সংকলন
প্রতিযোগিতা-২

নীড়ে ফেরার গল্প-১৫ | হাসিবুল হোসেন

দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল বেশ ভালই চাকচিক্য  ময়, রাতভর মুভি,সিরিয়াল,নাটক, ফোনে কথা বলা, ফ্রেন্ডস দের সাথে রসালো চ্যাট, গার্লফ্রেন্ড কে সময় দেওয়া । লাইফ মানে প্রচুর ইনজয় এইতো।

১২ই জুলাই ,

যোহর নামায পড়ে রুমে শুয়ে ছিলাম এবং ভাবতেছিলাম: নাহ !এবার নিজেকে শুদ্ধ করতে হবে । এভাবে আর কতদিন চলবে?নিজেকে বদলাতে হবে। রেগুলার এই চিন্তা গুলাই করে আসছিলাম, বাট কখন নিজেকে আর পরিবর্তন করা হয়ে উঠেনি।

কিছুক্ষণ পরেই

ঘরের জানালা দিয়ে বাতাস প্রবেশ করলো।। বুঝলাম মনে হয় কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে।।যখন ছোট ছিলাম দাদির কাছে শুনছিলাম আকাশে যদি মেঘ থাকে তখন যদি শীতল বাতাস হয় তাহলে বুঝতে হবে আসে পাশে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে।সেই কথা মনে পড়ে গেলো বুঝলাম আসে পাশে কোথাও মনে হয় বৃষ্টি  হচ্ছে!একটু পর খেয়াল করলাম আকাশ আধাঁর হইয়ে আসছে।।আকাশ টাকে উপভোগ করার জন্য গেলাম বাইরে।।আমার বাসার পিছনে একটা স্কুল হবার কথা ছিলো।সেখানে ইট দিয়ে গেঁথে রাখা হইছে দেয়াল।ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি জাবেদ ইকবাল নামের এক ভদ্র লোক নাকি স্কুল তৈরি করতে চেয়েছিলেন.কিন্তু রাজনৈতিক কোনো কারণে হয় তো আর হইয়ে উঠে নাই।।। তো ঐ স্কুলের দেঁয়াল পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম.কারণ কিছু দিন আগে ফেইসবুকে স্ক্রল করছিলাম হঠাৎ একটা গ্রুপের পোস্ট দেখে পোস্ট টা পড়ে নিলাম সেখানে লিখা ছিলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যখন নাকি মন খারাপ থাকতো তখন নাকি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো!! ঐ হাদিস টা দেখার পর থেকেই ট্রাই করতাম সময় পেলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা। মূল উদ্দেশ্য ছিলো একটা সুন্নত পালন করা. আরো শুনছিলাম একটা মৃত সুন্নত পালন করলে নাকি ১০০ টা শহীদি মৃত্যুর সাওয়াব পাওয়া যায়।।মসজিদের জুম্মার ইমাম এর কথা শোনার পর থেকেই ট্রাই করতাম সুন্নত পালন করা।। বলছিলাম আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আকাশের কন্ডিশন কিছু টা ইংল্যান্ড কান্ট্রির ওয়েদার।।আমি কিন্তু আবার কোনো দিন ইংল্যান্ডে যাই নাই।।কিন্তু আমি আবার প্রচুর ক্রিকেট খেলা দেখি। টেস্ট, ওডিআই,T_20  ম্যাচ দেখা হয়.ছোট বেলা পাকিস্তান দলের খেলা বেশ লাগতো। বিশেষ করে শহীদ আফ্রিদির খেলা।। বম বম নামে পরিচিত ছিল। ২০০৯ সাল  থেকে দেশের খেলার প্রতি কেনো জানি একটা টান অনুভব করতাম! আস্তে আস্তে বাংলাদেশের খেলার ফ্যান হইয়ে গেলাম! ঠিক তেমন ভাবেই ইংল্যান্ডের খেলা ভালো লাগতো বলে ইংল্যান্ডের খেলা দেখতাম!২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ইংল্যান্ড বনাম ভারত ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ৫০ ওভারের ম্যাচ কিন্তু ম্যাচ ডে তে বৃষ্টি হবার কারণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে ২০ ওভারে নামিয়ে আনা হয়।সেই ম্যাচে দেখছিলাম আকাশের চারপাশে ঘন কালো সাদা নীল মেঘ!আর একপাশে দিয়ে সূর্যের আলো মাঠে পড়ছে!ঠিক আজকের দিনও ঠিক একই রকম হয়ে উঠছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছিলাম …..

Tijarah Shop

যে মানুষ টা কে কোনো দিন দেখি নাই! যার কণ্ঠস্বর কখনো শুনি নাই!যার প্রবিত্র সান্নিধ্য  এর উপস্থিত হবার সুভাগ্য হয় নি!!যে মানুষ টা আর আমার মাঝে ১৪০০ বছর এর ও বেশী  সময়ের ব্যাবধান! সে মানুষ কেমন করে এতো আপন হয়ে গেলো?? যারা বুঝে না ২১ শতাব্দী বসবাস করা শত শত কোটি মানুষ আরব সমাজের এক জন ব্যাক্তি প্রতি এতো টান অনুভব করে কিভাবে? তাদের কেমন করে বুঝাবো ইয়া রাসূলাল্লাহ কেনো এতো ভালোবাসি আপনাকে!!! মুরুর বুকে জন্ম নেওয়া মানুষ টাকে কেনো ভালোবাসি? কেনো এতো অনুভব করি?

আরো ভাবছিলাম যখন সুন্নত মোতাবেক দাড়ি রেখে দিবো তখন সমাজের কাছে থেকে শুনতে হলো কিছু কথা I

কিরে! আশিক হুজুর হলি কবে?

আশিক দাড়ি কি রেখে দিবি?

এখন কি দাড়ি রাখার বয়স?

বিয়ে আসরে মেয়ে দাড়ি দেখলে বিয়ে করা বাদ দিয়ে দিবে,আশিক তোকে কোনো মেয়ে বিয়ের জন্য সিলেক্ট করবে না।।

কি আশিক দাড়ি রেখে দিলি চাকরির ক্ষেত্রে দাড়ি প্রবলেম করবে!

আশিক তোকে জঙ্গীর মতো লাগতেছে!

হুজুর সাহেব কি খবর?

হুজুর আসছে বসতে দে।

আরো কত কি!

আমি এসবের কিছুই তোয়াক্কা করতাম না।

হাসি মুখে সব এড়িয়ে যেতাম। বরংচ মনে মনে খুশি হতাম। মনে মনে ভাবতাম,

কবরে যাওয়ার পর আল্লাহকে বলবো,আল্লাহ আপনার রাসুলের কয়েকটি সুন্নাহ সাথে করে নিয়ে এসেছি। এই উসিলায় আমাকে ক্ষমা করে দিন, ইয়া আল্লাহ।

হটাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো চলে আসলাম রুমে ।

হুট করেই মনে পড়ে গেল:, এক সময় গার্লফ্রেন্ড টা এসে আমাকে  বলেছিল তুমি আমার জন্য পারফেক্ট নও .., আই ডিজার্ভ সামওয়ান বেটার। কোন এক শান্ত সন্ধায় বসে কেদেছিলাম অনেকক্ষন, কোনো এক অস্থির বিকেলে মনে হত, কি এত চাহিদা ছিল তার অর্থ, মোহ খ্যাতি কোনটা? একবার তো হাত ধরে বলা যেত, আমি তো তোমার সাথেই আছি। ভেঙে যাওয়া হৃদয় টা নিয়ে তার সামনে ছোট্ট মুচকি হাসি দিয়ে চলে এসেছিলাম সেদিন। সারাদিন এদিক ওদিক বসে কান্না করা! সারাক্ষণ এদিক সেদিক মন খারাপ করে বসে থাকা! সারাক্ষণ ভাবতাম প্রিয় মানুষটা এভাবে ছেড়ে চলে যেতে পারল? আস্তে আস্তে চলে গেছিলাম ডিপ্রেশন নামক জিনিস টায়।। ভাইয়া ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমাকে  কাছে ডেকে বলেছিল,”তোমার ভাগ্যে যা লেখা আছে তুমি যদি মনে করো এর চেয়েও আমি বেশি কিছু পাব আর সেই মুহূর্তে সেটা যদি তুমি না পাও তাহলে তুমি তখন ভীষণ কষ্ট পাবো.”..এই একটা লাইন আমার লাইফে নতুন একটা মোড় নেয়।

অনেকদিন কেটে গেল আস্তে আস্তে ফিরে আসলাম সঠিক পথে।

ফিরে আসি ঘটনায়!

আগে যখন ডিপ্রেসন নামক জিনিস টাতে ভুগছিলাম তখন বৃষ্টি হলেই সাধারণত কানে হেডফোন লাগিয়ে তলিয়ে যেতাম তাহসান রহমান খানের গানে! কেমন জানি তখন খুব উপভোগ করতাম! মনের নিছক অভিভূত গুলা মনে মনে ভাবতাম!আর ঠিক তখনই  সারা গা টা শিহরণ ছড়িয়ে পড়তো!! কিন্তু বুঝতাম না ঐটা ছিল শয়তানের পরোচনা!! নিজের নফসের উপর যে জুলুম করছিলাম ঠিক বুঝতামই নাহ! বেমালুম ভুলেই গেছিলাম  শয়তান আমাকে ধোঁকা দিয়েই যাচ্ছে।।

আমি সলাতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতাম আগে থেকেই, কিন্তু আমি যখনই সলাতে দাড়িয়ে যেতাম তখন আমার মন থাকতো” সাকিব আল হাসান কবে আবার জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন করবে”, মেসি কেনো ফ্রী কিক থেকে গোল টা করতে পারলো না, এই সিজনে মেসির আর রোনালদোর পারফরম্যান্স কেমন?, এই সিজনে ব্যালন ডি অর কে পাবে?? নেইমার কে কি বার্সার আবার ফেরাবে  বার্তামিও? রাফায়েল নাদাল কি আবার উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না নোভাচ জকভিচ? প্রিয় মানুষ টা আমাকে ছেড়ে এইভাবে চলে যেতে পারলো? আমার সেমিস্টারের রেজাল্ট কি হবে?

নানা ধরনের প্রশ্ন কাজ করতো  সলাতের মধ্যে। আমি সলাত আদায় করে কোনো রকমের মজা অনুভব করতে পারতাম নাহ্! একদিন আমার একটা কাক্কু কে সব খুলে বলছিলাম সে উত্তর দিয়েছিলেন ” দেখ আশিক এইটা হলো শয়তানের অসওসা। সয়তান চায় না আদম সন্তান জান্নাতে যাক। তাই সে আমাদের কে সলাত থেকে দূরে সরে দেবার কারণে অনেক কথা সলাতের মধ্যে মনে করিয়ে দেন যেনো আমরা  ভুলেই যাই আমরা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের সামনে দাড়িয়ে আছি! যখন আমাদের এই ধরনের চিন্তা ভাবনা আসবে আমরা যেনো সাথে সাথে “আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” পরে নেই সাথে সাথে।।

আর নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য আমাকে কিছু টিপস দিলেন।। সেই গুলো যেনো অ্যাপ্লাই করি !! আলহামদুলিল্লাহ এখন সলাতে মনোযোগ রাখতে পারি!

বলছিলাম আগে বৃষ্টি হলে হারিয়ে যেতাম নানা ধরনের গানের মধ্যে।।

একদিন হাদীসের মধ্যে দেখলাম যারা গান শুনে তাদের কে জাহান্নামে কানের মধ্যে গরম সিসা ঢালা হবে। কিছুটা হলেও ভয় কাজ করতে লাগলো ।। তার  কিছুদিন পর সব ফোল্ডার ডিলিট করে দিলাম মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করলো! ভাবলাম আল্লাহ তায়ালা হয়তো খুশি হইছে!!

আগে সব সময় মুখে গান থাকতো আর এখন মুখে প্রায় সময় কুরআনের আয়াত বের হয়ে আসে আপনা আপনি!!

কোথায় যেনো শুনছিলাম “আল্লাহর দিকে এক পা এগিয়ে দিলে আল্লাহ তার দিকে দু পা  এগিয়ে আসেন”

যখন আমার এক বন্ধুকে আমি বলেছিলাম বন্ধু আমি তো মনে কোন শান্তি খুঁজে পাচ্ছিনা, তখন সেই বন্ধুটি উত্তর দিয়ে বলেছিল সূরা রাদ এর 28 নং আয়াত একটু দেখ।

[আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্ত হয়ে যায়]…

বারবার মনে পড়ে সূরা দোহার 5 নং আয়াতের কথা. [শীঘ্রই তোমার রব তোমাকে এত দেবেন যা পেয়ে তুমি একদম খুশি হয়ে যাবে].

পুরনো হিস্টরি যখন মনে পড়ে চোখের কোনে পানি চলে আসে। শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে কত কিছুই না করেছি। আমার রব কি আমাকে ক্ষমা করবেন? মনে পড়ে যায় আমার রব আমাকে উদ্দেশ্য করেই তো বলেছেন “লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ”[তোমরা আমার রহমত থেকে কখনো নিরাশ হইও না]..

তাই তো আরিফ আজাদের একটা কথা মনে পড়ে ” আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে দরকার পরে না জমকালো আয়োজন, দরকার চোখের পানি আর তাওবা মাত্র!

কিছু হারাম সম্পর্ক বিচ্ছেদ আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় একটা নেয়ামত হিসেবে আসে। আল্লাহকে ভালবেসে যদি হারাম কিছু বর্জন করা যায় অবশ্যই তিনি উত্তম কিছু দেবেন।

একটা বার আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন দেখবেন সব দুঃখ ভুলে যাবেন আপনি.আপনর ডিপ্রেসন এর কথা গুলা সিজদার গিয়ে বলুন দেখবেন আপনার ডাক ওই রব শুনবেন! এবং আপনাকে  পরম মমতায় জড়িয়ে নিবেন! যার সাথে আল্লাহ আছে তার কি কোনো ভয় থাকতে পারে?? মন খারাপের দিন গুলাতে আল্লাহ কে আপনার সঙ্গী বানান! দেখবেন আপনার  সেই মুহূর্ত গুলো আচমকা সেরা মুহূর্ত হইয়ে গেছে! যে ভগ্ন হৃদয় আপনাকে খান খান করে দিচ্ছে. সেই গল্প গুলা আল্লাহ কে খুলে বলুন “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল”( আমার জন্য আল্লাহ যথেষ্ঠ)। বিশ্বাস করুন আপনার মন খারাপের  উপসমের জন্য কেবল এতটুকু যথেষ্ট!! আল্লাহ যার অভিভাবক তার কি কোনো চিন্তা থাকতে পারে?

আসুন আল্লাহর কাছে ফিরে যাই!

এই দুনিয়া হলো একটা ধুয়াসা.একটা কূপ,একটা ফাঁদ, এখানে যা সুখ বলে ধরা হয় আসলে তা মরীচিকা!

সুখ নিহিত আছে আল্লাহর  ইবাদতে, আনুগত্যে!!!!

আমি খুঁজে পেয়েছি আমার আল্লাহর পথ। আমি খুঁজে পেয়েছি আমার প্রিয় রবের পথ। ভালোবাসা সেতো প্রিয় রবের কাছেই রয়েছে।

হে আল্লাহ আপনি আমাকে আপনার সিরাতাল মুস্তাকিম পথে থাকার তৌফিক দান করেন। আমাকে আপনার দ্বীনের উপর অটল থাকার তৌফিক দান করেন।

( সব মিলিয়ে হেদায়েত একটা সেনসেটিভ ব্যাপার, হেদায়েত সবাই পায় নাহ!)

আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন ফিতনাতির রিয়া!!

কিছু ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন নিজের জীবন থেকে নেওয়া

Facebook Comments

Related posts

নীড়ে ফেরার গল্প-৪৬ | রিফাত আল আজাদ মাহীম

সংকলন টিম

নীড়ে ফেরার গল্প-৪৭ | আল হুসাইন

সংকলন টিম

নীড়ে ফেরার গল্প-৩৭ | তাসমিয়া রহমান

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!