যে কোনো ভালো কাজ আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হওয়ার শর্ত দুটি।
১. ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা,
২. সঠিক ভাবে শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় কাজ করা। সঠিকভাবে কাজ না করলে সেই কাজ আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হয় না।
কাজ করার পূর্বে নিয়ত সঠিক করা এবং সঠিক ভাবে কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
একটি ওয়াজ মাহফিল সঠিক ভাবে আয়োজন করতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষযয়াদীর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়।যা লক্ষ রাখা হয় না বলে এ বিষয়ে লেখার প্রয়োজন উপলব্ধি করলাম।
নিচে কয়েকটি পরামর্শ উল্লেখ করলাম।যা মানলে আশা করা যায় আপনাদের ঘাম জড়িয়ে আয়োজন করা ওয়াজ মাহফিল আল্লাহর দরবারে কবুল ও গ্রহণযোগ্য হবে।
ওয়ায়েজ নির্বাচন ও দাওয়াত পদ্ধতি:ওয়ায়েজ তথা বক্তা নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে উনার ইলম এবং আমল। ইলম ছাড়া কোনো ওয়ায়েজ যদি ওয়াজ করেন তাহলে উনার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি।আর যার ইলম আছে অথচ আমল নেই উনার কথার দ্বারা মানুষের কোন ফায়দা হবে না।উনার কথায় কোন আসর থাকবে না।
“আমল ছাড়া ইলম অন্ধকার ছাড়া কিছু নয়, আর ইলম ছাড়া আমল অসংখ্য ফিতনার দরজা “
যার মধ্যে এই দুটি তথা ইলম ও আমলের সংমিশ্রণ থাকবেনা উনাকে দাওয়াত দেয়া যাবেনা।চাই উনি যতই জনপ্রিয় হোন না কেন।
এমন কোন ওয়ায়েজকে দাওয়াত দেয়া যাবে না যিনি কুরআন হাদিস বাদ দিয়ে নিজে থেকে কথা বলেন।বানোয়াট কিচ্ছা কাহিনী বলে ওয়াজ করেন।কৌতুক বলে মাহফিলের মঞ্চকে তামাশার মঞ্চ বানান।
প্রত্যেক ওয়াজকে দাওয়ার দেওয়ার সময় উনার বক্তৃতার বিষয়বস্তু ও সময় নিয়ে আলোচনা করবেন।
এক্ষেত্রে অবশ্যই আলেম-উলামাদের পরামর্শ নিবেন।
মাইক স্পিকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে; যে আমাদের মাহফিল যেন কারো কষ্টের কারণ না হয়।তাহলে সব কষ্ট বিফলে যাবে।আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার বিপরীতে গোনাহ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।তাই যথাসম্ভব স্পিকার ব্যবহার করুন।যাতে আওয়াজটা মাহফিলের ভিতরেই থাকে।একান্ত মাইক ব্যবহার করলে তা রাত নয়টা দশটার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন ।উচ্চ আওয়াজের কারণে কেউ রাতে ঘুমাতে পারলো না যার কারণে তার ফজরের নামাজ কাজা হয়ে গেল।এর পুরো দায়বার কিন্তু আপনাদের নিতে হবে।তাছাড়া ভিন্ন ধর্মালম্বী ভাইদের কষ্ট হবে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।কাউকে কষ্ট দেয়া ইসলাম কখনো শিক্ষা দেয়া না।
টাইম ম্যানেজমেন্ট:মাহফিল রাত দশটার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।এমনও দেখা যায় যে গভীর রাতে মাহফিল থেকে ফিরে সকাল বেলা ফজরের নামাজের জন্য উঠতে পারেন না।সুতরাং বিষয়টি লক্ষ্য রাখা উচিত।
প্রত্যেক ওয়ায়েজের সাথে আলোচনা করে যার যার আলোচ্য বিষয় ও সময় বন্টন করে দিন। এগুলো নোট করে রাখুন।কোনো অবস্থাতেই যাতে নির্ধারিত সময় পার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
মাহফিলের দাওয়াত পদ্ধতি
মাহফিলের দাওয়াত সর্বস্তরের মুসল্লিদের কাছে পৌঁছানোর জন্য মাইকিং বা পোষ্টারের ব্যবহার বন্ধ করা উত্তম বলে মনে করি।উভয়টাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।মাইকের আওয়াজে যদি কারো কষ্ট হয় বা অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত জায়গায় পোস্টার লাগানো হয়।তাহলে আল্লাহর কাছে এর জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে।
এক্ষেত্রে আশাপাশের প্রত্যেক মসজিদে মাহফিলের আগে জুমাবারে চিঠি পাঠিয়ে দিবেন।যাতে ‘ইমাম সাহেবের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসল্লিদের দাওয়াত’ এরকম কথা উল্লেখ থাকবে।নামাজের পর কিংবা খুতবার আগে ইমাম সাহেব সবাইকে জানিয়ে দিবেন।
এমন যদি কেউ থাকেন যে জুমাবারেও মসজিদে আসেন না তাদেরকে আলাদা চিঠি দিয়ে আসার অনুরোধ করতে পারেন।প্রয়োজনের সংক্ষেপে নসীহতও করতে পারেন। এতে তারা মাহফিলে উপস্থিত হতে আগ্রহী হবে।
মেহমানদের মেহমানদারী
ওয়ায়েজদের পর্যাপ্ত মেহমানদারীর ব্যবস্থা করুন।তাদের খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখুন।গাড়ি ভাড়া ও পর্যাপ্ত হাদিয়ার ব্যবস্থা করুন।দূরদূরান্ত থেকে আগত মেহমানদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করুন।তাদের পর্যাপ্ত মেহমানদারী করার চেষ্টা করুন।
পরিশেষে
একটা ওয়াজ মাহফিল যেমন জরুরি ঠিক তেমনিভাবে তা সঠিক ভাবে সঠিক উপায়ে হচ্ছে কি না খেয়াল রাখাও জরুরি। মাহফিলের কারণে কারো কষ্ট হচ্ছে কিনা,কারো ক্ষতি হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখাও জরুরি।
আর ইখলাস ছাড়া কোনো আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিক নিয়মে সঠিক উপায়ে ইখলাসের সহীত দ্বীনের খেদমত করার তৌফিক দান করুন।
Facebook Comments