[বন্দী করে চালান দেয়া জ্বীন]
.
রোগীঃ ছেলে। মাদ্রাসা ছাত্র। নাহবে মীর জামাত।
[রোগীর বড়ভাই আমার পুরাতন ফেসবুক ফ্রেন্ড। উনাকে বার বার নিষেধ সত্ত্বেও রোগীকে নিয়ে সুদূর চাঁদপুর থেকে এসেছেন।]
.
সমস্যাঃ রোগী মাদ্রাসায় থাকতেই পারে না। অস্থির হয়ে যায়। মন চায় দৌড় দিয়ে মাদরাসা থেকে বের হয়ে যেতে। পড়তে বসতেই পারে না। আরও কিছু শারীরিক সমস্যা।
.
রোগীর বড় ভাই তাকে রুকইয়াহ করেছিলো। ভেতরের জ্বীনেরা কথা বলেছিলো। তাদেরকে বন্দী করে নাকি চালান করা হয়েছে। যাদুর মাধ্যমে। তাই তারা বের হতে অপারগ। তারা জানালো যাদু মাধ্যমে চার জ্বীনকে চালান দেয়া হয়েছে। তাদের মিশন হচ্ছে, রোগীর ছাত্রজীবনকে ধ্বংস করে দেয়া।
জ্বীনেরা রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে বার বার তাগদা দিয়েছে, যেন তারা জাদুকরে ক্ষতি করে। কিন্তু উনারা তো এই বিষয়ে কিছু জানেন না। যাদুকর তাদের বন্দী করে চালান দেয়ার জাদুকরের উপর সবগুলো জ্বীন খুব ক্ষ্যাপা। এইটা আমি রুকইয়াহ করার সময়ও বুঝতে পেরেছি। পরে বিস্তারিত বলছি।
.
মসজিদে বসেই রুকইয়াহ শুরু করেছিলাম। অন্যসময় দু’আগুলো দিয়ে শুরু করি। আজকে কেন জানি সূরা ফাতিহা দিয়ে শুরু করেছিলাম। ফাতিহা শেষ করতেই জ্বীন কথা বলে উঠলো।
.
তারা দুইজন আছে। জিজ্ঞাসা করলাম, বাকী দুইজন কই?
বললো, মালিক তাদের ফেরত দিয়ে গেছে। অন্য কাজে। [যে কবিরাজ তাদের বন্দী করে চালান দেয় ওই ভন্ডকে তারা মালিক বলে]
.
যেহেতু যাদুর দ্বারা বন্দী জ্বীন। এদের ক্ষেত্রে আমি যে প্রসেস অবলম্বন করি।
– প্রথমে, জাদু কতটা নিকৃষ্ট কাজ। এর পরিণতি সম্পর্কে নসিহত করি।
– জ্বীনকে যাদু থেকে পৃথক হওয়ার জন্য রাজি করাই।
– তওবা করাই। দু’আ করাই।
– তারপর যাদু কাটার জন্য তেলাওয়াত ও দু’আ করি।
এই প্রসেস, প্রথম মুসলমান জ্বীনটা জাদু থেকে মুক্ত হলো। তার সে চলে যাওয়ার জন্য রাজি এবং তৈরি। তাকে মদিনা চলে যাওয়া পরামর্শ দেয়া হলো।
.
বাকী রইলো তার বন্ধু বিধর্মী একটা জ্বীন। নাম জিন্তু।
জ্বীন জিন্তুকে প্রথমে আল্লাহর কালাম থেকে কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে কি পরিণতি হবে। এই বিষয়ে নীচের আয়াতটি তরজমা সহ শোনাইলাম।
وَلِلَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান। [ সুরা মুলক ৬৭:৬ ]
তারপর তাকে প্রকৃত সফলতার রাস্তা কোনটা, এই বিষয়ে নীচের আয়াতটি তরজমাসহ শোনাইলাম।
وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে তারাই কৃতকার্য। [ সুরা নুর ২৪:৫২ ]
.
উপরোক্ত আয়াত পড়ামাত্র ধুম করে সে ডানহাত বাড়িয়ে দিলো। মানে, ইসলাম কবুল করবে।
আমার হাত ধরে শাহাদাহ দিলো।
আলহামদুলিল্লাহ। সমস্ত প্রসংশা আল্লাহরই প্রাপ্য।
ইসলাম কবুল করার পরবর্তী দিকনির্দেশনা এবং ঈমানের উপর এস্তেকামাত থাকার পরামর্শ দেয়া হলো।
.
মজার ব্যাপারে হলো, জিন্তুকে যখন বাংলা দু’আ করাচ্ছিলাম …
হে আল্লাহ ! আপনি যাদুকরদের ধ্বংস করে দিন।
তখন জিন্তুর মনের জগতে আবেগ চলে আসছে। জোরে চিৎকার মেরে এই দু’আ করলো এবং কেঁদে দিলো।
… তখন তাকে শান্তনা দিয়ে বললাম, চারপাশে এমনিতেই মানুষ জমে গেছে। তার উপর মসজিদে বসেছি। তাই অনুচ্চ স্বরে দু’আ করো।
আরও পড়ুন…