সংকলন
চলন্ত কুতুবখানা
জীবনী মুশতাক আহমাদ লেখক

চলন্ত কুতুবখানা : আল্লামা কাশ্মীরী (রহ.) | মুশতাক আহমাদ

তাঁর ব্যাপারে বড়দের মন্তব্য
————————————
আমার কাছে ইসলামের সত্যতার অন্যতম প্রমাণ হলো, আল্লামা কাশ্মীরীর মতো ব্যক্তি মুসলিম উম্মাহর মাঝে রয়েছেন। যদি ইসলামের মাঝে কোনো ধরনের অপূর্ণতা বা খুঁত থাকত তাহলে তিনি অবশ্যই ইসলাম থেকে বিমুখ হয়ে যেতেন।
-হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ.।

শায়খুল হিন্দ তার সনদের ইজাযতনামা এভাবে লেখেন,
‘আল্লাহ পাক মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরীর মাঝে ইলম, আমল, সীরাত, সুরত, তাকওয়া-পরহেযগারী ও মেধাপ্রতিভা সব জমা করে দিয়েছেন।’

আল্লামা যাহেদ কাউসারী বলেন, হাদীস থেকে সূক্ষ্ম মাসয়ালা ইস্তিম্বাতের ক্ষেত্রে শায়েখ ইবনে হুমামের পরে তার মতো আলেম পুরো পৃথিবীতে নেই। অথচ কম যামানা অতিবাহিত হয়নি।

আমীরে শরীয়ত সাইয়েদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী বলতেন, ‘সাহাবায়ে কেরামের কাফেলা যাচ্ছিল আল্লামা কাশ্মীরী পেছনে রয়ে গেছেন।’

মাওলানা আবুল কালাম আযাদ একবার দেওবন্দের কবরস্থানে পায়চারি করছেন আর বলছেন, ইলমের কবর যিয়ারত করছি। কবরটি ছিল আল্লামা কাশ্মীরীর।

আল্লামা ইকবাল বলেন, ‘ইসলামের শেষ পাঁচ শ বছরে আল্লামা কাশ্মীরীর নজির মেলা ভার।’

তাঁর অতুলনীয় স্মৃতিশক্তির কয়েকটা ঘটনা
——————————————————-
একবার ভারতে একটা কলেজের লাইব্রেরি জ্বলে যায়। তখন সব জায়গায়ই সেটার আলোচনা হতো। তেমনি দেওবন্দের শিক্ষকদের চায়ের আসরে সেই আলোচনা উঠল। তখনকার মুহতামিম হাবীবুর রহমান রহ. বলেন, আমাদের দেওবন্দের লাইব্রেরি জ্বলে গেলেও ভয় নেই। আল্লাহ যদি শাহ সাহেবকে সবগুলো বই লিখার মতো হায়াত দেন, তাহলে তিনি তা পুনরায় লিখে যেতে পারবেন।

মানাযের আহসাল গিলানী বলেন, ‘শাহ সাহেবের চল্লিশ হাজাত হাদীস মুখস্থ ছিল।’

শায়খুল হাদীস ইদরিস কান্ধলভী রহ. বলেন, ‘আল্লামা কাশ্মীরীর স্মৃতিশক্তি ছিল এমন, যা একবার দেখতেন বা শুনতেন সারা জীবনের জন্য স্মৃতিতে গেঁথে যেত। যেন যুগের ইমাম জুহরী। ইমাম জুহরী কানে আঙুল দিয়ে মদীনার বাজার অতিক্রম করতেন। কেউ কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতেন, আমার কানে যা ঢুকে তা বের হয় না। এজন্য বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় কানে আঙুল দিয়ে যাই, যেন মানুষের আজেবাজে কথাবার্তা কানে না আসে।’

একবার তিনি নিজেই দরসে বলেন, ছাব্বিশ বছর আগে ‘ফতহুল কাদির’ অধ্যয়ন করেছি, আলহামদুলিল্লাহ এখনো পুনরায় দেখার প্রয়োজন নেই।

শায়খুল ইসলাম হোসাইন আহমদ মাদানী বলেন, ‘আমাকে শাহ সাহেব বলেছেন, কোনো কিতাব সাধারণ দৃষ্টিতে পড়লে, মনে রাখার চেষ্টা না করলেও অন্তত পনেরো বছর মনে থাকে।’

আল্লামা কাশ্মীরী নিজেকে আড়াল করে বলতেন, এক লোক পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ ধরে দোয়া করেছে, হে আল্লাহ! আমাকে ইবনে হাজারের মতো স্মৃতিশক্তি দান করো। তার দোয়া কবুল হয়েছে। জামিয়া রশিদিয়ার শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ সাহেব বলেন, লোকটি আর কেউ নয়, উনি নিজেই। নিজেকে আড়াল করে তিনি কথাটা বলতেন।
.
ভাওয়ালপুরে মুসলমান আর কাদিয়ানীদের মাঝে মুকদ্দমা চলছিল। তারা ইমাম রাজীর একটা বই থেকে দলীল দেয়। সেটা ছিল কাটছাঁট। মুসলমান পক্ষের লোকেরা পেরেশান। হঠাৎ শাহ সাহেব গর্জে উঠে বললেন, এই কিতাব ৩২ বছর পূর্বে আমি পড়েছি। ইমাম রাজী এভাবে বলেননি (যেভাবে তারা বলছে), তিনি মূলত এভাবে বলেছেন। পরে বই আনলে মিলিয়ে দেখা যায় শাহ সাহেব যেভাবে বলেছেন সেভাবেই লেখা।

Facebook Comments

Related posts

রুকইয়াহ কেস স্টাডি: ৩ (বিচ্ছেদের মিশনে জ্বীন) | তোফায়েল খান

সাহাবায়ে কেরাম কি বিজিত এলাকার মূর্তি অক্ষত রেখেছিলেন? | ইমরান রাইহান

সংকলন টিম

নির্মল জীবন-৩ | ইমরান রাইহান

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!