সংকলন
আনোয়ার হোসেন
প্রতিযোগিতা-২

নীড়ে ফেরার গল্প-৩০ | আনোয়ার হোসেন

আম্মু জিজ্ঞেস করলো,”কেন যাবি না?”

আমি বললাম,”ভালো লাগতেছে না, তাই”

-“ভালো লাগতেছে না মানে? এখনই মসজিদে যাবি, জামাতে নামাজ পড়বি!”

-“আমি বাসায়ই নামাজ পড়বো!”

অবশেষে ধমাধম কয়েক ঘা পড়ে গেলো পিঠে,” আজকে তোরে মসজিদে যাইতেই হবে!”

এমনই ছিলো কৈশোরের দিনগুলা। স্কুলে যাওয়ার জন্য যখন রেডি হতাম, আম্মু ধমকের সূরে প্যান্ট গুটিয়ে টাকনুর উপরে উঠাতে বলতো। বাসা থেকে বের হয়ে একটু দুরে গিয়ে প্যান্ট ঝেড়ে ঝুলিয়ে দেয়া, ‘স্টাইল করতে হবে তো!’

এমনই চলছিলো দিনকাল, শেষে এসএসসি পরীক্ষার আগে মসজিদে জামাতে নিয়মিত হই। পরিচয় হতে থাকে অদ্ভুত ভালো রকমের আখলাক ওয়ালা তাবলীগ ওয়ালাদের সাথে। এত চমৎকার ভাবে কথা বলে! আমি কেবল এসএসসি পরীক্ষা দিলাম আর উনারা একেকজন বড় বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কলেজের প্রফেসর অথচ আমার মত একটা পিচ্চির সাথে কি চমৎকার ব্যবহার! আখলাক যে মানুষের উপর কতটা প্রভাব ফেলে তা ভেবে আজকেও আমি অবাক হই। জীবনেও কোনোদিন তাবলীগে না যাওয়া আমি, তাবলীগ কি, সেখানে মানুষ কি করে, কেন যায় তা না জানা আমি টানা ৪০দিন চিল্লা দেয়ার জন্য তৈরী হয়ে যাই!

যুদ্ধ? এইবার শুরু! আম্মু তো আমাকে তিনদিনের জন্যই যেতে দিবেন না সেখানে আমি ৪০দিন নিয়ত তো করছিই, পাশাপাশি বন্ধুদেরকেও তাশকীল করছি। আসলে দ্বীনের প্রতি আমার আম্মুর আগ্রহ কেমন তা লেখার প্রথমেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন। ছোট বেলা থেকেই দেখেছি আম্মু ‘আদর্শ নারী’ ‘মাসিক মদীনা’ এসব পত্রিকা সহ বিভিন্ন দ্বীনি কিতাব পড়তেন। তবে আমাকে তার ‘কোল’ ছাড়া করার জন্য কখনোই প্রস্তুত ছিলেন না। দেশে তখন শাহবাগীদের আস্ফালন চলতেছে। নানা জায়গায় হরতাল চলতেছে। ককটেল, পেট্রোল বোম ফুটতেছে। তাছাড়া এরচেয়েও বড় কারন ছিলো অর্থনৈতিক।

আমি যাবোই আর আম্মু যেতেই দিবে না। কোনো ভাবেই যেতে দিবে না। সত্যি কথা বলতে একটু দ্বীনি পরিবেশে যাওয়ার জন্য আমি আল্লাহর দরবারে যে পরিমান কাঁদছি! প্রায় প্রতিদিনই আম্মুকে রাজি করানোর চেষ্টা করতাম। জীবনেও কোনোদিন কোনোকিছুর জন্য এত কাঁদিনি আম্মুর কাছে যতটা কেঁদেছি তাবলীগে যাওয়ার জন্য। আর আল্লাহর দরবারে তো কান্নাকাটি চলছেই। এরপর জজবায় কিছুটা চির ধরলো অর্থনৈতিক বাস্তবতা বোঝার পর। নিয়ত করলাম তিনদিনই যাবো।

এরই মাঝখানে একটা ‘জোরে’ যাই। সেখানে একজন মুরুব্বী বোঝালেন, “অর্থনৈতিক সমস্যার কারনে কি আমাদের এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলআপ কখনো আটকে থাকতে দিতেন আমাদের বাবা মা? অথচ দ্বীনের পথে চলা, দ্বীনদার হয়ে যাওয়া, দ্বীনের পথে চলতে মাল খরচ করা এরচেয়ে অনেক অনেক গুন বেশি প্রয়োজনীয় আর ফজীলতের।” যাই হোক আবার কান্নাকাটি শুরু! আল্লাহ তা’আলা কবুল করলেন চল্লিশ দিনের জন্য, দ্বীনের পথে চলা শুরু করার জন্য। অধম লিখায় কাচা, বোঝাতে হয়তো পারিনি কতটা যুদ্ধ আমাকে করতে হয়েছে।

এরপর খ্রিষ্টান মিশনারী পরিচালিত কলেজে ভর্তি হলাম। টুপি পড়ি নিয়মিত। আব্বু কোনোভাবেই আমাকে তা করতে দিবেন না। আমি ‘স্মার্ট’ ছেলে কেন এমন করে থাকবো! পুলিশ জঙ্গী বলে ধরে নিয়ে যাবে! হায়, সাধারন টুপি পড়লেও আজ জঙ্গী হওয়ার ভয়! যাই হোক সেই থেকে শুরু! টুপি থেকে শুরু হয়ে আজকে পরিপূর্ণ দ্বীনি লেবাস পরে থাকা ভন্ড!

Facebook Comments

Related posts

নীড়ে ফেরার গল্প-৬ | ফাহিমা জান্নাত রুহি

সংকলন টিম

নীড়ে ফেরার গল্প-৪৬ | রিফাত আল আজাদ মাহীম

সংকলন টিম

নীড়ে ফেরার গল্প-৪৮ | সিলভিয়া সিলভি

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!