সংকলন
সুজিত-থেকে-আব্দুল্লাহ
প্রতিযোগিতা-২

নীড়ে ফেরার গল্প-৩৫ | সুজিত থেকে আব্দুল্লাহ

খাঁটি হিন্দু হতে গিয়েই আমার ইসলাম গ্রহণ !! (পর্ব-১)

সত্য যাচাই করতে গিয়ে মহাসত্যের শিকলে বন্দি এক সত্যান্নেষীর গল্প শোনাই?

২০০৭ সাল চলে । পদ্মার ঢেউ ও বাতাসের দোলায় সুনিবিড় শান্তিময় রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ । অসীম টেবিল ফল্টে জর্জরিত সদ্য ক্যাডেট হিসেবে পরিচয় পাওয়া এক ৭ম শ্রেণির শিশুমনে ইসলাম- নামক অপ্রত্যাশিত এক অচিন পাখি দিনরাত খেলা করে । বৃহস্পতিবারে সূর্যাস্তের পর থেকে শুক্রবার সূর্যমামা আকাশে আলো দেয়া অবধি সে পাখির রাজত্ব ধীরে ধীরে বেড়েই চলে ।

এক বছর পেরিয়ে যায় । শিশুটি অপরিপক্ক গায়ক ও বাদক হয়ে বেড়ে ওঠে ; ফলে শয়তানের আনাগোনাও বাড়তে থাকে । দুইদিকেই মেহনত চলতে থাকে । রবীন্দ্র, দেশ, নজরুল ছাড়িয়া অশ্রুতপূর্ব অশ্রাব্য সুদীর্ঘ ঘুমপাড়ানি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত তথা ক্লাসিকেল সং-এর গায়ক হিসেবে নবপাপের অরুণোদয় ঘটে । বাড়িতে ছুটিতে এসেও বাপসহ প্রায় ৬০ কিলোমিটার যাতায়াত করে সেই পাপের মাত্রাকে বহুদূরে নিয়ে যায় ।

ওদিকে লাইব্রেরিতে গিয়ে ধর্মের জ্ঞানচর্চা বাড়িয়া যায় । মসজি্দ লাইব্রেরী থেকে আগত জাকির নায়েক-এর ‘ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য’ বইটা ঘেটে পাওয়া বেদ- এর রেফারেন্স মেলানো শুরু হয়ে যায় । আবুল হোসেন ভট্যাচার্যের ‘আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম’ বইটি আমাকে ভাবিয়ে তোলে। মাগরিব ও জুম্মার সময়ে গীতা পাঠ করে দুইবার খতম করে ফেলি কলি যুগের মুক্তিদাতা হিসেবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত মানবরচিত মহাকাব্য মহাভারতের অংশবিশেষ- শ্রীমদভগবতগীতা সংক্ষেপে গীতা ।

হিন্দুঘরে জন্ম নিলাম। আজ পর্যন্ত বেদ চোখে পড়লো না ! অথচ

কলেজের লাইব্রেরীতে বেদ !!! ভাবা যায় !

জানি না সারা জীবনে যত হিন্দু পন্ডিত, বন্ধু, আত্মীয়- অনাত্মীয় দেখেছি, উনাদেরও কেউ কখনো বেদ- চোখে দেখেছেন কি না পরিসংখ্যান করা দরকার !

অথচ আমাদের মূল ধর্মগ্রন্থই তো বেদ । একটু চিন্তা করা দরকার ।

যতই ইসলামের দিকে চোখ পড়ে ততই তার প্রেমে পাগল হয়ে যাই । আহা ! ইসলাম কতই না মধুর ! কতই না এর সুবাস !

এরই মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে খেয়ালের ভুলে বাবা-মাকে ইসলামিক পরিভাষায় চিঠি লিখে ফেলি । কৈফিয়ত দিলাম । বাড়িতে আসতো খ্রিস্টানদের দাওয়াতি পত্র । খাম-বই -বাইবেল পর্যন্ত তারা দিয়ে থাকে ফ্রি ফ্রি ! উত্তর দেই, নতুন প্রশ্ন আসে । নতুন নতুন কুফরি প্রশ্ন- যীশুকে কি আপনি নাজাতদাতা মনে করেন ? উত্তর দেয়াই আছে । আপনি শুধু লিখবেন , আর বিশ্বাসের দিক দিয়ে খ্রিস্টান হয়ে যাবেন ! কতই না মুসলিম ভাই-বোন এভাবে ঈমান হারিয়েছেন আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন । দেখি- ওখানেও ইঙ্গিত দেয়া- সত্য ধর্ম নিয়ে আদম-হাওয়া (আলাইহিস সল্লাম) দুনিয়ায় ফিরে আসার অনেক পরে আবার মূর্তিপূজা শুরু হলো ।

ওদিকে জাকির নায়েক-এর ‘ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য’ বইটা ঘেটে পাওয়া বেদ- এর রেফারেন্স মেলাতে গিয়ে হিন্দু ধর্মে মূর্তিপূজা করা নিষেধ দেখতে পাই ।

১. না তাস্তে প্রাতীমা আস্তি ( রীগ বেদ ৩২ অধ্যায় ৩ নং অনুচ্ছেদ )

অর্থাৎ ঈশ্বরের কোন প্রতি মূর্তি নেই ।

২. ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২০ – [ যাদের বোধশক্তি পার্থিব আকাঙক্ষার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধু তারাই অন্য দেবতার পূজা করে। ]

৩. হিন্দুরা অনেক দেব দেবির পুজা করলেও হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে হিন্দুদের কেবল মাত্র এক জন ইশ্বরের উপাসনা করতে বলা হয়েছে॥

বেদের ‘ব্রহ্ম সুত্র’ তে আছে “একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ইশ্বর এক তার মত কেউ নেই কেউ নেই সামান্যও নেই ।

আরও আছে “সে একজন তারই উপাসনা কর” (ঋকবেদ ২;৪৫;১৬)।

“একম এবম অদ্বৈত্তম” অর্থাৎ সে একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ ১;২;৩) ।

৪. “এক জনেই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০;১২১;৩) ।

৫. গীতা – অধ্যায় ১০ – স্তব ৩ –

[ তারা হচ্ছে বস্তুবাদি লোক ,তারা উপদেবতার উপাসনা করে ,তাই তারা সত্যিকার স্রষ্টার উপাসনা করে না।]

৬. যজুর্বেদ – অধ্যায় ৪০- অনুচ্ছেদ ৯ –

[ যারা প্রাকৃতিক বস্তুর পুজা করে তারা অন্ধকারে (নরকে) নিমজ্জিত হয়। তারা অধিকতর অন্ধকারে (নরকে) পতিত হয় যারা মানুষের তৈরী মূর্তির পূজা করে । ]

এসব দেখে আমার পরিবারে ফিরে এসে বললাম- ‘আমাদের ধর্মে নাকি মূর্তিপূজা নিষেধ ?’

উত্তর পেলাম, ‘হ্যাঁ , নিষেধ’ ।

বললাম, ‘তাহলে কর কেন’ ?

উত্তর পেলাম, ‘বাপ -দাদা করে আসছে, তাই করি’ ।

এই উত্তর পেয়ে আমি দৃঢ়ভাবে মনস্থির করি –

‘আমায় খাঁটি হিন্দু হতে হবে,

বাপ-দাদার মত মূর্তিপূজা করলে চলবে না।’

==========================

হিন্দু হতে গিয়েই আমার ইসলাম গ্রহণ (পর্ব-২)

সত্য যে বড় কখাটি ঠিন, তবু আমি সত্যরে গ্রহণ করিলাম। সে কভু করে না বঞ্চনা।

ছোটবেলা থেকেই প্রতিটি ধর্মের প্রতি আমার সমান শ্রদ্ধাবোধ ছিল। বাবা ছিলেন এলাকার বিখ্যাত গীতা পাঠক ও প্রসিদ্ধ পশু চিকিৎসক। মা- ও সরকারি চাকরি করতেন। ভালোবাসার প্রায় সবটুকু জায়গা জুড়ে ছিলেন আমার মমতাময়ী মা। আমার সকল কথা শেয়ার করার জায়গা ছিলেন আমার মা। তখন না ছিল মোবাইল, না ছিল ফেসবুক- ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা। মা- ই ছিলেন আমার মোবাইল, ফেসবুক, ইন্টারনেট। পড়াশোনায় মেধাবী হিসেবে পরিচিত ছিলাম। ম্যাম- এর মেয়ের সাথে ১ম হবার প্রতিযোগিতা চলতো। ১ম শ্রেণি থেকে ২য় শ্রেণিতে উঠতে গিয়ে আমার রোল হয় ২, বাকি ৪ বছর দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা করে ৪ বারই ১ম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হই। কোন দিন কোন কালে যদি উনি এই পোস্ট পড়ে না জানি কতই না দুঃখ পাবেন পূর্বস্মৃতি স্মরণ করে !

আল্লাহ্ জগতের সকল প্রাণিকে সুখী করুন। আমিন।

ক্লাস ফাইভে একবার কাব স্কাউট জাম্বুরির আয়োজন হয়। বেল্লাল স্যার নামে ভয়ংকর এক কড়া শিক্ষক আমাদের বাংলা পড়াতেন। কড়া হলে কি হবে? দাড়ি রেখে সবচেয়ে সুন্দর হয়ে সেজে থাকতেন, সাদা জুব্বা পড়তেন। তিনি আমার বাপ- কাকারও শিক্ষক ছিলেন। মুসলিমদেরকে নামাজের দাওয়াত দিতেন। আমার হয়েছে পক্স। এখন জাম্বুরিতে যাওয়া না যাওয়ার মধ্যে পড়ে আছি। সেরে গেছে- দাবি নিয়ে স্যারের কাছে গেলাম। স্যার গেছেন বাজার মসজিদে নামাজে। আমি অজুখানার ওপাশ থেকে প্রথমবারের মত প্রত্যক্ষভাবে জামাতে নামাজ পড়া দেখলাম। এক ইমামের পেছনে দাড়িয়ে কাকে যেন প্রণাম করে। কিন্তু সামনে কেউ নেই। কাকে প্রণাম করে ওরা?

ক্লাস সিক্স, ভর্তি হলাম শিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। রাজশাহীতে হোস্টেলে থাকতাম। ওয়াহিদ ভাই নামে এক নামাজি ভাই ছিলেন। জানি না সেই নেককার ভাই কোথায় কেমন আছেন !! প্রথম জানতে পারি – আজানের সময় কথা বলা নিষেধ। নিজেও আমল করার চেষ্টা করি, মুসলিম ভাইকেও বলি।

জানতে পারি – নামাজের সময় সামনে দিয়ে যেতে হয় না, যাই না।

ধারণা করতাম – ধর্ম তো একই সৃষ্টিকর্তার। হিন্দুদের বিধান মূর্তিপূজা করা, মুসলিমদের ওপর বিধান নামাজ পড়া, খ্রিস্টানদের কাজ গীর্জায় যাওয়া, বৌদ্ধদের প্রতি আদেশ প্যাগোডায় যাওয়া। গীতা যেমন আমার ধর্মগ্রন্থ, তেমনিভাবে আল কোরান হল মুসলিমদের, বাইবেল খ্রিস্টানদের, ত্রিপিটক বৌদ্ধদের। মুসলমানদের জন্য একই সৃষ্টিকর্তার যেই আদেশ, হিন্দু হইলেই সেই আদেশ অমান্য করার সুযোগ তো থাকতেই পারে না। একই মা- বাবা কি তার ছোট ছেলেকে বলবে – তুই মিথ্যা বলতে পারিস, যা। আর বড় !! তুই কিন্তু তোর ছোট ভাইকে মিথ্যা শিখাবি, আর নিজে সত্য বলবি। বুঝলি?

এমন তো হইতেই পারে না। আমার প্রতি যে আদেশ, আপনি মুসলিম বলে কেন তার ভিন্যতা থাকবে? আমাদের সৃষ্টিকর্তা কি আলাদা নাকি?

এবার, পুঠিয়া পি,এন- এ ভর্তি হলাম। রাজশাহীতে আর পড়লাম না। আবারও সেই পুরনো প্রতিযোগী। আমার অনুপস্থিতিতে রাজত্ব কায়েম করতেছে। ১ম!!! এবার অনেক চেষ্টায় হইলাম ৩। পরে আমার পরের একজনের যোগে ভুল। হায় হায়! হইলাম ৪!! ছি ছি! প্রতিযোগী ১ আর আমি ৪ ! তার ওপর আবার নকল করার লজ্জা আমার মুখে। আমি আর এখানে পড়বোই না!! হে প্রভু ! আমাকে এই বন্ধু সমাজের কাছ থেকে পাওয়া লজ্জা থেকে মুক্ত কর। আলহামদুলিল্লাহ !! রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ- এ চান্স পেলাম। বাবা-মা অনেক কষ্ট করেছেন আমার ভাল পড়াশোনার ব্যবস্থা করার জন্য। আমি আজ এত দূর আসতে পেরেছি শুধুমাত্র আমার আল্লাহর অনুগ্রহ আর মা- বাবার কষ্টের ফল হিসেবে। একটা গ্রামের ক্রিকেট পাগল, বড়শি ছিপ নিয়ে এখানে ওখানে দাড়িয়ে ও বসে থাকা ছেলে ঢাবি- আরসিসি ভাবতেই পারে না !

সেই মা- বাবা অনেক ধর্মপ্রাণ ছিলেন বলেই সত্যের সন্ধান পাওয়া ও সত্য পথে চলা আমার জন্য অতি সহজ হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ।

আমার বাবা হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মেরও বই সংগ্রহ করে পড়তেন। বাড়িতে তাফহীমুল কুরআনের ১ সেট তাফসীর ছিল। বেদ প্রকাশ উপাধ্যায়ের কল্কিপুরাণ ও মোহাম্মদ সাহেব ( সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), বেদ পুরাণে আল্লাহ ও হযরত মোহাম্মদ ( সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) , জাকির নায়েকের ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য, ধর্মগ্রন্থসমূহের আলোকে হিন্দুধর্ম ও ইসলাম, ধর্মগ্রন্থের আলোকে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে ধারণা, ইসলাম নিয়ে অমুসলিমদের ৪০ টি ভুল ধারণা ইত্যাদি বই ছিল। শুধু কি তাই? সমস্ত ধর্মের সকলের কাছে সমগ্র মানবজাতির কাছে প্রেরিত আল্লাহর ভালবাসার চিঠি হেদায়েতগ্রন্থ আল কোরান ছিল। অথচ আমার মুসলিম ভাইবোনেরা কেন জানি অন্য জাতির ভাই-বোনদের আল্লাহর এই চিঠি পড়তেও দেন না, পড়িয়েও শোনান না ! এটা কি জুলুম নয়?

=======================

খাটি হিন্দু হতে গিয়েই আমার ইসলাম গ্রহণ (পর্ব-৩)

সূর্যের আলোয় যেমন সমস্ত পৃথিবীর অন্ধকার দূরীভূত হয়, ইসলামের আলোতেও তেমনি মানব জাতির জাগতিক, বৈশ্বিক ও আখিরাত- সকল জগতের সকল প্রকার কালো অন্ধকার নিঃশেষ হয়ে যায়। অথচ যুগে যুগে নিজের অতীত ও ভবিষ্যৎকে অস্বীকার করা মূর্খগণ সেই আলো নিভিয়ে ফেলার দুঃসাহস দেখায়। বিশ্ব জাহানের রবের তত্ত্বাবধানে আছে যেই মানবকূলের আকাশের প্রদীপ, তা নিভিয়ে দেয়ার ক্ষমতা কার?

অতীত ভুলে যাওয়া এজন্য বলছি যে, মানুষ কি দেখে না কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? এক সময় উল্লেখ করার মত তার কিছুই ছিল না, ছিল দূর্গন্ধযুক্ত অপবিত্র পানি যাকে সকলেই ঘৃণা করতো। অথচ তাকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করা হলো। আবার সকলকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। মৃত্যুকে অস্বীকার করার মত কেহই নেই। যার কাছ থেকে এসেছি সেই সত্ত্বার কাছেই খালি হাতে শুধু ঈমান ও আমলের সম্পদ নিয়েই যেতে হবে। রব আমাদের কাছে প্রত্যেকটি কাজের হিসাব চাইবেন। অথচ আমরা আজ গাফেল। অতীত ও ভবিষ্যত স্বীকার করতে চাই না, ভুলে থাকতে চাই।

মানুষের মননে মননে যে সত্যের আলো মুক্তো ঝরাচ্ছে, তার থেকে আমি কেনই বা বঞ্চিত থাকবো? তাই তো ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসে এতকালের মিথ্যার শাসনে শাসিত মজলুম ক্লান্ত এক যুবক বুক ভরে বিশ্রাম নিচ্ছে। তাকে একটু প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে দাও না, হে সহযাত্রী মুসাফির হিন্দু ভাই ও বোন আমার ! দুনিয়ার ক্ষণিক জীবনে আমি যেমন ক’ দিনের মুসাফির, তুমিও তো ঠিক একই স্রষ্টার প্রেরিত জীবন যাত্রার মুসাফির।

রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের ক্লাস সেভেন- নিউ এইটে পড়ি। নিউ এইট হল নামে এইট, কিন্তু জুনিয়র ব্যাচ না আসা অবধি ক্লাস সেভেনের মতই ডিসিপ্লিন জীবন যাপন করতে হয়। বৃহস্পতিবার মাগরিবের পরে মাঝে মাঝেই আমাদের কোন কাজ থাকতো না। আমরা রুমের প্রায় ৬ বন্ধু এহসান, ইফতেখার, খালেকুজ্জামান, তৌহিদ, নাঈম ও আমি ধর্মীয় আলোচনা করতাম। এই মুহুর্তটি আমার কাছে খুব প্রিয় ছিল। আমি হিন্দু, বাকিরা মুসলিম। অথচ আমিই আরো তাদের উৎসাহ দিতাম- আসো বসি। ইসলামের কথাগুলো খুব ভাল লাগে। ইহকাল- পরকালের পাশাপাশি কতই না জ্ঞান-বিজ্ঞান- ইতিহাস- ভূগোলে ভরপুর ইসলাম ! ৬ খন্ডের ৩টি খণ্ডিত বই মিলিয়ে একটি বই-” সুন্নত ও আধুনিক বিজ্ঞান ” বইটি পড়ে ইসলাম ও সুন্নতের প্রতি আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে। ইসলামের প্রতিটি জিনিস কতই না যুক্তিসম্মত ও উপকারী ! খাবার গ্রহণের পদ্ধতি থেকে শুরু করে ২৪ ঘণ্টার সার্বক্ষণিক কাজকর্ম কীভাবে করবো এমনকি কীভাবে টয়লেট করবো সেটারও সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া হয়েছে !! আল্লাহু আকবার ! আল্লাহ প্রদত্ত পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার মাঝে কি এক আধ্যাত্মিক চিকিৎসাসেবা ! দুনিয়ার ক্ষণিক জীবন যেথা লাভের এক সুবিশাল মিলনায়তন, না জানি আখিরাতে লাভের পরিসীমা কতই না বিস্তৃত ও সীমাহীন !

এ সীমাহীন লাভের অংক বোঝা লক্ষ লক্ষ শিশু-যুবক, বৃদ্ধ অমুসলিম দীনের ছাত্র-ছাত্রীগণ আজ দলে দলে দুনিয়ার সবকিছুকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ইসলামের ছায়াতলে আসতেছেন। নিজেদের ক্ষণিক দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের বিনিময়ে আখিরাতের অনন্ত জীবনের পুজি ক্রয় করে নিচ্ছেন। নিজেদের দুনিয়ার সমস্ত বন্ধু, আত্মীয়, মা- বাবা, সমাজ, সংসার, বউ, সন্তানদের সাথে ক্ষণিক ভংগুর সম্পর্কের বিনিময়ে দুনিয়া ও আখিরাতের মালিক ও শ্রেষ্ঠ বন্ধু আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করে নিচ্ছেন। হে আল্লাহ ! তুমি আমাকেও সেই মহাসৌভাগ্যগণের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তৌফিক দান কর। আমিন।

======================

খাঁটি হিন্দু হতে গিয়েই আমার ইসলাম গ্রহণ (পর্ব-৪)

আলো আর অন্ধকার কখনো একইসাথে থাকতে পারে না। আলোর পথে হাটার গল্প লিখতে বসেছি এমন সময়ে, যখন আমার ভাই ও বোনেরা অচেনা অজানা এক গন্ত্যব্যের পথে হাটছে। মা এসেছে দাবি করে না বুঝে তারা হাসছে, খেলছে, গাইছে, নাচছে, ঘুরছে, আনন্দ করছে, মা- বাবা- ভাই-বোন – বন্ধুদের সাথে বিভিন্নভাবে মজা করছে। অথচ হাদিস অনুযায়ী আল্লাহর গজব তাদের দিকে পতিত হচ্ছে। তাদের বোঝাবে কে ভাই?

একদিন আমিও সেই একইভাবে তোমাদের মত ভুল করতাম, আজ তোমরা যেভাবে করছো। আশা করবো ইনশা আল্লাহ একদিন তোমরাও আমার আল্লাহর পথে হাটবে, মুছে দেবে সকল অজ্ঞানতা ও অন্ধকারকে, জালবে সেখানে আলোর প্রদীপ ।

আজ হতে প্রায় ১০-১১ বছর আগের কথা। সেসকল মানুষরূপী ফেরেশতাগণের কথা ক্যামনে ভুলি যারা আমাকে ইসলামের বাণী শুনিয়েছেন ! অন্ধের মত অন্ধকারের পথ ছেড়ে ইসলামের আলোর পথে হাটতে গিয়ে যারা আমাকে সাহায্য করেছেন, তাদের সকলকে আল্লাহ আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।

২০০৮-০৯ সাল। তারিক হাউস, ৭ নং কক্ষে থাকতাম। এ রূমেই আমার ইসলামের সাথে প্রেমের সূত্রপাত। আগেও দেখা হতো মাঝে মাঝে, কিন্তু, প্রণয় তথা সুসম্পর্কের সূচনা এখানেই। আমি দেখতেও ছোট ছিলাম, এক ব্যাচ সিনিয়র ভাইদের কাছেও খুব প্রিয় ছিলাম। নেভীতে চাকুরিরত রাসেল ভাই রুম লিডার ছিলেন। উনার কথা আজ বললে বাকিরা ঢাকা পড়ে যাবেন তো।

আইইউটি-এর টিচার আরিফ ভাই বললেন- তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ করো, তাহলে আমাদের বিনা হিসেবে জান্নাত দেয়া হবে। বাহ! ইসলামে অন্যের ভালোর জন্য ২-১ টা কথার মধ্যেও এত লাভ ! ডাক্তার সেলিম ভাই খুব মহব্বত করতেন। একসাথে আইসিসিএলএম প্র‍্যাক্টিস কয়েক বছর। ফেরদৌস ভাই একদিন আমাকে ও আমার হিন্দু বন্ধু প্রণয়কে ডাকলেন। সেসময়ে ভাই ইসলাম সম্পর্কে অনেক জানতেন, মানতেন। আমাদের দাওয়াত দিলেন। আমি তো আগেই মুসলিম হয়ে আছি, আলহামদুলিল্লাহ ! মনের কথা বলে দিলাম। ইসলাম তো আগেই দিলে ঢুকে গেছে। লেট করে ফেলেছেন তিনি, নতুবা প্রাপ্তি বড় হতে পারতো উনার। আমার প্রিয় বন্ধুটি আর ফিরে এলো না। মনে করেছিলাম, আমার ব্যাপারটা সে আমার মা-বাবা- শিক্ষক সবাইকে বলে দেবে। কিন্তু, সে সব সময় আমাকে শুধু সাহায্যই করেছে, কখনোই কোন কথা প্রকাশও করেনি, ক্ষতিও করেনি। আল্লাহ আমার বন্ধুকেও ইনশা আল্লাহ একদিন হেদায়েত দান করবেন। আমিন।

শান্তশিষ্ট ও শিক্ষকমহলে বিশেষ সমাদৃত বুজুর্গ সাজেদ ও অলরাউন্ডার আবরার তখন ফেরদৌস ভাইয়ের বিশিষ্ট খলিফা। আমি ইসলাম শিখতে ভাই ও সাজেদের কাছে কাসিম হাউজে যেতাম। এসএসসি এক্সামিনি হবার টাইমে দেখতাম, টাখনুর ওপরে কাপড় পড়ার জন্য কত বড় ধরণের বাধার সম্মুখীন তাকে হতে হতো ! কেয়ামতের আলামতগুলো সে একে একে বলতো। খালিদ হাউসের মেরিনার আসাদ ভাই আমাকে আরবি শেখাতেন। দীনের দাওয়াত নিয়ে মানুষের কাছে ভাইকে যেতে দেখে আমার অক্ষমতার প্রতি আক্ষেপ হতো ।

৬ নম্বর রুমে আমার ইসলামের প্রাথমিক ইলম চর্চা হত। বন্ধু খালেকুজ্জামান অজু করা শিখিয়েছিলো। কালেমা পড়া ও নামাজ পড়া শিখেছিলাম প্রিয় ও সোহাগ ভাইয়ের কাছ থেকে। পাশাপাশি গভীর রাত পর্যন্ত অনেক সুখ দুঃখের কথা হত প্রিয় ও বিশেষভাবে বর্তমান কানাডাপ্রবাসী সোহাগ ভাইয়ের সাথে। এতটাই আবেগঘন প্রিয় সময় কাটিয়েছি যে কথা না বললে, দেখা না হলে ভালই লাগতো না।

আজ অনেক বড় হয়ে গেছি। এত আবেগ নেই, মা নেই, বাবা নেই, ভাই নেই, বন্ধু নেই। কোন চাকরি নেই, ব্যবসা নেই, কোন ঝামেলা নেই, আলহামদুলিল্লাহ ! কোন কষ্টও নেই। এখন একটাই ভয়- আল্লাহর সন্তুষ্টি সাথে আছে তো? যে আল্লাহকে পেলো না, অথচ দুনিয়ায় সবকিছুই পেলো, সে তো কিছুই পেলো না। আর যে আল্লাহকে পেলো, অথচ দুনিয়ার কিছুই পেল না, সে তো কিছুই পেলো না।

—————— —————— —————— ——————

বহু রকম চোর দেখেছি, চুরি করে মার খাওয়ার পরেও আজ তাদের কৃতকর্মের জন্য কোন আফসোস নেই। নবীজি বলেছেন- সবচেয়ে বড় চোর হলো সেই ব্যাক্তি যে নামাযে চুরি করে। সমাজের কাছে চোরদের গ্রহণযোগ্যতাই বেশি। নিরুপায় গরীবদের অসহায়ত্বের সুযোগে অনেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা সুদে খাটায়। বৃদ্ধ বয়সের মা- বাবার প্রতি ন্যুনতম ভালবাসা নেই, বিন্দুমাত্র দায়িত্ব পালনের ধার ধারে না। সমাজের কাছে তারা দোষী নয়, বরং বাহবা পায়। অমুকে স্কুল থেকে টাকা মারে, উন্নয়নের নামে জনগণের টাকা মারে, চাকরি দেয়ার নামে সুবিধাবঞ্চিত মানুষজনকে সাহায্যের আড়ালে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। সমাজের কাছে তারা মডেল, জনতার কাছে পূজা পায় । ধনী- মডেল- মোড়লদের সন্তান সুসন্তান হচ্ছে নাকি কুসন্তান হচ্ছে সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। নিজেদের ঈমান ও আমলের কোন খবর নেই, দীনকে বিক্রি করে ঈমানদার মুসলিমদেরকে বেঈমান ও সংকর ধর্মের শিষ্য বানানোর ফিকিরে ১৬ আনা – উনারাই জাতির কাণ্ডারি।

আর কেউ হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলামের দিকে এলেই যত পাপ – অনাচার – কুকর্ম সে করে ফেলেছে। অথচ ধর্ম মানে ধারণ করা, এটি একটি বিশ্বাসের নাম। আর বিশ্বাস কি বাপ দাদার থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া কোন সম্পদ? না। বিশ্বাস তো মনের ও সত্যের মিলবন্ধন। সেখানে যুক্তি ও চিন্তা-চেতনা- ধারণা বাসা বাধে নির্জনে। এখানে অমিল থাকবেই। কিন্তু একারণেই সত্যের বাধনে হাত রাখাতেই সে দুনিয়ায় নিকৃষ্টতম জীব হয়ে গেল? সে সমাজ – পরিবার থেকে আলাদা??

আচ্ছা, একজন মুসলিম সন্তান কি তার অমুসলিম মা- বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতে পারে না, সবচেয়ে বেশি মিস করতে পারে না? মা- বাবা /কল্যাণে সবচেয়ে বেশি একজন নেককার সন্তানই তো সবচেয়ে বেশি দোয়া করে। ঘরে ঘরে আজ জরিপ করে দেখুন, মা- বাবা ও সমাজের শ্রেষ্ঠতম সন্তানরাই আজ ইসলামের ছায়াতলে আসতেছে। আর কোন অর্থ বা বিয়ের কারণে নয়, বরং শুধু তার রবকে পাবার জন্যই তারা ইসলামের অমৃত সুধা পান করে ধন্য হচ্ছে।

———————————————————-

যুগে যুগে তারাই সবচেয়ে উপেক্ষিত যারা তাল মিলিয়ে না চলে স্রোতের বিপরীতে দীন মেনে চলতে চেষ্টা করে। আপনি শুধু নিজেই হিন্দু থেকে মুসলিম হবেন? হন, এটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। যদিও বাবা মায়ের কান্না সুসন্তানের জন্য দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্টের। আপনি কাউকে দাওয়াত দেবেন না- এটাই অবিশ্বাসীদের চাওয়া পাওয়া। হকের দাওয়াতকেই অবিশ্বাসীগণ সবচেয়ে বেশি ভয় করে। আমি আমার নিজের জীবনেই এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়েছি।

ইতিহাস বলে- ঈমান গ্রহণের কারণেই মক্কার গরীব মুসলিম দাসদের ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মক্কার জ্বলন্ত সূর্যের নিচে তপ্ত বালুর ওপর শুইয়ে রাখা হতো। মুশরিকরা তাদের উন্মুক্ত বক্ষের ওপর ভারী পাথর চাপা দিয়ে তাদেরকে ইসলাম ত্যাগ করতে বলতো। ইয়াসির ও সুমাইয়া (রা) ইসলামের দুই শহীদ প্রচণ্ড বর্বরতার শিকার হয়েছিলেন। সূর্যের আগুনের মতো উত্তপ্ত মরুভূমিতে শুইয়ে রেখে প্রতিদিন তাঁদের বুকের ওপর ভারী পাথর চাপিয়ে দেয়া হতো। নির্যাতনে স্বামী ইয়াসির মারা যান। আর স্ত্রী সুমাইয়াকে আবু জেহেল লজ্জাস্থানে বর্শা নিক্ষেপ করে হত্যা করে। হত্যা নয়, শহীদ করেন।

আল্লাহ বলেন- আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয়, তোমরা তাদের মৃত বল না, বরং তারা জীবিত। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক পাচ্ছে।

এসব দমন-নির্যাতনের পন্থা ব্যবহার করে মুশরিকরা ইসলামকে তার শৈশব অবস্থাতেই শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। এটি তাদের জন্য ছিল জীবন-মরণ যুদ্ধ। কারণ, মুশরিকরা জানত যে, মহানবী (সা.)-এর আহ্বানে মানুষ সাড়া দিলে অন্যায়ভাবে ভোগ করা তাদের এত দিনের সুযোগ-সুবিধা তারা চিরদিনের জন্য হারাবে। বস্তুত ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা বৃদ্ধির পেছনে ঈর্ষাও ছিল অন্যতম কারণ। ইসলামের শত্রুরা দেখতে পেল যে, তাওহীদী আদর্শের মোকাবিলায় তাদের শক্তি ও ক্ষমতা ভেঙ্গে পড়ছে; কুড়াল দিয়ে কাটা গাছের মতোই ইসলামের বাণীতে তাদের বস্তুগত ও মানসিক প্রতিমাগুলো মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। এরূপ পরিস্থিতিতে তারা প্রথমে হুমকির আশ্রয় নিল। যখন তারা দেখল হুমকিতে কাজ হচ্ছে না, তখন তারা বিভিন্ন পুরস্কার ও সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নবী (সা.)-কে তাঁর পথ থেকে ফেরানোর চেষ্টা করল। কিন্তু তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ প্রমাণিত হলো যখন তিনি ঐশী বার্তাবাহকের জন্য মানানসই দৃঢ়তা নিয়ে বিরক্তির সাথে ধন-সম্পদ, অর্ধ আরবের বাদশাহ ও ক্ষমতা, আরবের সবচেয়ে সুন্দরী রমনীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন।

তিনি ঘোষণা করলেন : “আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যদি তোমরা আমার ডান হাতে সূর্য ও বাম হাতে চাঁদ এনে দাও, তবুও সারা বিশ্বে আল্লাহর দীনের দাওয়াত পৌছানোর পূর্ব পর্যন্ত অথবা দীনের পথে আমার জীবন ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত আমি আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াব না।” ইয়াকুবী তাঁর ইতিহাসে এভাবে বর্ণনা দিয়েছেন : “কুরাইশরা আবু তালিবকে বলল যে, তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র তাদের দেব-দেবীদের সাথে নৃশংস আচরণ করছে, তাদেরকে অপ্রকৃতস্থ বলছে এবং প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, তাদের পূর্বপুরুষরা বিভ্রান্ত ছিল। তারা আবু তালিবকে অনুরোধ করল যাতে তিনি মুহাম্মদকে দীন প্রচার থেকে বিরত হতে বলেন। বিনিময়ে কুরাইশরা তাদের সকল সম্পত্তি মহানবীকে দিয়ে দেবে।”

মুহাম্মদ (সা.) জবাব দিলেন : “আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে এজন্য নবী হিসাবে পাঠান নি যে, আমি এ পৃথিবীর সম্পদ পুঞ্জীভূত করব; বরং তাঁর বাণী মানব জাতির নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য এবং মানুষকে তাঁর দিকে আহ্বান করার জন্য তিনি আমাকে নবুওয়াতের দায়িত্ব দিয়েছেন।”

আলহামদুলিল্লাহ ! কতই না সুন্দর কথা ! হে আল্লাহ ! তুমি আমাকে নবীর আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে পথচলার তৌফিক দান কর। আমিন।

=======================

খাঁটি হিন্দু হতে গিয়েই আমার ইসলাম গ্রহণ (পর্ব-৫)

তখন আমি ক্লাস এইটে । মসজিদ লাইব্রেরীর দায়িত্বে সম্ভবত আসিফ ভাই । ইমিডিয়েট ভাইগণ আমাকে ২টি বই এনে দেন । আবুল হোসেন ভট্টাচার্যের ‘আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম’ , ও জাকির নায়েকের ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য। ‍বই দু’টি আমার জীবন পাল্টে দেয়া বই । এই দুইটি বই দিয়েই শুরু । আর আল কুরআনের বঙ্গানুবাদ পড়েই আত্মসমর্পণ । বই দুটির লিংক-

http://www.islamijindegi.com/…/ami-keno-islam-grohon-korlam…

http://www.mediafire.com/file/7rp77qv21gv5chz

কে এই জাকির নায়েক আর কেই বা আবুল হোসেন ভট্টাচার্য ! তাদের কাউকেই চিনতাম না । এই বই দুইটি পাবার পরে বিভিন্ন সময়ে কখনো ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাই, কখনো বন্ধু আবার কখনো জুনিয়র বই নিয়ে এসে দিতেন । যতদূর মনে পড়ে, কলেজ লাইব্রেরী থেকে মেশকাত শরীফ ইস্যু করেছিলাম । একদিন জুম্মার দিনে সবাই যখন মসজিদে আমি তখন শুয়ে শুয়ে ৬ নং রুমের ঢুকতেই হাতের বাম পাশে রুম লিডারের প্লেসে মেশকাত শরীফ পড়ছিলাম । একজন স্যার পাশ দিয়ে চলে গেলেন, আমি দেখলাম । আবার পড়া শুরু করেছি, এমন সময় দরজা খোলার শব্দ । স্যার বিভিন্ন প্রশ্নে আমায় জর্জরিত করলেন।

বলুন তো ভাই, হিন্দুর ঘরে জন্মেছি বলে পড়া যাবে না আপনাদের নবীর এত এত সুন্দর কথা ? নবী কি আপনার একারই ? আমার না? অমুসলিমদের জন্য কি আলাদা কোন নবী আসবে ? আপনাদের নবী তো আমাদেরও নবী? তাই না, বলুন !

বন্ধু আতিক লাইব্রেরী থেকে মুসলিম শরীফ- ইস্যু করেছে সেই কব্বে ! জমা দেয়ার কোন নাম-গন্ধ নেই । ওর কাছ থেকে নিয়ে মুসলিম শরীফ- এর কিছু অংশ পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো। এবার আর ধরা খাই নি ।

আর্টস পাবার কারণে সদ্য ক্লাস নাইনে উঠে ফর্ম চেঞ্জ করতে হয়েছে । ডেস্কের মধ্যে বই রেখে ইসলামিক বই পড়ছি । হঠাৎ করে ফিজিক্স-এর জাহানারা ম্যাডাম-এর কাছে আবার ধরা ! হিন্দু হয়ে ইসলামিক বই পড়তে গিয়ে ধরা খেলে জানাজানি কানাকানি হবার বেশি ভয় !! হুমায়ুন আজাদ-এর বই পড়ো, ডারউইন – এর বই পড়ো; খুব ভাল ছেলে হয়ে যাবা !

কলেজের মসজিদে প্রথম গিয়েছিলাম আসাদ ভাইয়ের সাথে; ক্লাস নাইনের পিকনিক শেষে সন্ধ্যাবেলায় । সিনিয়র দুই ব্যাচ এখনো কলেজে ফিরে নাই। এই সুযোগে আমার এত বড় সুযোগ প্রাপ্তি ! আল্লহামদুলিল্লাহ !

অনেক ভয়ে ভয়ে গা ছিমছিম করতেছিলো মসজিদে প্রবেশের সময়ে । কতই না দামি স্থান মসজিদ !

আজো মসজিদে যাই; নির্ভয়ে , নির্বিঘ্নে । সেই অনুভূতি, প্রেম , ভালোবাসা, আল্লাহ্‌র ভয় আ মনে আসে না !

হায় ! কতই না উত্তম ছিল ঈমান আনয়নের প্রথম দিনগুলি ! ঈমানের স্বাদের দিনগুলির মত অনুভূতি আর এখন হৃদয়ের বাস্তবতায় ভাসে না ।

———————————————————————————

কাফেরদের প্রতি কবর ও নরকের কষ্ট আমার শিশুমনকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয় ! হায় ! এ অবস্থায় যদি আমি মারা যাই আমার কী হবে?

আল্লাহ্‌ তায়ালা এক মহাগ্রন্থ আল-কোরানে বলছেন-

“এই দুইদল(মুসলমান ও অমুসলমান), এরা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে;যারা কাফের তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক;তাদের মাথার উপর ফুটন্ত জল ঢেলে দেওয়া হবে,যাতে তাদের চামড়া এবং ওদের উদরে যা আছে তা গলে যাবে,এবং ওদের জন্য থাকবে লৌহ হাতুড়ি। যখনই ওরা (কাফের) যন্ত্রনাকাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বার হতে চাইবে,তখনই তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে ওতে,ওদেরকে বলা হবে; আস্বাদ কর দহন যন্ত্রনা।” (কোরান-২২:১৯-২২)

সরবে সশব্দে দুনিয়ার আলো পেয়ে নিরবে নিঃশব্দে আজ অথবা কাল খুব দ্রুতই চলে যেতে হবে আমাকে আপনাকে সকলকে। যেই দেহের প্রতি আজ এত মায়া-মহব্বত, যেই দেহের সাজ-সজ্জা, যত্নের জন্য আজ এত মেহনত, কাল তা মাটির সাথে মিশে একাকার হয় যাবে । কেউ আর আমাকে চিনবে না । আমার পরিচয় হবে লাশ, তারপরে কংকাল, তারপরে হাড়, তারপরে মাটি । পুড়াও আর মাটিতে দাও অথবা নদীতে ভাসিয়ে দাও না কেন তোমার প্রত্যক্ষ চক্ষু বলে দেবে- তুমি মাটি হয়ে অথবা ছাই হয়ে অথবা খাদকের বিষ্ঠা হয়ে মাটির দেহ মাটিতেই মিশে যাবে । আল্লাহর জমীন ছেড়ে পালাবে কোথায় ?

“আল্লাহ সত্য প্রত্যাখানকারীদের (কাফেরদের) অভিশপ্ত করেছেন এবং তাদের জন্য জলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছেন-যেখানে ওরা স্থায়ী হবে এবং ওরা কোনো অভিবাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। যেদিন অগ্নিতে ওদের মুখমন্ডল উলটে পাল্টে দগ্ধ করা হবে সেদিন ওরা বলবে ; হায় আমরা যদি আল্লহ ও রসুলকে মান্য করতাম!” (কোরান-৩৩:৬৪-৬৬)

আহা ! কতই না কষ্ট নরকে ! হে আল্লাহ্‌ ! আমি নরকে যেতে চাই না ।

“আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি,যার বেষ্টনী ওদের পরিবেষ্টন করে থাকবে। ওরা পানি চাইলে ওদের দেওয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা ওদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে; কি ভীষন সে পানীয় আর কি নিকৃষ্ট তাদের অগ্নিময় আরামের স্থান।” (কোরান-১৮:২৯)

আল্লাহ্‌ কি আমাকে ইঙ্গিত করেই কথাগুলো বলছেন ? –

“আমি মানুষকে পথের বিধান দিয়েছি,হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে। আমি অকৃতজ্ঞদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি শৃঙ্খল, বেড়ি,লেলিহান অগ্নি।” (কোরান-৭৬:৩-৪)

বলুন, আল্লাহ্‌ এত মায়া-মহব্বত করে আমাকে – আমাদেরকে কথাগুলো বলছেন। তারপরেও কীভাবে অকৃতজ্ঞ হই, বলেন? কতই না শাস্তি বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহ তায়ালা-কে না মানার কারণে !

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“মানুষকে যখন তার কবরে রাখা হয় আর তার সাথিরা চলে যায়, তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়ায শুনতে পায়। এমন সময় দু’জন ফিরিশতা এসে তাকে বসায়। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী ধারনা রাখতে? তখন ব্যক্তি যদি ঈমানদার হয়, সে উত্তর দিবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তাকে বলা হবে জাহান্নামে তোমার যেখানে অবস্থান ছিল সে দিকে তাকাও। আল্লাহ জাহান্নামের এ অবস্থানকে তোমার জন্য জান্নাত দিয়ে পরিবর্তন করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনে, সে উভয় অবস্থানকেই দেখবে। আর ব্যক্তি যদি মুনাফেক বা কাফির হয়, যখন তাকে প্রশ্ন করা হবে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী ধারনা রাখতে? তখন উত্তরে সে বলবে, আমি জানি না। মানুষ যা বলত আমি তাই বলতাম। তাকে ফিরিশতাদ্বয় বলবে, তুমি জানলে না ও তাকে অনুসরণ করলে না। তখন তাকে লোহার হাতুরী দিয়ে প্রচন্ড আঘাত করা হয়। ফলে এমন চিৎকার দেয় যা মানুষ ও জিন ব্যতীত সকল প্রাণী শুনতে পায়।

আমি যদি ঈমান-আমল না বানিয়ে, রাসূলের পরিপূর্ণ অনুসরণ না করে , ইসলামকে আমার ভেতর-বাহিরের পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসাবে না বানিয়ে যদি কবরে যাই তবে আমার কী হবে?

হজরত উসমান রাযি যখন কোনো কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তখন এমনভাবে কাঁদতেন যে, নিজের দাড়ি মোবারক ভিজে যেত। তাই একবার তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি জান্নাত ও জাহান্নাম স্মরণ করে এত কাঁদেন না, যতটুকু কাঁদেন কবর দেখে এর কারণ কী? তিনি বললেন, রসুল (সা.) বলেছেন, কবর হচ্ছে আখেরাতের প্রথম ঘাঁটি। এখানে যদি কেউ রক্ষা পেয়ে যায়, তাহলে পরবর্তী সব ঘাঁটি তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আর এখানে কেউ যদি রক্ষা না পায় তাহলে পরবর্তী সব ঘাঁটি তার জন্য খুব কঠিন হবে। তিনি আরও বললেন, রসুল (সা.) বলেছেন, মেরাজের রজনীতে আমি যত ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি তার মধ্যে কবরের আজাবই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস নং-২৩০৮)

হে আল্লাহ ! কবরের আজাব সত্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তুমি আমাকে ও আমার ঈমানদার মুসলিম ভাই-বোনদেরকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করো; আমার মুসলিম- অমুসলিম সকল ভাই-বোনদেরকে কবর, হাশর ও নরকের শাস্তি উপলব্ধি করার তৌফিক দান করো। আমিন ।

======================

খাঁটি হিন্দু হতে গিয়েই আমার ইসলাম গ্রহণ (পর্ব-৬)

বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, সত্য বলছি । জীবনে কোন কালে ভালো ছাত্র ছিলাম না । বাবা-মা-কাকাদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠে ছোটবেলা থেকেই পড়তে হয়েছে । বিকেলে খেলতে যেতাম বলে ওই সময়টাই বেছে নেয়া হয়েছে আমার গৃহশিক্ষক আসার । ১ম হবার জন্য প্রতিযোগিতা চলতো। কেউ কাউকে ছাড়বার পাত্র-পাত্রী নয়। নকল করে ধরা খাওয়া আর পজিশন খারাপ হবার কারণে চাইলাম- আমাকে আর ওই স্কুলে পড়া যাবে না; মান-সম্মান সব শেষ; আমাকে অন্য কোথাও পড়তে হবে। প্রায় দেড় মাস পরে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা। আমাকে চান্স পেতেই হবে, যে করেই হউক। আল্লাহ্‌ চেয়েছেন আমাকে আলাদা পরিবেশে নিয়ে গিয়ে হেদায়েত দেবেন। বাবা-মা- সমাজের পছন্দনীয় জায়গা থেকে সবচেয়ে পছন্দনীয় ও ঈর্ষনীয় মানুষটা নষ্ট হয়ে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে নিকৃষ্ট আর ঘৃণিত কাজটি করে বসবে তা কে জানতো !

আল্লাহ্‌ কবুল করলেন । যতদূর মনে পড়ে ভাইভা বোর্ডে ছিলেন- তৎকালীন প্রসন্ন কুমার পাল স্যার, হিন্দু । হয়তো মায়া জন্মে গিয়েছিলো অথবা আল্লাহই মনে রং পরিবর্তন করে দিয়েছে। জাতের টান বলে কথা। ক্যাডেট কলেজের প্রিন্সিপাল , অথচ ইনি একসময়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে শুনি , তাও আবার নাকি ক্যাডেট কলেজের ভেতরেই ! হায় আল্লাহ্‌ ! নিজের রাজ্যে রাজার আত্মহুতি !

কিই বা এমন কষ্টের অনুভূতি !

এত সম্মান ! এত ক্ষমতা ! এত যোগ্যতা !

সকল কিছুকে বিসর্জন দিয়ে কোন জগতের পথে শান্তি খুজে পেতে চলে গেলেন – তার খোঁজ- খবর কি কেউ নিয়েছেন ?

সমাজের বাকি ১০ জনের মতো আমারও মনে আসতো- সমাজের কাছে সম্মান নিয়ে চলার জন্যই যেন আমাদের জন্ম । অনেক টাকা উপার্জন, এত ভালো রেজাল্ট, আর্মি অফিসার হওয়া, বিসিএস ক্যাডার হওয়া, গাড়ি-বাড়ি-সম্পদের মালিক হওয়া সকল কিছুর উদ্দেশ্য আসলে কী? – এ কথাটি একটু ভাবা দরকার।

আমার মনে হয়- সকল কিছুর উদ্দেশ্য হয়ে আছে- মানুষের কাছে সম্মান পাওয়া । এটার জন্যই আমাদের প্রতিদিনের ২৪ ঘণ্টার অভিনয়, কষ্ট, মেহনত। ক্যারিয়ার নিয়ে কতই না দুশ্চিন্তা ! হায় ! এটা পড়া হয়নি, ওটা পড়া হয়নি। অমুক ওইটা ভালো পারে। অমুকে কত ভালো একটা জব পেল, তমুকে বিসিএস ক্যাডার হলো , আমাকে ২ টাই পেতে হবে। অমুকে ঐ গাড়ি কিনেছে, আমার গাড়িটা এর চেয়ে ভালো হতে হবে- তাহলে আমার সম্মান বাড়বে।

ক্যাডেট কলেজের ড্রেস পড়ে যখন বাড়ি থেকে রাস্তায় বেড় হতাম, তখন নিজেকে অনেক বড় বীর মনে হতো। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! হায় ! কতই না সম্মানিত আমি ! কতই না এক উত্তম যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছি আমি ! অথচ ভাবুন, আমার নিজস্ব যোগ্যতা কোথায় ? এত ভালো পরিবেশে নিবিড় তত্বাবধানে বেড়ে ওঠা , এত দেখভাল , এত সুযোগ করে দেয়া, এত পড়ার ধৈর্য দেয়া, পড়ার উপাদান দেয়া, আমার সুস্থ শরীর দেয়া, উচতা- মেডিকেল ওকে থাকা, ব্রেইন, মাথা, চোখ, হাত- এসব কার? আমার যোগ্যতা টা আসলে ঠিক কোথায় ?

ক্যাডেট কলেজে ইংরেজিতে পড়াশোনা । গ্রামের এক মূর্খ মানুষ কিছুই বলতে গেলে পারে না, পড়েও না। মিউজিক ক্লাবে- অডিটোরিয়ামে গিয়ে পড়ে থাকে। পড়াশোনার সাথে তেমন সম্পর্ক নেই । প্রায় ৪৫ জনের মধ্যে ৪ জন বিজ্ঞানে ফেল । পেয়ে গেলাম আর্টস । আহ ! সমাজের চোখে মুখ দেখাবো কী করে? জাত তো সব শেষ ! চোখের জলে বন্যা সৃষ্টি হয়ে যাওয়ার উপক্রম । আবার পরীক্ষার আয়োজন করা হলো । ৪ গুণধর ছেলের সকলেই সাইন্স পাবার অযোগ্য , সমাজের নিকৃষ্ট জীব !

ক্যাডেট কলেজ ছেড়ে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে; তৌহিদদের খাতা দেখে- উত্তর শুনে এস এস সি- এইচ এস সি মিলিয়ে ৮০ তে নম্বর ৭৮। ১২০- এ ৫২ পেলেই প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে টেকার সম্ভাবনা আছে। ৬৬ পেলাম । সাংবাদিকতায় ভর্তি হনু। পড়ার সাথে কোন সম্পর্ক রইলো না। অনার্সে লাস্ট হয়ে পাস করনু; মাস্টার্সে হনু লাস্টের কাছাকাছি- টেন্ড টু লাস্ট । ইনশা আল্লাহ্‌ আজ থেকে কেউ আর আমায় নিয়ে অনেক বড় হবার স্বপ্ন দেখবেন না। বিসিএস ছাড়া যে জীবন অচল নয় দয়া করে তা একটু ভাববেন । বিসিএস- ক্ষমতা – ক্যারিয়ার – এর বাইরেও অনেক বিরাট এক দুনিয়া আছে এই দুনিয়াতেই । জানি না সেই দুনিয়া দেখার চোখ এই সমাজের ক্যারিয়ারমুখী সোনার ছেলেদের দেখার সৌভাগ্য় হবে কি না । কেননা তাদের সকাল হয় রাতভর দেখা ক্যারিয়ারের স্বপ্ন, লাল গাড়িতে বেড়ানোর স্বপ্ন, দম ফুরানোর আগ পর্যন্ত মা-বাবা আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের চোখ জুড়ানোর স্বপ্ন ইত্যাদি পালাভরে আসা যাওয়ার পরে ।

আজ বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত দেশ। সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবার স্বপ্নটার পিঠে পাহাড়সম প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দিতে ওস্তাদ ঘুনে ধরা অন্তঃসারশূণ্য সমাজ।

হে আমার ভাই ও বোন ! সমাজের দিকে আপনার বুড়ো আঙ্গুলটা একবার মিলিয়ে ধরুন-ই না, দেখেন ইনশা আল্লাহ্‌ চিরশান্তির এক নিশ্বাস পাবেন হৃদয়জুড়ে ।

চিরশান্তির উৎস তো আমাদের দীন, সে কথা কি মনে পড়ে? পরবর্তী শূণ্য থেকে ৩০ বছরের ক্যারিয়ারের জন্য তো ১ম ৩০ বছর কাটিয়েই দিলেন । আখিরাতের ক্যারিয়ার কয় দিনের? আর তার জন্য আপনার- আমার প্রস্তুতি-ই বা কয় দিনের হচ্ছে? ওয়ান ইস টু কত হয়, অনুপাত করেন?

হে আমার মা- বাবা ও ঘুনে ধরা সমাজ !

আমার ক্যারিয়ার নিয়ে যদি সত্যই ভেবে থাকো তাহলে বলো – অনেক ভালোই তো থাকছি !

মাত্র ২০ হাত দূরে কাটানো মানুষদের মত রাস্তায় শুয়ে নেই; ১ দিনও না খেয়ে থাকি না ওদের কারো মত । দুনিয়ার ক্যারিয়ার তো ভালই চলছে বেশ ।

আল্লাহ্‌ ও তার রাসূলের সাথে যারা সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তারা কোন হৃদয় দিয়ে অনুভব করবে আসল ক্যারিয়ারের ঠিকানা !

কই, একবারও তো কেউ বলো না-

আমার আখিরাতের ক্যারিয়ারের কী হবে ?

====================

খাঁটি হিন্দু হতে গিয়ে ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণ (পর্ব-৭)

========================================

জন্ম নিয়েছিলাম কাশ্যপ গোত্রের নমশূদ্র পরিবারে । আজও একই গোত্রের মানুষই আছি, একই বাবা-মায়ের সন্তানই আছি। সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়নি । বিশ্বাসের একটু পরিবর্তন ঘটেছে, এই আর কি !

আমি একটু-ই বলবো, কারণ বিশ্বাসের পরিবর্তন প্রধান হলেও শিশু মনে সকল মনই ইসলাম ফিতরত (স্বভাবধর্ম)- এর ওপরেই থাকে। কিন্তু সমাজ, বাবা-মায়ের প্রভাবে সে হিন্দু হয়, খ্রিস্টান হয়, মূর্তিপূজক হয়, সূর্যপূজক হয়।

আমার বিশ্বাসের পরিবর্তনটাও যুক্তি ও সত্যের সন্ধানে হাঁটতে গিয়েই। আমি এমন ছিলাম না যে লোকে যা বলবে আর কোন যুক্তি ও কারণ ছাড়াই তাকে ও তার কথাকে মেনে নেব !

আগে মনে করতাম- সকল ধর্মের সকল মানুষের সৃষ্টিকর্তা একজনই, ফিরে যেতে হবে একজনেরই কাছে, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে ঈশ্বর যেভাবে অবতার হিসেবে পৃথিবীতে এসে বিধি-নিষেধ দিয়ে গেছেন, হিন্দুরা ওভাবেই করে । মুসলিমদের নবীর কাছে আল্লাহ্‌ অহী মারফত যেভাবে আদেশ করেছেন, তারাও ওভাবেই পালন করে। খ্রিস্টানরা বাইবেল ও যীশুর কথামত মেনে তারাও ওভাবেই করে। ধর্ম যার যার আদেশ-নিষেধ একই সবার, কারণ একই সৃষ্টিকর্তাই যে সবারই ।

বাবা ছিলেন এলাকার গণ্যমান্য বৈষ্ণব ভক্ত । ছেলেকে অনেক বড় বানাবেন এমন এক স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা-মা আমাকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন । ছোট বেলা আমাকে পড়াতেন আমার বাবা । অংক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বানিয়ে দিতেন । আমার পরীক্ষা নিতেন। এভাবেই আমার বেঁড়ে ওঠা । জানি না আজকালের বাব-মায়েরা এত সময় বের করতে পারেন কি না ছেলেকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য।

বাবার হাত ধরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই অংক অনেকটা সহজ মনে হতো । কম সময়ে অংকের উত্তর বের করতে পারা ছাত্রদের জন্য ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করার সুযোগ থাকে । আল্লাহ্‌ আমাকে তৌফিক দিয়েছিলেন আমার বাবাকে উছিলা করেই ।

‘মানুষের মত মানুষ’ হবার সংজ্ঞাটা জনে জনে আলাদা । কারো সন্তানকে বইয়ের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে দেশের সেরা ইংলিশ মিডিয়াম কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে ‘মানুষের মত মানুষ’ বানানোর ১ম ধাপ পার করেন । কেউ খুজেন ভাল গানের শিক্ষক, কেউ খোঁজেন ভালো ড্রইং মাস্টার, কেউ পাঠান ভাল খেলোয়ার বানানোর কারিগর। অন্যদিকে, কেউ আবার সেরা কারী (কোরআন তেলওয়াতকারী) বানাতে চান। টিভিতে টাই পরা বক্তার মত আমার ছেলেটাও একজন দীনের দায়ী হউক, কুরআন নিয়ে ভুল খুজে বেড়ানো খ্রিস্টান পাদ্রীর সকল প্রশ্নের পুঙ্খানুপুঙ্খ উত্তর দিয়ে দিক, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিক বেদ-গীতা-বাইবেল- এর অসংখ্য অসামাঞ্জস্যতার দিকে। ইসলামের কাছে মাথা নত করুক একটু আগের সেই ভুল বের করা পাদ্রীটা- সন্তানকে নিয়ে এমনও স্বপ্ন দেখা মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। কেউ আবার প্রিয় সন্তানকে সাধ্যের মধ্যে খুব ভাল হিফজ বিভাগে ভর্তি করিয়ে দেন, কেউ ভাল আলেম বানাতে চান। এসবের মধ্যেই ‘মানুষের মত মানুষ’ বানানোর সুস্বপ্ন অথবা দুঃস্বপ্ন পূরণের পথে একটু একটু করে এগিয়ে যান । মসজিদে যাবার সময় ছোট শিশুর কোমল হাতটি ধরে শিশুর বাবা আল্লাহ্‌র সাথে শিশুটিকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আনন্দ পান ।

এমন শিশুদের জন্য আপনার কি ঈর্ষা হয় না?

হায় ! পৃথিবীর সকল বাবাই যদি এভাবে আল্লাহ্‌র সাথে তার আদরের সন্তানের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জিম্মাদারি আদায় করতো !

অমুসলিম ঘরে জন্ম নিয়ে আমি না হয় এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলাম ।

আপনারা কেন আপনার শিশুকে তার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করছেন ? এ বঞ্চনার শিকার তাকে হতে হয় সারাটা জীবন, হতে হয় মৃত্যুর সময়, হতে হয়, কবরে, হতে হয় হাশরে, হতে হয় স্বর্গ ও নরকের আসল সফলতা ও ব্যর্থতার ফায়সালায় ।

====================================================

খাঁটি হিন্দু হতে গিয়ে ইসলামে আত্মসমর্পণ (পর্ব-৮)

””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””

“Islam is the best religion; Muslims are the worst followers.”

অর্থঃ” ইসলাম হলো সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধর্ম আর মুসলিমরা হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট অনুসারী। ”

কথাগুলো আমার নয়, বিশ্ববিখ্যাত অমুসলিম মনীষী জর্জ বার্নার্ড শ – এর। গুগলে একটু সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন তার এই লেখা।

“তুমি ইসলাম শেখো আমাদের ধর্মগ্রন্থ দেখে, মুসলিমদের দেখে নয়। “-কথাগুলো বলেছিলেন রাসেল ভাই, যার অপর একটি কথা যাচাই করতে গিয়ে আমার মত নগণ্য এক পাপী মানুষের সারা জীন্দেগির পরিবর্তন হয়ে যায় । আলহামদুলিল্লাহ।

ভাইয়ের পরিবর্তনের সেই কথাটি ছিলো- কুরআনে আল্লাহ বলছেন, আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ধর্ম একমাত্র ইসলাম। ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম কখনো আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

মনে প্রথম ধাক্কা লাগে মহাসত্যের এই সামান্য আহবানে, যখন আমি ক্লাস এইটে । রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের তারিক হাউসের ৭ নং রুমে থাকতাম। মন কিছুতেই এতকালের বিশ্বাস, যা শুধু বাপ-দাদাদের কাছ থেকে পেয়েছি বলেই এটা বিশ্বাস- সেটাকে মেনে নিতে পারেনি । সাধ্যমতো হিন্দু ও ইসলাম ধর্মগ্রন্থসমূহ খুজতে লেগে গিয়েছিলাম।

কিন্তু??????

বিশ্বাসের কাছে তো যুক্তি- তর্ক- বিজ্ঞান সব মিথ্যা। বাপ-দাদা-সমাজ যা করছে, সেটাই যুগে যুগে সত্য হয়ে এসেছে, এ কলিযুগেই হবে। এর বাহিরে চললে পাপ হবে। আমার হিন্দু বন্ধু বলতো – বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ, তর্কে বহুদূর। কিন্তু বিশ্বাস কি জিনিস সেটাই তো বুঝলাম না। বিষ খেয়ে বিশ্বাস করলাম- পোলাও কোরমা দিয়ে মুরগির রান চিবোচ্ছি, কাজ হবে ? আজ শুক্রবার ! আমার বিশ্বাস – আজ স্কুলে ১০০০ ছাত্র- ছাত্রী আসবে। কিন্তু কেন আসবে? প্রশ্ন করা যাবে না। দাদু বলে গিয়েছে আসবে, ব্যস আসবে। আর কোন কথা নাই। কান নিয়ে গেছে চিলে – এর মতো।

ভাইয়ের কথা শুনলে ভাবলাম –

আসলেই? এটা কীভাবে সম্ভব ? আমাদের মত ছোট ছোট সাধারণ হিন্দুদের না হয় বাদই দিলাম কিন্তু তাই বলে বড় বড় সন্ন্যাসী, পূজারী, নিরামিষভোজী, দুনিয়াবিমুখদের ওপর এত বড় জুলুম করতে পারেন নাকি ঈশ্বর!!

হিন্দু ধর্মে এত বড় বড় পন্ডিত, সন্ন্যাসী, তপস্বী, পূজক, ব্রাহ্মণ – সকলেই নরকের আগুনে পুড়বেন? তাও আবার অনন্ত জীবনের জন্য? এই শাস্তির নাকি শুরু আছে, কিন্তু কোন শেষ নেই !

উনারা ঘর ছাড়া, বিবি- বাচ্চা ছাড়া- দুনিয়া ছাড়া – পরকালের পাগল, ঈশ্বরের পাগল। দিন – রাত ধর্মের আচার- আচরণ পালন করে যাচ্ছেন। ঈশ্বরকে পাওয়া, আখিরাত তথা মৃত্যুর পরের জীবন- ই তো তাদের মূল লক্ষ্য। তারপরেও এত পূণ্য কাজের মধ্যে থেকেও ঈশ্বর কীভাবে তাদের নরক দিতে পারেন?

কারণ কলিযুগের মুক্তির শর্টকাট পথ গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন –

“শ্রেয়ান স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ

স্বধর্মে নিধনং শ্রেয় পরধর্ম ভয়াবহ । ”

অর্থঃ নিজধর্ম দোষযুক্ত হইলেও পরধর্ম হইতে শ্রেষ্ঠ। পরধর্ম পালনের চেয়ে স্বধর্মে ধবংস হয়ে যাওয়াও উত্তম। (৩ঃঃ৩৫)

এটা কোন কথা? এ কেমন সৃষ্টিকর্তা !!

সৃষ্টিকর্তা নিজেই নিজের বানানো ধর্মের দোষ স্বীকার করে বলছেন, আমার বানানো এ ধর্মে নিধন হয়ে যাও, ধবংস হয়ে যাও, চিরতরে নরকে চলে যাও, তবু আমার বানানো ধর্মকে ছাড়বে না। আমি তোমাদের ঈশ্বর।

অথচ হিন্দুধর্মের মত জুলুমে বিশ্বাসী ধর্ম পালনে আমাদের কাছে বিন্দুমাত্র কোন যুক্তি ছিল না। এখনকার জ্ঞান অন্বেষণকারী হিন্দু ভাই- বোনদেরও নেই।

বাস্তবতা ও সত্যের এই লাইনের মোটা দাগে এসে অনেকেই আর পথ খুজে পান না, অনেকে আবার সমাজ ও পরিবারের বাধ্য সন্তান হয়ে তাদের খুশি করার জন্য ফিরে যান তাদের কাছে। তাই আশু সম্ভাবনা তথা নিশ্চিত ভবিষ্যতকে ভুলে নিজের অতীতে ফিরে যান। বর্তমান নিয়ে তাদের শান্ত্বনা- নিশ্চিত আখিরাত হয়ে ওঠে গাল- গল্পে ভরা এক অপরিচিত ভাষা।

ভালবাসার ডালি ভরে আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কতই না মুহাব্বত করে ও গভীরতম ভালবাসা দিয়ে আমাকে বানিয়েছেন তার খবর আমাদের কাছে অজানা। দুনিয়ার বুকে সকল ভালোবাসার যিনি স্রষ্টা, যার জন্য মা তার সন্তানকে ভালবাসতে পারে, সন্তান তার মাতা- পিতাকে ভালবাসে, বন্ধু তার বন্ধুকে, ভাই- বোন, আত্মীয়, পরমাত্মীয় বউ তার স্বামীকে যে অজানা মায়ায় ভালবাসে সেই সকল মায়ার আধার যে স্রষ্টা, তিনি না জানি কতই ভালবাসেন তার প্রত্যেকটি বান্দাকে। হাদীস- এ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন – ১০ জন মা তাদের সন্তানকে যে পরিমাণ ভালবাসেন মহান আল্লাহ তাঁর প্রত্যেক বান্দাকে এর চেয়েও বেশি ভালবাসেন।

আলহামদুলিল্লাহ !

শুধু ভালবাসাই কি আল্লাহর পরিচয় বহন করে? তিনি যে সকল কর্মের বিচারক তা আমরা ভুলে যাই। শ্রেষ্ঠতম বিচারক তিনি ছাড়া আর কে?

দুনিয়ার বিচারক যদি চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ- এর জন্য পাপীকে শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা করে দেন, তাহলে তিনি কি উত্তম বিচারক হবেন? নাকি দুনিয়াতে পাপীরা নির্বিঘ্নে তাদের জুলুম-কুকর্মের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেবে ?

যেই আল্লাহ এত মুহাব্বত করে, দয়া করে মায়া করে আমায় বানালেন আর সারাটা জীবন আমার যখন যা লাগে তা দিয়ে গেলেন, আর আমি সেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে বহু ঈশ্বর বানিয়ে নিলাম, আল্লাহকে বাদ দিয়ে ব্রহ্মাকে আমার স্রষ্টা, বিষ্ণুকে আমার প্রতিপালনকারী, সরস্বতীকে আমার জ্ঞান- বুদ্ধি- বিবেকের দেবতা হিসেবে বানিয়ে নেই তাহলে আমার মালিকের ওপর কত বড় জুলুম তা কি কেউ ভেবেছি?

দুনিয়ার সমস্ত সৃষ্টি যদি আল্লাহর নাফরমান হয়ে যায়, তবু আল্লাহর বড়ত্ব থেকে একটুও কমবে না। দুনিয়ার সমস্ত সৃষ্টি যদি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দার মত ইবাদতকারী হয়ে যায় তবু আল্লাহর বড়ত্ব একটুও বাড়বে না।

আমার আল্লাহ যুগে যুগে লক্ষাধিক নবী রাসূল পাঠিয়েছেন সমস্ত বান্দাকে সত্য পথ দেখানো ও শেখানোর জন্য। শেষ নবীকে পাঠিয়েছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য রহমতস্বরূপ। ইনি ঋগবেদের নরাশংস (সংস্কৃত ভাষা), কল্কি পুরাণের কল্কি অবতার, ভবিশ্য পুরাণের মহামদ (সংস্কৃত ভাষা), শ্রীমদ্ভাগবত মহাপূরাণের মহামদ / আহমদ (সংস্কৃত ভাষা), বাইবেলের পবিত্র আত্মা, ত্রিপিটকের অন্তিম বুদ্ধ।

হে আমার পন্ডিতগণ ! এত পরিবর্তন আনলেন ধর্মগ্রন্থসমূহে ! অথচ আমার রব আল্লাহ ও আমার নবীর নাম বাদ দিতে পারলে না সেখান থেকে?

কতকাল আর ৩৩ কোটিকে খুজবে? ৩৩ জনের নামই তো জানো না। ১ জনকে খুজেছো একটি বারও?

কত ভালবাসা আর মুহাব্বতে আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন –

আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হল ইসলাম। (আল ইমরান – ১৯)

যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম সন্ধান করে, কখনো তা গ্রহণ করা হবে না। আখিরাতে সে হবে মহাক্ষতিগ্রস্ত।

(আল ইমরান – ৮৫)

এই ২ আয়াত পড়েও কীভাবে আমি আমার হিন্দু ধর্ম পালন করেই যাবো যেখানে আমার ভবিষ্যৎ কষ্টময় ? আমার কাছে তো কোন যুক্তি বা শক্তি কিছুই নেই আল্লাহর আয়াতের বিরূদ্ধে। আল্লাহর সীমানা ছেড়ে পালাবো কোথায়?

আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করবো? অথচ আল্লাহ আল কুরানের ২য় সূরায় একেবারের শুরুতে বলছেন- এ এমন এক গ্রন্থ যাতে কোন সন্দেহ নেই।

আর একই সূরা আল বাকারার ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে বলছেন –

“আর যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ করো আমি আমার বান্দার প্রতি যা নাজিল করেছি তাতে, তাহলে তোমরা এর মত একটি সূরা নিয়ে আসো আর ডাকো এক আল্লাহ ছাড়া সকল সাহায্যকারীদের, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।

আর যদি তোমরা তা না করতে পারো এবং তা কখনো করতে পারবে না, তাহলে সে আগুনকে ভয় করো যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে অবিশ্বাসীদের জন্য।”

আমার কাছে এমন কোন প্রতিবন্ধকতা নেই যা সৃষ্টিকর্তার শাস্তিকে প্রতিরোধ করতে পারে।

আমার কাছে কোন কিছুই নেই, আমি ফকির আল্লাহর বড়ত্বের মাঝে। তাই আমি আত্মসমর্পণ করেছি।

========================================================

খাঁটি হিন্দু হতে গিয়ে ইসলামের হাতে আমার আত্মসমর্পণ (পর্ব ৯)

“”””””””””” ””””””””””””””””””””””””””””””””””””‘ “”””””””””‘

জনমদুঃখী মায়ের বেদনার্ত মলিন বদনে রোনাজারি-আহাজারি কিংবা ছায়াময় বাবার কষাঘাতের শাসন আমাকে বাড়িছাড়া জীবনে পদার্পণের পর হতে আজোবধি মিথ্যা কল্পনার কাছে মাথা নত করাতে পারে নি, আলহামদুলিল্লাহ।

অথচ অবাক বিস্ময়ে ভাবে

আমার পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন,

আমার বন্ধুমহল, পাড়া- প্রতিবেশী, পরিচিতগণ;

এই দুটি বিষয়েই সর্বোচ্চ দুর্বলতা ছিলো

আমার সারাটা জীবন ।

হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামদেরকে যেই আল্লাহ তায়ালা গুহার মাঝে কবুতর ও সামান্য মাকড়সার বাসাকে উছিলা করে সাহায্য করেছেন, বদরে ফেরেশতা পাঠিয়ে সশস্ত্র হাজারো সেনাদের বিপরীতে ঈমানদীপ্ত ৩১৩ জন সাহাবীকে বিজয় দান করেছেন, ইব্রাহীম আলাইহিস সাল্লামকে যেই আল্লাহ্ তায়ালা আগুনের অনিষ্ট থেকে উনাকে হেফাজত করে জীবনের শ্রেষ্ঠতম ৪০টি দিন উপহার দিয়েছেন, পানিময় জীবন-মৎস্য ও অসংখ্য সামুদ্রিক প্রাণির হিংস্রতার বিপদের মাঝে যেই আল্লাহ্ তায়ালা ইউনুস আলাইহিস সল্লামকে মাছের পেটে লালন পালন করেছেন, যেই আল্লাহ তায়ালা মূসা আলাইহিস সল্লামকে সমূদ্রের মাঝ দিয়ে চলার রাস্তা করে দিয়েছেন সেই একই আল্লাহ তায়ালা শত বাঁধা ও বিপত্তিকে অতিক্রম করে তাঁর পছন্দনীয় ও মহামূল্যবান দীন ইসলামের পথ অনুসরণ করে আমার মত অযোগ্য ও পাপীর জীবনকে চালানোর মত সকল হিম্মত ও শক্তি দান করেছেন।

এককালে যেই ছেলে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হয়ে মন্দিরে মন্দিরে – অগণিত মানুষের পদতলে নিজেকে সমর্পণ করে শান্তি কামনা করতো, সে আজ জীবনের খেলাঘরে এসে সবকিছুকে উপেক্ষা করে মুয়াজ্জিন-এর আজানের শিরোনাম ” আল্লাহু আকবার ” ধ্বনিতে নিজের মনপ্রাণকে শামিল করার ক্ষুদ্র প্রয়াস চালায়।

স্কুলে-যজ্ঞে যেই ছেলে গীতাপাঠ করে সকলের মনোরঞ্জন করে বাহবা কুড়াতো, সে নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আল্লাহর ভয় মনে নিয়ে তারাবির নামাযে ইমামতি করে ?

আল্লাহ্ যার উপকার পৌঁছাতে চান সারা দুনিয়ার মাঝে কে আছে এমন যে তাকে তা থেকে বাধা দিতে পারে?

হে প্রভু, যে পথে তোমার প্রিয়জন গেছে চলি,

সে পথ মোদের দাও গো বলি।

আল্লাহ্ বলেন –

আপনি বলে দিন, আমার রব তোমাদের বিন্দুমাত্র পরোয়া করেন না যদি তোমরা তাঁর ইবাদত না কর; তোমরা তো অস্বীকার করছো, অতএব, অচিরেই নেমে আসবে অনিবার্য শাস্তি।

সূরা শু’আরা- ৭৭।

অথচ আজ আমার প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনেরা দীনের ব্যাপারে কত উদাসীন? নিজেদের এবং অধীনস্তদের ক্যারিয়ার নিয়ে কতই না পরিশ্রম করে যান দিন- রাত ! আমার সাহায্যকারী মিষ্টির দোকানদার, মুচি, সহকর্মী, বন্ধু- কত সুন্দর করে আমাদের সাথে কথা বলে। অথচ মৃত্যুর পরে ঈমান গ্রহণ না করার অপরাধে নিশ্চিতরূপে তার স্থান হবে জাহান্নাম। আমি যদি আজ সত্যের দাওয়াত না দেই তবে কাল হাশরের ময়দানে যদি ধরে বসেন, হে আমার ভাই, কত প্রিয় ছিলে আমার, কত গল্প- গুজব করেছো ! শতবার তুমি শতরকম সাহায্য – সহযোগিতা চেয়েছো ! দুনিয়ার সব কিছু ফেলে শতবারই আমি তোমার দুনিয়ায় উপকারে এগিয়ে এসেছি, অথচ একটিবারও তুমি আমার আখিরাতের উপকারে এগিয়ে আসলে না?

আমাকে আল্লাহর পরিচয় বললে না? আমাকে নরক থেকে বাচানোর চিন্তা করলে না?

নিশ্চিত থাকুন- হাশরের সেই বিচার দিবসে অবশ্যই আমাকে- আপনাকেও গ্রেপ্তার হতে হবে।

তাই, আসুন, ভুলে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত- নবীর মত করে দরদ নিয়ে অমুসলিমদের মাঝে দীনের দাওয়াত পৌছিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করি।

তাদেরকে বলি-

আল্লাহ তাঁর মুহাব্বতের বান্দাদের জন্য যেভাবে বলেছেন-

“হে মানুষ ! একটি দৃষ্টান্ত বর্ণিত হলো, মনোযোগের সাথে শ্রবণ করো। তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের পূজা করো, তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও এই উদ্দেশ্যে তারা সকলেই একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তবে তারা তাও তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। পূজারী ও দেবতা কতই না অক্ষম। ”

সূরা আল হজ্বঃ ৭৩

নবীজী বলে গেছেন –

প্রতিটি মানুষই ইসলাম ফিতরত (স্বভাবধর্ম)- এর ওপরে জন্মগ্রহণ করে। পরে তার মা- বাবা- সমাজই তাকে ইহুদি বানায়, মুশরিক(হিন্দু) বানায়, খ্রিস্টান বানায়।

পাখি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে সকাল বেলা খালি পেটে বের হয় আর সন্ধ্যায় ভরা পেটে ঘরে ফেরে। আর মানুষ বন্ধু-পরিবার-সমাজের ভয়ে শ্রেষ্ঠ বন্ধু একমাত্র রব হিসেবে আল্লাহকে মেনে নিতে পারে না।

এই আমি মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি ভয় পেতাম।

পঞ্জিকায় লেখা দেখেছিলাম – লোকনাথ ব্রহ্মচারী বলেছেন – “রণে, বনে, জলে, জংগলে আমাকে স্মরণ করিও, আমি তোমাদের রক্ষা করিবো। ”

অন্ধভাবে বিশ্বাস করে বাবা লোকনাথের কাছে চেয়েছিলাম- হে বাবা লোকনাথ, তুমি আমাকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করো।

এখন বুঝে আসে – হায় ! মৃত্যু থেকে যে নিজেকে বাঁচাতে পারেনি, সে আমাকে কীভাবে বাঁচাবে?

এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ কাউকে কোন কিছুই দিতে পারে না। আজ প্রতিদিন ১৭ বার ফরজ নামাযে মুসলিমগণ বলে – “ইয়া কানাআ’ বুদু, ওয়া ইয়া কানাস্তা’ইন। ” অর্থঃ( হে আল্লাহ !) আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।

আজ বলি- জীবন চলে যাবে, ঈমানকে চলে যেতে দেবো না। জীবন হারানো তো ফরজ। কারণ সকল জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতেই হবে। মানুষ হিসেবে দুনিয়ার এই ছোট্ট জীবনে আমাদের ঈমান বাঁচানো ফরজ; আর তাই দীনের জন্য জীবন না দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করা বোকামি । আল্লাহ্ নিজেই বলছেন- আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয়, তোমরা তাদের মৃত বল না, বরং তারা জীবিত, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক পাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে মুসলিম জিহাদ করলো না অথবা জিহাদে শরীক হবার ইচ্ছা পোষণ করলো না, তার মৃত্যু হলো মুনাফিকির মৃত্যুর মত।

তাই যে যাই বলুক, আমি চাই- দীনের বার্তা ছড়াতে ছড়াতে আল্লাহর এই প্রিয় দীনের জন্যই আমার মত অতি সাধারণ ও ক্ষুদ্র এক মানুষের মৃত্যু হউক, আর শহীদের পিয়ালা পান করে আমি মূল্যবান ও সম্মানের আখিরাত জীবন লাভ করে আমি ধন্য হই, প্রকৃত সফল হই। আল্লাহ্ যেন কবুল করেন।

মুসলিম অর্থ আত্মসমর্পণকারী। নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করার নাম ইসলাম । সত্য ও বাস্তবতার সাথে তোমার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আজ গবেষণা করে তুমি যেটা পাচ্ছো, সেটা গ্রহণ করছো, অথচ আমার প্রভুর প্রেম ও ভালবাসার চিঠিকে পড়েও দেখছো না, মেনেও নিতে পারছো না? তুমি আজ যেই থিওরি দাও, কাল তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তুমি আজ একভাবে চলতে বলো, কাল আইন করে সেই কুপ্রথা উঠিয়ে দেয়া হয় আর তোমরা একে বলে থাকো কথিত বিধাতার বাণী ! অথচ আমার রবের প্রতিটি বাণী মানব কল্যাণের কথা বলে, ইতিহাস- বিজ্ঞান- জ্যোতির্বিজ্ঞান- ভূগোল-ইহকাল- পরকাল সবার কথা বলে। আর সর্বপ্রথমেই বলে দেয়- এটা এমন এক কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই (কোন ভুল নেই, পরিমার্জন নেই, সংস্করণ নেই) । আছে মুত্তাকীদের জন্য পথের সন্ধান।

==============================================

ফিরে দেখা ‘ঈমান গ্রহণের ১১টি বছর !’

”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””‘

কত রকম রঙের জীবন এক জীবনে ! বাবা, মা, ভাই, বন্ধু, বান্ধবী, প্রতিবেশী, কাকা, মামা, পিসি মা, মাসি মা, দাদা, ঠাকুর মা – কত রকম চাহিদা আর আবদার, ভালবাসা -আবেগ আর মায়াময় এই সিনেমার মত সংসার। কত ভাঙা গড়ার খেলা, কত এলো, কত গেলো। আরও কত কিছু আসবে ! আবার চলেও যাবে।

আল্লাহর রহমতে মনের ভেতরের সুপ্ত ঈমান টাকে গোপনে শিকলবন্দী করে রেখেছিলাম ৯ বছরেরও অধিক সময়। জানাজানি হয়েছে ২০১৮ সালের ১৬ই এপ্রিলে। অনেক বিশ্বাস করতো বাবা- মা আমায়। নিজেদেরকেও হয়তো এত বিশ্বাস করতেন না উনারা।

বাবা এলেন, প্রথমবারের মত তার ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেই সূচনা আর এখানেই ইতি। এর আগে বা পরে কখনও হলে আসেননি ছেলেকে দেখতে । হিন্দু ছাত্রদের সকলের জন্য নির্ধারিত হল ছিল জগন্নাথ। কিন্তু রাজনীতি করা লাগবে- এই অজুহাত দেখিয়ে ভাল মুসলিমদের মত জীবন যাপন করতে মুসলিম হলে থাকতাম।

আমি, এহসান ভাই, হাফিজ আল মুনাদি ভাই, আরিফুল ভাই, সাইমুম ভাই, সরফরাজ আর বাবা একত্রে বসে আছি। বাবা আমাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে এসেছেন। এলাকার মানুষ জন বিভিন্ন রকম কথা শোনায় আমাকে নিয়ে। যত অসুবিধাই হউক, আমাকে বাসায় যেতেই হবে। বাবার এত দূরের অজানা অচেনা এক শহরের অপরিচিত একটি স্থান, সম্পূর্ণ অচেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের একেবারে রুমে চলে এলেন? জীবনে কোন দিন ভালো কোন বাসে চড়তে দেখিনি। হয়তো লোকাল বাসে চড়েই সারা রাত নির্ঘুম চোখে দেখতে এসেছেন তার প্রাণপ্রিয় শ্রেষ্ঠ সন্তানকে । বাবা বৈষ্ণব ভক্ত; মাছ- মাংস- ডিম-পেয়াজ- রসুন কিছু খান না। বাইরের খাবারও মুখে তোলেন না। শেষ খাবার কখন কী খেয়েছেন জানি না। ভাবলাম – এত দূরের পথ কীভাবে এলেন এখানে ! ঠিকানা দিয়েছিলাম বছর খানেক আগে। রুমও পরিবর্তন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। কত অজানা শংকা ও সংশয়েই না বাবার কেটেছে এতটা মুহূর্ত একাকিত্বে !

হাফিজ আল মুনাদি ভাই ও এহসান ভাই জানিয়ে দিলেন সত্য। বাবার অনেক প্রশ্ন ছিল। সাধ্যমতো উত্তর ও দাওয়াত পৌছানোর চেষ্টা করেছি আমরা। জোহর নামাজের আগে বের হলাম। নামাজ শেষে কিছু ফল নিয়ে এলাম। দস্তরখানা বিছিয়ে বিছানায় সুন্নত তরীকায় খাবার দিলাম। বাবা খেলেন না। হিন্দুরা মেঝেতে বসে খায়, দস্তরখানে বসে খাওয়া পছন্দ করেন না। কে কী পছন্দ করলো তাতে আমার কিই বা আসে যায়। শুধু আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের পছন্দ অনুযায়ী জীবনকে রাঙাতে চাই। আর কিচ্ছুটি চাই না।

খাবার না খেয়েই বাবা এফিডেভিট দেখতে চাইলেন। মূল কাগজটা ছিল শুধু । ফটোকপি করে এনে কপিটা বাবার হাতে দিলাম। নিতে চাইলেন।

বললেন -নেয়া যাবে কি না। দিলাম। বাবা সেটা নিয়ে কাদতে কাদতে বের হয়ে গেলেন। আমিও কাদলাম। বাবা- মায়ের রাখা নামের যথার্থতা দেখিয়ে এতকাল কাধটা পরোক্ষভাবে শক্ত করে চাপড়ে এসেছেন যে এহসান ভাই, তিনি আজ প্রত্যক্ষভাবে কাধে হাত রাখলেন। অনার্সের ফাইনাল ইয়ারের প্রেজেন্টেশনে যাওয়ার মত শক্তি সেদিন ছিল না আমার। ছাদে গিয়ে ফুপিয়ে কাদলাম আল্লাহর কাছে। এত কান্না হয়তো জীবনে আর কোন দিন করিনি।

ইনি আমার সেই বাবা ! যিনি আমার জীবনে সফলতা এনে দিতে নিজের সর্বস্ব বিসর্জন দিয়েছেন। রক্তকে পানিতে পরিণত করেছেন ! আর তার বিনিময়ে আমি কিছুই দিতে পারলাম না।

সুবহে সাদিক বিদায় নিলে কনকনে শীতের ভোরে উঠে পড়া শুরু করতাম। বাবার মোটর সাইকেল অথবা সাইকেলে চড়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে পড়তে যাওয়া। একে একে ৩ স্যারের কাছে। উদ্দেশ্য – সফল হওয়া।

এক সফল শেষে আরেক সফলের হাতছানি। এভাবেই জীবনটা চলে গেছে। কেউ সফলতার সংজ্ঞা দিয়ে যাননি। সময়ে সময়ে পরিবর্তন করে দিয়ে গেছেন শুধু।

আজ মনে এলো। ছোটবেলা থেকে জীবন যুদ্ধ শুরু করেছি। স্বপ্ন দেখিয়েছেন আমার জনমদুঃখী মা আর বাবা। জন্ম, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরি, বিয়ে, সন্তান, সম্পদ, মৃত্যু – এই চক্রের মাঝে নিজেকে একটু খুজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি কি কখনো? অথবা নিজের এই গতিময় চলার আসল উদ্দেশ্যে আসলে কী?

বাবা- মায়ের চেষ্টা ও কষ্টের উছিলায় ক্যাডেট কলেজে ছিলাম রাজার হালে, খাওয়া-দাওয়া থেকে সবকিছুই যেন নাম্বার ওয়ান। তারপরে এলো ভার্সিটির হল জীবন। মিথ্যা বলা যাবে না। তাই বাবা যদি বলেন- কী খেয়েছি, তাই আগেই ভাত, মাছ লেখা কাগজ মুখে দিয়ে খেয়ে ফেলা। মিথ্যাও হলো না। আবার ১ বেলা খাবারের টাকাও বাঁচানো গেলো। এমনও একটা সময় গেছে ১ টা টিউশনি পাবার জন্য কিই না করেছি? তারপর আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি বর্ষন শুরু হলো।

ছাত্রাবস্থায় পেলাম পার্ট টাইমে ১৫০০০ টাকার বেতনের চাকরি। মাত্র ২-১ মাসের টাকা বাড়িতে পাঠানোর সৌভাগ্য হয়েছিলো। তারপরে ২৬, তারপরে ৩০, তারপরে এক সময় আবার সব শেষ। বেকার জীবন। অভাবের সাথে সকাল- বিকাল দেখা হয়, মানুষের কর্জে হাসানা আর নিজের খরচ নিজে চালানোর মত একটু খানি উপার্জনের প্রয়াস। এইতো জীবন, অনেক সুখের, অনেক শান্তির, নিশ্চিন্ত মনের একরাশ হাসি ।

আজ ভাবনাগুলো জমা হয়, আসলে জীবনে কখন সবচেয়ে সুখে ছিলাম? অনেক টাকার মালিক হয়ে? না! গরীব ঈমানদার হয়ে।

আমার তো এক অজানা ভবিষ্যত জীবনের চিন্তা আসে মনে। আপনার আসে না?

মনে আসে না , আমার জন্ম হলো কেন? পোকামাকড়-এর খাবার হবার জন্য? নাকি অনেক দামি এক চাকরি পেয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেয়ার জন্য- দেখো, আমাকে দেখো !!

এত ভাল স্কুলে পড়া, এত দামি দামি পোষাক-খাবার, ভাল টিউটর, ভাল কলেজ, ভাল বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যারিয়ার, অনেক বেতনের চাকরি, বিসিএস, সুন্দরী বউ, সন্তান, সম্পদ- এসবের পেছনেই আমাদের সারাটা জীবন ব্যয় হয়ে যায়।

২৪ ঘন্টা আসলে কী করছি? কেন করছি? কার জন্য করছি। ৬৫ বছর কষ্ট -মেহনত করে যে সুরম্য প্রাসাদের মালিক হলাম, কাল সেই প্রাসাদ থেকে সুতাবিহীন সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে আমাকে বের করিয়ে দেয়া হবে।

এভাবেই চলছে জীবন মৃত্যুপুরে।

হায় ! দুনিয়ার মানুষের মনে কোন চিন্তাই নাই? সফলতার সংজ্ঞা কী, ভাই?

কাজ আছে, ভাবার সময় যে নাই;

তাইতো অতি নিকটবর্তী মৃত্যুর কোন প্রস্তুতি নাই।

(খাঁটি হিন্দু হতে গিয়ে ইসলামে আত্মসমর্পণ – পর্ব ১০)

=============================================

ভুলে গেছো, মা ! কিছু দিন আগেও আমাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতে। আজ আমার কথাকেই সবচেয়ে বেশি অবিশ্বাস করো ?

এক সময়ে আমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে, এখন আমাকেই সবচেয়ে বেশি উপেক্ষা কর !

এক সময় আমাকে দেখার অপেক্ষায় কত পথ পাড়ি দিয়ে কত চাকরি-কাজ ফেলে অভিভাবক দিবসে কত কষ্ট করে আমায় দেখতে যেতে ! আর আজ কত কাল হয়ে গেল ! আমাকে দেখতে আসো না ।

কত দিন কথা বল না ! শেষ কবে কথা হয়েছে, মনে করতে পারো ?

পটুয়াখালী ছেড়ে চলে যাচ্ছি । তোমার কাছাকাছি চলে আসতেছি ।

তবুও যদি কোন এক সময় মনে হয়, চলে এসো । আমার মন-প্রাণ তোমার পদধ্বনির অপেক্ষায় ।

তার চেয়েও বড় অপেক্ষা- তোমার অভিমানি ছোট্ট ছেলের সত্য সাক্ষ্যে তোমার হৃদয় থেকে উৎসারিত কণ্ঠনিসৃত সত্যায়ন ।

====================

হে আমার দরদী মুসলিম ভাই ও বোনেরা !

আপনারা যারা পূজায় নাচতে -গাইতে, বিকট শব্দে গান শুনতে ও শোনাতে অভ্যস্ত, যারা খুব মজা করে পূজার প্রসাদ খেতে অভ্যস্ত, অনুগ্রহ করে আজ আপনার প্রিয় অমুসলিম ভাই ও বোনকে কোরবানির মজার গোশত খাওয়াতে ভুলবেন না।

আর নিশ্চয়ই ভুলে গেছেন রাসুল- সাহাবীদের জিন্দেগীকে।

তাই, মনে করিয়ে দিচ্ছি, মনে রাখবেন, ঈদের সাথে নাচ- গানের কোন সম্পর্ক নেই। যারা পূজা ও বড়দিন পালন করেন, তাদের উৎসবের সাথে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি নেই, নাচ- গানের সুসম্পর্ক রয়েছে । আর নাচ- গান ছাড়া তাদের মনের নফস দেব-দেবী সন্তুষ্ট হয় না। এখন তাদের ধর্ম – আচারের অন্ধ অনুকরণ অনুসরণ করে আজকের এই পবিত্র ঈদের দিনে আপনার মনের নফস দেব- দেবীদের সন্তুষ্ট করা – না করা আপনার বিবেকের ব্যাপার। মুসলিমের ঈদ সহ প্রতিদিনের প্রতিটি আমলে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি রয়েছে। আর এর বিনিময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিটি ঈমানদার মুসলিমদের ওপর জান্নাতের ওয়াদা রয়েছে ।

======================================================

আমার ভাইয়ের কাছে আজ আমি মৃত। আমার সাথে দেখা করার মত সময় আমার মাকে দেয়া হয় না। বাবা আমাকে চেনে না।

যেই কোম্পানীর ভালর জন্য এত চিন্তা- মেহনত করলাম, সেই কোম্পানীই ওই দিনেই আমায় বের করে দিল। ১ দিনও হাতে সময় পেলাম না। আমি বেকার হয়ে গেলাম। এটাই তো দুনিয়া।

সে কী হারালো যে আল্লাহকে পেল?

আর সে কী পেল যে আল্লাহকে হারালো?

সময় চলে যায়, চলে যাব আমি। আপনারা কেহই এই দুনিয়ায় চিরদিনের জন্য থাকতে পারবেন না। ইচ্ছায়- অনিচ্ছায় সকল আশা আর স্বপ্নকে মিথ্যা প্রমাণিত করে এই ফাকিবাজ দুনিয়া ছেড়ে খুব শীঘ্রই আমাকে আপনাকে চলে যেতেই হবে। আমি আপনি কেউই শত কোটি টাকা খরচ করেও চিরদিন এ দুনিয়ায় থাকতে পারবো না।

তাহলে কীসের এত চিন্তা?

বিলাল ইবন রাবাহ (রা:)। আবু আবদুল্লাহ বিলাল তাঁর নাম। হাবশী বংশোদ্ভূত ক্রীতদাস।

হাবশী দাস হিসাবে তাঁর বাহ্যিক রং কালো হলেও অন্তর ছিল দারুণ স্বচ্ছ। আরবের গৌরবর্ণের লোকেরা যখন আভিজাত্যের ও কৌলিণ্যের বিভ্রান্তিতে লিপ্ত হয়ে হকের দাওয়াত অস্বীকার করে চলেছিল, তখনই তাঁর অন্তর ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। অল্প কিছু লোক দাওয়াতে হক কবুল করলেও যে সাত ব্যক্তি প্রকাশ্য ঘোষণার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে এ হাবশী গোলাম অন্যতম।

চিরকালই দুর্বলরা অত্যাচার উৎপীড়নের শিকার হয়ে থাকে।

আর ঈমান গ্রহণের চাইতে কি কোন নিকৃষ্ট কাজ হতে পারে?

ইসলাম গ্রহণের কারণে তাঁর ওপর অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে। গলায় উত্তপ্ত বালু, পাথরকুচি ও জ্বলন্ত অংগারের ওপর তাঁকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে, গলায় রশি বেঁধে ছাগলের মত শিশুরা মক্কার অলিতে গলিতে টেনে নিয়ে বেড়িয়েছে। তবুও তাওহীদের শক্ত রশি তিনি হাত ছাড়া করেননি। আবু জাহল তাঁকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে পিঠের ওপর পাথরের বড় চাক্কি রেখে দিত। মধ্যাহ্ন সূর্যের প্রচণ্ড খরতাপে তিনি যখন অস্থির হয়ে পড়তেন, আবু জাহল বলতোঃ ‘বিলাল, এখনো মুহাম্মাদের আল্লাহ থেকে ফিরে এসো।’ কিন্তু তখনো তার পবিত্র মুখ থেকে ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ ধ্বনি বের হতো।

মানুষের আজ কী হল?

সে কি ভুলে গেল আল্লাহ কীভাবে মায়ের পেটে তাকে সৃষ্টি করলো ?

 

আল্লাহ তায়ালা বলেন –

‘‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান হতে, অত:পর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি ‘আলাক-এ, অত:পর ‘আলাককে পরিণত করি পিন্ডে এবং পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি-পাঞ্জরে অত:পর অস্থি পাঞ্জরকে ঢেকে দেই গোশত দ্বারা; অবশেষে তাতে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান।’’

অন্যত্র বলা হয়েছে: ‘তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃ-গর্ভের ত্রিবিধ অন্ধকারে পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক,সর্বময় কর্তৃত্ব তারই; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তবে তোমরা মুখ ফিরিয়ে কোথায় চলেছো?’’

মহান আল্লাহ সূরা নিসার শুরুতে ঘোষণা দিয়েছেন : ‘‘হে মানবজাতি ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন। যিনি তাদের দুইজন হতে বহু নব-নারী ছড়িয়ে দেন।’’

এক আদম ও হাওয়া হতে হিন্দু-মুসলিম- বৌদ্ধ – খ্রিস্টান সকল মানুষের উৎপত্তি। আজ দুদিনের মিথ্যা সমাজের কাছে লজ্জিত হবার ভয়ে সকল বাদশাহর বাদশাহ আমাদের সকলের রব আল্লাহকে ভুলে গেলাম?

মৃত্যুর পরের অনন্ত জীবন, যেই জীবনের শুরু আছে, কিন্তু কোন শেষ নেই, সেই জীবনে ঈমান ও আমল ছাড়া তো আমি ফকিরের ফকির৷

আল্লাহকে অস্বীকার তো অনেকেই করি, মৃত্যুকে অস্বীকার করতে কি কেউ পারি? প্রাণ ওষ্ঠাগত অসহায় ব্যক্তির পাশে কীভাবে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি? ফিরাই না কেন তাকে মৃত্যু থেকে? এর পরেও কি

তোমার সৃষ্টিকর্তা,পালনকর্তা, মালিক আল্লাহকে কষ্ট দিতে কি একটুও দিল কাপে না? হে আমার হিন্দু ভাই ও বোন,

একটুও কি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ জাগ্রত হয় না?

=================

হে আমার মুসলিম ভাই ও বোনেরা !

আমরা সকল ধর্মের সকল জাতির সকল মানুষ একই সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সেরা বিবেকসম্পন্ন জীব। অথচ জাতিতে জাতিতে, বর্ণে বর্ণে, মাজহাবে – লা মাজহাবে, পক্ষে- বিপক্ষে কতই না বিভেদ ! কতই না মনোমালিন্য ! কতই না শত্রুতা !

হায় আফসোস !

একজন মুসলিমের মূল্য কেমন?

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হতে বর্ণিত –

রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

হে কাবা ! তুমি কতই না মধুর ! কতই না তোমার সুবাস ! কতই না তুমি পবিত্র !

একজন মুসলিমের মূল্য সেই কাবার চেয়েও বেশি।

আল্লাহু আকবার। (ইবনে মাজাহ)

যতদিন পর্যন্ত একজন আল্লাহ বলার মত মুসলিম দুনিয়াতে টিকে থাকবে গোটা আসমান জমীনকে আল্লাহ তায়ালা টিকিয়ে রাখবেন। আসমান হতে জমিন পর্যন্ত যদি ঈমানহীন মানুষ দ্বারা ভরিয়ে দেয়া হয়, তার চেয়েও একজন মাত্র ঈমানদারের মূল্য অনেক অনেক বেশি।

আলহামদুলিল্লাহ !

খুব সহজেই কোন দরখাস্ত-মেহনত ছাড়া আমি – আপনি এই ঈমানকে পেয়ে গেছি। তাই, ঈমানের সামান্যতম কোন মূল্য আমার- আপনার কাছে নেই।

সাহাবীদের কাছে সেই ঈমানের সীমাহীন মূল্য ছিল। তাই তো বেলাল (রা), খাব্বাব (রা) – রা ঈমান গ্রহণের কারণে এত এত কষ্ট- মেহনত – ত্যাগ স্বীকার করেছেন । অথচ সেই একই দীন মানতে গিয়ে আমরা কি বিন্দুমাত্র ত্যাগ স্বীকার করি ?

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যবরণ কর না। আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। ’ (সূরা আলে ইমরান : ১০২, ১০৩)।

অথচ আমরা আমাদের দল ও মতবাদ নিয়ে কতই না বিভক্তিতে লিপ্ত। অমুক কাফের, তমুক ইহুদী- খিস্টানের দালাল, তমুক নাভির ওপরে হাত বাধে, শার্ট-প্যান্ট পড়ে, অমুকে আলেমবিরোধী ইত্যাদি বিষয়ে নিজেকে না জড়ানোই কি উত্তম নয়? আমি কি জানি, না জেনে আল্লাহর কত প্রিয় এক বান্দার দোষ- ত্রুটি তালাশ অথবা প্রকাশ করে ফেললাম। আল্লাহ কি আমার এ কাজে বিন্দুমাত্র খুশি হলেন ? নাকি অনেক অসন্তুষ্ট হলেন? আমরা কি আসলেই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাই? তাহলে পরনিন্দা থেকে বাচতে আরো অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। আমরা ছোট্ট বিষয় নিয়ে অনেক বেশি মাতামাতি করছি না তো? যয়ীফ, মোস্তাহাব বিষয়সমূহ নিয়ে অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছি না তো?

কে কাফের – মুর্তাদ হয়ে গেল এটা নিয়ে তিলকে তাল বানানো আমাদের চিরায়ত স্বভাব হয়ে দাড়িয়েছে।

মুয়াজ্জিনরা আজানের মাধ্যমে, তাবলীগের ভাইয়েরা মাশোয়ারা-কদম-দোয়া-তালিমের মাধ্যমে, মুজাহিদ ভাইয়েরা তলোয়ারের মাধ্যমে, অমুসলিমদের প্রতি দাওয়াত পৌছানো ভাইয়েরাও কদম-দোয়া-কথা-যুক্তির মাধ্যমে, লেখক ভাইগণ কলমের মাধ্যমে, এছাড়া ব্লগিং- ইউটিউব, ফেসবুক, সামাজিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে ইসলামের দাওয়াত পৌছিয়ে যাচ্ছেন।

অথচ মুসলিমরা আজ এক দল অন্য দল ও মতের বড় শত্রু হয়ে দাড়িয়েছে ।

অমুসলিমরা আজ পিপাসার্ত। তাদেরকে ঈমানের পানি পান করার সুযোগ করে দিন। সহযোগী হউন, প্রতিপক্ষ নয়। দীনের সাহায্যকারী হউন, প্রতিবন্ধক নয়।

=====================================

অনেক ভাল ভাল ধার্মিক হিন্দু পরিবার দেখেছি । কাউকেই জীবনে একটিবারও দেখিনি, তার পরিবারের একটি মেয়ে বা ছেলেকে প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ-এর শিক্ষা দিতে। কাউকেই জীবনে একটিবারও দেখিনি, লোভী পন্ডিতদের বানানো কথিত মুক্তির গ্রন্থ গীতা বা গীতার ভাষা শিক্ষা দিতে। প্রতি লাখে ১ জন ও কি বেদ ৪টা পড়ে দেখেন? প্রতি মিলিয়নে ১ জনও কি বেদের ভাষা নিজে শিখেন বা তার পরিবারের কাউকে শেখান?

কেন শেখান না ভাই? শিখলে সমস্যা কোথায়?

কোন গোমর ফাস হয়ে যাবে?

জনসম্মুখে সাধারণ হিন্দু ভাইবোনদের অজানা তথ্যাবলি বের হয়ে যাবে?

অথচ দেখেন, সাধারণ মুসলিম বলে পরিচয় দেয়া কোটি কোটি মুসলিম পরিবার থেকেই ঈমান, আমল, আল কুরআন, আল কুরআনের ভাষা শিক্ষা করে। কীভাবে কোথায় কত টুকু থামবে, শুদ্ধরূপে পাঠ করবে এটা নিয়েই জীবনের প্রাথমিক বয়স পার করে দেয়।

কেন?

লক্ষ লক্ষ কোরানের হাফেজ শুধু ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশেই। বেদ অথবা পুরাণ অথবা উপনিষদ অথবা মহাভারত অথবা রামায়ণ অথবা ছোট্ট গীতার একটা অধ্যায় কার মুখস্থ আছে, শুনি?

কেন নাই, জানেন? কারণ এসব যে মানবরচিত গল্প দিয়ে ভরা কাব্য ও গ্রন্থ। পরমাত্মা যাকে বলেন তার পক্ষ থেকে তো এসব আসে নাই, ভাই। বোঝেন না?

ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশের আগেই বলেছিলাম- মূর্তিপূজা নাকি নিষেধ? বলেছিলেন- হ্যাঁ, নিষেধ।

বলেছিলাম – তাহলে কর কেন?

উত্তর দিয়েছিলেন – বাপ দাদা করে আসছে, তাই করি।

আমার কবরে আমিই যাবো। মুনকার নকীর এসে যখন ধরবে – কাকে পালনকর্তা, ধর্ম- জীবনব্যবস্থা, নবী হিসেবে মেনেছিস?

বাপ- দাদা- সমাজ কি আর আমাকে বাচাতে আসবে?

তাহলে কী ভাবছো?

পুড়িয়ে ফেললে সৃষ্টিকর্তা আর তো তোমাকে পূর্বের আকৃতিতে ফিরিয়ে আনতে পারবে না, তাই না?

কত্ত বুদ্ধি তোমার !!!!!

============================

===============================

আমি গীতা বুঝি না, কোরান বুঝি না, ত্রিপিটক বুঝি না, বাইবেল বুঝি না। আমি শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর খুজি।

এই যে সারা দুনিয়ায় এত এত ধর্ম, এত এত গ্রন্থ- সবই কি এক জন সৃষ্টিকর্তাই পাঠিয়েছেন? নাকি নিজেরাও কিছু নতুন করে যোগ ও বিয়োগ করেছি?

কেউ বলে পূজা কর, কেউ বলে মাজারে যাও, কেউ বলে শুধুই একজনের কাছে মাথা নত কর।

যে কোন একটা করলেই কি সঠিকভাবে সৃষ্টিকর্তার পছন্দ মত পথে যাওয়া হবে?

ঢাকা গাবতলি বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন দিকে বাস যাতায়াত করে।

আমার গন্তব্য যদি রাজশাহী হয়ে থাকে তাহলে যে কোন বাসে উঠলেই কি রাজশাহী পৌছে যাব? নাকি রাজশাহীর বাসেই চড়তে হবে?

হে আমার ৯৫ ভাগ মানব জাতি ! আজ কি আমরা যাচাই করে দেখি, আমার গন্তব্য কোথায়? কোথায় চলেছি? কোন পথে?

গীতা কয়েক বার খতম করেছি। পুরস্কারও জিতেছি। কিন্তু তাই মহাভারত নামক একটি মানবরচিত মহাকাব্যের একটি অধ্যায়কে কীভাবে স্রষ্টার নামে চালিয়ে দেব ভাই, বল? আল্লাহ কি আমাকে বিবেক বুদ্ধি দেন নি?

সেই গীতার ১৮ তম অধ্যায়ে লিখিত পাবেন – নিজধর্ম দোষযুক্ত হইলেও পরধর্ম হইতে শ্রেয়।

শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ।

স্বভাবনিয়তং কর্ম কুর্বন্নাপ্নোতি কিল্বিষম্।।৪৭।।

অনুবাদঃ উত্তম রূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা অসম্যক রূপে অনুষ্ঠিত স্বধর্মই শ্রেয়। মানুষ স্বভাব-বিহিত কর্ম করে কোন পাপ প্রাপ্ত হয় না।

সহজং কর্ম কৌন্তেয় সদোষমপি ন ত্যজেৎ।

সর্বারম্ভা হি দোষেণ ধূমেনাগ্নিরিবাবৃতাঃ।।৪৮।।

অনুবাদঃ হে কৌন্তেয়! সহজাত কর্ম দোষযুক্ত হলেও ত্যাগ করা উচিত নয়। যেহেতু অগ্নি যেমন ধূমের দ্বারা আবৃত থাকে, তেমনই সমস্ত কর্মই দোষের দ্বারা আবৃত থাকে।

নিজের ধর্ম যে দোষযুক্ত এটা যেই পাপী স্রষ্টা বলতে পারে, সেই পাপী দোষযুক্ত লেখককে আমি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকর্তা বানাবো? আল্লাহ আমাকে যে বুদ্ধি- বিবেক দিয়েছেন তা কি আমি খেয়ে ফেলেছি?

==========================================================

বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে হিন্দু থেকে মুসলিম !!!! ছি !

“””””””””””‘””””””””””””””””””””

কূল ইয়া আইহুয়াল কাফিরুন !

হে আমার অবিশ্বাসী বাবা, মা, ভাই ও বোনেরা !

লা আ’বুদু মা তা’বুদুন ।

(তোমরা জেনে রাখো) তোমরা যার (যেই মিথ্যা দেব-দেবী ও মিথ্যা মনগড়া স্রষ্টার) উপাসনা করো, আমি তার উপাসনা করি না।

ওয়ালা~ আংতুম,’আবিদুনামা আ’বুদ

আর আমি যার উপাসনা করি, তোমরা তাঁর উপাসনাকারী নও।

ওয়ালা আনা ‘আবিদুমমা- আবাত্তুম

(তোমরা নিশ্চিত থাকো আমার শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত) তোমরা যার (যেই মিথ্যা দেব-দেবী ও মিথ্যা মনগড়া স্রষ্টার) উপাসনা করছো, আমি কস্মিনকালেও তার উপাসনাকারী হবো না।

ওয়ালা~ আংতুম,’আবিদুনামা আ’বুদ।

আর আমি যার উপাসনা করি, তোমরা তাঁর উপাসনাকারী নও।

লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন ।

তোমাদের পথ ও পন্থা তোমাদের জন্য (সে পথে চলার পরিণতি তোমাদেরকেই ভোগ করতে হবে) আর আমার জন্য আমার পথ (যে সত্য পথে চলার জন্য আমার পথে চলার জন্য আল্লাহ্‌ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, এ পথ ছেড়ে আমি অন্য কোন পথ গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র প্রস্তুত নই।)

বহু দিন হয়ে গেছে বাড়ি যাই না।

শেষ কবে গেছি মনে পড়ে না। স্মৃতির আয়নায় নির্জনতায় পরে থাকা মলিন ছবিগুলো আবছায়ায় সর্বশক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে বলে- হয়তো কোন এক সেমিস্টার ব্রেকের ছুটিতেই শেষ যাওয়া হয়েছিলো।

বরাবরের মতোই ঈমান ও আমল রক্ষার জন্য হাতে গোণা ক’দিন ছাড়া বাড়িতে ১ অংকের বেশি দিন থাকা হয়ে উঠেনি। অনেক বড় বাড়ি; ৬ রুম। মানুষ ৩ জন; আমার মা, বাবা আর ভাবী। হয়তো বা আমার বিছানায় অন্য কেউ শোয় না, শোয়ার প্রয়োজন পড়ে না, তাই। আমার পড়ার টেবিল, আমার চেয়ার, আমার সোফা আর আমার নেই তো। অন্যের হয়ে গেছে সময়ের প্রয়োজনে। বিশ্বাস করো- বিন্দুমাত্র লোভ নেই তোমাদের এই নশ্বর আবর্জনায়। কিন্তু আমার মা, আমার বাবা ! উনাদের ভাগ কে কেড়ে নেবে, বলো? মনোজগতের এ রাজ্যে বিচরণ করবে আর তাতে ভাগ বসাবে- এ সাধ্য কার?

হে আমার হিন্দু ভাই ও বোনেরা !

জেনে রাখো, আমিও তোমাদের মতই আমার মা-কে অনেক অনেক ভালোবাসি। তোমাদের মায়ের সাথে প্রতিদিন কত সুখ-দুঃখের কথা বল, কত কিছু শেয়ার করো, কত পরামর্শ নাও, কতই না ভালোবাসা- আদর- সোহাগ – মায়া আর মহব্বত ভাগাভাগি করে নাও। আমারও এমন এক মা আছে যার পবিত্র গর্ভে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা পরম যত্নে। আমারও এক বাবা আছে যার ভালোবাসা ও কষ্টের বিনিময়ে এক ছোট শিশু আজ অনেক কিছু লিখতে শিখেছে,পড়তে শিখেছে ।

আমার মা-বাবাই আমার প্রথম শিক্ষক, আমার গুরু, আমাকে এত বড় করে গড়ে তোলার প্রধান কারিগর। তোমরা তোমাদের মা-বাবার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন কর, তাদের সেবা করো কী উদ্দেশ্যে ?

হয়তো মায়ায়, অথবা ভালোবাসায়, অথবা সেবার বিনিময়ে সেবা, অথবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অথবা মানবিকতায়।

একসময় আমিও এমনই ছিলাম আজ তোমরা যেমনটি করে থাকো। আর আজ আমি আমার মা-বাবার কথা অমান্য করি, আমার মা-বাবার দুঃখের সময়ে বাড়ি ত্যাগ করি, মা-বাবার কথা শুনে আমার নবীর সুন্নাহকে ছেড়ে দিয়ে তাদের কাছে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানাই, মনের শত চাহিদা-আকাঙ্ক্ষাকে অপূর্ণ রেখে বাবা-মা থেকে দূরে থাকি একটাই উদ্দেশ্যে- আমার একমাত্র রব ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ।

এমনটি ভাববেন না যে আমি চাকরি করি আর তার ভাগ থেকে আমার মা-বাবাকে দূরে রাখতে অথবা ব্রেইন ওয়াশড হয়ে অথবা কোন সুন্দরী রমণীর প্রেমে পড়ে অথবা নেশায় মত্ত হয়ে অথবা ফাঁদে পড়ে ক্ষণস্থায়ী জীবনে অন্য সবার থেকে আলাদা রকম করে নতুন এক পথ বেছে নিয়েছি আমি। যেই সুজিতের চরিত্র ও সততা তোমাদের বিমুগ্ধ করেছে এতকাল, সেই সুজিত আজ শুধু তার বিশ্বাসের কারণে তোমাদের কাছে সে জীবন্মৃত অর্থাৎ জীবিত থেকেও মৃত ।

আমার বাবা, মা, পিসি এমনকি দুঃখের বিষয় জন্মগত ভাবে মুসলিম নামধারী অনেক মানুষও বলে- বাপ মাকে কষ্ট দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ্‌ খুশি হবে না, ইবাদতও কবুল হবে না। অযু ও গোসলের ফরজ না জানা-না মানা মুসলিম ও অমুসলিমদের সকলেরই একটা হাদীস কেন জানি অজানা নয়। ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। তাইতো মৃত্যুর সাথে সাথে ‘স্বর্গীয়’ টাইটেল লাগাতে একটুও বিলম্ব হয় না সে কিম্ভুতকিমাকার ধর্মের মানুষদের। এ স্বর্গ তো মানবরচিত স্বর্গ। আমি সে স্বর্গে যেতে চাই নে।

কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর,

আজ মানুষের বানানো স্বর্গ ঘরে ঘরে,

আর আমার রব আল্লাহ্‌র স্বর্গ তো শুধু তারাই পাবে যাদের আছে হেদায়াতের নূর।

আসমান ও জমীন আর এর মাঝে যদি সব কিছু বিক্রয় করা হয় তারপরেও আমার রবের সেই স্বর্গের এক চাবুক পরিমাণ জায়গাও কোন বিল গেটস- কার্লোস স্লিম হেলু- বেজোস- এরা কিনতে পারবে না। সেই স্বর্গের ঘরের একটা ইট হবে স্বর্ণের আর আরেকটা হবে রূপার। সেই স্বর্গকে কিনতে পারবে শুধুমাত্র ঈমান ও আমল দিয়ে।

তাইতো আমি আমার রবের আশ্রয়ে চলে এসেছি।

আলহামদুলিল্লাহ । আমার রব আমাকে বলেন-

“আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কোন মা’বুদ সাব্যস্ত করো না। এরূপ করলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। আর তোমাদের রব আদেশ করেছেন যে তাঁকে ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করো না এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করো । যদি তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তুমি তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটি পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সাথে বিনম্রভাবে কথা বলো।’’ (বনী ইসরাঈলঃ ২২-২৩)

কীভাবে করবো বলুন? আমি তো অতি দুর্বল। ঈমান না নিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে ফিরে যাবার অর্থ হল অনন্তকালের জন্য নরকে যাওয়া। যেখানে প্রতিটি ঈমানহীন মানুষগণ ঢুকবে। কিন্তু কোন দিন আর সেখান থেকে তাদের কাউকে বের করা হবে না। আহ !

হায় ! আমার জাতির মানুষগুলো যদি মৃত্যুর একদিন আগে হলেও সে কথা বুঝতো আর সতর্ক হয়ে যেত?

আল্লাহ্‌তায়ালার এক অতি দূর্বল সৃষ্টি মানুষ। জন্মের পরপরই একটা বাছুর লাফালাফি শুরু করে দেয়, একটা মুরগির বাচ্চা নিজের খোসা নিজেই ভেঙ্গে বের হয়ে আসে । আর মানুষ?

আল্লাহ্‌ বলেন- নিশ্চয়ই আমি মানুষকে অত্যন্ত দুর্বল করে সৃষ্টি করেছি।

ছোটবেলা থেকেই তার মা-বাবাই তাকে পরম আদর-যত্ন দিয়ে লালন পালন করে তোলে।

আমিও এমন এক অভাগী মায়ের সন্তান যার সারাটা জীবন কেটেছে দুঃখের মধ্য দিয়ে। আজ আমি সেই অভাগী অসহায় মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের পাশে নেই। এর মানে এই নয় যে আমার সাথে আমার মা নেই। আমার দোয়ায় তিনি থাকেন।

হে আল্লাহ, তুমি আমার মা-বাবাকে হেদায়েত দান কর।

হে আমার হিন্দু ভাই ও বোনেরা !

একটু শুনে যাও তোমাদের প্রতি দরদে ভরা আমার রবের সতর্কবাণী ………

“তুমি এমন কোন বিষয়ের পেছনে পড়ো না যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও হৃদয়- এসবের প্রতিটি নেয়ামত সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (বনী ইসরাঈলঃ ৩৬)

“যে ব্যক্তি দুনিয়ার সুখ কামনা করে, আমি তাকে এখানেই দ্রুত যাকে যা ইচ্ছে দান করি, পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায়। আর যে ব্যক্তি আখিরাত কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-মেহনত করে মুমিন অবস্থায়, এমন লোকদের চেষ্টাই হবে পুরস্কারযোগ্য।” (বনী ইসরাঈলঃ ১৮-১৯)

=============================================

(খাঁটি হিন্দু হতে গিয়ে ইসলামে আত্মসমর্পণ – পর্ব ১১)

=============================================

ইনশা আল্লাহ চলবে

 

বিবেক আমায় হিন্দু থাকতে দেয়নি

হিন্দু কোন ধর্মের নাম নয়, সনাতনও নয়। কোন গ্রন্থেই সমস্ত জীবনের বিধান হিসেবে হিন্দু অথবা সনাতনকে লিপিবদ্ধ করা হয়নি।

ভারতবর্ষের সিন্ধু নদের তীরে বসবাস করা বেদ মেনে চলা কিছু মানুষ হিন্দু পন্ডিতদের মনগড়া কথা নির্দ্বিধায় মেনে চলে; নিজেদেরকে বেদের আদেশ থেকে দূরে রেখে শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

অথচ যজুর্বেদের ৪০তম সুক্তের ৯ নং শ্লোকে বলা হয়েছে-

যারা প্রকৃতির উপাসনা করে তারা অন্ধকারে (নরকে) প্রবেশ করে আর যারা সৃষ্ট জিনিসের উপাসনা করে তারা আরো অন্ধকারে(নরকে) প্রবেশ করে।

অথচ উনারা এক

সময়ে ছিলেন বেদান্তবাদী। আজ কালের পরিক্রমায় পূর্বপুরুষদের আসল ইতিহাস না জেনেই বেদ থেকে উনারা বহুদূর সরে এসেছেন ।

পাঠ্যবইয়ে পড়তাম- হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ। অথচ জীবনে কখনো বেদ চোখে চোখে পড়া তো দূরের কথা বেদ বলে কোন জিনিস যে পড়তে হয় অথবা অন্তত হিন্দুর ঘরে থাকতে হয় তাই জানতাম না।

আমার বাবা-মা এলাকার প্রসিদ্ধ হিন্দু। অথচ শুধু আমার বাড়িতে নয়, কোন আত্মীয় অথবা কোন প্রতিবেশি কারো বাড়িতেই কখনো বেদ দেখিনি । বেদই যাদের মূল ধর্মগ্রন্থ, তাদের ঘরেই বেদ জায়গা পায় না। তাদের সারাটা জীবন কাটে বেদের কোন বিধি-বিধান পড়ে শুনে জেনে বুঝে আমল না করেই।

জীবনে কত শত পন্ডিত দেখলাম। গীতা-বেদের একটি অধ্যায়ের শ্লোকও মনে রাখার মত এমনকি মুখে আনার মত সৌভাগ্য উনাদের হয়নি। অথচ মুসলিমদের ঘরের ছোট ছোট বাচ্চাও কি সুন্দর করে শত শত আয়াতের কোথায় কতটুকু থামতে হবে, কোথায় কীভাবে উচ্চারণ করতে হবে তা যথাযথভাবে তেলাওয়াত করে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর কাছে একটি মোজেজা। মানুষ কতই না সহজে আল্লাহর আয়াতের মহামহিম বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে পারে। অথচ স্বীকার করতেই যত সমস্যা।

যে ধর্ম মানুষকে ন্যায়-নীতি শেখানোর পরিবর্তে ছোট জাতের মানুষদের ওপর জুলুমের কথা শেখায়, নারীদের প্রাপ্য অধিকার সম্মান ও অবশেষে প্রাণবায়ু কেড়ে নেয়, যে ধর্ম নামক শোষনে তোমাদের কথিত স্রষ্টার লীলাময় নোংরামীটাও উপাসনার উপকরণ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পায়, অশালীন ও অশ্লীলতাকে জীবনের ও ধর্মের অন্যতম উপকরণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়, সর্বসম্মতিক্রমে সমাজের সকল ভাই, বোন, পুত্র, মা, বাবা, পুত্রবধু, শশুড়, শাশুড়ি- সকলে মিলে পুরুষ ও নারীর গোপনাংগের পূজা করাকে অত্যন্ত পূণ্যের কাজ হিসেবে মনে করা হয় – আমার পিতার কাছে সেটাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

দুনিয়ার বুকে হাজার হাজার অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি – এর ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক। কেউ কি হিম্মত করেছেন যে কোন একটি বইয়ের ১ টি পৃষ্ঠা কমা-দাড়ি সহ মুখস্ত করার? আদৌ কি সম্ভব?

এটা শুধুমাত্র আল্লাহর আয়াতের ক্ষেত্রেই সম্ভব। এরকম হাজার হাজার প্রত্যক্ষ ও লক্ষ্যণীয় মোজেজায় ভরপুর আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল- কোরআন। অথচ আল্লাহর বাণী যে মহাসত্য ও চিরন্তন তা প্রমাণ করার জন্য কোন ডিগ্রীর প্রয়োজন হয় না। আল কোরানের দ্বিতীয় সূরার একেবারে শুরুতে আল্লাহ তায়ালা বলেন – এটা এমন এক কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই।

এমন চ্যালেঞ্জ দুনিয়ার কোন লেখক কখনও নেয়ার হিম্মত করেনি। বাইবেলে লিখিত পাবেন- বহুবার এ গ্রন্থের সংস্করণ করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও আরো সংস্করণ করার প্রয়োজন রয়েছে।

এ কেমন আল্লাহর কিতাব? বাইবেলে পড়লাম – এখানে এক রকম, আর ওখানে অন্য রকম। পাদ্রী বা পৌলের যখন যেরকম ইচ্ছে হয়েছে লিখে দিয়েছে। কিছু বলবে? অথবা কোন ভুল শুধরিয়ে দেবে এমন দুঃসাহস কস্মিনকালেও কারো মনে যেন উদয় হতে না পারে সেজন্যই ধর্মের মানুষদেরকে ধর্মগ্রন্থ থেকে আলাদা রাখার পায়তারা করেছে সকল যুগের ভন্ড সাধুরা। আর ধর্ম নিয়ে নির্দয়তা, অত্যাচার সয়ে গেছে অসহায় মানবজাতি।

গীতায় বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে – নিজ ধর্ম দোষযুক্ত হইলেও পরধর্ম হইতে শ্রেয়। বিশ্ব জাহানের রব যদি একজনই হন, তাহলে তিনি কীভাবে বলতে পারেন নিজ ধর্ম দোষযুক্ত হবার কথা? এরকম দোষে ভরা ধর্ম তোমরা তোমাদের সমাজের মনোতুষ্টির জন্য পালন করে যেতে পারো, আমি কোনভাবেই পারবো না। ধর্মকে এরকম বানানো গল্প সাজিয়ে মিথ্যাকে সত্য বলে তোমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে নির্দিধায় ছড়িয়ে দিতে পারো। শুধু বলে যাবো- আল্লাহর রাজত্বে আল্লাহকে ছেড়ে কোথায় পালাচ্ছো, যাও তাহলে আল্লাহর সীমানার বাহিরে গিয়ে যাকে ইচ্ছে মানো আর নিজেদের ৩৩ কোটি প্রভুর যে কোন একজনকে সত্য মালিক অথবা স্রষ্টা হিসেবে প্রমাণ করে দেখাও। ৩৩ কোটি নয়, ৩৩ জনের নামই বল দেখি, শুনি। হেয় করার জন্য নয় বিবেককে কাজে লাগাতে বলতেছি- যাকে রব বা মালিক হিসেবে জানো তার নামই জানো না, এটা কেমন গোলামি? পূজা না কর অন্ততঃ নামটা শিখে নিও। কিন্তু কার কাছ থেকে শিখবে? যেই পুরোহিতের কাছে যাবে তিনিই আত্মসমর্পণ করে বলতে বাধ্য- তিনিও জানেন না। এ কেমন পূজারি আর বছরের পর বছর অজানা অপূজিত এ কেমন মালিক !

হে আমার জাতির ভাই ও বোনেরা !

যদি সত্যিই নিজেকে সৃষ্টিকর্তার আসল খাঁটি বান্দা হিসেবে মনে করো, তাহলে এখনই মানবরচিত ধর্ম ছেড়ে ফিরে এসো শাশ্বত ও মহামহিম সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির দিকে। আর আমার পালনকর্তা রহিম রহমান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে ফিরে যাবার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজে সহযোগী হও, প্রতিপক্ষ নয়।

পর্ব১২

=========================================================================

মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মত ঝরে,

মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে।

জীবনে কোন লেখা পোস্ট করতে গিয়ে কান্না আসেনি, আজ কেন জানি চোখ থেকে পানি পড়ছে।

আমার মা, আমার জীবন, আমার আত্মা।

আমরা ছিলাম দুই শরীর, এক প্রাণ।

মাগরিবের নামাজ পড়ে ঘরে ফেরার পথে এক বাড়ি থেকে আওয়াজ এলো। মনে হল কোন মা অসুস্থ। আমার মনে উদয় হলো- হায় ! আমার মাও তো অসুস্থ।

জন্ম থেকে মেয়েটা কাদছে। আমারই মেয়ে। বাপকে চোখে দেখেনি। আমারই মাঝে মেয়েটা তার বাবাকে দেখেছে। তাইতো আমিই তাঁর বাবা।

শুনলাম মা অনেক অসুস্থ। সমাজের চোখে তিনি অসুস্থ নন, জীবিত আর জ্যন্ত মানুষ ।

আমি মৃত বলেই তিনি অসুস্থ। ইসলাম গ্রহণ করে তাদের কাছে অতীতের এক সামান্য দুনিয়ার মডেল এই আমি আজ নাকি মৃত হয়ে গেছি !

আমার কাছে আমার মা দুনিয়ার বুকে সবচেয়ে দুঃখী মানুষদের একজন। ডিম বেঁচে খাতা কলম কিনে তারপর স্কুলে যাবার সুযোগ পেতেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত এক পিতাহীন পরিবারে উনার জন্ম। মায়ের মা মারা গেছেন উনি যখন ক্লাস এইটে। আর আমি ইসলামকে পেয়েছি ঠিক আমি যখন ক্লাস এইটে।

নবী যেমন উনার বাবাকে দেখেন নাই, আমার মাও তেমন। উনার পৃথিবীতে আগমন এক এতিমের পরিচয় দিয়ে। আর নবী যেমন করে ৫ বছর বয়সে মাকে হারান, আমার মাও দুনিয়াকে ভাল মত বুঝে ওঠার আগেই মাকে হারান। আমার ভাই ও আমাকে পেলেন। আমি ইসলামের পথে হাটা ধরলাম, আর আমার বড় ভাই টাকার পথে উড়াল দিয়ে কোরিয়া পৌঁছে গেল। আমার মা- বাবা সন্তানহীন হয়ে রইলো।

হাদিসে বলা হয়েছে- ‘ তুমি এবং তোমার মাল তোমার (মা) বাবার জন্য । ‘ আমি অথবা আমার উপার্জনের একটি কানাকড়িও মা-বাবাকে দিতে পারছি না। সবচেয়ে বেশি যার হক সেই মা ও বাবা থেকে আজ আমি দূরে, মুখ ফিরিয়ে নিলেও মন ফিরিয়ে নিতে পারছি না।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত , হযরত রাসুলে করিম (সা.) জিব্রাইল আলাইহিস সল্লাম অভিশম্পাত করেছেন – ওই ব্যক্তি নিকৃষ্ট , অপমানিত , পর্যুদস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হউক যে তার পিতা-মাতাকে বা যে কোনো একজনকে বার্ধক্যকালে পেয়েছে , কিন্তু তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না । রাসূল এতে ‘আমিন ‘ বলেছেন।

[মুসলিম শরিফ]

অনেকে ভাবেন- আমি আমার মাকে ছেড়ে কত দূরে সরে এসেছি? অথচ ভাবা উচিত ছিলো -আমরা প্রত্যেকেই আমার আল্লাহকে ছেড়ে কত দূরে সরে এসেছি ! আর আমার মাও ঠিক একইভাবে কতই না ভুল বুঝে দূরে চলে গিয়েছেন !

আল্লাহ তাআলা বলেন –

আর আমি মানুষকে তার পিতা মাতার সাথে ভাল ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি । তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে । তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয় । নির্দেশ দিয়েছি যে , আমার প্রতি ও তোমার পিতা মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও । অবশেষে আমার নিকট ফিরে আসতে হবে ।

[সূরা লুকমান : ১৪]

ইসলাম গ্রহণ করে আমি দূরে সরে আসিনি বরং মায়ের আরো কাছে চলে যেতে পেরেছি, আল্লাহর কাছে একজন মায়ের মূল্য শিখেছি, জন্মের পূর্ব থেকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মায়ের অসহনীয় কষ্টকে বুঝেছি, মায়ের ভালোবাসা চিনেছি, মা যে কত বড় বন্ধু তা আমাকে ইসলামই শিখিয়েছে।

অথচ হিন্দুধর্ম থেকে কিছুই শিখতে পারিনি; হিন্দুধর্মের সমাজ,পন্ডিতকূল, প্রতিবেশী তথা আত্মীয়দের কাছ থেকেও মা কি জিনিস সেটা শিখতে পারিনি।

মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয়ার সর্বনিম্ন পর্যায় হলো যে , কোন অপছন্দনীয় কথার পর আফসোস করতে গিয়ে “উহ” শব্দ বলা । কুরআন করীমে এ ধরণের আচরণ থেকেও নিষেধ করা হয়েছে । সুরা বনী ইসরাইলের ২৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন –

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে , তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা মাতার সাথে সদ্বব্যবহার কর । তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় , তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না । এবং তাদেরকে ধমক দিও না । এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ন কথা ।

[সূরা ইসরা : ২৩]

আজ আল্লাহর রাসূল যদি জীবিত থাকতেন উনার কাছে আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু- এর মত আমিও আমার মায়ের জন্য দোয়া চেয়ে নিতাম। কোন দিন কেউ যদি স্বপ্নে আমার নবীর সাথে সাক্ষাত করার সৌভাগ্য লাভ করেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ – আপনি যখন উনার কাছে কোন দোয়া চাইবেন, আমার মায়ের জন্যও একটু দোয়া চাইয়েন, ভাই।

মা আমার প্রিয়তম বন্ধু ছিল, আমিও মায়ের একমাত্র বন্ধু ছিলাম। আমার মা একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী। বৃদ্ধ বয়সেও বাড়ি বাড়ি যান, অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু সে খবর রাখার মত মানুষ এ দুনিয়ায় কেউ নাই। কাজ শেষে বাড়ি ফিরলে কেউ পা টিপে দেয় না, কেউ ব্যাগটা নামিয়ে শুইয়ে দেয় না। কেউ বাতাস করে না। কেউ বলে না- মা রান্না করা লাগবে না। কিন্তু কেন? কী অপরাধ আমার মায়ের? মাগো ! অপরাধ একটাই- যেই আল্লাহ জীবন দিয়েছে, পৃথিবী দিয়েছে, সেই আল্লাহকে না মেনে বহু দেব-দেবতাকে প্রভু বানানোর মহা অপরাধ।

কাফের সমাজ ইসলামের মূল্য বুঝতে চাইলো না। আর মুসলমান হয়ে আমরাও ইসলাম ও ঈমানের মূল্য দিতে শিখলাম না। তাই আমাদের এই হাল। তারা ইসলাম বুঝলে তো আর কাফের থাকতো না, মুসলমান হয়ে যেত। আল্লাহর কাছে যে হেদায়েত চায়, সে অমুসলিম হয়ে থাকতেই পারে না। আকাশের বুকে সূর্য গোটা পৃথিবীকে যতটা আলো দিতে পারে, আমার এক ইসলামই হেরা গুহা থেকে শুরু করে এর চাইতে অনেক অনেক গুণ বেশি আলো দিয়ে মুমিনের অন্তরকে আলোকিত করে চলেছে। সে আলোর খোজ কোন বিজ্ঞানী- গবেষক রাখেন না।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন – ‘মা-বাবার প্রতি সদাচরণ কর কারণ মা কষ্ট করে তোমাকে গর্ভে ধারণ করেছেন ।

[সূরা আহকাফ: ১৫]

আপনারা মুসলমান। কত দামি সম্পদ ঈমানের মালিক ! আপনারা চান- মা বাবাকে কত কিছু দিতে, মৃত্যুর পর দোয়া করে আল্লাহর কাছে উনাদের জন্য কত কিছু পৌছাতে !

আর আমরা ঈমান আনয়নকারী মুসলিম ভাইবোনেরা চাই- ” হে আল্লাহ ! দুনিয়ায় আর কিচ্ছু চাই না। শুধু আমার মা-বাবাকে হেদায়েত দাও। ” মৃত্যুর পর তাঁদের জন্য যেন মাগফিরাতের দোয়া করতে পারি শুধু এই তৌফিক দান করো, আল্লাহ ! আমিন।

পর্ব১৩

==========================================================

বেশি কিছু লিখবো না। আমি মৃত্যুকে অনেক অনেক বেশি ভয় পাই। আরও বেশি ভয় পাই আল্লাহ্‌র অসন্তুষ্টি নিয়ে মৃত্যুকে। আরও বেশি ভয় পাই কুফর অবস্থায় মৃত্যুকে।

আজকাল ভয়ের পরিমাণ বেড়েছে। কারণ ফেসবুকের এই লেখালেখির কারণেই অনেককেই মরতে হচ্ছে, অনেক বড় বড় আলেম সন্ত্রাসী হিসেবে জাতির কাছে নতুন ভাবে পরিচিতি পাচ্ছে, অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে অস্বাভাবিক আচরণের সম্মুখীন হচ্ছে, অনেকেই ঘরহীন পাখি হয়ে এর ঘরে ওর ঘরে আশ্রয় নিচ্ছে। কেউ আশ্রয় পাচ্ছে আল্লাহর প্রেমাগার কারাগারে। সেখানে গেলে নাকি দুনিয়া থেকে পুরোপুরি ফারেগ হয়ে আল্লাহর প্রেমে মশগুল হওয়া যায়, আল্লাহর বান্দাদের কাছে ইসলামের ও আমলের দাওয়াত পৌছানো যায়।

“পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের ওপর যেসব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি সৃষ্টি করার পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখে রাখিনি৷ এমনটি করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ কাজ ৷ (এ সবই এজন্য) যাতে যে ক্ষতিই তোমাদের হয়ে থাকুক তাতে তোমরা মনক্ষুন্ন না হও৷ আর আল্লাহ তোমাদের যা দান করেছেন ৷ সেজন্য গর্বিত না হও৷”

(সূরা-৫৭ আল হাদীদ: আয়াত- ২২-২৩)

ফেসবুকের কল্যাণেই পূর্বের জাতি ভাইগণ আমার আমিত্বকে চিনতে পেরেছে, হিন্দু সমাজে প্রচলিত অসামাজিক প্রথা তথা অকথা- কুকথাকে ধর্ম হিসেবে চালু করিয়ে দেয়া বাপ ও দাদার

ভুল রীতি নিয়ে কিছু বলতে গিয়েই হুংকার তুলেছে। হিন্দু সমাজ আজ অজাত হিসেবে আমজনতার মাঝে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে কীসের অপরাধে জানেন? শুধুমাত্র সত্য ও শ্বাশ্বত দীন, পরিপূর্ণ জীবন বিধান ইসলামকে সত্য হিসেবে মেনে নেয়া ও নিজেকে এর সাথে মানিয়ে আল্লাহর কাছে প্রিয় হতে চাওয়ার জন্য। আর বিরুদ্ধবাদীরা আল্লাহর কাছে মনোনীত একমাত্র দীন হিসেবে ইসলামকে মানতে না পারার হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে নিজের মানবিকতা আর বিবেককে ধবংস করে দিচ্ছে।

হে আমার ভাই !

কুরআনের আয়াতের উত্তর দেবেন কীভাবে? কুরআনে আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌ তায়ালা বলছেন-

“হে লোক সকল ! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো,অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর,তারা সকলে একত্রিত হলেও কখনোই একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়,তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না,প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়,উভয়েই শক্তিহীন।” (২২:৭৩)

৪ বছর পরে আজ আমার কলেজে পুনর্মিলনী উদযাপন হবে। কিন্তু বিশ্বাসের মিলন না হলে আমাদের মা-ছেলে, বাবা- ছেলের পুনর্মিলনী হয়তো বা না আর ইহকালে হবে ! না এর পরের কোন কালে ! এটাই জীবন, এটাই বাস্তব। বাকি যা দেখছেন এর সবই শুধু খেলা আর ছড়া গান।

মা-কে বললাম, কলেজে যাবো। ঝলমলিয়া আসা নিষেধ হয়ে গেল। কারণ আমি গেলে আমার বাবার মনের জ্বালা বৃদ্ধি পায় ।

সূরা হাজ্জের ৭২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

“যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়,তখন তুমি কাফেরদের চোখে মুখে অসন্তোষের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করতে পারবে। যারা তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করে,তারা তাদের প্রতি মারমুখি হয়ে ওঠে। বলুন,আমি কি তোমাদেরকে তদপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দেব? তা হচ্ছে আগুন; আল্লাহ কাফেরদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন। এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল।” (২২:৭২)

যারা এই পৃথীবির নিয়ামাত ভোগ করছে অথচ জানে না, কে তাদেরকে এই সব নিয়ামত দিয়েছে। যারা পৃথিবীতে বিচরণ করছে, অথচ জানে না কোন তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে? যারা মনের যায়, অথচ জানে না, তারো কোথায় যাচ্ছে? আফসোস, তাদের জন্য।

কুরআনে বলা হয়েছে:

“ওরা বললে, আমরা যদি শুনতাম ও আকল দিয়ে বুঝতাম অর্থাৎ আমাদের যদি জ্ঞান থাকতো তাহলে জাহান্নামী হতাম না”

(সূরা আল-মুলক, আয়াত: ১০)। ।

ওরা যখন দেখবে, সমস্ত জীব-জন্তুকে আল্লাহ মাটি বানিয়ে দিচ্ছেন, তখন চিৎকার করে বলবে,

“যদি আমি/আমরা আজ মাটি হয়ে যেতে পারতাম”

(নাবা, আয়াত: ৪০)।

==============================================

মূর্তি মূর্তিপূজা সম্পর্কে মহান আল্লাহর কিছু বাণী

মূর্তি পূজারীদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছেঃ

মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তির পূজা করছো আর মিথ্যা বানাচ্ছো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদের উপাসনা করো, তারা তোমাদের জন্য রিযিক দানের কোন ক্ষমতা রাখে না। তাই আল্লাহর নিকট রিযিক তালাশ করো আর তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। [সূরা আনকাবুত, আয়াত ১৭]

মহান আল্লাহ বলেনঃ আর ইব্রাহিম বলল, দুনিয়ার জীবনে তোমাদের মধ্যে পরস্পরিক ভালোবাসার জন্যই তো তোমরা আল্লাহকে ছাড়া মূর্তিদেরকে গ্রহণ করেছো। তারপর কিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে অভিশাপ দিবে, আর তোমাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম আর তোমাদের জন্য থাকবে না কোন সাহায্যকারী।

[সূরা আনকাবুত, আয়াত ২৫]

মহান আল্লাহ বলেনঃ সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দিবে না। আর তারা তাদের ডাক সম্বন্ধে অবহিতও নয়। যখন কিয়ামতের দিন মানুষকে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রু হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের উপাসনাকে অস্বীকার করবে। [সূরা আহকাফ, আয়াত ]

.

মহান আল্লাহ বলেনঃ আর যখন ইবরাহিম তার পিতা আযরকে বলেছিল, আপনি কি মূর্তিগুলোকে ইলাহ রূপে গ্রহণ করছেন? নিশ্চয়ই আমি আপনাকে আপনার জাতিকে স্পষ্টভাবে গোমরাহীতে নিমজ্জিত দেখছি।

[সূরা আনআম, আয়াত ৭৪]

.

মহান আল্লাহ বলেনঃ আর তুমি তাদের নিকট ইবরাহিমের ঘটনা বর্ণনা কর, যখন সে তার পিতা তার কওমকে বলেছিল, তোমরা কিসের ইবাদাত করো? তারা বলল, আমরা মূর্তির পূজা করি। অতঃপর আমরা নিষ্ঠার সাথে তাদের পূজায় রত থাকি। সে বলল, যখন তোমরা ডাকো তখন তারা কি তোমাদের সে ডাক শুনতে পায়? অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে? তারা বলল, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের পেয়েছি তারা এরূপই করতো। ইবরাহিম বলল, তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছো তোমরা যাদের পূজা করো। তোমরা এবং তোমাদের অতীত পিতৃপুরুষেরা? সকল সৃষ্টির রব ছাড়া অবশ্যই তারা আমার শত্রু। [সূরা শুআরা, আয়াত ৬৯৭৭]

মুমিন মুসলিমদেরকে যা বলা হয়েছেঃ

মহান আল্লাহ বলেনঃ হে মুমিনগণ, নিশ্চয়ই মদ জুয়া আর প্রতিমামূর্তি এবং ভাগ্য নির্ধারক তীর সমূহ অপবিত্র শয়তানের কাজ, তাই তোমরা তা পরিহার কর যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। [সূরা মায়িদা, আয়াত ৯০]

মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাকো এবং মিথ্যা কথা পরিহার করো। [সূরা হাজ্জ, আয়াত ৩০]

মহান আল্লাহ বলেনঃ আর যে সকল পশুকে পূজার বেদীতে বলি দেয়া হয়েছে তা আর জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। এগুলো পাপ কাজ। [সূরা মায়িদা, আয়াত ]

====================================================================

বড় হয়ে কী হতে চাও?

মানুষের চোখে বড় হওয়াই আমাদের স্বাপ্নিক জীবনের লক্ষ্য হয়ে থাকে। স্বাপ্নিক রঙিন চোখে আদর্শ ছেলে হবে ও রাজপথে মুখে মুখে বারংবার নিজেকে আবৃত্তি করা হবে এমন নশ্বর শখের নেশায় আমরা বুদ হয়ে আছি। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সাধারণ মানুষের মাঝে নিজেকে অসাধারণ হিসেবে জাহির করার জন্যই আমাদের মনোজগতের নফসকে নিয়ে আমাদের প্রতিদিনের স্বপ্নযাত্রা।

নিজের চাওয়াকে না পাওয়ার ব্যাথায় অতৃপ্ত হৃদয় নিয়ে নিজের ব্যর্থ হওয়া স্বপ্নকে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া আমাদের চিরায়ত স্বভাব। তাই আমি না হতে পারলে আমার ভাই, সে না পারলে আমার ছেলে, এভাবে ফেরি করে বেড়াবো আর সকলের চোখে অনেক বড় হবোই একদিন। আমার মা গান শিখতে চেয়েছিলেন। সুযোগ পান নি। তাই আমার ওপরে এপ্লাই করেছেন। পাপের সাগরে ডুবে ভুক্তভোগী হয়েছি আমি। এভাবে অন্যের স্বপ্ন বয়ে নিয়েই আমাদের যুবক সমাজের অধিকাংশরাই আজ বিসিএস ক্যাডার, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখি আর দিনরাত বুলি আওড়িয়ে স্বপ্নকে শান দেই। আমাদের সমাজ, মহল, পরিবারে আজ এটারই আলোচনা- বড় হয়ে কী হতে হবে? বিসিএস। হালাল ভাবে মাসে এক-দেড় লাখ টাকা উপার্জন করেও প্রশাসনে যেতে পারেনি বলে আফসোস সমাজের। যাওয়ার জায়গা নেই বলে পড়ে আছে- এই তাদের অভিমত।

হায় ! সে এক অশ্রাব্য জীবন ছিল আমার। আমিও বড় হবার স্বপ্ন দেখতাম। আমার কথার কোন মূল্য দেয়া হত না। তাই পরিবারের অন্যদের মত বয়সে ও আকারে বড় হতে চাইতাম। অপেক্ষা করতাম, কবে বড় হব !

যখন ক্লাস সেভেন-এ পড়ি, বাবা চিঠিতে লিখেছিলো বিদেশে যেতে হবে পড়াশোনা করতে। এটাই বড় হওয়া। কিছু দিন এ স্বপ্ন চালু ছিল। পরে এলো – আর্মি বন্দনা। খুব ইচ্ছে করলেই নাকি আর্মি অফিসার হওয়া যায়। যদিও আমি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধক – গ্রামান্তর দৌড়, খেলাধুলা ইত্যাদিতে লাস্ট-এর ক্যাটাগরিতে ছিলাম, তবুও এতই এর প্রশংসা শুনেছি যে আর্মি অফিসার হবার স্বপ্নও দেখতাম এলাকাবাসী, বাবা- মাদের দৃষ্টিতে দৃষ্টি দিয়ে। তারপর এলো মেরিন অফিসারদের যুগ। বিভিন্ন দেশে যাওয়া যায়, চান্স পাওয়া খুব একটা কঠিন না, অনেক টাকা বেতন পাওয়া যায় বলে হতে চাইলাম মেরিন অফিসার। তারপরে জীবনের মোড় ঘুরে গেল।

ক্লাস এইটের টার্ম এন্ড ডিনার হবে হয়তো এমনই এক রাতে ফর্ম মাস্টার রফিকুর রহমান স্যারের কাছে শুনলাম – আমাকে আর্টস-এ পড়তে হবে।

তারপর ধীরে ধীরে জানলাম, শুনলাম- আইবিএ তে পড়লে অনেক টাকার চাকরি পাওয়া যায়। হু, আমিও পড়মু আইবিএ তে। পড়ার প- এর সাথে যার সম্পর্ক নেই সে আবার কীভাবে আইবিএ তে পড়বে! যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই ২ বার পরীক্ষা দিলাম। ব্যর্থ মনোরথ নিয়েই ঢাবি খ ইউনিটে কন্টিনিউ করতে লাগলাম গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। ভাই বলেন- আমি অর্থনীতিতে পড়লে নাকি পাসই করতে পারতাম না।

আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের স্যার-ম্যাডামরা দুনিয়াবি লাইনে অনেক ভাল। না পড়ে পরীক্ষা দিলেও ভাল নাম্বার পাওয়া যায়, মিড টার্ম না দিয়েও ২০ এ ১৪ নম্বর পেয়েছি। আর আমার বন্ধু নাহিদ ছেলেটা পরীক্ষা দিয়েই আমার চেয়ে কম পেয়েছে। এভাবেই আমরা ডিগ্রি পাই, তা তো কেউ জানে না। যে নাহিদের কাছে পরীক্ষার দিনে গিয়ে শিখি সে অনেক ভাল জেনে ভাল লিখেও পরীক্ষায় পায় আমার চেয়ে কম। এভাবেই জ্ঞানের কদর করা হয় দেশবরেণ্য বিদ্যাপিঠসমূহে।

এখানে ওখানে দেখা হলেই পরিচিত-অপরিচিত জন প্রায়ই বলেন- কী করছেন?

বলি- অনার্স-মাস্টার্স শেষ,…. চাকরির চেষ্টা করছি!

কী? বিসিএস?

আমি বলি- না।,,,,,

বি সি এস ক্যাডার ছাড়া দুনিয়াতে আর কোন চাকরি আছে নাকি?

দুনিয়াতে মানূষ ২ প্রকার।

১। যারা ৩ প্রকার বিসিএস ক্যাডার হয়। আর

২। যারা তা হতে পারে না।

শুধুমাত্র ফরেন,এডমিন ও পুলিশরাই বিসিএস ক্যাডার। বাকি ক্যাডাররা ১ম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা মাত্র। ক্যাডার হয়ে ব্যর্থতা ঘুচিয়েছো ঠিক, কিন্তু সফল হতে পারে নি ।

আর যারা বিসিএস ক্যাডার হতে পারে না, তাদের জীবনটা তো ১৬ আনাই বৃথা।

বেকারত্বের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সৎ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতাকে সুশীল সমাজে গলা টিপে হত্যা করেছে।

মেয়ের বাবাকে প্রস্তাব দিতে গেলে প্রথম কথা- ছেলে কী করে? তার দীনদারিত্ব,আখলাক, তাকওয়া, পরহেজগারি – এসবের কোন খবর নাই; দীনের বুঝ না থাকা মানুষদের না হয় বাদই দিলাম, দীনদার ছেলে খুজতে গিয়েও ৩ প্রকার বিসিএস ক্যাডারের মূল্যই শশুর সমাজের কাছে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয় !

আর দীনদার পাত্রী খুজতে গেলে দীনদারিত্বকে উপেক্ষা করে গায়ের রঙ, উচ্চতা, বাপ-মায়ের সম্পদ, একমাত্র সন্তান কি না, দুনিয়াবি যোগ্যতা ইত্যাদিকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কে কাকে বিয়ে করবেন এ ব্যাপারে নাক গলানোর আমি কেউ নই। তবে দীনের খোলসে কোন এক অভিনয়ের খেলা জগত জুড়ে চলছে বলেই কথাগুলো বললাম।

একটি গায়ের রঙ কালো। মানুষ হল সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কেউ কালো আর কেউ ফর্সা ; এটা কখনোই তার নিজস্ব গুণ নয়। আল্লাহর নেয়ামতকে কদর করা চাই, অবহেলা নয়। আমার মুখকে যদি আল্লাহ তায়ালা আমার চুলের মত কালো বানিয়ে দেন, তাহলে দুনিয়ার কোন শক্তি আছে যে তা থেকে সাদাকে বের করে নিয়ে আসবে?

আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাকে কারো মুখাপেক্ষি করেন নাই, সুস্থ -সবল -কর্মক্ষম করেছেন। দারিদ্র ও অভাব থেকে বাঁচিয়ে সুন্দর একটি অবয়ব দিয়ে ও রহমতপূর্ণ এক জীবন দান করেছেন। চক্ষু, কর্ণ, দন্ত, ওষ্ঠ ও মুখের মত অনেক দামি দামি নেয়ামত কোন দরখাস্ত ছাড়াই দিয়ে দিয়েছেন। কোন যোগ্যতা ছাড়াই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সম্পদ ঈমান- এর মত মহা দৌলত আল্লাহ্ তায়ালা দিয়েছেন। পানি, বাতাস, আলো এর নেয়ামতকে ফ্রি এবং চলমান হিসেবে জারি করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা অনেক সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন এই অযোগ্যকে, দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানসমূহ রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় – এর মত প্রতিষ্ঠানে পড়েছি এ কথা বলার নেয়ামত দিয়েছেন নিজের কোন যোগ্যতা ছাড়াই। এক সেকেন্ডের নাই ভরসা। আল্লাহর কাছেই অচিরেই ফিরে যেতেই হবে। আল্লাহ্ আমায় এ কথা বলবেন না যে, হে আবদুল্লাহ বিন সুব্রত ! তোমাকে কত ভাল ভাল জায়গায় পড়েছো এ তৌফিক দিয়েছিলাম। তুমি বিসিএস ক্যাডার হতে পারো নি কেন?

আল্লাহ বলবেন- তোমাকে নেয়ামত দিয়েছিলাম? তুমি কী নিয়ে এসেছো?

আজ ৪টি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দিয়ে এক ধাপ নড়তে পারবে না। বলো- তোমার জীবনকে কোন কাজে লাগিয়েছো? যৌবন কে কোন কাজে অতিবাহিত করেছো? এলেম অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছো? কোন পথে আয় করেছো আর কোন পথে ব্যয় করেছো?

এটাই হবে চূড়ান্ত সফলতা ও ব্যর্থতার দিন। এই দিনে অতি সহজে যেন সফল হয়ে যাই, আমি এটাই শুধু চাই।

আমার চাকরি, আমার ব্যবসা, আমার বিবাহ, আমার বেকারত্ব, আমার বন্ধুত্ব, আমার শত্রুতা, আমার ফেসবুকের প্রতিটি লেখার প্রতিটি বর্ণ, প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজ, প্রতিটা মুহুর্ত হউক শুধুমাত্র আল্লাহ – কে রাজি খুশি করার জন্য। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ যেন আমার দ্বারা পূজিত না হয়। আল্লাহ মানুষ এবং জিন জাতিকে আল্লাহর যে দাসত্ব করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন, আল্লাহ তায়ালা মুমিনের যেই জান ও মালের বিনিময়ে জান্নাতকে খরিদ করে নিয়েছেন আমিও যেন সেই মুমিনদের দলে শামীল হতে পারি- সেজন্য দোয়া চাই। আমিন

(পর্ব-১৪)( ইনশা আল্লাহ্ আরো চলতে চাই। আপনারা বড় হন আর আমি ছোট হই। কারণ দিন যাচ্ছে আর হায়াত কমছে। তাই বড় হই আর ছোট হই একজন জান্নাতি হতে চাই। )

=============================================================================

খাঁটি হিন্দু হতে গিয়ে ইসলামে আত্মসমর্পণপর্ব ১৪

ইসলাম গ্রহণ করে ঠকালাম? নাকি ঠকলাম? (পর্ব-১৫)

ইসলাম একটি দ্বীন, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, মানুষের চিরন্তন ধর্ম, একমাত্র সার্বজনীন সত্য ধর্ম। যুগে যুগে আদম,ইব্রাহিম,মূসা,ঈসা আলাইহিস সল্লামসহ সকল রাসূলগণের উপর যেসব আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল, মূল আরবি কুরআন হল তারই সর্বশেষ, পূর্নাঙ্গ, অপরিবর্তীত ও সকল ধর্মের সকল মানুষের হেদায়েত ও জীবন পরিচালনার জন্য প্রেরিত সংবিধানের চূড়ান্ত সংস্করণ।

এই মহাসত্যকে মানতে গিয়েই এর ওর গায়ে চুলকানি । জিনা কর, ব্যাভিচার কর, ইচ্ছেমত জোরে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে গান কর- বন্ধু সমাজে বাহবা পাবে।

নিজের বিশ্বাস পরিবর্তন করার ক্ষমতা তোমার নেই। প্রতিষ্ঠিত বাস্তবকে না মানা এ সমাজে নিকৃষ্ট পাপ ।

ভালোবাসার অনুভূতিগুলো কেমন জানি দায়িত্ব ও কর্তব্যের লাইনে একসাথে দাঁড়ায় না। বিবেকের দাঁড়িপাল্লায় অবাস্তব লাগে ! তাই না?

একই আলয়ে বেড়ে ওঠা এক পরিবার। সকাল-সন্ধ্যা আনন্দের ঝর্ণা বহিতো । কত মিল ছিলো, মহব্বত ছিলো, গল্প ছিলো, ধর্ম মানার জন্য চেষ্টা ছিলো, প্রেরণা ছিলো। আট চোখ ভরা স্বপ্ন ছিলো । ইসলাম গ্রহণ করে নাকি আমি আমার সমাজের মানুষের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করেছি ! এ আবার কেমন মুসলিমের মুখের কথা !

মনের বাগানগুলোতে কেন জানি আজ আর সেই ফুল্গুলো নেই, সুবাস নেই। মৌমাছিরাও আর আসে না। কালের পরিবর্তনে নষ্ট সমাজের কালো বাতাসের ছোঁয়া লেগে আমরা আজ এক ছাদের নিচে আসতে পারি না।

প্রশ্ন আসে- বাবা-মাকে ঠকালাম, আর নিজেও ঠকলাম।

আল্লাহ্‌ কী বলছেন একটু শুনবেন না?

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং বাবা-মার সাথে উত্তম ব্যবহার কর।’

(সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)

তাদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে, তাদের উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বল।’

(সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে।’

বরং মেনে চলো সে ব্যক্তির পথ যে আমার দিকে ফিরে এসেছে ৷ তারপর তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে আমারই দিকে ৷ সে সময় তোমরা কেমন কাজ করছিলে তখন তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবো ৷

(সুরা লোকমান : আয়াত ১৫)

আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে।

(সূরা আল আনকাবুত :আয়াত ৮)

কতই না সুন্দর করে বাবা-মায়ের প্রতি সুন্দর আচরণ ও দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন আমার রব ! এর পরেও কি বলে বেড়াবেন একজন ভালো মুসলিম তার মা- বাবাকে ঠকাতে পারে? অথবা কি বলতে পারেন যে, দুনিয়ার মালিকের সন্তুষ্টির জন্য আমি দুনিয়ার সামান্য কিছুক্ষণ পরীক্ষা দেব, আর সব কিছুর মালিক আল্লাহ্‌ আমার দুনিয়া ও আখিরাতকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবেন? না , তা কখনোই হতে পারে না। আমি তো অভাবী, আমার রব তো আর অভাবী নন। আমার মালিক তো সকলের সকল চাহিদা পূরণ করে দিতে সক্ষম। এরপরেও কি তোমাদের কাছে আমার রব-ই যে আমাদের সকলকে সকল হালতে পালেন তার পরিচয় ফুটে উঠবে না?

দেশসেরা মেধাবীদের মেলায় ছড়াছড়ি এ দেশ । লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয় ক্ষণিক মজা পাবার আশায়। আর রবের সন্তুষ্টির জন্য সামান্যতম সাহায্যকেও অনেক বড় কিছু মনে করা হয়। আমার যে ব্রেইন আল্লাহ্‌ তায়ালা দিয়েছেন, রিজিকের যেই সহজ ও উন্নত ব্যবস্থা করেছেন তা কি আমার নিজস্ব ক্ষমতার ফল নাকি আমার রবের অনুগ্রহ?

তোমরা আমার রবের আর কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে ?

আর নিশ্চয়ই ঈমানের নেয়ামতই রবের পক্ষ থেকে পাওয়া প্রতিটি বান্দার শ্রেষ্ঠ নেয়ামত ।

===========================================================================

পর্ব- ১৬

আমি তখনও  আমার ইসলামে আসার কথা প্রকাশ করিনি। এলাকার বড় ভাই , মিল্টন ভাই ইসলাম গ্রহণ করে ইউসুফ ভাই হয়ে গেলেন। হিন্দু ভাই-দের সে কি রাগ ! ধর্ম ত্যাগ ! অন্য ধর্ম থেকে হিন্দুধর্মে আইলে বাহবা বাহবা ! আর হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলামে ? ছি ছি ছি !

উনাকে নাকি টাকা দেয়, ইত্যাদি কারণে নাকি ইসলাম গ্রহণ করেছে । নাউযুবিল্লাহ !

আমি অনেক ভাল করেই উনার সম্পর্কে জানি। না কারো কোন অর্থ তিনি গ্রহণ করেন, না কোন সুযোগ সুবিধা তিনি ভোগ করেন। মাস্টার্স পাস করা ভাই তো তাহলে এতদিনে কোটিপতি হয়ে যেতেন, দিনে এনে দিনে খেতেন না। ২ মাদ্রাসায় পড়িয়ে কষ্টে সংসার চালাতেন না। এত কাল অবিবাহিত থাকতেন না। ভাই এলাকায় থাকেন। তাই, বিয়ে বা নারীর কারণে বিয়ে-এর ট্যাগ তার গায়ে লাগেনি। তবে আমার গায়ে আচ্ছামত লাগিয়েছেন সেসকল সর্বজ্ঞানী ভাই ও বোনেরা । উনারা সকাল সন্ধ্যা আমার ইসলাম গ্রহণের কারণ হিসেবে নতুন নতুন বিষয় ও কাহিনী আবিষ্কার করে সমাজকে তাক লাগিয়ে দেন । আজ কবিগুরু রবিঠাকুর বেঁচে থাকলে হয়তো গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পাওয়া হতো না। আমার এককালের শুভাকাঙ্ক্ষীগণ আমাকে নিয়ে নতুন নতুন কাব্য রচনা করে হ্যাট্রিক নোবেল অর্জন করে রেকর্ড গড়তেন বলে আমার বিশ্বাস । আমার এই বিশ্বাসে যুক্তি আছে, কিন্তু ভাইবোনদের বিশ্বাসের মাঝে বিন্দুমাত্র যুক্তি খুঁজে পাবেন না ।

আলহামদুলিল্লাহ ! ভাইয়ের উছিলায় অনেক মুসলমান – অমুসলমান ভাই আজ দীনের পথে হাটছেন। আলহামদুলিল্লাহ ! আল্লাহ্‌ নিশ্চয়ই মুমিনের প্রতিটি কষ্টের বদলা বহুগুণে বাড়িয়ে প্রাপ্য মজুরি দিয়ে দেবেন সময়মত।

এমন এক সন্তানের কথা যে কখনো চায়নি তার মাতা-পিতা্র চোখ দিয়ে পানি কেন শরীর থেকে এক ফোঁটা ঘাম বের হউক ! আজ প্রিয় মানুষকে ফোন দিলে ওপাশ থেকে ফোন ধরে বা, সময় হয় না কথা বলার। অনেক ব্যস্ত। ফোন দিলে ব্যাথাটা বাড়ে, দীর্ঘ ১১ বছর ধরে জিইয়ে রাখা কষ্টগুলো । বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্নের সম্মুখীন হই- বিয়ের কারণে মুসলিম হয়েছি?

তাদের কাছে জীবনে মনে হয় একটি কারণই হয় আমার রব-এর কাছে ফিরে আসার।

নারীকে বিয়ে !

হায় ! হায় ! অর্থহীন আশ্রয়হীন এ অক্ষমকে কে বিয়ে করবে ?

আমার আল্লাহ-কে রব বলতে খুব ভাল লাগে। রব মানে পালনকর্তা । বৈষ্ণব সন্তানের কাছে পালনকর্তা হিসেবে বিষ্ণুর নাম জেনে এসেছি সারাটা কাল।

প্রশ্ন জাগে না? কেন এত বড় পরিবর্তন ! এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের রীতি-নীতি অনুসরণ করণ করলে সমাজ আপনাকে গালি দেবে না । হাফ প্যান্ট- ছেড়া পোশাক- এসব ফ্যাশন, উন্নতির চিহ্ন। আর বোরখা পড়া, মুখ ঢাকা, পাঞ্জাবি/টুপি পড়া, দাঁড়ি রাখা- কাঠমোল্লাদের মৌলবাদীর চিহ্ন ।

বেহায়াপনা-উলঙ্গপনা এসব কিছুই যার যার স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার । জোরে গান বাজিয়ে, উলংগ হয়ে ঘুরে বেড়ানো শুধু নিজের অধিকার বলেই আমার মুখ আটকানো, আর চলাফেরা ও আমার স্বাধীন পথচলায় এগুলো কোন সমস্যাই না।

======================================================================

পর্ব- ১৭

শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণ: পর ধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ

 স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়: পরোধর্মো ভয়াবহ:“।।

অর্থঃ সুন্দর রূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা কথঞ্চিৎ অঙ্গহীন স্বধর্ম শ্রেষ্ঠ । স্বধর্মে থাকিয়া নিধনও ভাল ।

‘আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম’ বইয়ের ১২৪ পৃষ্ঠায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। স্বধর্ম অর্থ নিজের ধর্ম । এখন প্রশ্ন হলো- নিজের ধর্ম বলতে কী বোঝায় ?

১। ধর্ম নিজস্ব একটি সম্পদ। পৈতৃক সম্পদের মত এটি হস্তান্তরযোগ্য নয় । পৈতৃক সম্পদ হিসেবে গণ্য করে কি একে বাপ-দাদার কাছ থেকে বংশ পরম্পরায় নিজের বলে চালিয়ে দেয়া কোন সুযোগ আছে ?

২। অনেক অধার্মিকের পুত্রকে চরম ধার্মিক, আবার অনেক ধার্মিকের পুত্রকে চরম অধার্মিক হতে দেখা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে ধর্ম-কে যদি নিজের বলে চালিয়ে দেয়া যেত তবে এমনটি কেন?

 

জীবন তো একটাই । এই ক্ষুদ্র জীবনে কীসের এত অহংকার !

স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ

 

কথা সত্য, কিন্তু মতলব খারাপ ।

ছেলেটার সবই ভালো; মা-বাবার খেদমত, আচরণ, বন্ধুপ্রতিম মনোভাব, আত্মীয়-সজন-প্রতিবেশীদের প্রতি মহব্বত-কোন কিছুতেই কমতি নেই। কিন্তু শুধু একটা জিনিসই খারাপ।

===================

 যে কারণে সুজিত থেকে আবদুল্লাহ হলাম ( পর্ব – ১)

==============================

আকাশের চাঁদ কি কখনো ছুঁয়ে দেখেছেন ? কখনো নিভিয়ে দিতে পেরেছেন কি ধরণীর বুক আলো করে দেয়া প্রদীপ রবিকে ?

আমার ইসলাম হলো আমার জীবনে লক্ষ কোটি চাঁদ, লক্ষ কোটি রবি ।

অভাব ছিলো কোথায় ? সততা ? অর্থ ? সম্মান ? ডিগ্রী ? নারী?

আলহামদুলিল্লাহ্‌ ! ছোট বেলা থেকে আমার বন্ধু মহলে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হিসেবে পরিচিত ছিলাম । আর যুধিষ্ঠির ছিলেন মহাকাব্য (যা মানব কল্পনায় রচিত গল্পগ্রন্থ; বাস্তবতার সাথে এর মিল নেই) মহাভারতের একজন সত্যবাদী পাণ্ডব যিনি জীবনে কখনো মিথ্যা বলেননি।

বাবাকে যদি বলতাম এত টাকা দাও, মনে পড়ে না কোন দিন আমাকে বলতে শুনেছি যে -এই টাকা কোন কাজে লাগবে ?

গোটা উপজেলার মধ্যে হয়তো ১ জনই নাগরিক ছিলাম যে এমন ডিগ্রী আমার আগে কেউ অর্জন করতে পেরেছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌ ! এ আমার যোগ্যতার ফল কখনোই নয়, এ হল আমার প্রতি আমার রবের ভালোবাসার চিহ্ন।

আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি এমন সন্তান ছিলাম যে কোন নারীর পিতাকে তার কণ্যার সাথে বিবাহের প্রস্তাব দিব অথচ তিনি আমাকে কখনোই কোন অজুহাতে আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। আলহামদুলিল্লাহ্‌ ! এ আমার যোগ্যতার ফল কখনোই নয়, এ হল আমার প্রতি আমার রবের ভালোবাসার চিহ্ন।

নিজের প্রশংসায় নয়, বরং অতীতকে তুলে ধরি মানুষের মনের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে কারণ সেই তো তার নিজের হিসাবের জন্য যথেষ্ট । তোমাদের কাছে সুজিত এক অতি পরিচিত ইতিহাস । অথচ ইতিহাসের বড় শিক্ষা এই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না ।

সহজ- সরল বাঁধাহীন পাকা রাস্তা থাকতে গাড়িচালক কখনো বন্ধুর, অসমতল, কাঁচা রাস্তায় গাড়ি চালায় না । সকলেই সহজকে খোঁজে। তাই বলে সহজকে পেতে গিয়ে লাইসেন্সবিহীন রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ির ভুয়া কাগজপাতি নিয়ে সার্জেন্ট সাহেবের কাছে ধরা খেয়ে নাস্তানাবুদ হতে কেউ চায় না । তাই বুদ্ধিমানেরা আগেভাগেই নিজের ও গাড়ির কাগজপাতি ঠিক করেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামে । আজ আমরা প্রতিটা মানুষ আমাদের জীবন নামক এক কাচা-পাকা, বন্ধুর-সরল, সোজা-আঁকাবাঁকা রাস্তার পথিক। আমাদের দেহ নামক গাড়ি নিয়ে চলেছি পথে । সকলেই জানি আমাদের গন্তব্য। যা আমাদের গাড়ি চলার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে প্রতিটা মূহুর্ত আমরা আমাদের গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হই । এ যে এক ব্রেকবিহীন হ্যান্ডেলের গাড়ি। শুধুমাত্র একবারই থামে, আমাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। সৃষ্টিকর্তার অমোঘ নিয়মে তা চলছেই । অথচ আমরা জীবন নামক গাড়ির চালকেরা কি অন্ধ হয়ে গেলাম। সামনে তাকিয়ে সতর্ক হবার বদলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমরা এক গভীর স্বপ্নে বিভোর ।

নাস্তিক- আস্তিক- মূর্তিপূজারি- বিশ্বাসী- অবিশ্বাসী সকলেই জানি- আমাদের মরতেই হবে । দুনিয়ায় আমরা কেউ ই নিজের ইচ্ছায় আসিনি, নিজের ইচ্ছায় যেতেও পারি না । নিজের ইচ্ছ মত সব কিছু করতেও পারি না । আমি অতি দুর্বল এক সৃষ্টি । গরুর বাছুর হবার পরেই সে হাঁটে , লাফায় , দৌড়ায় । আর মানব সন্তান শুধু কাঁদতে পারে যা দিয়ে সে সকল মানব মনে মায়ার সৃষ্টি করে । একটু আগেই যে মায়ের কাছে কোন রূপ খাবার ছিল না, এই মাত্র এক মহান শক্তিশালী রবের ইশারায় দাঁতহীন শক্তিহীন সন্তানের জন্য মায়ের দেহে তার খাবারের উৎস সৃষ্টি করে দেয়া হয় ? এটা সৃষ্টি করে যে এক মহান শক্তিশালী রব শিশুকে পালছেন তা কি তোমরা বোঝ না?

অথচ তোমরা গোজামিল দিয়ে বলো- ব্রহ্মা নামক এক দেবতা তা সৃষ্টি করলো। আর বিষ্ণু নামক এক দেবতা তাকে খাইয়ে পালন করলো ।

আমাদের সামনে এক দিন সবাইকে আমাদের পালনকর্তার সামনে দাঁড়াতেই হবে। নাস্তিক- আস্তিক- মূর্তিপূজারি- বিশ্বাসী- অবিশ্বাসী কারোই তো নিস্তার নেই। কোন ধর্মের কোন বিশ্বাস না, ধর্মগ্রন্থ না। আমাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি – আমাদের ওপর কেউ যদি জুলুম করে আর তবে তার শাস্তি কি পাওয়া উচিত নয়? আমাদের শরীরের ভেতরে দিনে ২৪ ঘণ্টা বছরে ৩৬৫ দিন সর্বক্ষণ যেই শিরা-উপশিরা-হৃৎপিণ্ড-পাকস্থলি- রক্ত তাদের নির্ধারিত কাজ করে যাচ্ছে এটা কার ইশারায় ? এগুলো কি আমিই নিয়ন্ত্রণ করি নাকি আমাদের পালনকর্তা ও আমাদের সৃষ্টিকর্তা একজন নিয়ন্ত্রণ করেন ?

এখন প্রশ্ন-

আমাদের এসকল শিরা-উপশিরা-হৃৎপিণ্ড-পাকস্থলি- রক্তের সৃষ্টিকর্তা যদি ব্রহ্মা নামক কোন চার মুখ ওয়ালা দেবতা হয়ে থাকে, তাহলে এসকল শিরা-উপশিরা-হৃৎপিণ্ড-পাকস্থলি- রক্তের প্রবাহ ও ঠিক মত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে অসমর্থ হয়ে বিষ্ণুর হাতে দিলেন কেন ? আর বিষ্ণু আবার এসব ধ্বংস করার ক্ষমতা না থাকার কারণে শিবের ওপরে দায়িত্ব তুলে দিলেন কেন ?

তাহলে ব্রহ্মার শিরা-উপশিরা-হৃৎপিণ্ড-পাকস্থলি- রক্তের প্রবাহ ও ঠিক মত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন কি বিষ্ণু?

আর

বিষ্ণুর শিরা-উপশিরা-হৃৎপিণ্ড-পাকস্থলি- রক্তের প্রবাহ সৃষ্টি করেছেন কি ব্রহ্মা ?

আর শিবের শিরা-উপশিরা-হৃৎপিণ্ড-পাকস্থলি- রক্তের প্রবাহ সৃষ্টি করেছেন ব্রহ্মা ? ঠিক মত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন বিষ্ণু ?

কোন যুক্তি আছে?

===============================================

কোথায় যাও, হে হিন্দু ভাই আমার ?

ফিরে আসো ।

===================================

তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর ‘মিথ্যা’। -সূরা আনকাবুত : ১৭

‘এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে।’ -সূরা নূহ : ২৩

উপরের আয়াতে উল্লেখিত মূর্তিগুলো সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, এগুলো হচ্ছে নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু পুণ্যবান লোকের নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করেছে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই কুমন্ত্রনা দিয়েছে যে, তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোতে মূর্তি স্থাপন করা হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে নামকরণ করা হোক। লোকেরা এমনই করল। ওই প্রজন্ম যদিও এই সব মূর্তির পূজা করেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায় লিপ্ত হল। -সহীহ বুখারী হাদীস : ৪৯২০

‘তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ -সূরা হজ্জ : ৩০

তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও।

[সূরা আনআম, আয়াত: ১৫৩]

তোমাদের কাছে কি তোমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত জাতিগুলোর বৃত্তান্ত পৌঁছেনি? নূহের জাতি, আদ, সামূদ এবং তাদের পরে আগমনকারী বহু জাতি, যাদের সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ‌ জানেন? তাদের রসূলরা যখন তাদের কাছে দ্ব্যর্থহীন কথা ও সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আসেন তখন তারা নিজেদের মুখে হাত চাপা দেয় এবং বলে, “যে বার্তা সহকারে তোমাদের পাঠানো হয়েছে আমরা তা মানি না এবং তোমরা আমাদের যে জিনিসের দাওয়াত দিচ্ছো তার ব্যাপারে আমরা যুগপৎ উদ্বেগ ও সংশয়ের মধ্যে আছি।” -সূরা ইব্রাহীমঃ ৯

যাদেরকে তোমরা আল্লাহর সাথে শরীক করে রেখেছ, তাদেরকে কিরূপে ভয় কর, অথচ তোমরা ভয় কর না যে, তোমরা আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে শরীক করছ, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তোমাদের প্রতি কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি।- সূরা আল আন-আমঃ ৮১

আর তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে বহু ‘ইলাহ’ গ্রহণ করেছে, যাতে ওরা তাদের জন্য সাহায্যকারী হয়। কক্ষনো নয়, এরা তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।

-মারইয়াম, ১৯/৮১-৮২

তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক ইলাহ গ্রহণ করেছে, এই আশায় যে, তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। এরা তাদের কোন সাহায্য করতে সক্ষম নয়, বরং এগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে বাহিনীরূপে হাযির করা হবে।

-ইয়াসিন, ৩৬/৭৪-৭৫

তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম ও ধর্ম যাজকদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে; অথচ তারা এক ইলাহের এবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; আর তিনি পবিত্র মহান, তারা যা শরীক করে তা থেকে তিনি বহু উর্ধ্বে।

-আত-তাওবা, ৯/৩১

তাদের কি এমন শরীক আছে, যারা তাদের জন্যে দ্বীনের বিধি-বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?

-আশ-শুরা, ৪২/২১

তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে প্রতিমার পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ, নিশ্চয় তোমরা আল্লাহ বাদ দিয়ে যাদের উপাসনা কর তারা তোমাদের রিযিকের ক্ষমতা রাখে না; তাই তোমরা আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ কর, তাঁরই ইবাদাত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।

– আনকাবুত, ২৯/১৭

আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তাদের জন্য ইসলামকেই একমাত্র দ্বীন হিসাবে মনোনীত করেছেন।

তিনি বলেন-

‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে একমাত্র মনোনীত দ্বীন হ’ল ইসলাম’

(আলে ইমরান ৩/১৯)।

আর ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান অহী মারফত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর নাযিল করেছেন। সুতরাং অহি-র বিধানই একমাত্র চূড়ান্ত জীবন বিধান এবং তার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সকল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান।

রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর তিন মাস পূর্বে ১০ম হিজরীর ৯ই যিলহজ্জে আরাফাতের ময়দানে ছাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে যখন তিনি বিদায় হজ্জ পালন করেছিলেন তখন আল্লাহ্‌ তা‘আলা এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন,

‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নে‘মত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদা ৫/৩)।

Facebook Comments

Related posts

নীড়ে ফেরার গল্প-১৩ | জোবায়েদ হোসেন

সংকলন টিম

নীড়ে ফেরার গল্প-৪৬ | রিফাত আল আজাদ মাহীম

সংকলন টিম

নীড়ে ফেরার গল্প-৩৬ | বিনতে আলম

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!