আলহামদুলিল্লাহ হি রব্বিল আল আমিন। আমি ছিলাম এক লাগামহীন মেয়ে,যার লাইফ এ ছিল না কোন শৃঙ্খলা,মানতাম না কোন নিয়ম।যখন যা করতে মন চাইতো তাই করতাম এবং সুযোগ ও ছিল অনেক। ছোট থেকে বড় হয়েছি ননপ্র্যাকটিসিং মুসলিম পরিবারে।ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একদিন বড় ডান্সার হবো। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছিলাম। গার্লস কলেজ এ পড়ার সুবাদে নাচ এর প্রোগ্রাম হবে শুনলেই নাম দিতাম। সাজগোজ,নাচ-গান এসব ই ছিল আমার স্বপ্ন,আমার ভালোলাগা,আমার ভালোবাসা। এত আবেগি ছিলাম যে কি বলব কখনো প্রেম করব না ভাবতাম কিন্তু করে ফেলেছিলাম। প্রেমিকের জ্বালায় জীবণটা আমার বিষিয়ে গিয়েছিল। কেউ ভালো চোখে দেখত না আমায়। সবার কাছে আমি খারাপ, আমাকে সবাই এত কষ্ট দিয়ে কথা বলতো। আমি নাচতে চাইতাম, লাভ ম্যারেজ এ বিশ্বাসী ছিলাম। এইভাবেই এইসব নিয়ে কেটে যাচ্ছিল ২ বছর। আমার বয়ফ্রেন্ড আমার জীবণটাকে বিষিয়ে দিয়েছিল,আমি এই আমিত্ব কে হারিয়ে ফেলেছিলাম। হয়ে গিয়েছিলাম তার হাতের পুতুল। তার সাথে সম্পর্ক টাও আস্তে আস্তে খারাপ হতে লাগল।
এর মাঝে হুট করে একদিন আমার দাদিমা আমাদের বাসায় আসলো। প্রায় ৬ মাস পর তিনি আসলেন। আসার পরের দিন ই মানুষটা ওয়াশরুমে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন।তার কিছুক্ষণ পর তিনি আল্লাহর কাছে চলে গেলেন।নিজের চোখে কখনো এইভাবে কারো মৃত্যু দেখিনি। এরপর শুরু হল আমার জীবণের এক কঠিন সময়।বাসায় একা থাকতে পারতাম না খুব ভয় হতো।এই বুঝি মালাকুল মাউত এসে আমার নিয়ে যাবে।এই ভয় সবসময় হতো।তার মদ্ধ্যে ৩ মাস পর ই আমার এইচএসসি এক্সাম।কিসের কি প্রিপারেশন নিব আমার ভয় এই সারাদিন কাটতো।ভয় পেতে পেতে আমি এমন হলাম একটা ছোট আওয়াজ ও আমাকে মালাকুল মাউত ভাবিয়ে দিতো।কে জানতো এই ভয় ই যে এই অধমের জন্য এক রহমত তার স্রষ্টার কাছ থেকে সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি।
এরপর শুরু হল আমার জীবণের নতুন অধ্যায়।আমি ২ মাস ভয়ের ভিতরে থাকার পর আমি পরের দিনগুলি থেকে আল্লাহ কে নিয়ে খুব ভাবতাম। আমি কেন এসেছি এই দুনিয়ায়, আমার কি করতে হবে,আমি কি নিয়ে আল্লাহর সামনে দাড়াবো,আমি কতখানি আমল করলাম এইসব নিয়ে ভাবতাম। এরপর আমি হিজাব পড়া শুরু করি,নামাজ পড়া শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ এক মাস হিজাব পড়ে প্র্যাক্টিজ করলাম।এরপর আমি আম্মুকে বললাম আমাকে একটা বোরকা কিনে দিতে এরপর আমার বোরকা পড়া শুরু। কে যেন আমাকে একটা ইসলামিক গ্রুপে এড করেছিল। সেই গ্রুপে আমি সারাদিন রাত শুধু ইসলামিক পোস্ট পড়তাম টুকটাক জ্ঞান নিতাম।
এরপর আলহামদুলিল্লাহ অনেক দ্বীনি বোনের সাথে পরিচয় হয়, তাদের সাথে অনেক কথা হয়।এরপর আমি এক দ্বীনি বোন এর টাকা দিয়ে অনলাইন মাদ্রাসায় ভর্তি হই। এখন সেখানে সহ আরও কিছু ইন্সটিটিউট এ পড়ছি আলহামদুলিল্লাহ। আমিও এখন দ্বীনি দাওয়াহ দেই।আমার এখন উদ্দেশ্য ইসলাম এর জন্য কিছু করার।মাঝে মাঝে ভাবি এই অধমকে আল্লাহ কিভাবে রহমত দিয়ে নীড়ে ফিরে আনল আমি তো এসব এর যোগ্য ছিলাম না।কত খারাপ ভাবত সবাই আমাকে। আলহামদুলিল্লাহ এখন তারাই আমাকে অনেক সম্মান করে, ভালোবাসে।এখন বুঝি আগে না বুঝে কত খারাপ কাজ করেছি।আলহামদুলিল্লাহ এখন ফুল পর্দা করি। আগে কখনো বোরকার নাম ও সহ্য করতে পারতাম না। আল্লাহ যদি আমাকে সাহায্য না করত তাহলে আমি এই লাইফ পেতাম না। সবকিছু আল্লাহর জন্য হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ সুবহানাল্লাহ।
Facebook Comments