‘আমি একজন মুসলিম’
কথাটা যেই গৌরব এবং ভক্তির সাথে আজ এই লেখাটাতে বলতে পারি, তা কয়েক বছর আগেও ছিল আমার কাছে একটি মামুলি ব্যাপার। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি ইসলাম ‘ধর্ম’কে………দ্বীনে ইসলামকে দেখার সৌভাগ্য তখনো হয়নি আমার। হয়তোবা হয়েছে সেই সৌভাগ্য, কিন্তু উপেক্ষা করে গেছি ‘গোঁড়ামি’ ভেবে, ‘ওল্ড ফ্যাশন্ড’ বলে। ঐসময় ইসলাম বলতে বুঝতাম শুক্রবারের নামায, রমজান মাসে সকাল থেকে সন্ধ্যা না খেয়ে থাকা, রমজান মাস শেষে ঈদ ও গরু কুরবানি দেওয়ার ঈদ। ফলে, সেই সময় কেউ আমার সামনে ইসলাম নিয়ে কথা বললে, মাথায় শুধু এই কয়টা বিষয় ঘুরপাক খেত। ছোটবেলা থেকেই একটা জিনিস দেখে আসছিলাম ব্যাপকভাবে। আর তা হলো, যেই সকল মানুষেরা বুড়া হয়ে গেছে, ঠিকমতো হাঁটা চলা যাদের দায় হয়ে উঠেছে, এই শ্রেণীর মুসলমানেরাই খালি প্রতিদিন পাঁচবার নামায পড়ে। আর তাদের পোশাক হয় পাঞ্জাবি,টুপি আর লুঙ্গি, না হয় পায়জামা। এই শ্রেণির লোকদেরকে দেখে আমার ছোট্ট মস্তিস্কে একটা ব্যাপার বেশ চরমভাবে গেঁথে যায়। আর তা হলো, “বুড়া হইলে নামায পড়া লাগবে, দাঁড়ি রাখা লাগবে আর প্যান্ট-শার্ট বাদ দিয়া পড়তে হইবে পাঞ্জাবি-পায়জামা!” এই চিন্তার প্রসার ঘটিয়েছে আমার চেনা-জানা কিছু লোকজন; তাদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। “আরে নামায পড়ার অনেক টাইম আসে, মেয়া; এখন তো মাস্তি-মাজা করার বয়স, নামায বুড়া হইলে পড়মু”…………আরও কত কী! ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত এই ‘মাস্তি-মাজা’ মাইন্ডসেট নিয়েই পড়ে থাকলাম।
উত্তীর্ণ হলাম ক্লাস-সিক্সে……আমার ‘মাস্তি-মাজা’ মাইন্ডসেট সুদৃঢ় হতে থাকলো; বন্ধুদের সাথে হাসি-তামশা, লিমিটলেস গালাগালি, ঐমেয়ে ঐরকম, সেইমেয়ে সেইরকম; আরো কত কী! ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইটা খালি মুখস্থই করতাম; জীবনে অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা কখনো করতাম না, ‘অনেস্টি ইজ দ্যা বেস্ট পলিসি’ কথাটা কেন জানি শুধু পরীক্ষার খাতায় লেখতে পারতাম, কিন্তু জীবনের খাতায় উহা লেখার সাহস জোগাইতে পারিতাম নাহ…… আমার ‘ইন্টেলিজেন্স মশাইয়ের’ বানানো ন্যায়-অন্যায়ের মানদন্ডতে খালি অন্যেকে বসাতাম, নিজেকে কখনো বসাতাম নাহ।
ব্যাকবাইটিং করতাম সেইলেভেলের; যাহাদের ব্যাপারে এইরূপ ‘সুনাম’ গাইতাম, তাহারা যদি একটিবার তাহা আপন নয়নে দর্শন করিতেন এবং নিজ কর্ণে তাহা শ্রবণ করিতেন, তাহলে হয়তো বালিশের উপর গণ্ডদেশ রাখিয়া কাঁদিয়া পালঙ্ক ভাসাইতেন। ইসলামকে ভালোবাসতাম ঠিকই, কিন্তু ইসলামকে জীবনে যথাযথ স্থান দিতে চাইতাম না।
এইভাবে ক্লাস সিক্স, স্যাভেন পার করলাম। ক্লাস এইটে উঠে কী ভেবে জানি পাঁচ-ওয়াক্ত নামায পড়ার জন্য চেষ্টিত হলাম, যদিও পরে তা করতে গিয়ে ব্যর্থ হই, সম্ভবত জেএসসিতে ভালো রেজাল্ট করার আশায় এমনটা করেছিলাম; নির্দিষ্ট কারণটা এখন ঠিক আন্দাজ করে বলতে পারছিনা।
জেএসসি শেষ………নরমাল এ+ পাইলাম। বাংলায় মিস খাওয়াতে ‘গোল্ডেন এ+’ আর কপালে জুটল না। নিয়ত খারাপ ছিল, তা আর কী হবে?
জুনিয়র সেকেন্ডারি ডিঙিয়ে এরপর পা দিলাম সেকেন্ডারি লেভেলে। ওহহো! আপনাদেরতো একটা কথা বললামই নাহ…………আমি ছোটবেলা থেকেই অংকে ভীষণ কাঁচা ছিলাম। ক্লাস সিক্সের ফাইনালে আমি অংকে মারাত্তক রকমের খারাপ রেজাল্ট করি। ফলে, বাবা আমার জন্য অংকের প্রাইভেট টিচার রাখতে বাধ্য হয়। ক্লাস সিক্স থেকে এইট অব্দি অনেক টিচারই রাখা হয়েছিল; প্রায় ৬-৭ জন। তাদের মধ্যে রাজু স্যারই আমাকে স্যাভেনের শেষ মাস থেকে জেএসসি পর্যন্ত পড়িয়েছেন। নাইনে উঠলে স্যার নিজের থেকেই আমাকে পড়ানোর অক্ষমতা প্রকাশ করেন।
কি এক ঝামেলা! এখন আবার নতুন একটা টিচার খোঁজো……কার এমন বারবার ভাল্লাগে, টিচার পাল্টাতে??………… একজন সুট করতে না করতেই আরেকজন!
তো যাইহোক……বাবা এখন এই মিডিয়া-সেই মিডিয়া এর মাধ্যমে টিচার খোঁজা শুরু করলেন। অলরেডি তিনজন টিচারের সঙ্গে দেখা করা শেষ। উপলব্ধি করলাম কেউই আমার ডিমান্ড ফুলফিল করতে সক্ষম নয়; একজন একটু বেশি কমার্শিয়াল, আবার একজন ইংলিশ ভার্সন পড়াইতে পারবেনা এবং আরেকজন যে কি পড়ায়, তা আমি কিছুই বুঝলাম নাহ। বাবা সেট করে দিল রিকোয়াইয়ারমেন্টস। লাগবে ঢাকা ভার্সিটির, ইংলিশ-ভার্সনের ম্যাথ-হাইয়ার ম্যাথ ইজিলি পড়াইতে পারবে নন-কমার্শিয়ালই এমন একজনকে; সপ্তাহে চার-দিন, দুই ঘন্টা, মাসে ৪০০০ টাকা। এক মিডিয়া বাবাকে দিলেন এমন একজনের নাম্বার। বাবা ফোন করলেন তাকে, এবং ঐদিন বিকালে তাকে আসতে বললেন। আমার এইদিকে মেজাজ গরম………খালি টিচারদের ইন্টারভিউ করে যাচ্ছি, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না!
বিকাল সাড়ে তিনটা কি ৪টা বাজে, বাসার ভেতর কলিংবেলের আওয়াজ। ভাবলাম, সেই স্যার মনেহয় এসে গেছে।
বাবা দরজা খুলে স্যারকে ড্র্ইং রুমে বসতে বললেন। আমি ঐদিকে ম্যাথ-হাইয়ার ম্যাথের বই নিয়ে আমার রুম থেকে বের হলাম। বাবা বললেন, ‘স্যার এসেছে, গিয়ে দেখ কেমন পড়ায়।’ আমি ড্রয়িং রুমে ঢুকেই দেখি একজন দাঁড়ি-তুপি-পাঞ্জাবি পরিহিত তরুণ! স্যারকে ঐ প্রথম দেখেই আমার মনে একটা কথা ধ্বনিত হলো, আর তা হলো, “আরে ভাই, এই হুজুর আবার আমাকে কী হাইয়ার ম্যাথ পড়াবে??” স্যারের লেবাস দেখেতো আমি একইসাথে হতাশ এবং রাগান্বিত। ভাবছিলাম, “এ কীভাবে আবার ঢাবিতে পড়ে?……………এইবার আমার অংকের কোনো ভালো টিচারই জুটবে না বোধহয়!”
সহস্র চিন্তা পাশে রেখে স্যারকে সালাম দিলাম। ওপাশ থেকে, স্যারও সালামের উত্তর দিলেন। পাশের সোফায় বসলাম। স্যার আমাকে আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। বললাম, “আমার নাম ফাহিম। ফাহিম ড্যানিয়েল।” স্যারকে আমার নাম বলার সাথে সাথেই চলে গেলাম পড়ায়। মনে মনে ভাবছিলাম, “দেখি, এই স্যার কি অংক পারে!” এই ভেবে স্যারকে ১টা কি ২টা অংক বুঝাতে বললাম। স্যার ভালোই বোঝালেন; কিন্তু আমার ‘আশানুরূপ’ বোঝানোটা হলো না। আমার আশা ছিল উনি কিছুই বুঝাতে পারবেন নাহ, আর আমিও সহজে তাকে বাদ দিয়ে দেব। কিন্তু, সেই ‘আশা’ নিরাশাই রয়ে গেল। আজ বড়ই আশ্চর্যজনক লাগে সেই ফাহিমের কথা ভেবে, যে কেবলমাত্র একজন প্রকৃত মুসলমানের লেবাস দেখে সেই মুসলমানের জ্ঞানকে প্রশ্ন করেছিল, তার শিক্ষাকে প্রশ্ন করেছিল!
তবে স্যার আমাকে ভালো অংক বোঝালেও, প্রথমদিন নতুন স্টুডেন্টকে বুঝাতে গিয়ে কিছুটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলেন; কথা অনেক আস্তে আস্তে এবং কম্পিতস্বরে বলছিলেন। অংক বোঝাতে বোঝাতে আধাঘন্টা চলে গেল। বাবা আসলেন ড্রয়িং রুমে। রুমে এসে স্যারের কাছে তার ঢাবির আইডি-কার্ড দেখতে চাইলেন। স্যার তাকে ঢাবির আইডি-কার্ডসহ ক্যাডেট কলেজের আইডি-কার্ডও দিলেন। তখন জানতে পারলাম যে, উনি একজন ক্যাডেট কলেজেরও ছাত্র; ফলে তার প্রতি আমার ইম্প্রেশনটা খানিক বেড়ে গেল। বাবা হাতে আইডি-কার্ড দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কি?” স্যার উত্তর দিলেন, “আঙ্কেল, আমার নাম জিহাদ।” স্যারের নাম শুনে আমি আরো বিরক্তবোধ করলাম। কয়েকদিন আগেই কিছু পরিচিত ‘জ্ঞাণী’ মানুষদের মুখে শুনেছিলাম জিহাদ আর জঙ্গিবাদ সম্পর্কে। তাদের কথা শুনে বোঝার উপায় ছিল না, যে দুইটা সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। ফলে, জিহাদ সম্পর্কে আমার একটা কুধারণা ছিল। তো, যাই হোক, ‘ভেরিফিকেশন টাইম’ শেষ হওয়ার পর বাবা স্যারকে যেতে বললেন। সাথে বাবা এও বললেন যে, “যদি ফাহিম তোমার পড়া বোঝে, তাহলে সামনের সপ্তাহ থেকে স্টার্ট কইরো”। স্যারকে বিদায় দিয়ে বাবা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “ও পড়াইতে পারে?” আমি বললাম, “না, ওতো ভালো না। বুঝাইতে পারে, বাট অনেক আস্তে আস্তে বলে, আবার কাঁপা গলায় কথা বলে।” বাবা বললেন, “ঠিকমতো বুঝাইতে পারে কি না, সেইটা বল?” আমি উত্তর দিলাম, “তা পারে, কিন্তু এরে দিয়ে চলবে না। আর কোনো ভালো টিচার নাই?” বাবা বলল, “এর কাছে আপাতত পড়। প্রথমদিন মানুষ একটু নার্ভাস থাকে, এইটাই স্বাভাবিক।পড়তে থাক।”
স্যার ২০১৮ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমাকে পড়ানো শুরু করলেন। স্যার বিকেল ৪টার সময় পড়াতে আসতেন। ভালোই পড়াতেন, যেকোনো অংকের একদম বেসিক থেকে পড়ানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু, তার এক অভ্যাস ছিল। সে আসরের নামায পড়ার জন্য পড়ার মাঝখানেই মসজিদে যেতেন। আমাদের বিল্ডিং-এর ছাদেই একটা মসজিদ আছে; ঠিক মসজিদ না, পাঞ্জেখানা। স্যারকে পাঞ্জেখানার ব্যাপারে আগত করার পর থেকে, তিনি ঐ পাঞ্জেখানায় নামায পড়তেন, কিংবা আমার স্কুলের সামনের মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে আসতেন। আর ঐ নামায পড়ার মধ্যকার সময়টুকু আমি একটু ‘লেইজার’ সময় কাটাতাম। স্যার নামায থেকে আসলেই আবার আগের মতো পড়তাম। এভাবেই এক-দুই সপ্তাহ আমাকে স্যার পড়ায়। পড়ানোর সাথে সাথে স্যারের পড়ানোর টাইমও বদলাতে থাকে। স্যার এখন আমাকে পড়ানো শুরু করলেন আসরের পর থেকে মাগরিবের পর অব্দি।
তারপরই একদিন হয়তো বৃষ্টি পড়ছিল, এমন সময় মাগরিবের আযান দিচ্ছে, স্যারকে নামাযে যেতে হবে। আমি স্যারকে বললাম, “স্যার, আজকে বাসায় নামায পড়েন?” স্যার বললেন, “না, আমি উপরের মসজিদে যাই।” বৃষ্টির মধ্যে নামায পড়ে আসার পর, আমি স্যারকে আবার বললাম যে, “আজকে তো বাসায় নামায পড়তে পারতেন, মসজিদে পড়ার দরকার কী?” স্যার আমার কথায় মৃদু হাসলেন। আমিও হেসে বললাম, “কেন স্যার, বাসায় কি নামায পড়া যায় নাহ?” স্যার তারপর আমাকে সোজাভাবে জানালেন নামাযের সম্পর্কে। জানালেন নামায কেন পড়বো। বোঝালেন কেন একজন পুরুষ মসজিদে গিয়ে জামা’আতে নামায পড়বে, কেন সে নারীদের মতো বাসায় নামায পড়বে না। স্যারের কথা শুনে বুঝলাম স্যার ইসলাম সম্পর্কে ভালোই জ্ঞান রাখেন। আসলে রাখবারই কথা; তার লেবাস দেখেতো এইটাই বোঝা যায়। স্যার কথা শেষ করে আবার আমাকে পড়ানোতে মনোনিবেশ করলেন।
পরের দিন স্যার আমাকে ছাদের পাঞ্জেখানায় মাগরিবের নামায পড়ার জন্য দাওয়াত করলেন। আমি একজন সাধারণ ‘নামে-মুসলমান’-এর মতো নানা অজুহাত দিতে লাগলাম, যাতে মসজিদে না যাওয়া লাগে। স্যার বললেন, “সমস্যা নাই, চলো। তিন-রাকা’আত নামায পড়তে বেশিক্ষন লাগবে না।” কে শোনে কার কথা? আমি ‘পরে যাবো, স্যার’ বলে স্যারের দাওয়াতকে নাকোচ করলাম। স্যার আর কথা না বাড়িয়ে নামাযের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন আর আমি দরজা লক করে দিলাম।
এভাবে টানা দুই-তিন দিন স্যার আমাকে নামায পড়ার জন্য দাওয়াত দেন। কিন্তু, আমি তার দাওয়াত প্রত্যেকবার নাকোচ করে ‘আরামে’ সময়টুকু কাটাই। “না, স্যার। আমি বাসায় বসে পড়ি!……স্যার, আমি বাসায় পড়ব। আপনি যান।……স্যার, আজকে ভালো লাগছে না, পরে”…………আরো যে কত অজুহাত?!!
এরপর থেকে স্যার আর আমাকে নামাযের দাওয়াত দিতেন না। আমিও ভাবতাম, “যাক, বাঁচা গেল!” কিন্তু, মনে মনে একটু খারাপও লাগত।
একদিন স্যার আমাকে প্রতিদিনের মতো পড়াচ্ছেন। আমি পড়ার মাঝখানে স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম, “স্যার, আপনার নামের অর্থ কি?” স্যার সম্ভবত উত্তর দিলেন, “জিহাদ অর্থ চেষ্টা, পরিশ্রম” তারপর আমি পাল্টা জবাব দিলাম, “কিন্তু, যারা জঙ্গি, তারা কেন বলে যে, তারা জিহাদ করে?” আমার প্রশ্নের খুব একটা ঘুছানো উত্তর দিলেন স্যার। এখন হয়তো স্যারের মতো ঘুছিয়ে উত্তরটা দিতে পারছিনা, কিন্তু উত্তরটা খুব যথাযথ ছিল বটে। স্যার হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে, এই বিষয় নিয়ে আমি কিছুটা কনফিউজড। ফলে, আমাকে জিহাদ সম্পর্কে এক সম্যক ধারণা দিলেন তিনি। আর সেই ধারণার বদৌলতে আজ আমি জিহাদ এবং জঙ্গিবাদকে আলাদাভাবে দেখতে পারি। স্যারের ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান দেখে আমি আবার অবাক হই। স্যারের বক্তব্য শেষে মাগরিবের আজান দিল। স্যার এইবার আমাকে বললেন, ‘চলো তাহলে মাগরিবের নামাযটা পড়ে আসি?” আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে অজু করে স্যারের সাথে গেলাম ছাদে।
এইভাবেই স্যারের কাছে অংকের সূত্রও শিখছি, আর ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে মাস’আলা সম্পর্কেও জানছি। একদিকে যখন স্যার আমাকে বোঝাচ্ছিলেন অ্যালজেব্রিক ইকুয়েশন, অন্যদিকে স্যার আমাকে জানাচ্ছিলেন নবীজির উপর কুরআন নাযিল হওয়ার সিচুয়েশন। স্যারকে একদিন দাড়ি রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। স্যার উত্তর দিলেন যে, দাড়ি রাখা একজন মুসলমান পুরুষের জন্য ওয়াজিব; শুধু সুন্নত না। তার সাথে তিনি আমাকে দাড়ি রাখার ফজিলত সম্পরকেও জানালেন। ভালোই লাগছিল জানতে নানা অজানা ও ভূল-জানা বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পেরে। তাও, ঐসময় নামায পাঁচ-ওয়াক্ত মসজিদে গিয়ে পড়তাম না; আলসেমি করে। স্যারের কথায় অনুপ্রেরিত হয়ে ও আমার বড় মামার আদেশানুযায়ী, ২০১৮ এর ২৪ রমজান থেকে আমি দাড়ি রাখা শুরু করি। যদিও আগে কখনো দাড়িতে খুঁড় দেই নাই, কিন্তু সেলুনে চুল কাটাতে গিয়ে বাবার কথামতো দাড়ি ট্রিম করে আসতাম। এইবারো, রমজানের ঈদের পর সেলুনে চুল কাটাতে নিয়ে গেল বাবা। কিন্তু এইবার আমি বাবাকে বললাম যে, “চুল কাঁটাও, কিন্তু দাড়ি কাঁটাইও না” বাবাও কিছুটা খুশি হলেন। ফলে, দাড়ি রেখেই দিলাম।
এইভাবেই আমি জিহাদ স্যারের কাছে প্রায় সাতমাশ টিউশন করি। ফাইনাল পরিক্ষায় ক্লাস নাইনে আমার সেকশনে প্রথম স্থান অধিকার করি, আর পুরো ক্লাস মিলিয়ে ১০ম স্থান। ম্যাথ এবং হাইয়ার ম্যাথ; দুইটাই ৮০+! পরিবারের সবাই খুব খুশি। আমার সাথে বাবার অফিসে দেখা করতে এসে স্যার আমাকে একটি বই গিফট করেন। বইটার নাম ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’। ড. শামসুল আরেফীন ভাইয়ের লেখা। এই বইটার নাম কিছু পরিচিত ভাইদের কাছে শুনেছি। তাছাড়া, জিহাদ স্যারও অনেকবার আমাকে এই বইয়ের ব্যাপারে বলেছেন, আর তার ঐসব কথা শুনে আমারো ইচ্ছা হয়েছিল এই বইটা পড়ার। শেষমেষ, স্যার নিজেই আমাকে এই বইটা দিলেন। স্যারের গিফট পেয়ে আমি তখন অনেএএএএক খুশি হয়েছিলাম!!!!
‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ আমার ‘শখে পড়া’ প্রথম বাংলা বই। বইটা যেখানেই যেতাম, সেখানেই নিয়ে যেতাম। এবং পড়তাম। বইয়ের প্রতিটা গল্প পড়তাম আর মুগ্ধ হয়ে শুধু ভাবতাম, “ইসলাম কত লজিক্যাল! ইসলাম কত ডাইন্যামিক!” ইসলাম সম্পর্কে যতই জানতাম, ততই ভালো লাগতো; ততই নিজেকে এক অসাধারণ মানসিক প্রশান্তির ভেতর, নিজের জীবনের মকসদকে আবিষ্কার করতে পারতাম।
ডিসেম্বর মাসের প্রায় অর্ধেকটা কাটালাম দাদাবাড়ি বরিশালেই। আর ওখানেই প্রায় অর্ধেকটা পড়ে ফেললাম ‘ডাবল ষ্ট্যাণ্ডার্ড’ বইটি। জানুয়ারিতে ঢাকা ফিরেই আবার স্যারের কাছে ফুল-উদ্দমে ক্লাস-টেনের পড়া শুরু করলাম।
আগে স্যার ছাদের পাঞ্জেখানায় গিয়ে নামায পড়ার কথা বললে যেইসব অজুহাত দিতাম, সেইসব অজুহাত আমার ‘জ্ঞানের ভান্ডার’ থেকে ক্রমেই দূরীভূত হতে শুরু করল; তবে সম্পূর্ণভাবে নয়। সম্পূর্ণভাবে হয়ে গেলে তো…………হতোই।
পরিবারে আম্মুই একা, যে আমার এই ট্রান্সফরমেশনে যেটুক যা সন্তুষ্ট। কিন্তু, সমস্যা ছিল বাবাকে নিয়ে। আমার দাদা অনেক বড় ‘মুমিন’ হলেও তার পুত্ররা সবাই ‘মোজলেম’(!) বাবা হয়তো ঐদিন আমাকে সেলুনে নিয়ে যাওয়ার পর ভেবেছিলেন, হয়তো তার পুত্র কিছুদিন দাড়ি রেখে আবার কামিয়ে ফেলবে। কিন্তু, প্রায় ৭ মাসের মতো হতে যাচ্ছে, আমি আমার দাড়ি রাখার ব্যাপারে অটল। কামাচ্ছি তো না-ই, বরং বাবাকে আরো দাড়ি রাখার জন্য হেদায়াত করছি।
এতোদিন আমি ‘মডার্ন সোসাইটি’ নামক গোলাপ ফুলের পাপড়ির ওপর দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলাম জীবন-নামক গাড়িটি, ইসলামের জিপিএস অনুযায়ী। ভেবেছিলাম হয়তো এভাবেই মুলায়েম এবং সাবলীল এক পথ ধরে চালিয়ে যাব আমার ইসলামিক জীবন। কিন্তু, আমার জীবন যে হয়ে উঠবে এই গোলাপের ধারালো কন্টকের আঘাতে জর্জরিত, তা একটিবারের মতোও আমি আন্দাজ করতে পারিনি। যারা জীবনের গাড়ি চালায় ‘মডার্ন সোসাইটি’র জিপিএস মান্য করে, তাদের ঐসব কাঁটাগুলো অতিক্রম করতে হয় না; আসলে তাদের ঐ কাঁটাওয়ালা পথে যাওয়াই লাগে না! কিন্তু, যারা এই একই গাড়ি চালায় ইসলামের জিপিএস নিয়ে, তাদের পার করতে হয় কাঁটাযুক্ত পথ, কারণ তাদের উদ্দেশ্য ঐফুলের পাপড়িতেই আরোহন করে বেড়ানো নয়। বরং, ঐফুলের গোঁড়ায় গিয়ে ‘মডার্ন সোসাইটি’ নামক গোলাপটিকে উচ্ছেদ করা, এবং তার পরিবর্তে বসানো আরেকটা ‘দ্বীন ইসলাম’ নামক গোলাপ ফুল।তবে এই নতুন গোলাপের থাকবে না কোনো কন্টক, হবে না কেউ ইসলামকে মান্য করে, জীবন চালাতে গিয়ে, অন্যায়ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত; সামাজিকভাবে ‘নিকৃষ্ট’।
যাই হোক। চলে যাচ্ছি, ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে। আমার বড় চাচ্চু বাবাকে ফোন করে বললো, আমাদেরকে নিয়ে নাকি তিনি রেস্টুরেন্টে খেতে যাবেন। বড় চাচ্চু আমাদের পুরো বংশে সবচেয়ে বেশী শিক্ষিত; ‘ওয়ার্ল্ডলি নলেজ’এর দিক দিয়ে আর কি। তার কথা অমান্য করার চিন্তা কেউ ভূলেও মাথায় আনে না। সকলেই তাকে পরম শ্রদ্ধা এবং অনুসরণ করে চলে। আম্মু কোনো একটা কারণে যেতে পারবে না। তাই, আমি, আমার ছোট্ট বোন আর বাবা মিলে চাচুর বাসায় গেলাম, ঐখান থেকে গাড়িতে করে যাবো সবাই ধানমন্ডির এক নামকরা রেস্টুরেন্টে।
ঢাকার জ্যাম পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম সেই রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টে ছিল প্রচণ্ড ভীর! চাচু রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে ডেকে একটা টেবিলের জোগাড় করলেন। সবাই বসলাম টেবিলে। ওয়েইটারকে খাবারের অর্ডার দেওয়ার সাথে সাথেই, মেনু নিয়ে কিচেনের দিকে জোরপায়ে এগিয়ে গেল ওয়েইটার। খাবার যতক্ষন না আসছে, ততক্ষন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন চাচু। আমাদের বংশের কথা, দাদার কথা, তার যৌবনকালের কথা, প্রথম ঢাকায় আসার কথা ইত্যাদি ইত্যাদি। সবাই মন দিয়ে শুনছিলাম তার কথা। অমনি হঠাৎ আমার মুখের দিকে চেয়ে চাচু প্রশ্ন করলেন, “ফাহিম কি তাহলে দাড়ি রাইখে দিবা?” আমি বললাম, “জি,হ্যাঁ।” চাচু আবার পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “কেনো?”। আমি জানতাম যে, আমি যদি তাকে তখন ধর্মীয় কারণ দেখাতাম, তাহলে সবার সামনে আমাকে ‘উগ্রবাদী’ বানিয়ে ছাড়ত। তাই, উত্তর দিলাম যে, “আমি যে পুরুষ, এইটার চিহ্ন আমার দাড়ি”। চাচু মাথা নাড়ালেন। কিছু বললেন না। যাক, সস্তি পেলাম; হাঁপ ছেড়ে বাঁচা গেল!
চাচুর কাছ থেকে বাঁচতে পারলেও, বাবার কাছ থেকে বাঁচা তা ছিল কঠিন। আমার বাবা ধার্মিক না, কিন্তু তাই বলে যে তিনি আমার ধর্ম পালনকে ছোট করবেন, তা মাথায় এসেছিল; কিন্তু তার সীমা বোঝার ক্ষমতা আমার ছিল না।
বাবার উপস্থিতিতে, আম্মুর সাথে ইসলামের বিধি-বিধান নিয়ে কোনো কথা বললে, কিংবা কাউকে ইসলামের কোনো বিষয়ে আইডিয়া দিলেই, বাবা হুট করে বলে উঠত, “বাঁচলে শহিদ, মরলে গাজী”। যদিও আসল উক্তিটা ছিল, “মরলে শহিদ, বাঁচলে গাজী”, কিন্তু তাও বাবা এই কথাটাই বলত। আমি প্রথম প্রথম হেসে-খেলে কথাটা উড়িয়ে দিলেও, পরে আর এই কথা শুনতে আমার ভালো লাগছিল না। একই কথা বার বার কারই বা ভালো লাগে? তাও আবার যদি হয় বিদ্রূপপূর্ণ ভূল বাণী?
এইভাবেই একদিন বাবা ফোনে কথা বলছিল তার এক মামার সাথে। বাবা এবং উনি সমবয়সী হওয়ায় ‘তুই’ করে সম্বোধন করছিল তারা। বাবার ঐমামার আগের অনেক খারাপ ইতিহাস রয়েছে; পথ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল উনি। এখন আলোর পথ খুঁজে পেয়েছেন। তাই, নিজের ভূল বুঝতে পেরে, নিয়মমাফিক তাবলিগে অংশগ্রহণ করছেন তিনি। ইসলাম অনুযায়ী জীবনযাপন করার চেষ্টায়ব্রত আর কী। বাবার সাথে ফোন-আলাপের এক পর্যায়ে বাবা বললেন, “আরে মামা, তুমি তো জান্নাতের টিকিট হাতে পাইয়া গেসো। মাইয়ে-পোলার খবর নাই। তাবলীগ কইরা বেড়াও?!” আমি কথাটা শুনে বেশ মনঃক্ষুণ্ণ হলাম। ফোন-আলাপ শেষ। আমি বাবাকে এই নিয়ে কিছু বলবো বলে এগোচ্ছিলাম, অমনি বাবা বলল, “এই তুই ফেইসবুকে এইটা কী পোস্ট দিসস? ডিলেট কর!” আসলে আমি একজন উকিলের, আমাদের দেশের দুর্নীতির ব্যাপারে একটা লাইভ শেয়ার দিয়েছিলাম আমার প্রোফাইলে। বাবার কেন জানি লাইভটা পচ্ছন্দ হলো না। তাই, আমাকে ডিলেট করার জন্য প্রেসারাইজ করলেন। আমার স্বাধীনতার উপর কেউ এইরকম জোর-জবরদস্তি করলে আমি অনেক রেগে যাই; যদিও এখন আগের থেকে এখন অনেকটা কমেছে; দ্বীনের পথে আসার পর থেকে সবর করতে শিখেছি………সবই আল্লাহ্র ইচ্ছা। তা আমি ঐপোস্ট ডিলেট করবোনা বলে বাবার সাথে রীতিমত একটা ‘যুক্তিবাদী’ ঝগড়া শুরু করে দেই। কথা কাঁটাকাঁটির এক পর্যায়ে হঠাৎ বাবা বলে উঠলেন, “তুইতো জামাত-শিবির করোস!!!” আমি বললাম, “এইখানে জামাত-শিবির আসলো কোত্থেকে?” তারপর বাবা আরো একটি কথা ছুঁড়ে দিলেন আমার মুখের উপর, যা বিঁধলো আমার হৃদয়ের ঠিক মাঝখানে; যেই বাণী আমার কান ভেদ করে, মস্তিস্কে গিয়ে সজোরে বাড়ি খেল,“দাড়ি রাইখা জঙ্গি হইসে!”
মানুষের মুখে আমরা অনেক কথা শুনি, কিন্তু সবার কথায় আমরা কান দেই না। যতই ভালো কাজ করো আর খারাপ কাজ করো, আশেপাশের লোকজন তো খুঁত ধরবেই, কটু কথা বলবেই। কিন্তু, যখন কোনো ভালো কাজের বিনিময় হিসেবে, নিজের অত্যান্ত আপনজন এবং প্রিয় মানুষদের কাছ থেকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপআচ্ছন্ন কথা শুনতে হয়, তখন আসলেই বুকটা নিস্তব্ধ হয়ে যায়, শুধু চোখ দিয়ে বয়ে যায় অঝরে অশ্রুর বন্যা আর শিহরিত হয়ে ওঠে ক্ষত-বিক্ষত মন। আমিও আমার চোখকে আর সামলে রাখতে পারলাম না, চোখ ছেঁড়ে দিল তার বারি; দুঃখের বারি, হৃদয়ের বহু কষ্টের বারি। আম্মু আমার কান্নার আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে গেলেন ঘটনাস্থলে; আমার কাছ থেকে ঘটনা শুনেই বাবাকে অনেক কিছু বললেন আম্মু। আমি চলে আসলাম আমার রুমে; বাথরুমে গিয়ে আমার চোখ আরো পানি ঝরাল…………মনে হচ্ছিল যেন এই অশ্রু আর শেষ হওয়ার নয়।
সারারাত শুধু ভাবছিলাম, “দাড়ি রাখলে আমি জঙ্গি হয়ে গেলাম কি করে? আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে জামাত-শিবির হলাম কীভাবে? আমি তো কোনো দল সাপোর্ট করি নাহ?!” সারারাত মিলাতেই পারছিলাম না, বাবা কি বলল, আর কি তার ব্যাখ্যা। এইভাবেই মিল খোঁজার অভিপ্রায়ে চোখের উপর নেমে আসলো ঘুম।
পরের দিন, স্যারকে জানালাম ঘটনাগুলো। এখনো স্যারকে আমার সব ‘ঘটনা’ জানাই। স্যার আমার ঘটনা মন দিয়ে শুনলেন। ঘটনা সম্পূর্ণ শোনার পর, স্যার আমাকে সবর করতে বললেন। তিনি আমাকে সামনে আসা আরো অনেক জটিলতার এক আনুমানিক ব্যাখ্যা দিলেন। আমি সেই ব্যাখ্যা অতটা গ্রাহ্য করলাম না, যদিও পরে দেখলাম তিনি প্রায় অনেকাংশেই সঠিক অনুমান করেছেন।
কুরবানীর ঈদ। দাদাবাড়ি ঈদ করব। ঈদের প্রায় ১ সপ্তাই আগে গিয়ে পৌঁছলাম বরিশালে। আগের থেকে আমার মধ্যে কয়েকটা চেঞ্জ লক্ষ্য করছে আমার ফুপাতো-চাচাতো ভাইয়েরা। নামায পড়া ধরেছি, দাড়ি রেখে দিয়েছি আর ইসলাম নিয়ে অনেককেই আবার তালিমও করা শুরু করেছি।
একদিন, আমি, আমার চাচাতো ভাই জামিল ভাইয়া, নাদিম আর ফুপাতো ভাই হাসিব ড্রইয়িং রুমে বসে গল্প করছিলাম। এরই মধ্যে বাবা আসলো ড্রইয়িং রুমে। বাবা এসেই বলা শুরু করলেন, “ও মা, হুজুরে দেখি গল্প করে”। আগে আমাকে কেউ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে হুজুর বললে, অনেক রাগ করতাম। কিন্তু, এখন গর্ববোধ হয়…………নিজেকে একজন হুজুর হিসেবে রিপ্রেসেন্ট করি। নবীদের বংশধর আলেমরা, হুজুরেরা। নিজেকে নবীদের বংশধরের ভেতর অন্তর্ভুক্ত রাখতে পেরে এখন নিজেকে আরো খুশ-নসিব মনে হয়।তো, যথাযথভাবে বাবা এবারো এসেছেন, সবার সামনে আমার টিপ্পনী কাঁটতে। আর কাঁটলেনো বটে। আর আমি, হতভাগার মতো তার বিদ্রুপের জবাব দেওয়া শুরু করলাম। এমনসময়, আমাকে রাগিয়ে তোলার জন্য বাবা বললেন, তার নাকি কুরবানি দেওয়া অমানবিক লাগে(নাঊযুবিল্লাহ)।বাবার কথা শুনে জামিল ভাইয়া বললেন, “এইগুলা কি বলেন, চাচু?” কথা শুনে, রুমে আম্মু এসে বাবাকে বললো, “তা,তুমি কোন ধর্ম পালন করো?” বাবা উত্তর দিলেন, “মানবধর্ম”। আমি এইবার জিজ্ঞেষ করলাম, “মানবধর্ম কি?” বাবা বললেন, “ মানুষকে সাহায্য করা, মানুষের সুখদুঃখে পাশে থাকা” আমি উত্তরে বললাম, “আজকে দাদাকে একজন মাইরা ফেললে, তুমি কি থাকতে পারবা সেই লোকের সুখদুঃখে?” বাবা কোনো উত্তর দিল না। আমি আরো বললাম, “যেই ধর্মের কোনো লিমিট নাই, তা আবার মানুষ কেমনে মানে?” বাবার সাইড থেকে কোনো উত্তর পেলাম না।
বিকেলবেলা বাড়ির সামনে একজন গরিব মহিলা এসেছিল; বাবা তাকে উলটাপালটা বলে তাড়িয়ে দিলেন……………‘মানবধর্ম’ পালন করলেন হয়তো!
এইবছরই, ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে বোধহয়। আমি আর বাবা রিক্সায়। বাবা আমাকে সম্ভবত টাকা দিয়ে কি জানি কিনে আনতে বললেন। কিন্তু, জিনিসটার দাম বাবার দেওয়া টাকার থেকে একটু বেশি। আমি তাই বাবাকে “না, কিনতে পারবো না এই টাকা দিয়ে” বললাম। ও মা! অমনি বাবা বলে উঠল, “এইগুলাতো জিহাদি কথা-বার্তা!” ঐদিনও বুঝি নাই, এখনো বুঝি না………কম টাকা দিয়ে একটা বেশী মুল্যের জিনিস কিনতে না পারার কথা স্বীকার করা কি জিহাদের অন্তর্ভুক্ত?………………কেউ উত্তর জেনে থাকলে, দয়া করে আমাকে জানাবেন।
অযৌক্তিকসব ‘যুক্তি’ দিয়ে আমাকে হেয় করা হতো প্রায় সবখানেই। বাসায় মেহমান আসলো, আমার দাড়ি দেখে অবাক হল। ব্যাস! কাম সারসে! হয় আমাকে ট্যাগ দেওয়া হবে ‘জঙ্গি’ অথবা ‘জিহাদি’, কিংবা হয়ে যেতে পারি আমার নিজের দেশেরই দুশমন, “রাজাকার!”। দাড়ি নিয়ে রয়েছে আরো কটোক্ষ। ‘দাড়িদা এইদিক যায়, ঐদিক যায়; দেখায় ভালো! বুইড়া দাদা! মসজিদের তো ইমাম হবি; পড়ালেখা করা লাগবে কি করতে?”, “কত দেখলাম এইসব টেডি হুজুর?!?!” ইত্যাদি ইত্যাদি……এছাড়াও শুনছি এমন সব বাণী যা বললে ইমান চলে যাওয়ার সম্ভবনা আসে ৯৯%!
আমাকে দ্বীনের আলোকিত পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য, আমার ওপর চালানো হতো ‘উইডাউট নোটিসে’ মুখনিঃসৃত বিদ্রুপের বোমা; এই বোমা হৃদয়ের উপর বরাবর পড়ত এবং আমার সতেজ মনকে তছনছ করে দিত…………মনকে আবার ঠিক করার পর, কিছুদিন পর আবার পড়তো আরেক ব্যাঙ্গ বোমা; হয় সেই বোমা আগেরতার থেকে বেশী ধ্বংসাত্মক; কিংবা আগের তার থেকে বেশী তুচ্ছার্থক। নামাযের পাটিতে বসে কেঁদেছি দুঃখ, আল্লাহ্র কাছে চেয়েছি এসকল অরাজকতা সহ্য করার ক্ষমতা।
আমার এসএসসির শুরু হতে কেবল এক মাস বাকি। সিলেবাস শেষ হয়েছে আরো এক মাস আগে। এখন শুধু রিভিশন দিচ্ছি। স্যার নিয়মিত এসে ম্যাথ-হাইয়ার ম্যাথের মডেল টেস্ট করাচ্ছেন।
একদিন জ্যামিতির বোর্ড কোয়েশ্চেন সল্ভ করছি। স্যার আমার পাশে বসে। অংক করার সময় স্যার আমাকে বললেন, ‘ফাহিম, শোনো………….এসএসসি পরীক্ষায় কিন্তু কোনো চিটিং করা যাবে না” আমি চোখটা কপি থেকে উঠিয়ে স্যারের দিকে বিস্ময়ের সাথে তাকাতেই স্যার আবার বললেন, “পরীক্ষা সৎভাবে দিতে হবে” আমি স্যারের কথায় আপত্তি জানিয়ে বললাম, “স্যার, আমিতো নকল করি না……বন্ধুদের কাছ থেকে মাঝে মধ্যে একটু এমসিকিউ দেখি…এই” স্যার বললেন, “এটাও করা যাবে নাহ!” আমি স্যারকে বললাম, “এইভাবেতো কখনো পরীক্ষা দেই নাই,স্যার……তাছাড়া এভাবেতো আমি অতো ভালো রেজাল্ট করতে পারবো না” স্যার আমাকে তারপর বোঝালেন যে, পরীক্ষার হলে যেকোনো ধরণের চিটিং করা মানেই পুরা এসএসসি সার্টিফিকেট হারাম বানিয়ে ফেলা। রেজাল্ট ভালো না আসলেও আমি যেই রেজাল্টটা পাবো, ঐটা আমার সম্পূর্ণ নিজের কৃতিত্ব। আর যেহেতু এসএসসি এর সাথে চাকরির সম্পর্ক, ফলে এসএসসি হারাম বানালে, চাকরিও হারাম।আর চাকরি হারাম মানে, জীবন হারাম। স্যারের কথায় প্রথম বিরক্তবোধ হলেও, পরে বুঝতে পারলাম, “আসলেইতো!” স্যারকে আবার প্রশ্ন করলাম, “স্যার, আমি না হয় কারোটা দেখলাম না, জিজ্ঞেস করলাম না……কিন্তু, কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে?” স্যার বললেন, “এইটাও করা যাবে না!” আমি স্যারকে বললাম যে, “স্যার, আমাদের স্কুলের অনেক ছেলে আছে। ওদেরকে হেল্প না করলে, ওরা ডিস্টার্ব করে, মারধরও করতে পারে” স্যার বলল, “বিশ্বাস রাখ! এরকম কিছু হবে না”।
স্যার আমাকে পড়া শেষ করিয়ে চলে গেলেন। আমি স্যারকে বিদায় জানিয়েই গেলাম আম্মুর কাছে। আম্মুকে বললাম যে, “শোনো। আমি কিন্তু পরীক্ষায় কোনো চিটিং করবোনা, নিজের থেকে পরীক্ষা দিব। অতএব, রেজাল্ট খারাপ হলে, আমাকে কিন্তু কিছু বলতে পারবা নাহ” আম্মু বলল, “এ কেমন কথা? একটা-দুইটা এমসিকিউতো আমরাও বন্ধুদের কাছ থেকে দেখতাম……” আমি উত্তর দিলাম, “তা আমি জানি না………আমাকে হালালভাবে এসএসসি দিতে হবে!” বাবা রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরে আসলেও একই কথা বললাম। বাবাও আমার সততার বিরুদ্ধাচরণ করল। বললেন, “এইভাবেতো ফেল করবি! স্কুলের ছেলেদের পরীক্ষার খাতা না দেখাইলে, বাইন্দা পিটাইবে তোরে!” আমার বন্ধুদেরও আগে থেকে বলে রাখলাম এই কথা। সবাই খুব মনঃক্ষুণ্ণ হল।বন্ধুদের মধ্য হতে নাবিল আমাকে বলল, “ফাহিম, এইভাবে তুই হয়তো জিপিএ-৫ পাবি, কিন্তু গোল্ডেন আসবেনা” নাবিল অনেক বুদ্ধিমান একজন ছেলে। ওর মুখে এমন কথা শুনে আমার বুকটা ডুকরে উঠল। বিকেল বেলায় স্যার আসলেন। তার সাথে এই নিয়ে আবার আলাপ করলাম। স্যার বললেন, “এই গোল্ডেন দিয়ে কী আসে যায়, যদি এটা দিয়ে তোমার আখিরাত নষ্ট হয়?” আমি আবার সস্তি পেলাম। মনকে স্থির করলাম, “না! আর কারো কথায় ভড়কে যাওয়া চলবে”
এসএসসি দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ কারোরটা দেখে দেখে পরীক্ষা দিলাম না, কাউকে দেখালামো না। কিন্তু, ফিজিক্স পরীক্ষায় আমি সৃজনশীল লিখতে গিয়ে হাত কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়, বিচার-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে পেছনের ছেলেটার কাছ থেকে একটা (গ) নম্বর দেখে দেখে লিখলাম।ফিজিক্স পরীক্ষা প্রচন্ড কঠিন হয়েছিল, কি প্রশ্ন করেছিল, কিছুই ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছিলাম না। তার মূল কারণ, ইংলিশ ভার্সনের জন্য অদক্ষ ট্রান্সলেটরের এর দ্বারা বাংলা থেকে ইংলিশে প্রশ্ন রূপান্তর করা।পরে বাসায় এসে জানলাম, ঐ উত্তরটাও ভূল হয়েছে। আবার ২টা পরিক্ষায় আমার পেছনে বসা, বন্ধু সাদিদ আমার হাত-পা ধরাধরি করে ৩-৪টা এমসিকিউ জানল। মানে, সততা তো গেলোই গেলো, অসততার কোনো ফলও পেলাম না। স্যারকে এসে, এই ঘটনা বললাম, স্যার বললেন, “এখন তো কিছু করার নাই, আল্লাহ্র কাছে মাফ চাও। আর বাকি পরীক্ষাগুলো ঠিকমতো দাও।” আমি ভাবলাম, “যেহেতু আমার ফিজিক্সে ঐ দেখা উত্তরটা ভূল হয়েছে…তাহলে হয়তো আমার পরীক্ষা এখনো হালালই আছে।
কিন্তু,………….”।আল্লাহ ভালো জানেন।
করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের রেজাল্ট দিলো একমাস পর। আলহামদুলিল্লাহ গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি! যখন কম্পিউটারের সামনে রেজাল্ট তা আসলো, আমি চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে আম্মুকে বললাম, “আম্মো!!!!আমি গোল্ডেন পাইসি!!! আল্লাহ!!! আমি গোল্ডেন পাইসি!!!” কত খুশি, কত আনন্দ। পরিবারের সবাই হতভম্ব! আম্মুতো খুশিতে কেঁদেই দিলেন। বাবা আগে আমাকে অনেকবার বলতেন, “জিহাদ তোরে ব্রেইনওয়াশ করসে; এরপর তোরে জঙ্গি বানাবে…ইত্যাদি ইত্যাদি”। আর এখন আমার এসএসসি-এর রেজাল্ট দেখে, বাবা স্যারকে ফোন দিলেন, তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। আমি বাবার কথায় অনেক খুশি হলাম। নিশ্চয়ই ঐদিনটি ছিল আমার জীবনের কয়েকটা আনন্দময় দিনগুলির মধ্যে একটি। এখন আমি গর্বের সাথে বলতে পারি, “আমার এসএসসি রেজাল্ট, আমার কৃতিত্ব!” কিন্তু, ফিজিক্স এক্সামের কথা উহ্য রেখে………
এসএসসি শেষ, এখন কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রতিযোগিতা; নটরডেম না হয় সেন্ট জোসেফ! এই দুই কলেজের সম্বন্ধে আগে থেকে ভালো আইডিয়া থাকলে, কখনোই নিজের থেকে ভর্তি হওয়ার জন্য উৎসুক থাকতাম নাহ। স্যারকে এই বিষয়ে জানালাম। স্যার আমাকে বললো, “তুমি কি এইখানে পড়তে চাও?” আমি বললাম, “চান্স হলেই না পড়ব” স্যার এইবারো আমাকে সৎভাবে পরিক্ষা দেওয়ার কথা বললেন। এইটা আমার দ্বিতীয় সুযোগ, সততার পরিচয় দেওয়া। কিন্তু, এক্সাম হবে নাকি অনলাইনে; চাইলেই সহজে গুগল থেকে সব উত্তর বের করে ফুল মার্কস পাওয়া যায়। বাবা অনলাইন এক্সামের কথা শুনে আমাকে এই রকমই বুদ্ধি দিলেন। আমি আবার তার সাজেশনের বিরুদ্ধাচরণ করলাম। “না, এইবার আর অসৎ হওয়া যাবে না!”
পরীক্ষা হলো। আলহামদুলিল্লাহ্। সম্পূর্ণ সৎভাবে পরীক্ষা দিলাম। কয়েকদিন পর রেজাল্ট দিল। চান্সও পেলাম। এখন আমি নটরডেমিয়ান। এখন হয়তো বলতে পারবো, “কলেজে চান্স পেলাম, নিজের যোগ্যতায়।”
স্যারকেও জানালাম। স্যার খুশি হলেন আমার সততার কথা শুনে।
কলেজে ভর্তির জন্য সব জরুরী কাগজ নিয়ে যেতে হবে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম পাঞ্জাবি পড়ে যাবো। আমি কয়েকদিন আগে থেকেই তখন পাঞ্জাবি পড়া শুরু করেছি; নবীজীর সুন্নত পালন করার চেষ্টা করছি আর কী! বাবা কলেজে যাওয়ার আগের রাতে আমাকে বললেন, “আমি যেই ফুলহাতা শার্ট কিনসিলাম, ঐটা পড়িস” আমি বললাম, “না, আমি পাঞ্জাবি পড়বো!” বাবা রেগে গেলেন। বললেন, আমি যদি পাঞ্জাবি পড়ি আমাকে গেটের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমাকে নাকি জঙ্গি বলে আটকায় রাখবে। আগেই বলেছি, আমার স্বাধীনতার ওপর কারো জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ আসলে, আমি আমার চোখ দুটো সামলে রাখতে পারি না। অশ্রু পড়ছে আমার টেবিলে টুপটাপ। বাবা বলছিলেন যে, আমার সাথে কালকে যাবে না, যদি আমি পাঞ্জাবি পড়ি। “এত ঘৃণা, এত ধিক্কার……আমার নবীর সুন্নতের উপর?” এই ভেবে আমার চোখ যেন শরীরের সব রক্ত অশ্রু বানিয়ে, ঝোরে চলেছে অঝরে। বাবা এরপর আমার কাছে এসে, ডকুমেন্টসগুলো গুলো চাইলেন। বললেন, “এইগুলা এখন ছিঁড়ে ফেলব……যদি তুই কালকে শার্ট-প্যান্ট পড়ে না যাইস”। আমি তাকে আটকালাম নাহ। বললাম, “ভালোভাবে ছিঁড়বা, আমিও এই কলেজে পড়তে চাই না” বাবা নিয়ে গেলেন। কোনোভাবেই সে আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারছেন না। এখন ব্যাবহার করলেন এমন এক অস্ত্র, যা দ্বারা বাবা সহজেই আমাকে তার কথা মান্য করাতে সক্ষম হবেন। জিহাদ স্যারকে ফোন দিলেন বাবা। ঘটনা বললেন। স্যারও আমাকে সাপোর্ট করল। কিন্তু, তাতে কি বা যায় আসে? স্যারকে জোর করা হলো, যাতে তিনি আমাকে ফোন দিয়ে শার্ট-প্যান্ট পরতে বলে। স্যার পরক্ষণেই আমাকে ফোন দিল। আমি কল রিসিভ করে স্যারের সাথে কুশল-বিনিময় করলাম। পরে স্যার আমাকে বললো, “ফাহিম, একটু আগে আঙ্কেল আমাকে ফোন করল। তুমি আপাতত শার্ট-প্যান্ট পরে যাও। তুমি তো জানো, আমাদের সমাজের ব্যাপারে। এই সমাজের কাছে পাঞ্জাবি-তুপি-দাড়ি হলো নিকৃষ্ট। নবীর-সুন্নত বলে তারা এগুলো অবজ্ঞা করে” ।আমি তখনো কাঁদছিলাম। স্যারকে বললাম, “স্যার, কালকে না হয় গেলাম। পড়ে তো আমাকে দ্বীনের আরো অনেক অংশে ছাড় দিতে প্রেসারাইজ করবে, বাঙালি ট্র্যাডিশনাল ‘ফিতনা’মার্কা বিয়েতে যেতে বাধ্য করবে!” আমি কয়েকদিন আগেই আমার ফ্যামিলিতে এই কথা প্রকাশ করি যে, আমি বাঙালি ট্র্যাডিশনাল ‘ফিতনা’মার্কা বিয়েতে কখনো যাবো নাহ। এই বাঙালিয়ানা বিয়ে আমার কাছে ঠ্যকে ‘সামাজিক অশ্লীলতা’র এক জঘন্য অনুষ্ঠান এর মতো।স্যার আমাকে আচ্ছাস দিলেন, “না, এমনটা কখনো হবে নাহ। আমি কি চুপ করে থাকবো?!” আমি “ঠিকাছে” বলে, সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।
কলেজে গেলাম ফুলহাতা জামা পরে আর জিন্স পরে। ঐখানে দুই-তিনজন এসেছিল পাঞ্জাবি পরে, কিন্তু আমি পরতে পারলাম না। বুকে প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে খানিকক্ষণ চেয়ে রইলাম তাদের পাঞ্জাবির দিকে; বড়ই হতাশ হলাম।
আগেই বলেছি, আমি ট্র্যাডিশনাল বাঙালি বিয়ের সম্পূর্ণ বিরোধ করি। বাসার সবাই জানে, আমাকে কোনোভাবেই কোনো ফিতনা-মার্কা বিয়েতে নেওয়া সম্ভব না।
এক শুক্রবার দুপুর বেলা বাসায় আসার পর, বাবার মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো। বড় চাচ্চুর ম্যাসেজ। মেসেজে ইংলিশে লেখা, “আজকে রাত ৮টায় একটা বিয়ে এটেন্ড করতে হবে। ফাহিমকে সাথে নিয়ে এসো”। সম্পূর্ণ মেসেজ বাবা পড়ে শোনালেন। আমার এখন প্র্যাক্তিক্যালস এর পালা। বাবার পারমিশন নিয়ে রিপ্লাই দিলাম ইংলিশে, “ফাহিম কোনো প্রকার বিয়ে বা জন্মদিনে এটেন্ড করতে ইচ্ছুক নয়” মেসেজ ছুঁড়ে দেওয়ার পরই হালকা ভয় কাজ করল মনে………… “কি রিপ্লাই দেবেন, চাচু?”
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পোহাল। চাচুর কোনো পাল্টা রিপ্লাই এখনো আসেনি। ভয় আরো বেড়ে গেল, এ মনে হয় যেন এক তীব্র ঝড়ের পূর্বাভাস, ঠিক ঝড় হওয়ার আগমুহূর্ত; নিস্তব্ধ এক পরিবেশ।
এই ঘটনার এক সপ্তাহ পর, আমি চাচুর বাসায় গেলাম বাবার সাথে; ইলুস্ট্রেটরের কাজ শিখতে। জামিল ভাইয়াও ছিলো, বাড়ির কেয়ারটেকার সাগরের সাথে নুডলস রান্নায় ব্যাস্ত। আমি ইলুস্ট্রেটরের কাজ শেষ করে ছুট দিলাম গ্যারেজের রান্নাঘরে। দেখলাম জামিল ভাইয়া নুডলস ঢালতে ব্যাস্ত। আমি, সাগর আর জামিল ভাইয়া এই নিয়ে হাসাহাসি করছিলাম। ঝড়ের বেগে উপর থেকে নিচে নামলেন চাচু। সালাম দিলাম। সালামের উত্তর না দিয়েই, আমাকে সোজা প্রশ্ন করলেন চাচু। “তোমার দাদা কি নামায পড়ে না?”, আমি উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ”। “তোমার দাদার বাপে কি নামায পড়ত না?”, আমি আবার উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ”। “তোমার বাপে কি নামায পড়ে না?” আমি আবার একই উত্তর দিলাম। তাইলে তুমিও নামায পড়বা, তোমার অতো দ্বীন প্রচার কইরে বেড়ানো লাগবেনা……… দ্বীন প্রচারের কাজ যাকের নায়েক করবে, তোমার এইসব করা লাগবেনা………”ইসলাম নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করলে মানুষ জন্গি হয়ে যায়”। সবার সামনে এইসব কথা ফুল-উদ্দমে আমাকে বলে গেলেন চাচু। আমি কিছুক্ষণ স্তব্ধনয়ন দুটো নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম চুলার জ্বলন্ত আভার দিকে; যেন ঐ আগুনেই জলজ্যান্ত পোড়ানো হচ্ছে আমাকে; আমার ইসলামকে; আমারই চোখের সামনে। কিন্তু আমি স্তব্ধ, চিরশান্ত। একটুপরে…… যা পূর্বে ঘটে গিয়েছিল, তা সবাই মন থেকে মুছে, আবার মন দিলাম নুডলস রান্নার দিকে। তালে তালে নুডলসে মসলা দেয়নি সাগর। সাগরের হাত থেকে খপ করে মসলা নিয়ে নুডলসকে অখাদ্য হওয়া থেকে রক্ষা করল জামিল ভাইয়া। এরই মধ্যে আরো ৫ প্যাকেট মসলা নিয়ে হাজির বাড়ির আরেকজন কেয়ারটেকার বাশার আংকেল। চাচু নাকি তাকে পাঠিয়েছিল বাজারে, মসলা কিনে আনতে। তখনই আবার আবির্ভাব ঘটল চাচ্চুর। নুডলস ঠিকমতো রান্না হয়েছে কি না, নেড়েচেড়ে দেখছেন চাচ্চু। নাড়াচাড়া শেষ না হতেই, জামিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চাচ্চু বললেন, “জামিল, শোনো। আজকে আমি অনেক খারাপ একটা স্বপ্ন দেখসি। দেখি কি, আমি, আব্বা, ফাহিম আর ওর বাপ। সবাই আমরা বাড়ির মসজিদে নামায পড়তে আসি। হঠাৎ পুলিশ আইশা আমাদের সবাইরে ঘেড়াও করল। আমি অমুক রাজনীতি করি বইলে আমারে ছাইড়ে দেল। আর ফাহিমরে যে ওরা কি করসে, তা আমি বলতে পারি নাহ!”। জামিল ভাইয়া কিছুই বললেন না। আমিও চুপ করে আছি। ” আমি যেই স্বপ্ন দেখি, জামিল……এইগুলা কিন্তু অনেক সিরিয়াস! অনেকসময় কিন্তু আমার স্বপ্ন সত্য হইয়ে যায়। তাই, মাথায় রাইখো কথাটা” বলে আবার নিরুদ্দেশ হলেন চাচু।
চাচুর সামনে ছিল বাশার আংকেল। বাশার আংকেলকে চাচু দেখামাত্রই বললেন, “বাশাআআআর!!” বাশার আংকেল উত্তর দিলেন, “জি, স্যার?” “কালকে আমি উপরে ওঠার সময়, গ্যারেজের থেকে শুনসি, তুমি সাঈদীর ওয়াজ চালায় রাখসো!” “না, স্যা..”
“আর যদি একবার আমি শুনসি তুই সাঈদীর ওয়াজ শোনসো, এক্কেবারে মোবাইল আছাড় মাইরা ভাইংগা ফেলমু!! সবাই ইসলাম ফুটাও?
তুপি-দাড়িওয়ালা সব লোক বেইমান, টাউট!(নাউজুবিল্লাহ)”। এইবার আর ঐখানে দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না,কাউকে কিছু না বলে মুখটা ঘুড়িয়েই হাঁটা ধরলাম বাসার উদ্দেশ্য। মুখ ঘুড়িয়েই দেখলাম বাবা দাড়িয়ে আছে। বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ” কি হইল? কই যাও?” আমি উত্তর দিতে পারলাম না, শুধু এগিয়ে গেলাম দুপায়ে।কম্পিউটার অপারেটরকে বলে আসলাম, “ভাই, গেলাম”। যখন হাঁটছিলাম, মনে হচ্ছিল যেন আমার প্রত্যেকটা পদাঘাতে চৌচির হয়ে যাচ্ছে মাটি। বাড়ির গেটে ছিল রাশেদ আংকেল। আমাকে দেখেই বলল, “ফাহিম, কই যাও?”
উত্তর দিতে পারলাম না। এগিয়ে চললাম। চলার পথে মাথায় আসছিল কত চিন্তাভাবনা, কত মন্ত্রনা, কত যন্ত্রণা ।মনে মনে আল্লাহ্কে বলছিলাম, “আল্লাহ্, সবসময় কেনো আমাকে এমন সব পরীক্ষার মধ্যে নিক্ষেপ করো, যা তোমার বান্দা সহ্য করতে পারে না??”
বাসায় পৌঁছে আর নিজের চোখদুটো আম্মুর কাছ থেকে লুকোতে পারলাম নাহ। আম্মুকে সব ঘটনা বললাম। নামাযের টাইম হলো। ছাদের পাঞ্জেখানায় গিয়ে পড়ে আসলাম ইশার নামায।গত ২ মাস থেকে ৪ ওয়াক্ত নামায জামা’আতের সন্গে আদায় করছি। স্যারের এখন আর বলা লাগেনা, “চলো ফাহিম, নামাযটা পড়ে আসি”…………….
পরে চাচ্চুর সঙ্গে এই অভিমান, সব মিটমাট করে দেয় বাবা। কিন্তু, তাও চাচ্চু বাবাকে একদিন ফোন করে বলে, “তোমার ছেলে কিন্তু জঙ্গি হয়ে গেসে, ওর উপর নজর রাখতে হবে। তোমার ছেলে অসামাজিক হয়ে যাচ্ছে; ওকে আমার বাসায় নিয়ে আসবা, এইখানে লোকদের সাথে মিশবে, সামাজিক হবে”। আমি চার-ওয়াক্ত নামায মসজিদে গিয়ে কত অজানা মুসল্লিদের সাথে একত্রে নামায পড়ি। আমাদের ফ্ল্যাটের যেসকল প্রতিবেশী আছে,তাদের সাথে আমার যতটা না ভালো সম্পর্ক রয়েছে, ততটা ভালো সম্পর্ক বাবারও তাদের সঙ্গে নেই। বন্ধুদের মধ্যে সবাই স্বীকার করবে যে, আমার মতো মানুষের সঙ্গে এতো সহজে কেউ মিশতে পারে না…………আর আমি নাকি অসামাজিক। দ্বীন পালন করতে গিয়ে যদি ‘অসামাজিক’ ট্যাগও খাওয়া লাগে……… ‘ইয়েস, মাই ব্রাদার, আই এম ‘অসামাজিক’। স্যারকে এইসব ঘটনা বলার পর, স্যার বললেন, “তোমার পথে এইসব বাধা-বিপত্তিই প্রকাশ করে যে তুমি হকের উপর আছো………কারো কথায় ইসলামকে অবজ্ঞা করবা না। আজ তুমি দ্বীনের উপর থাকলে, তোমার পরবর্তি প্রজন্মকেও দ্বীনের উপর রাখতে পারবা, আর মৃত্যুর পরও, তাদের দ্বীনের জন্য সওয়াব পাবা” এভাবেই আমি হয়েছি অনেকবার বিভ্রান্ত, হয়েছি হতাশ। “না, আর পারছি না!” কিন্তু, আল্লাহ্র রহমতে, জিহাদ স্যার আমাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেননি।
নানুবাড়ি গিয়েছিলাম সেপ্টেম্বরে। খুলনায়। আমার মামাতো ভাইবোনেদের সাথে বহুদিন পর দেখা করতে। কিন্তু, আমি আর এইবার আমার বোনদের সাথে ঐভাবে দেখা করছি না। আমার ছোট বোন আগেই মামাতো বোনদের বলে রেখেছে, ” ফাহিম ভাইয়া কিন্তু এইবার তোদের সাথে খেলবে না, দেখা করবেনা! আর নোশিন আপুকে বলিস ফাহিম ভাইয়ার সামনে না আসতে”। নানাবাড়িতে আমার একমাত্র মামাতো ভাই সাহিল। ক্লাস টেনে পড়ে। আগে সব ভাইবোনেরা মিলে অনেক খেলাধুলা করতাম, নাটক বানাতাম। কিন্তু এইবার খালি ওর সাথেই থাকতে হবে, গল্প করতে হবে; নজরের হেফাজতের খাতিরে। বোনেরা খুব ভালোভাবেই নিজেদেরকে আমার চোখের আড়ালে রেখেছে, বিশেষ করে নোশিন। নোশিন আর সাহিল পিঠাপিঠি বয়সের।
মামিরাও আগের থেকে কিছুটা সতর্কবান। আমার মামাতো ভাই আমাকে দেখে পুরাই হতভম্ব। ওকেও হেদায়েত দেওয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্ত ও গেমস খেলায় এতো অ্যাডিক্টেড……….কি আর বলব। যাক, তাও ছেলেটা দাড়ি রেখে দিয়েছে; নামায পড়ে, আবার কখনো শয়তানে ধরে……এতে আমি আর আমার বড় মামা ভীষণ খুশী।
এখন পর্যন্ত যা লিখেছি, এগুলো হচ্ছে আমার দ্বীন পালনের পথে বাঁধা। সমস্যা। ঝঞ্জাট। জ্বালা। ইত্যাদি ইত্যাদি। এতো বাঁধা অতিক্রম করে আজও আমি দ্বীন পালন করছি; এখনও কানে আসছে কত কুকথা; কত কুমন্ত্রণা। কিন্তু, তবুও হাল কখনো ছাড়ছি না।
আমার এই দ্বীন পালনের যাত্রায় অনেক মানুষই আমাকে যুগিয়েছে সাহস, বাড়িয়ে তুলেছে আমার মনোবল। আমার সাধনায় তারা হয়েছে খুশি; যখনই কেউ আমার দ্বীনের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে, তখনই তারা হয়েছে ঢাল। এই ধরনের শুভাকাঙ্খীদের মধ্যে অন্যতম আমার স্যার। জিহাদ স্যার। তাকে দিয়েই আমার দ্বীন শুরু এবং এখনো এই যাত্রা বহমান। তারপরে আসে, আমার আম্মু।পরিবারের মধ্যে শুধু আম্মুই আমাকে এই দ্বীন মেইনটেইন করা নিয়ে কখনো নারাজ হননি; বলেননি ‘ইমান চলে যায়’-এইরকম কোনো কথা। আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন আমার বড় মামা, আমার মতো নিজের ছেলেকে গড়ে তুলতে চায় আমার বড় মামি। ছোট মামি আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সিদ্দিক ফুপাতো ঐদিন আমার গালে চুমো খেয়ে বললেন, “তোরে আমার খুব ভাল্লাগে, ফাহিম। আমার হাসিবেরেও তোর মতো বানাতে চাই রে!” আর ঐদিন আমার অসুস্থ দাদাকে দেখা করে যাওয়ার সময় বাবার এক ফুপু আমাকে নিয়ে অনেক গর্ব করে বললেন, “তোমাদের মুখে দাড়ি দ্যাখলে, তোমাদেরকে মসজিদে নামাজ পড়তে যাইতে দ্যাখলে আমার বুকটা ভইরা যায় বাবা; যেন মনে হয় আমার অসুস্থ দাদো……” এই বলেই দুফোঁটা জল অলক্ষে ঝরালেন তিনি। আমার এই নতুন রূপ যারা নতুন দেখে, তাদের মধ্যে অনেকেই মুখ থেকে বলে শুধু একটা শব্দ “আলহামদুলিল্লাহ”। আমার ফুপাতো বোন স্বর্না আপু ও দুলাভাই; দুজনেই আমার উপর অনেক সন্তুষ্ট। দুলাভাইতো আমাকে দেখে বাবাকে বলেন, ” বাহ! মামা দেখসেন? ফাহিমের মুখে নূরানী ছাপ?” কয়েকদিন আগেও আমাকে দুলাভাই আর আপু এসে তৌফা হিসেবে দিয়ে গেলেন বেশ কয়েকটা ইসলামিক বই। দুলাভাই আমাকে কিছু হাদিয়াও দিলেন। আমি হাদিয়া নিতে ইতস্ততবোধ করলে দুলাভাই বললেন, “নাও, ফাহিম। নিষেধ করে না। তোমার উপর আমি অনেক খুশি”।
এগুলোতো গেলো শুধু নিজের আত্মীয়দের মধ্যে পাওয়া সহানুভূতি। এছাড়াও প্রতিদিন মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় কত অজানা মানুষের কাছে যে সালাম পাই, তা বলতে পারবোনা। হৃদয়টা শীতল হয়ে যায়, কারো আদর পেলে, সম্মান পেলে, ভালোবাসা পেলে। আল্লাহ্ মানুষকে এইভাবেই সম্মানিত করেন, আবার অসম্মানিতও করেন।
এই সম্মানের পাওয়ার জন্য আমি কখনো ইসলামকে ভালোবাসিনি, না আমি এই আদর ও সম্মানের জন্য নামাজ পড়েছি, না দাড়ি রেখেছি। এগুলো করেছি আল্লাহর জন্য। আর আল্লাহই যথেষ্ট আমাকে এর প্রতিদান দেওয়ার জন্য। জিহাদ স্যার আমাকে একটা কথা বলেছিলেন,
“একজন মানুষ যখন দ্বীনের পথে চলে, তখন আল্লাহ তাকে সকল মুসিবত থেকে আকস্মিকভাবে সহায়তা করেন। আর মানুষের হৃদয়ে তার প্রতি এক আলাদা ভক্তি ও শ্রদ্ধাবোধ দিয়ে দেন”। সত্যিই! জিহাদ স্যার ভূল কিছু বলেননি।
আমার আসলে মনে রাখার শক্তিতা বেশ খারাপ। ঠিকমতো আমার উপর বয়ে চলে যাওয়া সকল ঘূর্ণিঝড়গুলোকে একসাথে আপনাদের চোখের সামনে তুলে ধরতে পেরেছি কিনা জানিনা। তাও, আল্লাহর রহমতে, অনেক দুঃখই প্রকাশ করলাম।আসলে, এতো দুঃখ প্রকাশ করে লাভ ও বা কি? দুঃখ যত ভোলা যায়, ততই সহজে নিজের জীবনের উদ্দেশ্যের কাছে পৌঁছানো যায়। আর আমার জীবনের উদ্দেশ্যতো এই দ্বীনকে ঘিরেই।
নিজেকে অনেক বদলিয়েছি; আল্লাহ্র জন্য।দ্বীনে ইসলামের জন্য। নিজেকে প্রতিনিয়তই গড়ে তোলার চেষ্টা করছি আল্লাহ্তাআলার হাবিবের মতো করে; তার সুন্নত অবলম্বন করে। এখন আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা যেন তিনি এই অধমের আমলগুলোকে গ্রহণ করে নেন। কেবল কলেজে উঠেছি, তাতেই কত পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি…………এখনতো রয়েছে আরো অনেক পথ হাঁটার। যদি পথ হাঁটতে গিয়ে রব্বুল আল-আমিন আমাকে তার কাছে তুলে নেন, তাহলে তো গেলামই চলে; এই পৃথিবী থেকে ‘জঙ্গি’ ট্যাগ নিয়ে। আরো একটা ট্যাগ নিয়ে যেতে চাই আল্লাহ্র দরবারে। তবে এইটা আখিরাতি ট্যাগ……………ট্যাগটা যেন হয়………… ‘জান্নাতি’।
الحمد لله دين الاسلام
Facebook Comments