পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু
কল্পনাতে অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে যেরকম একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনতে হয়, আমি মনে করি এই দুনিয়াবি মোহে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিগুলোকেও বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে কোনো একটা ঝাঁকুনির প্রয়োজন।সেই ঝাঁকুনি হতে পারে কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শ, কোনো ভিডিও চিত্রের মূল্যবান উক্তি কিংবা নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা।
আমার পরিবর্তনের শুরুটার প্রায় দু’বছর হতে চললো।নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া অবাধ্যতা আর পাপবোঝাই তরী নিয়ে ছুটছিলাম আরো নিকৃষ্ট কোনো সুখের খোজে।তবে নির্দিষ্ট সময় পর পর একেকটা ঝড় আসলো আর তার অসীম বেগ সেই তরী থেকে আমাকে ছিটকে অবিদিত কোনো সাগরের মাঝখানে ফেলে দিলো।বিশাল এই ঝাঁকুনি খেয়ে মাঝ সমুদ্রে ভাসছিলাম একেবারে একলা।মৃত্যু কামনায় আত্মা হননের চেষ্টা করে সে সাগরে স্বেচ্ছায় ডুব দিয়েছি অনেকবার।তবে আমার রবের ইচ্ছে হয়তো ভিন্ন ছিলো।
একপর্যায়ে বেঁচে থাকবার সব আশা হারিয়ে ফেলেও প্রয়োজনের তাগিদে বেঁচে থাকার সংকল্পকে পুণরায় ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।এরপর প্রতি রাতে আরেকবার নিরপরাধ হয়ে বাঁচতে চেয়ে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছি, ভাতের থালার সাথে অশ্রু মিশে যেতো আমার।দেয়ালে মাথা ঠুকানোর যন্ত্রণা সয়েছি, এক পর্যায়ে নিজেকে সহ্য করার অসীম ক্ষমতা সম্পন্ন করে তুলেছি।শত বাধার দেয়াল ভেদ করে সামনে অগ্রসর হওয়া যখন অনিশ্চিত, তখন কূলের দেখা পেতে মহামহিমের স্মরণাপন্ন হয়েছি। আমার সাথে রবের মধ্যকার দেয়াল এক দিনে ভাঙেনি।এর জন্যে হাজারবার পরীক্ষা দিতে হয়েছে।পুরোপুরিভাবে পাশ করার নিশ্চয়তা দিতে পারবো না।তবে হ্যা, কিছুটা হলেও নিজের স্রষ্টার দেয়া সুখ অনুভব করেছি।আর আমার রব তো বলেই দিয়েছেন,
“আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরলপথে পরিচালিত করেন।”
-[সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৫]
তোমরা এই পৃথিবীকে ঠিক যতটা চেনো, আমি আমার জীবন স্রোতের মধ্যে ভাসমান তরী ডোবার মূহুর্তে তার থেকেও অধিক জেনেছি- আলহামদুলিল্লাহ।ঠিক সমুদ্রপৃষ্ঠে ভাসমান থেকে প্রতি মূহুর্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে করতে সমুদ্রের গভীরতা, তার জলোচ্ছ্বাস, আর নোনাজলে বসবাস করা প্রাণীকুলের সাথে সন্ধি স্থাপনের মতই।জ্ঞানীরা বইয়ের পৃষ্ঠায় থেকে জ্ঞান আহরণ করে, তবে সে সব জ্ঞান তো বাহ্যিকতা থেকেই নেয়া।আমিও আমার সাথে ঘটা প্রতিটা ঠুনকো ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছি, বুঝতে শিখেছি, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করেছি।আর একদিনে এসব হয়নি, একদিনে কখনো সম্ভবও নয়।এর জন্য প্রয়োজন প্রবল ধৈর্য আর একাগ্রতা।নিজের সব অনর্থক সুখ অনিয়মের কারণে বিসর্জন দেয়ার অসীম ক্ষমতা একদিনে তৈরী হয়না।তবুও চেষ্টা তোমাকে করতে হবে, অবশ্যই করতে হবে।
কেননা আল্লাহ তায়ালা তোমাকে ডেকে বলেছেন,
“হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান রব(আল্লাহ) হতে দূরে সরিয়ে দিলো?”
-[সূরা আল-ইনফিতার, আয়াত:]
ক্লাসের সবচাইতে দুষ্টু ছেলেদের দলে থাকা, ক্লাস আর বন্ধুদের আড্ডাকে মাতিয়ে রাখা মানুষটার হঠাৎ করেই গাম্ভীর্যপূর্ণ আচরণে সবার অবাক হবার’ই কথা।সবসময় দুষ্টুমিতে মেতে থাকা ব্যক্তিকে মসজিদের ভেতরে অধিক সময় আর আলেমদের সাথে ঘোরাফেরা করতে দেখাও কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়।বাবা-মায়ের সাথে উচ্চসরে আচরণ করা ব্যক্তির এক নিমিষেই মায়ের পদতলে চেপে থাকাও স্বাভাবিক নয়।তবে এসবের সবটাই করা সম্ভব যদি অন্তরে আল্লাহ ভীতি স্থাপন করা যায়।
এই প্রত্যাবর্তন খুব সোজা বিষয় নয়, আবার খুব কঠিন কিছুও নয়।তবে ওই যে একটা ধাক্কা কিংবা ঝাঁকুনি না আসা পর্যন্ত আমরা সবাই ঘোরের ভেতর থাকবো।কেননা বর্তমান এই ফেৎনার যুগে আমাদের অন্তরে আল্লাহর বাণী কিংবা রাসূলের হাদিস সহজেই কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।পাপ করতে করতে আমাদের নফস বা অন্তর কালো পর্দায় ঢেকে গেছে।আমরা এমন এক ঘোর আর আধারে তলিয়ে গেছি, যার থেকে এই নফসের সৃষ্টিকর্তা ব্যতিত অন্যকেউ উদ্ধার করতে সক্ষম নন।একারণে এই ঘোর কাটাতে চেষ্টা করা এবং আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া অপরিহার্য।আর কেউ যদি চেষ্টা না করেই আশায় করে যে, একলা একলাই সে সুখী হতে পারবে, তবে তার সুখ আর কষ্টের বিধান করার জন্য তিনিই যথেষ্ট।আমাদের সেসব ভেবে কাজ নেই।
পরিবর্তনের পূর্বশর্ত হলো, অনুশোচনা।অনুতাপহীন ব্যক্তি হেদায়েত পাওয়ার যোগ্যতা রাখেনা।তবুও দয়াময় আল্লাহ তায়ালা যদি একান্ত চেয়ে থাকেন তাহলে সেটা তার দয়া।তবে হাদিস মতে যতটুকু ভাবনা হয়, নিজ থেকে না চাইলে আল্লাহ ধরে বেধে কারো উপর ধর্মের বিধান চাপিয়ে দেন না।
হাদিসে কুদসীতে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বান্দাহ যখন আমার দিকে এক বিঘৎ পরিমাণ এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যখন সে আমার কাছে পায়ে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে ছুটে চলে যাই।’
-(বুখারি)
পৃথিবীতে এতটুকু স্বাধীনতা’ই তো এর মূল পরীক্ষা।পোষা প্রাণীর গলার রশি খুলে ছেড়ে দিয়ে যদি সে ফিরে আসে তবে সে যেভাবে সত্যিকারের অনুগত হিসেবে বিবেচিত হয়, আমাদের এই চিন্তাশক্তির স্বাধীনতা তো কেবল সেই পোষা প্রাণীর মতই অনুগত বান্দা হবার পরীক্ষা মাত্র।
অনুশোচনা হবার পর আমি তাওবাকে অধিক প্রাধান্য দেই।পূর্ববর্তী সকল অনিয়ম আমার অন্তরকে গিলে খেয়ে ভেতরে আধার ছড়িয়ে দিয়েছিলো,তাওবার মাধ্যমে তার থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে শুরু করি।এরপর ধীরে ধীরে শুরু হলো ব্যক্তি জীবনে ধর্মের রীতিনীতি অনুসরণ।পূর্ণাঙ্গভাবে না হলেও চেষ্টা করতে শুরু করলাম।এভাবে কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলো।
এরপর আবারো জীবনে ব্যর্থতার চেহারায় নতুন অনেক ঝড় এলো।এই ব্যর্থতা আর চাহিদাকে পূরণ না করতে পারার শূন্যতা মানুষকে জ্যান্তই মেরে ফেলে।তার থেকে সমস্ত চিন্তা চেতনাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে তাকে ফেলে দেয় একরাশ বিরহ ভরা সমুদ্রে।আমার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটলো, আমি আবারো বিমর্ষ হয়ে পড়লাম।পূর্ববর্তী সকল অনিয়ম ধীরে ধীরে আবারো ব্যক্তিজীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করলো।
এসব বিদ্যমান থাকাকালীন এক পর্যায়ে আমার থেকে আমার সবকিছু হারিয়ে যেতে শুরু করলো।কেনো হলো, কি কারণ, আমি কিছু বুঝে উঠবার আগেই আমি নিজেকে একটা অমানিশার ঘোর আধারের মধ্যে আবিষ্কার করলাম।মনে হচ্ছিলো যেনো, আমাকে জনমানবশূন্য কোনো মরুভূমিতে একলা ফেলে রেখে আসা হয়েছে।আমি আবারো পুর্বের অবস্থায় ফিরে গেলাম।
এসব থেকে মুক্তির জন্য পুণরায় সেই একই কর্মের পুনরাবৃত্তি করলাম।তবে এবার তাওবা করলাম যে, পূর্ণাঙ্গভাবে সব শুরু করা প্রয়োজন।অর্ধপথ গমন কখনো পূর্ণ গন্তব্যের সুখ দিতে সক্ষম নয়।বুঝলাম, আগেরবার মানুষিকতা আর চিন্তার দিক থেকে পরিপক্বতার অভাবে আমি পুণরায় অনিয়মে ফিরে গিয়েছিলাম।তবে এবার অন্তরে নিজেকে সুধরে নেবার প্রবল ইচ্ছা জাগলো।
প্রথমত ইসলামিক বিভিন্ন ভিডিও দেখতে লাগলাম, ক্বারীদের তেলাওয়াতে আকৃষ্ট হলাম।আমার অন্তর শীতল কারী একজন ব্যক্তির কথা না বললেই নয়।তিনি হচ্ছেন-মাও: তারিক জামিল দা: বা:।আল্লাহ ও তার রাসূল (সা:) কে কতটা ভালোবাসতে হয়, কীভাবে ভালোবাসতে হয় আমি তার থেকেই শিখেছি।
এরপর একজন আলেমের সংস্পর্শে আসলাম।এত কথার ভেতর আমার জীবনে এই কথাটা সবচাইতে অধিক এবং এই কাজটার প্রভাব সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষের যতই জ্ঞান প্রজ্ঞা থাকুক না কেনো সে নিজ থেকে নিজেকে পূর্ণ সংশোধন করতে কখনোই সক্ষম নয়।আর এই প্রযুক্তিগত ডিজিটাল ফতোয়াবাজ মানুষদের ভীড়ে প্রকৃত আলেমের সংস্পর্শে না থাকলে কতটা ভুলের মধ্যে থাকতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই যাদের’ই পূর্ণাঙ্গভাবে নিজেকে সুধরে নিজের অন্তরকে ঈমানের আলো দিয়ে পরিপূর্ণ করার ইচ্ছা আছে, তাদেরকে বলবো, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যুগ অনুসারে একজন যোগ্য আর নেক চরিত্রবান আলেমের সংস্পর্শে থাকুন।খুব বেশী সময় না হলেও রোজকার জীবনে তার জন্য কমপক্ষে দশ পনেরো মিনিট রাখুন।আর যদি আশেপাশে এরকম কেউ না থাকে তবে পাশের কোনো মাদ্রাসার কোনো যোগ্যতা সম্পন্ন আহলে ইলম এর ছাত্রের সংস্পর্শে থাকুন।যান্ত্রিক ভাবে আমরা একে অপরের সাথে যতই যুক্ত থাকিনা কেনো এটা সত্যিই কোনো কাজে দেয়না, একদম না।পাওয়ার বাটন অফ করলেই যেনো সব শিক্ষা ফোনস্ক্রিনের মতই আধারে ডুবে যায়।
এরপর আমার কঠিন মূহুর্তে যাদের হারিয়েছি, তাদের থেকে আরো খানিকটা দূরে সরে থাকতে লাগলাম।মানুষের কঠিন সময়গুলোতে তার সাথে জড়িত সম্পর্কের পরীক্ষা নেয়া যায়,কে তার কতটা আপন।দুনিয়ামুখি চাহিদাসম্পন্ন আর সফলতাকে নিজের সর্বস্ব মনে করা ব্যক্তিরা একটা শক্তপোক্ত ঈমানদারের অন্তরকে প্রভাবিত করে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।এজন্যে সবসময় যতই আপন কেউ হউক না কেনো দুনিয়ামুখিদের মজলিস ত্যাগ করা বা এদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।নাহলে তোমার আল্লাহ ভীতি থেকে বাহ্যিক ব্যর্থতার অনুভূতি তোমাকে দূরে সরিয়ে দিবে।
পরিবার আমাকে বাধা দেয়নি কিছুতেই।মধ্যবিত্ত পরিবারে ধর্ম নিয়ে এতো বিধি-নিষেধ থাকেনা,থাকে শুধু সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা।তবে শুরুতে কিছুটা এলোমেলো ধারণা থাকলেও একটা নিঞ্জা টেকনিক অনুসরণ করেছিলাম।নিজের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাবা মায়ের জন্যেও দোয়া এবং তাদেরকে সবসময় সৎ পরামর্শের মাধ্যমে তাদের অন্তরকে বদলে ফেলতে সক্ষম হয়েছি-আলহামদুলিল্লাহ।কারো বাবা মা না মানলে তাদের জন্যেও দোয়া করো, তারা না মানলেও আল্লাহর থেকে পিছুপা হওয়ার সাহস দেখিও না কখনোই। তাদের সাথেও উত্তম ব্যবহার করো আর আল্লাহকেও স্মরণ করতে থাকো।ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারলে আল্লাহ ঠিকই তোমার জন্যে তোমার আশেপাশের মানুষকে একদিন বদলে দিবেন ইন-শা-আল্লাহ।
এবার আসি সবচাইতে কঠিন আলোচনায়।তোমার অন্তর, তোমার পরিবার, তোমার বন্ধুবান্ধব সব নিয়ন্ত্রণে আনলেও তোমার পাপ তোমাকে ছাড়বে না।আমাকেও ছাড়েনি।দিনশেষে সবকিছু থেকে মুক্তির পরেও আমি পূর্ণাঙ্গভাবে মানতে সক্ষম হচ্ছিলাম না।কারণ ভেবে দেখলাম, কেনো আর কীভাবে? বুঝলাম এটা হলো মোবাইল।এর ভেতরে থাকা গান, ফেসবুক একাউন্ট, ইউটিউব চ্যানেল, সময় নষ্ট করা গেমগুলো দ্বীনে ফিরে আসার পরেও এর অনিয়মগুলো তোমাকে পুরোপুরিভাবে ছেড়ে দিবে না।তাহলে কি মোবাইল চালাবো না? আমি না চালানোর কথা বলছি না, তবে এসবের যথাযথ ব্যবহার না করলে তোমার পরিবর্তনে এটা অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
যেমন, তুমি নামাজ পড়ে আসার পর একটু ফেসবুকে ঢুঁ মারতে এসে একটা বেপর্দা নারীর ছবি বা অশ্লীল ভিডিও দেখে ফেললে, তোমার গেম তোমাকে ফরজ ছেড়ে দেয়াতে সাহায্য করলো, তোমার গান তোমার অন্তরে নেফাক তৈরী করলো।যার মাধ্যমে তুমি চিন্তা করতে বাধ্য হবে যে, একটা পাপে কি আর হবে, তাওবা করে নেবো ক্ষণ।এজন্যে এসবেরও পরিবর্তন প্রয়োজন।বন্ধুলিস্ট থেকে বেপর্দায় থাকা নারীদের, অধিক পরিমাণে স্টাইলিশ ছেলেদের ছেটে ফেলো।গান, নাটক, মুভির চ্যানেল আনসাবস্ক্রাইব করো, গান ডিলিট দেও, গেম খেলা বন্ধ করো নতুবা কমিয়ে দেও।মূলকথা, সবকিছুকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে বেধে ফেলো।এসব না করলে কি হবে? পরিবর্তনের চিন্তা করেও তোমার ধর্মের নীতি অনুসরণ করতে এগুলোই বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
আর এসবের কারণে সমাজ নামক এই যান্ত্রিক মস্তিষ্কগুলো থেকে আমার জন্য ধেয়ে আসলো হাজারো খেতাব।প্রথম দিকে এসবে অন্তর সংকুচিত হয়ে যেতো, ভয় হতো।একারণে আমি এদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে লাগলাম।কানে আল্লাহর পবিত্র বাণীর সীসা ঢেলে কুরআন ছাড়া অন্য কিছু শ্রবণ বন্ধ করে দিলাম।ধীরে ধীরে ঈমানের সাথে সাথে আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারোর ভয়, সংকোচ অন্তর থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো।
তোমার জীবনে বিদ্যমান সমস্ত পাপের সম্ভাব্য উপাদানগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করতে হবে।প্রেমহীনাও বেঁচে থাকা যায়, একাকিত্ব আল্লাহকে চেনায়।নেক আমল বাড়াবার চেষ্টা করো, নফল পড়।নামাজে অধিক মনোযোগী হও, যত বেশী নামাজে অভিনিবেশ করতে পারবে,নিজেকে তোমার রবের ততো নিকটে অনুভব করতে পারবে।আল্লাহকে খুজে পাওয়ার উত্তম পন্থা হলো -তাহাজ্জুদ।মাঝরাতে জেগে রবের নিকট আশ্রয় চাও, তাসবীহকে সর্বাক্ষণিক সঙ্গী করে তুলো।এগুলো খুব প্রয়োজন।কেননা অন্তরে তুমি পূর্ণাঙ্গ ঈমান রেখে আমল না করলে সে ঈমানের বিন্দুমাত্র লাভ নেই।
এরপর, যেদিন দাড়ি মুখে, টুপি পাঞ্জাবি গায়ে মুড়িয়ে, তোমার রাসূলের (সা:) নামের দরূদ পড়তে পড়তে নির্দ্বিধায় এই নগ্নতার শহরের রাস্তায় মাথা নিচু করে হাটবার সক্ষমতা অর্জন করে ফেলবে, সেদিন আল্লাহর সর্ব নিচু স্তরের একজন মু’মিন বান্দা হওয়ার যোগ্যতা তোমার তৈরী হবে ইন-শা-আল্লাহ।সেদিন তোমার অন্তরে কোনো দুনিয়াবি মোহ থাকবে না, পৃথিবী তোমার নিকট মাটিতে পড়ে থাকা দু’টাকার ছেঁড়া নোটের ন্যায় তুচ্ছ মনে হবে। অন্তরে থাকবে না কোনো অনিশ্চয়তা কিংবা বিলয়ের সংশয়।সেদিন তোমার আর তোমার রবের মধ্যকার দেয়াল তৈরীকারী শয়তান তোমাকে ধোঁকা দেয়ার সাহস করবে না।এটাই হবে তোমার সর্বোত্তম সফলতা।সেদিন তুমি হবে একজন আল্লাহর অনুগত প্রিয় বান্দা ও নবী পাগল যোগ্য উম্মত।
সর্বশেষে বলবো, নিজের জীবনকে দুনিয়াকেন্দ্রিক করতে চেও না বা করো না।নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহকেন্দ্রিক করে ফেলো।তোমার অন্ন থেকে শুরু করে নিদ্রা পর্যন্ত সবকিছু যেনো আল্লাহর জন্যে হয়।এসবে অনেক দেরী ভাই।তবে নিজেকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে যোগ্য করে তুলতে ধৈর্যের সাথে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন।
আল্লাহ তোমাদের সহায় হউন।
Facebook Comments