২০০৭ সাল।
বিশ্ব ইজতিমার বিদেশী মেহমান কামরায় বিশ্ববরেণ্য আলিম ও মুবাল্লিগদের পাশাপাশি আলো ছড়াচ্ছেন কিছু দুনিয়াবী তারকা। নাপাক নাচিজ দুনিয়ার মোহে যারা জীবনের সিংহভাগ সময় পার করে দিয়েছেন। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে কেড়ে নিয়েছেন গনমাধ্যম ও গণমানুষের বিশেষ আকর্ষন। তবে আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত মেহেরবান এক সত্তা। নাপাক দুনিয়ার মিথ্যা হাতছানি আর যশ খ্যতির মরীচিকা ভেদ করে তাদেরই গুটিকয়েক মানুষকে তিনি আলোর সন্ধান দিয়েছেন। জীবনের হাকীকত বুঝে আখিরাতের সাফল্যমণ্ডিত রাজপথে হাঁটার সৌভাগ্য দান করেছেন।
পাকিস্তান জাতীয় দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান সাইদ খান আনোয়ার সেই সৌভাগ্যবান গুটিকয়েক মানুষের একজন। বিশ্ব কাঁপানো বা হাতি হার্ড হিটার উইলো ছেড়ে জায়নামাজ আর তাসবীহ তুলে নিয়েছেন হাতে। দাওয়াতের কাজকে বাকী জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে পাল্টে নিয়েছেন জীবনের সফর সূচি।
.
দাওয়াতের এই সফরনামা চলতে চলতে ২০০৭ সালে নোঙর ফেলে বাংলাদেশে। এর আগে কতবার এসেছেন! ৯৭-৯৮ ক্রিকেট বর্ষে ঢাকার মাঠে রোজা রেখে সেঞ্চুরি করে কুড়িয়েছেন প্রশংসার ফুলঝুরি।
তবে এবারের সফর ভিন্ন। বাইশ গজের সীমানা পেরিয়ে লক্ষ্য এখন কিয়ামত পর্যন্ত আনেওয়ালা উম্মাতে মুহাম্মাদির ফিকির। এসেছেন বিশ্ব ইজতিমায়।
সাথে আছেন স্বল্প পরিচিত এক সময়ের উইকেট কিপার জুলকারনাইন। আরো একজন আছেন। পাকিস্তান পপ সংগীত জগতের মুকুটহীন সম্রাট মরহুম জুনাইদ জামশেদ রহঃ ।
.
বৃষ্টি বিঘ্নিত ইজতিমা একদিনেই শেষ হয়ে গেলে মুনাজাত সেরে মাওলানা তারিক জামিল হাফিজাহুল্লাহ সহ ছোট এক কাফিলার সাথে উত্তরার এক সাথী ভাইয়ের বাসায় উঠেন। পরদিন কাকরাইলে তার সংক্ষিপ্ত সফরসূচী তৈরী করে দেওয়া হয়। কলেজ, ভার্সিটি আর ক্রিকেট ক্লাবের পাশাপাশি সফর নামায় কয়েকটি জামি’আর নামও স্থান পায়।
.
বিভিন্ন সফরের ফাকে সাইদ আনোয়ারের জামাত গিয়ে উঠল ঢাকার বিখ্যাত এক জামি’আয়। জোহর বাদ সাইদ আনোয়ার কথা বলবেন। বিদ্যুতবেগে চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ল। নামাজের পর মসজিদ টাইটুম্বুর। তিল ধারনের জায়গা নেই। ছাত্রদের মাঝে চাঁপা গুঞ্জন! এই যে সাইদ আনোয়ার! ওই তো সাইদ আনোয়ার!
তিনি বয়ানের জন্য মিম্বরে বসলেন। হামদ ও ছানার পর যা বললেন, তা শোনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলো না।
.
তিনি বললেন, যশ আর খ্যতির পিছে ছুটতে ছুটতে আমার একটি বদ অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। কোথাও গেলে লোকজন আমাকে চিনলে, আমাকে নিয়ে মাতামাতি করলে, হৈ হুল্লোড় করলে ভালো লাগে। মনের কোন এক কোণে তৃপ্তির ঢেউ আছড়ে পরে। কিন্তু আজকে প্রথম আমার কাছে খুব খারাপ লাগল। মনে ব্যাথা পেলাম! আফসোস হচ্ছে!
.
আপনারা তালিবুল ইলম। কিতাব আর দরস আপনাদের নেশা। উম্মাতের হালত আপনাদের পেরেশানী। দুনিয়াদাররা আপনাদের নিকট বর্জনীয়। দুনিয়ার লাইনে খ্যাতি পাওয়া লোকজন আপনাদের অচেনা অজানা।
সেই আপনারা আমাকে চিনলেন কিভাবে? আমার চেহারা দেখেই আপনারা আমাকে কিভাবে চিনে নিলেন? আমাকে নিয়ে ফিসফাস আর উচ্ছাসই বা কিভাবে প্রকাশ করলেন?
এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এক নাপাক আর ইমান বিধ্বংসী জগতের সাইদ আনোয়ার তালিবুল ইলমদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে না। আপনারা যদি এই ভুলে ডুবে থাকেন, উম্মতের জন্য তাহলে বিরাট মুসীবত অপেক্ষা করছে।
এরপর তিনি তার স্বাভাবিক দাওয়াতি কথাবার্তা শুরু করেন।
.
উস্তাদ, অভিভাবক আর মাদরাসার নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকা আমাদের মাথায় ততক্ষনে কেউ একজন শত মন ওজনের পাথর বেধে দিয়েছে। উপরদিকে উঠানোর কোন জো নেই।