সংকলন
জাতিয়তাবাদ
আব্দুল্লাহ বিন বশির

জাতীয়তাবাদ । যাহেদ সিদ্দিক মোগল

স্বজাতির প্রতি ভালোবাসা আর গনতান্ত্রিক সংবিধানের জাতীয়তাবাদকে অনেকে গুলিয়ে ফেলেছেন। ফলাফল, ইসলামের স্বজাতীর প্রতি আলাদা টানকে জাতীয়বাদের প্রমাণে দেদারসে ব্যবহার করা হয়েছে। গুলিয়ে ফেলেছেন অনেক কিছু।

ড.যাহেদ সিদ্দিক মোগলের এই লেখাটি মূলত ‘ইতিহাসের দর্পনে ইসলামি রাষ্ট্র ও আধুনিক রাষ্ট্র তত্ত্ব’ বইয়ের একটি অংশ। বইটির বড় একটি অংশ অনুবাদ হয়ে আছে। কিন্তু কাজটা গাফলতির কারণে আটকিয়ে আছে। আল্লাহ দ্রুত কাজটি শেষ করার তাওফিক দান করুক। আমীন।)

খিলাফত ও বর্তমান মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের প্রথম মৌলিক পার্থক্য হলো, বর্তমানের সকল মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে জাতীয়তাবাদের আলোকে গড়ে তোলা হয়েছে। অথচ পূর্বের কোনো যুগে এর অস্থিত্ব ছিলোনা।

জাতীয়তাবাদ বলা হয়, একটি নির্দিষ্ট ভুখণ্ডের সীমারেখা দিয়ে সে হিসেবে ব্যক্তির পরিচয় ও ব্যক্তিত্ব নির্ধারণ। যেমন পাকিস্তানী, আফগানী, বাংলাদেশী ইত্যাদি। আর এই ভিসা এম্বাসি—এগুলো হলো, জাতীয়তাবাদী পরিচয়ের ফলাফল।

 

জাতীয়তাবাদের মৌলিক কিছু গুণাবলি আছে।

ক. জাতীয়তাবাদ মূলত মানুষের মাঝে পরস্পরে ঘৃণার সৃষ্টি করে। নিজ জাতি ছাড়া অন্যজাতিকে সর্বদা প্রতিপক্ষ ভাবাতে শিখায়।

খ. ভালো-মন্দের হিসাব নিজস্ব জাতীর বিবেচনায় করা হয়। যেকোনো ভালো-মন্দ বা যেকোনো স্বার্থে প্রথমে নির্দিষ্ট সে ভুখণ্ডের জাতির প্রতি লক্ষ্য রাখা হবে। যেমন, আফগানে যখন আমেরিকা আক্রমণ করে তখন পাকিস্তানে এই শ্লোগান তোলা হয়েছিলো ‘পাকিস্তানের স্বার্থই সর্বপ্রথম’। (মুসলিম ভ্রাত্বিত্বের এখানে কোনো স্থান নেই)

গ. মানুষকে স্বার্থপরী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে তুলে। যত ধরনের অর্থনৈথিক, সামরিক উন্নতি ও অগ্রগতি আছে সবকিছুই হবে শুধু ঐ নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও তার মানুষের জন্য। এই অর্থে পুঁজিবাদ ও জাতীয়তাবাদ একই ফলাফলে পৌঁছে। আর তা হলো, ব্যক্তি স্বাধীনতা। একটিতে ব্যক্তিকে অফুরন্ত সম্পদ, শক্তি ও নফসের পুঁজার জন্য তৈরি করা হয় আর অন্যটিতে জাতিকে তৈরি করা হয়। (এখানে উল্লেখ্য যে, জাতীয়তাবাদ মূলত পুঁজিবাদের একটি সামর্থক বিষয়।)

ঘ. জাতীয়তাবাদে জাতির জন্য অর্থনৈথিক উন্নতি ও দুনিয়ার খুশি-তামাশা ছাড়া ব্যক্তি জীবনে উন্নতির আর কোনো লক্ষ্য দেওয়া হয়না। পুঁজিবাদই এখানে জীবনের ‘কল্ল্যাণের’ একমাত্র লক্ষ্য। একজন পুঁজিবাদি নিজেও এই জীবন গ্রহণ করে এবং অন্যরাও যাতে জীবনের লক্ষ্যতা নির্ধারণ করে তার পূর্ণ ব্যবস্থা করে দেয় এই জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রসমুহ।

ঙ. জাতীয়তাবাদ মানুষকে অন্যের উপর উপনিবেশবাদের মানসিকতায় বেড়ে উঠায়। তা মানুষকে একটিই লক্ষ্য দেয় তা হলো, জাতীর স্বার্থ এবং নিজ জাতী অন্য জাতীর উপর বিজয়ী হবে, অন্য সমস্ত জাতি তার জাতির অধিনস্তে থাকবে। আর এই জন্য অন্য জাতী গোষ্ঠীকে অধিনস্ত করে এমন প্রত্যেক কাজকে ‘ভালো’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

জাতীয়তাবাদের এই সমস্ত চেতনা ইসলামের মৌলিক আদর্শের সাথে পূর্ণ বিপরীত। ইসলামে ভুখণ্ডভিত্তিক স্বার্থপরতার কোনো স্থান নেই। বরং মুসলিমদের শ্রেষ্ঠত্ব এই কারণে দেওয়া হয়েছে যাতে সে অন্য জাতীর উপকারে আসে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَر

“তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মাত তোমাদের বের করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে”। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০)

অর্থাৎ মুসলিম জাতীর জীবনের অন্যতম প্রধাণ মাকসাদ হলো, মানুষের সংশোধন করা।

 

‘এক উম্মাহ’ দর্শণের দুটো দিক। এক হলো, উম্মাতে দাওয়াত আরেক হলো, উম্মাতে ইজাবাত। কাফেরদের সাথে মুসলিম জাতীর সম্পর্ক ঘৃণার বা বিদ্বেষের নয় বরং দাওয়াত ও সংশোধনের। কাফেরদের সাথে যখন যুদ্ধের সম্পর্ক তৈরি হয় তখন তা এই জন্য নয় যে, কাফেররা আমাদের থেকে সম্পদ ও সমৃদ্ধিতে অগ্রগামী হয়ে গেছে। মুসলিমদের যুদ্ধের একমাত্র লক্ষ্যই হলো, সত্যের সে আহবান কবুল করে তা দুনিয়ার ছড়িয়ে দেওয়ার মহান কাজে তারাও অংশীদার হোক, যা একজন মানুষের জন্য তার স্রষ্টা আল্লাহ পছন্দ করেছেন।

‘জাতীয়তাবাদ’ আর ‘উম্মাহ’ এই দুই দর্শণ কখনো একই সাথে সঠিক হতে পারেনা কারণ তা একটি অপরটির সম্পূর্ণ বিপরীত কনসেপ্ট। জাতীয়তবাদের দর্শণ প্রতিষ্ঠাই হয় ঘৃণার উপর আর ‘উম্মাহ’ এই দর্শণের মূলই হলো সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা।

 

Facebook Comments

Related posts

দরূদ- সৌভাগ্যের সোপান | আব্দুল্লাহ বিন বশির

সুন্নাত ও বিদআতের পরিচয় : কিছু মৌলিক কথা-১ | আল্লামা ইউসুফ লুধিয়ানভী রহ.

সংকলন টিম

৯৯ কুফর ও এক ঈমান: ওলামায়ে দেওবন্দ কী বলে? | আব্দুল্লাহ বিন বশির

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!