দেখবেন এবং এসব নিয়ে সমালোচনা-নিন্দা করে বেড়াবেন যে, অমুকের এই দোষ, তমুকের এই সমস্যা তখন তারা কি আপনার এই নিন্দা-সমালোচনার দ্বারা সংশোধন হয়ে যাবে!
তা তো হবেই না; বরং এই সমালোচনা আপনার ইসলাহ ও সংশোধনকে বাধাগ্রস্ত করবে।
তাই আপনি যদি আপনার নিজের সংশোধনের ফিকির করেন, অর্থাৎ আমার এই গুনাহ আছে। আমার এই এই পাপ হয়। আমার মাঝে শরীয়ত মানার ক্ষেত্রে এতো এতো দুর্বলতা আছে। এভাবে যখন আপনি আত্মসংশোধনের প্রতি মনযোগী হবে তখন অন্তত আপনি নিজেকে সংশোধন করতে পারলেন।
এভাবে অন্তত একজন মানুষ তো ভালো হলো।
.
আর আল্লাহর সুন্নত হলো, বাতি থেকে বাতি জ্বলে। ঠিক অনুরূপ আল্লাহ একজন ভালো মানুষের দ্বারা হাজারো খারাপ মানুষকে হিদায়াত দান করেন। অর্থাৎ আল্লাহ চাহে তো আপনি হিদায়েতের পথে চলতে শুরু করলে আপনার ওসিলায় অসংখ্য মানুষকে আল্লাহ হিদায়েত দান করবেন।
Facebook Comments