৭১. দীনের দিকে আসুন— এই বার্তা আজ মানুষের কাছে ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে৷ মানুষ ভাবছে দীনের দিকে ধাবিত হওয়া বুঝি দুনিয়াকে ছেড়ে দেয়া৷ আসলে আদৌ তা নয়৷ দীন এবং দুনিয়া উভয়কে আজ সম্পূর্ণ পরস্পর বিরোধী প্রমাণ করা হচ্ছে৷ যার পরিণতিতে মানুষ দীনের দিকে অগ্রসর হতে উদ্যোগী হয়ে উঠছে না৷ অথচ দীন দুনিয়াকে বর্জন করতে বলে না৷ দীন বরং দুনিয়া অর্জনে উৎসাহিত করে; তবে পার্থক্য এতটুকু— সেই অর্জনটা যেন দীন অনুযায়ী হয়৷ যেন হয় দীনের নির্দেশনা মেনে৷
৭২, ধরুন আপনার একজন গৃহ পরিচারক আছে৷ তাকে বললেন এক কেজি দুধ নিয়ে আসবার জন্যে৷ কিন্তু সে দুধ আনতে রাজি নয় যতক্ষণ না আপনার থেকে উত্তর পাবে কেন আপনি দুধ আনাচ্ছেন? দুধ আপনার কী কাজে দরকার? এখন বলুন, এই গৃহপরিচারকের প্রতি আপনার মনোভাব কেমন হবে? সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন তার প্রতি? রবের সাথে আমাদের সম্পর্ক তেমনই, যেমন আপনার সাথে আপনার গৃহপরিচারকের৷ বরং আমাদের দাসত্ব, আমাদের বাধ্যবাধকতা তার চাইতে ঢের বেশি৷ এখন আমরা যদি রবের হুকুমের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই! হারহামেশা যুক্তি দেখাই— কেন এমনটা করবো? তবে মহান রব কী সন্তুষ্ট থাকবেন আমাদের প্রতি?
৭৩, দীন পালন কঠিন নয়৷ দৈনন্দিনকার কাজে রবের সন্তোষের ইচ্ছা করবেন আর চেষ্টা করবেন তাঁর নিষেধাজ্ঞা থেকে বেঁচে থাকতে৷ ব্যাস, দেখবেন দীন পালন একদমই সহজ৷ কঠিন যা, একটু সদিচ্ছার৷
৭৪. অসুস্থাবস্থায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়বার সমর্থ না থাকলে নামাজ আদায় করতে হয় বসে বসে৷ তবু নামাজ পড়তেই হবে৷ কিন্তু এমতাবস্থায় অনেককেই সংকীর্ণমনা হয়ে পড়তে দেখি৷ অসুস্থতার কারণে বসে নামাজ আদায় করতে হচ্ছে বলে তারা নামাজের পূর্ণ সাওয়াব লাভ করছেন না— এমন এক হিনম্মন্যতায় তাদের ভুগতে দেখি৷ মূলত এটাও দীন সম্পর্কে কম জানাশোনার কারণে হয়ে থাকে৷ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ে অসমর্থতার কারণে যে বসে নামাজ আদায় করছে, কিংবা নামাজ আদায় করছে শুয়ে কিংবা ইশারায় সে তদ্রুপ সাওয়াব লাভ করবে যেমন লাভ করছে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়কারী৷
৭৫. সংসারে কিছু মানুষ দেখি— যারা ইবাদাতে কেবল কাঠিন্য খুঁজে ফেরে৷ যে অবস্থায় ইসলাম কিছুটা স্বস্তিদায়ক পন্থা অবলম্বনের সুযোগ রেখেছে সে অবস্থাতেও তারা কঠিনেরেই ভালোবাসে৷ তাদের ধারণা— যত কঠিন পন্থা অবলম্বিত হবে ইবাদাতে, আল্লাহর আনুগত্যে যত কষ্ট স্বীকার করা হবে বিনিময় তত বেশি৷ নিঃসন্দেহে এটা এক ভ্রান্ত চিন্তা৷ ইবাদাতে বরং সহজ পন্থাটা অবলম্বন করে নেয়াটা সুন্নাত৷ নবিজীকে যখন ইবাদাতের দুটি পন্থার মাঝে ইচ্ছাধিকার দেয়া হতো তিনি সহজতর পন্থাটি গ্রহণ করে নিতেন৷
৭৬. কোনো নির্দিষ্ট আমল করে উঠবার নাম দীন নয়, কোনো নির্দিষ্ট জজবার নাম দীন নয়, দীন নয় কোনো নির্ধারিত ওজিফা পূরণ করে উঠবার নাম৷ দীন তো বরং আল্লাহ তা’লার ইচ্ছা পূরণের নাম৷ যেটা তাঁর পছন্দ, যে পদ্ধতি তাঁর কাছে প্রিয়, যখন যেভাবে আমলের নির্দেশ তাঁর তখন সেই পদ্ধতির অনুসরণের নামই দীন৷ নামাজে দাঁড়াবার সমর্থ নেই, তো নিশ্চিন্তে বসে আদায় করুন৷ বসবারও শক্তি নেই, তো দ্বিধাহীন শুয়ে পড়ুন৷ প্রয়োজনে নামাজ আদায় করুন ইশারায়৷ আর জানুন— এটাই দীন৷ এটাই মহান রবের নির্দেশিত পন্থা৷
৭৭. রোগের ঘোরে ‘আহ’ ধ্বনি বের হয়ে আসতে চাইছে আপনার ভেতর থেকে৷ তবু আপনি জোর করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বের করে আনছেন৷ এটা আল্লাহ তা’লার ওপর বাহাদুরি৷ আল্লাহ তা’লার সামনে বাহাদুরি দেখাতে যাবেন না৷
৭৮. রোগে-শোকে বান্দার জবান থেকে আল্লাহ তা’লা ‘আহ’ শুনতে চান৷ আল্লাহ চান যেন বান্দা সকাতর তাঁর কাছে দুর্বলতা প্রকাশ করে এবং মিনতি করে দ্রুত আরোগ্য লাভের৷ এ সময় তিনি বান্দার থেকে জবরদস্তি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ শুনতে চান না৷
৭৯. অসুস্থতায় পড়ে বান্দা যখন কপাল ঠেকাতে পারে না মাটিতে, দিনভর রোজা রাখতে পারে না রোগের জন্যে আর সেই অপারগতার ব্যাথায় ব্যাথাহত হয়ে পড়ে হৃদয় আল্লাহর কাছে তা বড় প্রিয় হয়ে ধরা দেয়৷ মহান রব বড্ড পছন্দ করেন এমন ব্যাথাতুর হৃদয়৷
৮০. মহান রবের কাছে একজন মানুষের সর্বোচ্চ মর্যাদা— আবদিয়্যাত; গোলামী৷ রবের গোলাম হয়ে উঠুন৷ আর গোলাম রবের ইচ্ছা পূরণেই ব্যাপৃত থাকে কেবল৷ মুনিবের সমুখে তার নিজস্ব ইচ্ছা বলে কিছু থাকে না৷