১
প্রতাপশালী ব্যক্তিটি, যার সামনে মুখ খোলার সাহস ছিল না কারো, যার রাগ দেখে অন্যদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতো, চলার পথে যাকে অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার সাধ্য ছিল না কারো, তিনি এখন শুয়ে আছেন লাশের খাটিয়ায়। তার দীর্ঘদেহী শরিরে কোনো স্পন্দন নেই। তার প্রতাপের যুগ সমাপ্ত হয়েছে। এখন মুখ থেকে সামান্য মাছি তাড়ানোর শক্তিও নেই তার। তার লাশ রাখা হয়েছে প্রাসাদোপম বাড়ির গ্যারেজে। দিনের পর দিন পরিশ্রম করে যে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তিনি, সেখান থেকে তাকে বিদায় জানানোর সকল আয়োজন সমাপ্ত হচ্ছে। তাকে রেখে আসা হবে নির্জন কবরস্থানে।
২
সেই যুবকের কথা মনে পড়ে। সৌন্দর্যে যে ছিল অতুলনীয়। সে ছিল যেকোনো আড্ডার মধ্যমণি। সে যখন মুখ খুলতো, সবাই মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনতো। তার দু’চোখে অনেক স্বপ্ন ছিল। তাকে নিয়েও অনেকের স্বপ্ন ছিল। সে এখন শুয়ে আছে এক মাটির কবরে, একা। বন্ধুরা তাকে ভুলে গেছে অনেক আগেই, নিজের মত করে জীবন গুছিয়ে নিয়েছে সবাই।
৩
পুরনো কবরফলকে লেখা আছে কত ক্ষমতাবানদের ইতিহাস। তারা হারিয়ে গেছে মানুষের স্মৃতি থেকে। ভাঙ্গা কবরে জন্মেছে তৃণলতা, ঝোপঝাড় আর আগাছায় কবর চিহ্নিত করাও হয়ে উঠেছে কঠিন।
প্রতিটি মৃত্যুসংবাদ, প্রতিটি জানাযা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় নিজেদের মৃত্যুর কথা। স্মরণ করিয়ে দেয় পার্থিব জীবন কত তুচ্ছ, কত অনিশ্চিত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি মৃত্যুর স্মরণ করতে বলেছেন। মৃত্যুর স্মরণ করলে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়া সহজ হয়। মৃত্যু তো একটি সফর মাত্র। যে ব্যক্তি এই সফরের জন্য প্রস্তুত থাকবে, নিজের আমল গুছিয়ে রাখবে, তার জন্য এই সফর সহজ। যার আমল অগোছালো, রবের সাথে সম্পর্ক ঠিক নেই, তার জন্য এই সফর কঠিন। আমলের ক্ষেত্রে গড়িমসি করার কোনো সুযোগ নেই। শুধু বৃদ্ধরাই মারা যাবে আর যুবকরা সুস্থ সবল থাকবে, এমন কোনো নিয়ম নেই।
মুতাররিফ বিন আবদুল্লাহ (র) বলেছেন,
‘এই মৃত্যু তোমাদের সকল ভোগ-বিলাস ও আরাম-আয়েশ ধ্বংস করে দিবে। সুতরাং তোমরা এমন ভোগ-বিলাসের সন্ধান করো, যেখানে কোনো মৃত্যু নেই’। (অর্থাৎ, নেক আমলের মাধ্যমে জান্নাত অর্জনে সচেষ্ট হও)। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৪/১৮৭)
Facebook Comments