সংকলন
obaidullah-sindhi
জীবনী

হযরত মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী এবং তার কিতাব আত তামহিদ | ড. আকরাম নদভী

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি (১২৮৯হি./১৮৭২ঈ. মৃত্যু ১৩৬৩হি./ ১৯৪৪) রাহি. ছিলেন উপমহাদেশের নামকরা মুজাহিদ আলিমে দ্বীন। আন্দোলন ও বিপ্লবের ময়দানে তিনি যে কীর্তি গড়েছেন তার দৃষ্টান্ত বিরল না হলেও কম তো অবশ্যই।

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধির ব্যাপারে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। তার সম্মান হরণকে বৈধ মনে করা হয়েছে। এ কারণেই মাওলানার ব্যাপারে ইনসাফপূর্ণ লেখা খুব কমই পাওয়া যাবে। সাধারণ আলেম ও ছাত্রদের মত আমার মনেও ছিল মাওলানার নেতিবাচক কল্পনা। কয়েক বছর আগে আমার বন্ধু মাওলানা যাহুর আল হুসাইনি সাহেব আমাকে দিলেন মাওলানার একটি আরবি গ্রন্থ আত তামহিদ। এ বইটি যখন আমি পাঠ করলাম, বিস্ময়ে আমার চোখ খুলে গেল। তার ব্যাপারে আমার ভুল ধারণার অপনোদন ঘটল। তার ব্যক্তিত্বকে আমার মনে হলো বর্তমান যুগের বিজ্ঞ চিন্তক ও মুহাক্কিকদের কাতারে শীর্ষস্থানে। এরপর আমি ভাবলাম তার সঠিক অবস্থান ও মর্যাদা মানুষের সামনে তুলে ধরা আমার ইলমি ও দ্বীনি দায়িত্ব। মাঝে মাঝে এ ধারণা হতো পাছে সংকীর্ণমনা ও গোঁড়া লোকেরা আমাকে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না করে। আমাকে আল্লাহ হিম্মত ও সাহস দিলেন। সবধরণের দ্বিধা-সংশয়কে একপাশে রেখে আল্লাহর নাম নিয়ে পূর্ণ আস্থা নিয়ে নীচের কথাগুলো লিখছি।

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধির এ কিতাব ‘আত তামহিদ’ মূলত সংস্কার ও সংস্কারকদের ইতিহাস, মুতাআখখিরীন তথা পরবর্তী আলিমদের আসানিদ (সূত্র পরম্পরা) বিষয়ে একটি বিরল ও মূল্যবান গ্রন্থ। এ কিতাবের কভারে হাকিমুল ইসলাম মাওলানা কারি তাইয়িব রাহি. লিখেছেন, ‘এ গ্রন্থটি ইতিহাস, দর্শন ও রাজনীতির একটি অপূর্ব দর্পণ, যেটি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি রাহিমাহুল্লাহ উন্নত চিন্তার ফলাফল। এর প্রতিটি খÐ ছেপে আসা দরকার। অধমও একটি কপি দারুল উলুম দেওবন্দের কুতুবখানার জন্য করিয়ে রাখলাম।’

মুহাম্মদ তাইয়িব, বর্তমানে অবস্থানরত করাচি, ৫ নভেম্বর ১৯৯৫ ঈসায়ী।

এ গ্রন্থটি প্রথমবারের মত প্রকাশিত হয় ১৩৯৬/১৯৭৬ সনে মাওলানা আবু সাঈদ গোলাম মোস্তফা সিন্ধীর সম্পাদনায় ‘লাজনাতু ইহয়াইল আদাবিস সিন্ধী’র পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়। মাঝারি সাইজের ৫০০ পৃষ্ঠার মত কিতাবের ব্যপ্তি। বইয়ে আছে বেশ কয়েকটি অধ্যায়। মুকাদ্দিমা-য়ে ইবনে খালদুন, শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহি.র হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, আবুল খায়ের মাক্কী, নবাব সিদ্দিক হাসান খান এবং আব্দুল ওয়াহহাব মাক্কি রাহিমাহুমুল্লাহর বইপত্র থেকে তিনি বিভিন্ন জায়গায় উদ্ধৃতি টেনেছেন।

এ কিতাবে সবচেয়ে বেশি ভক্তিভরা আলোচনা করেছেন তার সম্মানিত উস্তাদ শায়খুল হিন্দ আল্লামা মাহমুদ হাসান রাহিমাহুল্লাহর। তার জ্ঞানতাত্বিক অবস্থান নিয়ে সমৃদ্ধ আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। শাইখুল হিন্দের আসানিদ পুরো বইয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শাইখুল হিন্দের নেতৃত্বগুণ যেমন, ইখলাস তথা নিষ্ঠা, অন্যকে প্রাধাণ্য দেওয়া এবং কাজ করার অসীম সাহস এ বিষয়গুলোকে বেশি ফোকাস করা হয়েছে। এগুলোই সে গুণাবলী, যেগুলোকে অবলম্বন করে তিনি সে যুগের পৃথিবীর সবচে’ বড় শক্তির মোকাবেলা করেছেন পূর্ণ শক্তি আর অসীম সাহসিকতা নিয়ে। আরেক স্থানে তিনি নিজের উস্তাদ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমরা হযরত শাইখুল হিন্দকে মৃত্যু সম্পর্কে এত বেশি ভয়ভীতিহীন ও দুঃসাহসী দেখেছি যে, পৃথিবীর কাউকে আমরা তার মতো বলে স্বীকার করতে পারি না। এ কারণেই আমরা গর্ববোধ করি যে, আমাদের উস্তাদ ছিলেন সবচেয়ে সাহসী বুযুর্গ। যে দলের নেতা এমন গুণসম্পন্ন হবেন এবং যে দলের যুবকর্মীরা এমন হবে যেমনটা আমরা দেখেছি সে দল কখনও ব্যর্থ হতে পারে না পৃথিবীতে। (মাজমুআ তাফাসিরে ইমাম সিন্ধি, পৃষ্ঠা: ৩৩৫-৩৩৬)

এ কিতাব থেকে জানা যায়, মাওলানা ফিকহি মাসলাকের ক্ষেত্রে ছিলেন উদার মানসিকতার। তার চিন্তাধারা ছিল বৈপ্লবিক। অন্য মাসলাক ও ঘরাণার আলিমদের সঙ্গে ছিল তার অন্তরঙ্গতা। তার যাপন-পদ্ধতি ঐতিহ্যবাহী শায়খ ও আলিমদের চেয়ে ভিন্ন। মাথায় না টুপি থাকত, না পাগড়ি। খোলা মাথায় থাকার তার কাছে ছিল যৌক্তিক কারণ। এ প্রসঙ্গে মাওলানা সাঈদ আহমদ আকবরাবাদী লিখেছেন, ‘মাওলানা সিন্ধি সবসময় খোলা মাথায় থাকতেন। একবার আমি এবং মাওলানা দিল্লির জামে মসজিদের দক্ষিণ দিকের দরোজার নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমতাবস্থায় আমি প্রশ্ন করেই বসলাম, মাওলানা, আপনি সবসময় খালি মাথায় থাকেন কেন? তিনি সঙ্গে সঙ্গে লালকেল্লার দিকে ইঙ্গিত করে কিছুটা ক্ষোভ মেশানো এবং কিছুটা আফসোসের স্বরে বললেন, আমার টুপি সেদিনই মাথা থেকে পড়ে গেছে, যেদিন থেকে এ লালকেল্লা আমার হাত থেকে ছুটে গেছে। যতদিন পর্যন্ত লালকেল্লা আমরা উদ্ধার করতে পারছি না, আমার আত্মমর্যাদাবোধ আমাকে এ অনুমতি দেয় না যে, আমি টুপি পরিধাণ করি। (বিস বড়ে মুসলমান পৃষ্ঠা: ৪১১-৪১২)

শাইখুল হিন্দের সকল ছাত্ররা ত্যাগ-তিতিক্ষায় সমান মাত্রার ছিলেন না। অথচ মাওলানা সিন্ধি নিজের শিক্ষকের পথ থেকে বিন্দুমাত্র সরতে রাজি ছিলেন না। এর ফলস্বরূপ একদল লোক তার বিরোধিতায় নেমে গেল। ভারতবর্ষের সিংহভাগ আলিমরা ব্যাপকভাবে এ শ্রেণীর অপপ্রচারের শিকার হয়ে গেলেন। মাওলানা সিন্ধি নিজেই শাইখুল হিন্দের ছাত্রদের বিভিন্ন অবস্থানের ব্যখ্যা সুন্দরভাবে করেছেন। তিনি লিখেছেন,

‘হযরত মাওলানা শাইখুল হিন্দ রাহি.র অনুসারীদের মধ্যে তিনটি শ্রেণী রয়েছে।

(ক) একদল হলো, যারা শাইখুল হিন্দের চিন্তা-চেতনা ও পরিকল্পনাকে সঠিক মনে করতেন। শুধু তাই নয়; কর্মক্ষেত্রেও তারা সঙ্গী হয়েছিলেন শাইখুল হিন্দের।

(খ) দ্বিতীয় শ্রেণী হলো, যারা শাইখুল হিন্দের চিন্তা-চেতনা ও পরিকল্পনাকে সঠিক মনে করতেন। কিন্তু তারা কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তারা নিজেদের অক্ষমতা পেশ করেছেন। নিজেদেরকে তারা ভেবেছেন অপরাধী। এ দুই শ্রেণী হলো নববী যুগে মুমিনদের উদাহরণ।

(গ) তৃতীয় শ্রেণীটি হলো, যারা নিজেদের কথায় ও কর্মে শাইখুল হিন্দের চেতনা ও পরিকল্পনাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করত। কিন্তু তারা দাবি করত তারা শাইখুল হিন্দের ছাত্র ও ভক্ত। শায়খের ইলমের উত্তরাধিকারী তারা। এ দলের দৃষ্টান্ত হলো নববী যুগের মুনাফিকদের মতো। আমি বলি, তাহলে তো এখন বলতে হবে, শাইখুল হিন্দ রাহি. ছিলেন নাউযুবিল্লাহ মূর্খ ও বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী। তিনি মুসলমানদের পরিচালিত করেছেন ভুল পথে। তাদের তিনি বহু ক্ষতি করেছেন। যদি শাইখুল হিন্দকে সঠিক রাস্তার পথিক মনে করা হয়, তাহলে তার অনুসারীদের মধ্যে যারা তার বিরোধিতা করেন এবং চিন্তাগত দিক থেকে তার বিরুদ্ধে মানুষকে পরিচালিত করতে চান তারা তো তাকে মূলত মিথ্যা প্রতিপন্ন করছেন। এ তো হতেই পারে না যে, শাইখুল হিন্দের মত ও পথ সঠিক হবে এবং তার বিরুদ্ধে যারা দাওয়াত দেয় তারাও সঠিক হবে। এ শ্রেণীর লোকদেরকে দেওবন্দিদের নেতৃত্বের জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। যত দিন এ মুনাফিক শ্রেণীর লোকেরা নেতৃত্বে অবস্থান করবে ততদিন পর্যন্ত নিষ্ঠাবান মুরব্বিদের পক্ষে সাফল্য লাভ করা সম্ভব নয়। আজকাল আমাদের আর সামর্থ্য নেই যে, তাদেরকে জামাত থেকে বের করতে সমর্থ হব। কিন্তু যখন আমাদের হাতে ক্ষমতা আসবে তখন তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দিতে, কিংবা জেলে বন্দী করতে কিংবা মৃত্যুদÐ দিতেও দ্বিধা করব না।’ (মাজমুআ তাফাসিরে সিন্ধী পৃষ্ঠা: ৩৩৬-৩৩৭)

মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি ছিলেন শাইখুল হিন্দের প্রথম শ্রেণীর সত্যবাদী ও বিশ^স্ত ও নির্ভরযোগ্য ছাত্রদের অন্যতম। আন্দোলন ও বিপ্লবের ময়দানে মাওলানা সিন্ধির ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং সাফল্য ছিল লক্ষ্য করার মতো। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি ইলমের ময়দানেও ছিলেন উঁচু স্তরের। শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহিমাহুল্লার চিন্তাধারা তার মতো করে অন্যরা খুব কমই হয়ত পাঠ করেছেন। তিনি বছরের পর বছর হুজ্জাতুল্লাহ পড়িয়েছেন। আফসোসের বিষয় হলো, পরবর্তীতে কিছু লোক বুদ্ধিবৃত্তির এ বইটিকে একটি ফিকহি সংকলনের মতো বানিয়ে ফেলেছেন।

হাদিস শাস্ত্রেও ছিল তার ভালো পাÐিত্য। মুতাআখখিরীনদের আসানিদ এবং ইজাযাত নিয়েও ছিল তার ভালো জানাশোনা। খুব সম্ভবত এ শাস্ত্রে তিনি শায়খ আহমদ আবুল খায়ের আত্তার মাক্কি -আন নাফহুল মিসকি প্রণেতা- এবং আল্লামা আব্দুল হাই হাসানি -নুযহাতুল খাওয়াতির প্রণেতা- এর পর সবার চেয়ে অগ্রগামী হবেন।

এ গ্রন্থে শাইখুল হিন্দ আল্লামা মাহমুদ হাসান দেওবন্দির পর সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধামিশ্রিত আলোচনা করেছেন ইমাম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রাহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে। গাঙ্গুহি রাহি.র কাছে তিনি সুনানে আবু দাউদের বড় একটি অংশ পাঠ করেছিলেন তাফাক্কুহ সহ। কিন্তু তার কাছ থেকে হাদিসের ইজাযত গ্রহণ করেননি। (পৃষ্ঠা: ১১-১২) গাঙ্গুহি রাহি. থেকে তিনি বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছেন। ফিকহ ও হাদিস শাস্ত্রে তার অবস্থান ও মর্যাদা তুলে ধরেছেন। তাকে তিনি তুলনা করেছেন শাহ ইসহাক মুহাদ্দিসে দেহলভি রাহি.র সঙ্গে।

পরবর্তীতে তিনি অংশগ্রহণ করেন আহলে হাদিস ঘরাণার বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ নযির হুসাইন দেহলভি রাহি.র বুখারি ও তিরমিযির দরসে। তিনি বলেন, শায়খের পক্ষ থেকে আমি ইজাযতে আম্মাহ লাভ করেছি। আরও বলেন, আমি শায়খের ছাত্রদের থেকে ব্যাপক উপকৃত হয়েছি। তারপর কিছু নাম তিনি উল্লেখ করেছেন অত্যন্ত উঁচুমাপের উপাধিসহ:

  • ইমাম শায়খ আবদুল জাব্বার গজনবি
  • মহান শায়খ আল উসতাযুল মুহাক্কিক আব্দুল্লাহ গাজিপুরি
  • শায়খ মুহাম্মদ বিন বারাকাল্লাহ লাহোরি
  • মুহাক্কিক ইমাম আবুত তাইয়িব শামসুল হক আযিমাবাদি
  • আশ শায়খ আবু সাঈদ মুহাম্মদ হুসাইন লাহোরী। (যিনি হুসাইন আহমদ বাটালভি নামে সমধিক পরিচিত।)

তিনি আরও লিখেছেন, আমি আল্লামা নবাব সিদ্দিক হাসান খান আল কিন্নাওজি ভুপালী রাহি.র রচনাবলী থেকে দারুণ উপকৃত হয়েছি। তার ঝোঁক বেশি ছিল ইয়েমেনের আলিমদের প্রতি।

এরপর তিনি আলোচনা করেছেন শায়খ হুসাইন বিন মুহসিন আল আনসারি আল ইয়েমেনি রাহি.র কথা। তার কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন ফিকহে শাফেয়ি এবং মুসালসালাতের সনদ। ইজাযতে আম্মাহ লাভ করেছেন তার কাছ থেকে। তিনি বলেন, হাদিসের সঙ্গে তাআমুলের পদ্ধতি তার কাছ থেকে শিখেছি। আমি তার কাছে সহিহ বুখারি, ফাতহুল বারি, সুন্নাহর মৌলিক গ্রন্থাবলী এবং নাইলুল আওতারের কিছু অংশ পাঠ করেছি। তার কাছ থেকে খুব বেশি উপকৃত হয়েছি। আমি দেখেছি তিনি হাফেজ ইবনু হাজারের ওপর ঐরকম নির্ভর করেন যেমনটা আমি করি ইমাম ওয়ালিউল্লাহ দেহলভির ওপর। তার সান্নিধ্যে আমি সেসব লোকদের পদ্ধতি শিখেছি যারা সহিহ বুখারিকে সর্বাগ্রে রাখে।

এছাড়া অন্যান্য শায়খ, যাদের কাছ থেকে তিনি ইজাযত লাভ করেছেন তারা হলেন:

  • শায়খ আব্বাস বিন জাফর আল মাক্কি
  • শায়খ আলি বিন জাহির আল ওয়াতারি
  • শায়খ আবদুল জলিল বিন আবদুস সালাম বারাদাহ
  • শায়খ তাজউদ্দিন আবদুস সাত্তার বিন আবদুল ওয়াহহান আল হিন্দি আল মাক্কি
  • শায়খ মুহাম্মদ সিদ্দিক আস সিন্ধি
  • শায়খ আহমদ আবুল খায়র আত্তার আল মাক্কি
  • শায়খ আবুশ শারাফ আব্দুল কাদের বিন মুহাম্মদ মাসুম বিন আব্দুর রশিদ বিন আহমদ সাঈদ দেহলভি
  • হাফেজ আব্দুল হাই আল কাত্তানি
  • শায়খ আব্দুল কারিম আল বায়েলি
  • শায়খ আব্দুর রাযযাক কাবুলি
  • শায়খ আবুস সিরাজ গোলাম মুহাম্মদ দেওবন্দি
  • শায়খ আবুল হাসান আমরুতি
  • সাইয়েদ আবুত তুরাব রুশদুল্লাহ

এসকল শায়েখদের সনদ তিনি বিভিন্ন জায়গায় উদ্ধৃত করেছেন।

এ গ্রন্থে তিনি আফগানিস্তান, তুরস্ক, রাশিয়া এবং আরব বিশে^র বিভিন্ন দেশে নিজের ভ্রমণবৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করেছেন। বিভিন্ন দেশের আলিমদের সঙ্গে মেলামেশা এবং তাদের কাছ থেকে উপকৃত হওয়ায় এ ফায়েদা হয়েছিল যে, তাঁর মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ মেজাজ দৃড় হয়ে যায়। এজন্য তিনি ছাত্রদেরকে ইনসাফের সঙ্গে কাজ করতে এবং গোঁড়ামি থেকে বেঁচে থাকতে বারবার গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের আহŸান করেছেন। জায়গায় জায়গায় শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভির মানহাজের প্রশংসা করেছেন। অন্য ঘরাণার আলিমদের আলোচনাও করেছেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে। যেমন, মাওলানা নাযির হুসাইন দেহলভিকে বারবার শাইখুল ইসলাম বলে স্মরণ করেছেন। এরকমভাবে শায়খ হুসাইন বিন মুহসিন আল ইয়ামানীকেও শাইখুল ইসলাম উপাধিসহ উল্লেখ করেছেন। এক জায়গায় (পৃষ্ঠা:২৩) তাকে মুজতাহিদ বলেও অভিহিত করেছেন। সাইয়েদ আহমদ শহিদের জন্য ব্যবহার করেছেন এ উপাধি المهدي الهندي أمير المؤمنين السيد أحمد الدهلوي الشهيد । এখানে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, তিনি ‘মাহদি’ উপাধি ব্যবহার করেছেন সাইয়েদ আহমদ শহিদের জন্য।

এ গ্রন্থে বহু মূল্যবান আলোচনা আছে। পরোক্ষভাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ ফাওয়ায়েদ আছে। যেমন এক স্থানে (পৃষ্ঠা: ৩৫৪) তিনি নসিহত করেছেন, হানাফি ইমামদের মধ্যে যেন ইমাম সুফিয়ান সাওরি রাহি.কেও গণ্য করা হয়। এভাবেই হানাফি মাযহাব পুরো ইরাকের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। যদি দলীলের দিক থেকে সুফিয়ান সাওরি রাহি.র বক্তব্য অধিকতর শক্তিশালি হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্যকে প্রাধাণ্য দিতে দ্বিধা করা উচিত নয়। এভাবে বহু তাকাল্লুফ ও পেরেশানি থেকে সহজে আমরা মুক্তি পেতে পারি।

তিনি মোঘল স¤্রাট আওরঙ্গজেব রাহি.র সনদও উল্লেখ করেছেন। তাকে উপাধি দিয়েছেন أمثل سلاطين الهند السلطان محيي الدين محمد عالمكير الدهلوي رئيس الفقهاء الحنفية। অন্য এক স্থানে তাকে স্মরণ করেছেন الإمام المجدد السلطان عالمكير বলে।

আমার সৌভাগ্য যে, আমি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি রাহি.র দুইজন ইজাযত প্রাপ্ত শাগরিদদের থেকে ইজাযত লাভ করেছি। একজন হলেন মাওলানা জালালুদ্দিন আল জামালি। দ্বিতীয়জন হলেন মাওলানা ফজলে হক আর রাশেদি সিন্ধি। মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি থেকে এ মাধ্যমে বর্ণনা এটা আমার উঁচু সনদের একটি। আলহামদুলিল্লাহ।

মোদ্দাকথা, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধির ব্যক্তিত্ব ও চিন্তাধারা বোঝার জন্য স্বয়ং তার রচিত কিতাবগুলো পাঠ করা মৌলিক গুরুত্বের দাবি রাখে। তার বইপত্র পাঠ করলে উলামায়ে কেরামের মধ্যে প্রশস্ততা তৈরি হবে। চিন্তায় তৈরি হবে গভীরতা। বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রজ্ঞার সঙ্গে চিন্তাভাবনা করার ক্ষেত্রে সাহায্য পাওয়া যাবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিজ্ঞ আহলে ইলমদের সত্যিকার ভালোবাসা দান করেন এবং প্রান্তিকতা থেকে আমাদের সকলকে ফোজত করেন।

Related posts

রুকনুদ্দিন বাইবার্স | ইমরান রাইহান

সংকলন টিম

শায়খ নাজমুদ্দিন কুবরা | ইমরান রাইহান

ভালবাসার এক নাম ইমাম আল হাফেজ জালালুদ্দিন আস সুয়ূত্বী রহিমাহুল্লাহ । আব্দুল্লাহ আল মামুন

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!