সংকলন
আবু তালেব (ছদ্মনাম)
প্রতিযোগিতা-২

নীড়ে ফেরার গল্প-৪৫ | আবু তালেব (ছদ্মনাম)

-ঠক ঠক ঠক

-কে?

-আল্লাহর ঘর থেকে, আল্লাহর মেহমান, আল্লাহর কথা নিয়ে এসেছেন। ঘরে কোনো পুরুষ থাকলে মেহেরবানী করে বেরিয়ে আসলে ভালো হয়।

আমার জন্মটা হয়েছিল গতানুগতিক বাঙালি মুসলিম পরিবারে।মা নিয়মিত নামাজ পড়তেন।বাবা মাঝে মাঝে নামাজ পড়তেন। কিন্তু ইসলামের ছিটেফোঁটাও আমার মাঝে ছিল না।কোনো মক্তবেও যাই নি।সুরা কালাম কিছু স্কুলের বইতে ছিল সেগুলোই শিক্ষকদের চাপে মুখস্ত করতাম।ক্লাস ৭ এ থাকতে এলাকার হুজুরের কাছ থেকে কুরআন পড়া শিখেছিলাম কিন্তু ততদিনে ভুলে যাই।আস্তে আস্তে বড় হতে থাকি।কৈশোরের হাওয়া লাগে মনে,অন্তরে।ছাত্র হিসেবে মোটামুটি ছিলাম।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে  জড়িয়ে পড়তে থাকি গুনাহের কাজে। খারাপ একটা জগতে। শুধুমাত্র নেশা এবং ফ্রি মিক্সিং বাদে প্রায় কমবেশি সব খারাপ কাজেই ছিলাম।নিজের মাঝে ইসলামের ছিটেফোঁটা যা ছিল সব চলে যায়।শুধু জুমুয়ার নামাযের সাপ্তাহিক মুসল্লি ছিলাম।নামায শুরু হওয়ার ২ মিনিট আগে মসজিদে গিয়া ২ রাকাত ফরয নামায পড়ে আবার বাসায় চলে আসতাম। মাঝে মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালের বইগুলো পড়তাম।একসময় SSC পরিক্ষা দিলাম।২০১৭ সাল।সময় কাটতে থাকে আগের মতোই ;গান,সিনেমা,নাটক, মুভি,আড্ডা,গেইমিং আরও কত কি। তিন মাসের বন্ধ কলেজ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।হঠাৎ কোনো এক গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ভেজা সকালে অনুমানিক ১০ টার দিকে দুইজন লোক আমাদের বাসায় এলেন।দরজায় টোকা দিলেন।

-ঠক ঠক ঠক

-কে?

-আল্লাহর ঘর থেকে, আল্লাহর কথা নিয়ে, আল্লাহর মেহমান এসেছেন।ঘরে পুরুষ থাকলে মেহেরবানি করে বেরিয়ে আসলে ভালো হয়।

বের হতেই দেখি এলাকার এক বড় ভাই সাথে আরেকজন অদ্ভুত দর্শনের লোক। ইয়া লম্বা, মাথায় অনেক বড় পাগড়ি।ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম লোকটা চীন থেকে এসেছেন।লোকটা বাংলা,ইংরেজি এবং চাইনিজ ভাষায় অনেক কথা বললেন।কিছুই বুঝলাম না। শেষে ভাই বললেন তাবলীগের কথা।তখন আমি কথা প্যাচানো শুরু করলাম। বাসায় কাজ আছে,পরিবার রাজি হবে না,গ্রামে যাব ইত্যাদি ইত্যাদি কত কথা।নাহ! শেষ পর্যন্ত হার মানতে হল।অবশেষে রাজী হলাম। তিনটা দিনই তো একটু ঘুরেও আসা যাবে,ফ্রেশ লাগবে। আল্লাহর রহমতে সফরে রওনা হয়ে গেলাম।এটা যেন আরেকটা নতুন জগৎ ;কত সুন্দর এই জগৎ। ফজরের পর বয়ান,মানুষের কাছে দিলের ব্যথা নিয়ে দ্বীনের দাওয়াত,নিজের টাকায় নিজের সময়ে অন্যের এবং নিজের দ্বীনের পথে আসার মেহনত। তালিম,গাস্থ,মোজাকারা,ঈমানী কথা,কুরআন তিলওয়াতের গুণগুণ  আওয়াজ,মাঝ রাতের ঘুম ভেঙে যাওয়া চোখে দেখা পাওয়া যায় এমন বান্দাদের যারা পরিপূর্ণভাবে নিজেকে আল্লাহর দরবারে সঁপে দিয়েছে,দোয়া করছে নিজের হেদায়াতের জন্য,বিশ্ববাসীর হেদায়েতের জন্য। পুরো ভিন্ন একটা চিত্র। মনের ভাবনায় দোলা লাগলো।ঐ জগতের থেকে এই জগৎ কতই না সুন্দর, কতই না পরিচ্ছন্ন। শুরু হয়ে গেল নতুন পথের যাত্রা। একদিকে খারাপ জগতের পিছুটান অপরদিকে সিরাতে মুস্তাকিমের হাতছানি। তাবলীগের তিনদিনের শেষের দিন শক্তভাবে প্রতিজ্ঞা করলাম আর জীবনে নামায ছাড়ব না,জীবনে গান,নেশাসহ আরও যেসব শরীয়া বিরোধী কাজ আছে সব ত্যাগ করব। আলহামদুলিল্লাহ ঐ দিন থেকে আর নামায ছাড়ি নি,গান, মুভির জগতেও ঢুকি নি। যদিও আমার পোশাক,আমার চেহারা সব ছিল  আগের মতোই কিন্তু ততদিনে বুঝে গেছি হয়তবা আমি পরিপূর্ণ ইসলামে চলে এসেছি।কিন্তু দীর্ঘ একটা লড়াই তখনো বাকি…

ঢাকার একটা কলেজে ভর্তি হলাম।বিশাল কলেজ। অনেক বড় ক্যাম্পাস।সম্পূর্ণ বয়েজ কলেজ।৬ টি হলের মধ্য আমি একটি হলে উঠলাম।সেই হলে একজন হুজুরও সাথে উঠল।আমারই ব্যাচমেট। তার নাম ছিল ইমরান(ছদ্মনাম) ।প্রতিটি হলেই একটি করে মসজিদ আছে।আরেকটি বড় কেন্দ্রীয় কলেজ মসজিদ আছে। কলেজে যাওয়ার কিছুদিন পরই অন্য একটা হল থেকে এক সিনিয়র ভাই আমাদের হলে আসলেন।আমাকে ডেকে বললেন আমাদের হল থেকে কেউ তাবলীগে সময় লাগিয়েছে কিনা।যেহেতু তাবলীগে আগে সময় লাগিয়েছি এবং এর প্রতি একটা ভালোবাসা আছে তাই স্বীকার করলাম।ভাই বললেন সামনের শুক্রবার যেন কেন্দ্রীয় মসজিদে আছরের নামায পড়ি।আছরের নামায পড়তে গিয়ে দেখলাম বিশাল ব্যাপার। আমাদের অনেকগুলো স্যার, সিনিয়র ভাই,ব্যাচমেট, জুনিয়র অনেকেই মসজিদে উপস্থিত। অপূর্ব সুন্দর একটা দৃশ্য।সবার পরনে সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা মাথায় সাদা টুপি।বুঝতে পারলাম এখানে তাবলীগের মেহনত ভালোভাবেই চালু আছে।ঐ দিন থেকে আমাদের হলেও তাবলীগের কাজ শুরু হল।নিয়মিত তাবলীগের কাজে থাকতাম।এই মেহনতকে অনেক ভালোবাসতাম।কিন্তু ততদিনেও পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে পারিনি। শুধু ৫ ওয়াক্ত নামায জামায়াতের সাথে পড়তাম আর তাবলীগের কাজে নিয়মিত থাকতাম।গুনাহের কাজ অনেকাংশেই ছেড়ে দিয়েছি। ভাগ্যক্রমে আমার পাশের বেডটা ছিল ইমরানের।অনেক মজবুত জিম্মাদার সাথী।পুরোদস্তুর হুজুর মানুষ। চেহারা,আখলাক,লেবাস সবকিছুতেই সুন্নাতের পাবন্দ। সে প্রায়ই আমাকে ঈমানী কথা,আখলাকের কথা,আল্লাহ-আল্লাহর রাসুলের কথা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুনাত। শুনতে খুব ভালো লাগত। তন্ময় হয়ে শুনতাম কথা গুলো।এভাবেই আগাতে থাকে আমাদের সময়।তখন আমার মুখে হালকা দাড়ি।দাড়ি কাটার পর আবার নতুন দাড়ি উঠেছে।সামনে আবার তিন দিনের জামাত বের হবে কলেজ থেকে।নিয়ত করেছি যাব।ভাবলাম একেবারে জামাত থেকে এসে দাড়ি গুলো কাটব।জামাতে গেলাম।কলেজ থেকে আমার প্রথম তিনদিনের সফর। কিছু স্যার,কিছু ব্যাচমেট আর কিছু সিনিয়র ভাইদের একটা সম্মিলিত জামাত। সিনিয়র ভাইয়েরা অনেক ভাবে বুঝালেন দাড়ি রাখার জন্য। এক পর্যায়ে রেখে দেওয়ার নিয়ত করলাম এবং রেখেই দিলাম…..

কলেজ ছুটি হয় একদিন।ততদিনে দাড়ি ভালোই বড় হয়েছে।কিন্তু বাসায় সেটা জানে না।বাসায় গেলাম।বাসায় থাকার কিছু দিন পর মা বাবা চাপ দিতে লাগলেন দাড়ি কাটার জন্য। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড়।কোন ভাবেই দাড়ি কাটব না।ফলাফলঃ পরিবারের সাথে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ;কেন আমি দাড়ি রাখব,এটা দাড়ি রাখার বয়স না,দাড়ি রাখলে জেলে ঢুকিয়ে দিবে,জঙ্গিবাদের তালিকায় নাম উঠবে ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত কি।কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত আমি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলাম,যত যাই হোক আমি দাড়ি কোনো ভাবেই কাটব না।মা বাবা জানতেন আমার প্রচন্ড জিদ আর একগুঁয়েমির অবস্থা।গ্রামের বাড়িতে গিয়েও শুনতে হলো একই ধরনের কথা।বুড়ো হয়ে গেছি,ভালো মেয়ে পাব না,প্রেম করতে পারব না, জঙ্গি, মৌলবাদী হ্যান ত্যান। খারাপ লাগত কথা গুলো শুনে।জযবাতি মনে ইচ্ছা জাগত সবাইকে বন জঙ্গলে পাঠিয়ে দেই।আবার মনে হত আমি নিজেই চলে যাই।তারা শান্তিতে থাকুক, আমিও শান্তিতে ইবাদাত করি।কিন্তু তালিমের হালকায় শুনেছিলাম বিলাল রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহুর আহাদুন আহাদ বলার সেই ঈমানী ঘটনা।এই ঘটনাই আমাকে ইস্তিকামাত থাকতে প্রেরণা যোগাত।আবার নিজের মাঝে জেগে উঠত ওমর রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহুর ঈমানী জযবা এবং আবেগ।কেউ দাড়ি, টুপি নিয়ে কিছু বললেই তার পরিবার,আমল,আখলাক,উপার্জন ইত্যাদি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দিতাম।পরে অবশ্য এর জন্য খারাপ লাগত।ইমরান আমাকে বুঝিয়ে ছিল কোনো অবস্থাতেই যেন কারও সাথে রাগ না করি।সে খুব সুন্দর একটি ঘটনা বলে বুঝিয়েছিল।ইব্রাহিম আলাইহিসসালাম কে তাঁর পরিবার সর্বোচ্চ অপরাধ শিরক করতে বলে।কিন্তু তিনি কতটা ধৈর্যের সাথে এই ফিৎনা মোকাবেলা করেছিলেন।বাবা মায়ের সাথে উনার আচরণ কেমন ছিল! পরিবার, সমাজ,বন্ধু, আত্মীয়স্বজন সবাই আমার বিরুদ্ধে গেলেও আমার দাদা এবং নানা(আল্লাহ তাদের হায়াতে বরকত দিন)আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করত।তাদের মুখের হাসিতে পিছনের সব বাধাই যেন তুচ্ছ হয়ে যায়।আমার ব্যাপারটাও আস্তে আস্তে আমার পরিবার মেনে নেয়।পরিবারের উপর টুকটাক মেহনত করতে থাকি।ধীরে ধীরে বুঝতে পারি দাড়ি,টুপি, পাঞ্জাবির কারণে তারা আমাকে আগে যতটা খোচা এবং খোটা দিত এখন তারাই আমাকে দ্বীনের জন্য বেশি ভালোবাসে।কেউ যদি আমার দাড়ি বা লেবাসের বিরুদ্ধে কিছু বলে তবে প্রথম প্রতিবাদ আসে আমার বাবার কাছ থেকেই…..

Tijarah Shop

ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন নিজেকে আপাদমস্তক পরিবর্তন করতে পারলেও ইলমের ক্ষেত্রে ছিলাম একেবারে শুন্য।আমার আরেক দ্বীনি ভাই ছিল যে সবসময়ই তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করত।তার নাম মাহমুদ (ছদ্মনাম)। তার সাথে আমিও পড়া লিখা শুরু করলাম ধর্মতত্ত্ব নিয়ে।নাস্তিকদের বিরুদ্ধে লিখা কিছু বইও পড়া শেষ করলাম।কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই আবার আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম।কারণ আমিতো বিনা যুক্তিতে আমার রবকে বিশ্বাস করি,তাহলে আর এসবের দরকার কি?এসব বই পড়া বাদ দিলাম।এক পর্যায়ে ইমরান আমাকে মাসিক আল কাউসার পত্রিকার সন্ধান দিল।শুধু মাত্র একটা ম্যাগাজিন পড়েই আমার অবস্থা এমন হল যে পুরো আব্দুল মালেক সাহেবের ভক্ত হয়ে গেলাম।একে একে পড়া শুরু হল আব্দুল মালেক সাহেবের বই।সেখান থেকে সন্ধান পেলাম নদভী,থানভী,মঞ্জুর নোমানি সাহেবকে।পড়া শুরু করলাম আমাদের আকাবির দের কিতাব সমূহ।মাসিক আল কাউসার কোনো মাসের টাই বাদ দিলাম না।যতই তাদের বইয়ের ভিতরে যাই ততই যেন মনে হয় চোখের সামনে ইলমের দিগন্ত বিস্তৃত হচ্ছে আর একেকটা পর্দা সরে যাচ্ছে যা আবৃত করে রেখেছিল আমার অন্তরকে।একদিকে যেমন অন্তর প্রশান্ত হল তেমনি অপর দিকে ইলমের প্রতি তৃষ্ণার্ত হয়ে গেলাম।নিয়ত করলাম যেভাবেই হোক মাদ্রাসায় ভর্তি হব।রবের কাছে দোয়া করতে লাগলাম এজন্য।কিন্তু সামনে ভর্তি পরীক্ষা। টার্গেট মেডিকেল।অবশেষে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। ভর্তি হয়েও গেলাম মেডিকেলে…..

ভর্তি হওয়া থেকে ক্লাস শুরু হওয়া পর্যন্ত অনেক সময় হাতে ছিল।বেরিয়ে পড়লাম ৪০দিনের চিল্লার সফরে।১৯ জন ফার্স্ট ইয়ারের মেডিকেল ছাত্রদের জামাত।এত ভালো লাগলো এই ৪০ টা দিন যেন ইচ্ছা করে কোনোভাবে যদি দিনগুলোকে আটকে রাখা যেত! মেডিকেলের ক্লাস শুরু হয়ে গেল জানুয়ারি ২০২০ সালে।চিল্লায় যাওয়ার পর আরবী শেখা এবং মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার আগ্রহ অনেক বেড়ে গেল।কিন্তু এমন সিস্টেমের মাঝে আটকে গেলাম যে, মাদ্রাসা তো দূরের কথা বাইরের বইয়ের কথা ভাবাই যায় না এখানে।জানুয়ারি মাস ২০২০ সাল।রীতিমতো পরীক্ষার চাপে বিধ্বস্ত। নিজের একাডেমিক পড়াই গুছিয়ে উঠতে পারছি না এরই মধ্যে শুরু করলাম এসো আরবি শিখি বই।পারলাম না। হাল ছেড়ে দিলাম। ভাবলাম আমার দ্বারা আর মনে হয় হবে না আরবী শেখা। জীবন চলতে লাগল আপন গতিতে। তাবলীগের কাজ করি, পড়াশোনা করি।আর কোনো কাজ নেই।বলা যায় সময়ই করে উঠতে পারি না….

তারপর মার্চে আসলো করোনার ধাক্কা।দীর্ঘ লকডাউনে সব কিছুই থেমে গেল।কাকতালীয় ভাবে একদিন পরিচিত হল একজন লোকের সাথে।তিনি একজন ডাক্তার, সাথে আবার ইফতাও করেছেন।জানতে পারলাম যে উনি আবার আমাদের দেশের একজন প্রখ্যাত আলিমের চিকিৎসকও ছিলেন।উনাকে আমার নিজের হালত বর্ণনা করলাম।বললাম, আমিও আপনার মতো হতে চাই।কথায় কথায় অনেক কথাই হলো। এক পর্যায়ে তিনি জানালেন তাঁর একটা ইলমের লক্ষ্য আছে।মাত্র বিশজনের মতো তালেবুল ইলম সেখানে যাদেরকে তিনি নিজ হাতে ইলমের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।এদের মাঝে কেউ ডাক্তার, কেউ প্রফেসর আবার কেউ মেডিকেল স্টুডেন্ট। একদিন সেই দরসে শরীক হলাম।অনলাইন দরস।উস্তাদ লিংক দিলেন আমাকে। একটা দরস করলাম।এত ভালো লাগলো যে আমি আবদার করলাম আমাকেও যেন সেই ভাগ্যবান তালেবুল ইলমদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।তিনি আমাকে নিয়ে নিলেন সেই সৌভাগ্যবানদের মাঝে যাদের ইলমের সফর শুরু হয়েছে যার মাঞ্জিল জান্নাত।আহ!! কত সুন্দর একটা লক্বব! তালেবুল ইলম! শুরু হয়ে গেল আমার ইলমের পথে যাত্রা।এ যাত্রা শুধু আরবী ভাষা শেখাই নয় বরং আরও অনেক বেশি বিস্তৃত। শুরুটা হল মিযানুস সরফ ওয়াল মুনশায়িব কিতাব থেকে।কিন্তু ১৫ টি দরস ইতোমধ্যে হয়ে গেছে।১৬ তম দরসে উপস্থিত হলাম।তেমন কিছুই বুঝলাম না।কিন্তু এত ভালো লাগলো যেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।সেই যে দোয়া করেছিলাম ২ বছর আগে যে, মাদ্রাসায় ভর্তি হব; সেটা বুঝি আল্লাহ তায়া’লা কবুল করেই নিলেন।অদ্ভুত সুন্দর একটা প্রশান্তি মনের মাঝে আসল।ভেবেছিলাম দোয়াটা হয়তো আখিরাতের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু কিভাবে কবুল হয়ে গেল আর কিভাবেই প্রতিদান পেয়ে গেলাম এখনও ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারি না।রবের কুদরত বোঝা অনেক কঠিন।আল্লাহ আমার উস্তাদ কে নেক হায়াত দান করুন,মকবুলিয়্যাত এবং আফিয়্যাত দান করুন।

মাঝে মাঝে ভাবি যদি সেদিন সেই লোকগুলি সকাল বেলায় আমার দরজার কাছে না আসত! যদি ঐ কলেজে ভর্তি না হয়ে অন্য কলেজে ভর্তি হতাম!মাহমুদ এবং ইমরানের মতো কাউকে না পেতাম! আমার অবস্থাই বা কেমন হত তখন।আমার উস্তাদকে আমি কিভাবে খুজে পেলাম আমি নিজেও জানি না।রবের অপার অনুগ্রহ যে এভাবে আসবে কোনো দিন কোনো ভাবেই কল্পনাও করতে পারি নি।রবের নিকট নিয়মিত দোয়া করি, হে আমার রব! আমি তো অনেক দূরে থেকে এসেছি,অনেক দেরি করে এসেছি। কিন্তু এসেছি তো!!

Facebook Comments

Related posts

নীড়ে ফেরার গল্প-১১ | আমাতুল্লাহ মেহেরুন্নেসা

সংকলন টিম

নীড়ে ফেরার গল্প-১৫ | হাসিবুল হোসেন

সংকলন টিম

নীড়ে ফেরার গল্প-৩৬ | বিনতে আলম

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!