সংকলন
রেজাউল-ইসলাম
প্রতিযোগিতা-২

নীড়ে ফেরার গল্প-২৩ | রেজাউল ইসলাম

আসসালামু আলাইকুম।

প্রশংসা জ্ঞাপন করছি সেই মহান রবের যার অনুগ্রহ ছাড়া আমি অধম দ্বীন এর পথে ফেরার মত সৌভাগ্য লাভ করতেই পারতাম না। আল্লাহ আমায় আমৃত্যু দ্বীনকে নিজের জীবনের সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে চলতে সহায়তা করুন।

আমার আব্বা আম্মা নিয়মিত নামাজ পড়েন। আমিও ছোট বেলায় পড়তাম। কিন্তু যখন বড় হলাম দিনে নামায এক দুই ওয়াক্ত পড়া হতো। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, সিনেমা হল, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, গিটার নিয়ে গান-বাজনা করা, স্কুল কলেজের ছাত্রীদের দেখা….  এমন করেই  চলে যাচ্ছে অধমের জীবন। যে জীবন সুখের নয়। সুখ তো কেবল মহান রবের স্মরণেই।

কিন্তু দুনিয়ার ধোঁকায় পড়ে সেই সুখ থেকে বহুবছর ছিটকে ছিলাম।

আমার মাঝে মাঝে আল্লাহ প্রেম জেগে ওঠতো,কারণ আমার আম্মা আমাকে প্রায়-ই বোঝাতেন,বাবা ভাল ভাবে চলো, আমি গুরুত্ব দিতাম না।প্রায় বলতাম ইনশাআল্লাহ আজ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়বো৷ শয়তানের ওসওয়াসায় আবার সব ভুলে যাই। যখন যা মন চাইতো তাই করতাম।ঠিক ভুল ভেবে করতাম না।

ছোট বেলায় কত সুন্দর করে  মক্তবে যেতাম, কুরআন পড়তাম। কিন্তু  বহুবছর আর সেই কুরআন ধরেও দেখিনি৷ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার এই উদ্ধতপনার জন্য মাফ করুক।

আমার মন টা যে অশান্তিতে ভরে গেছে আমি বুঝতে পারি। ভাল ইউনিভার্সিটিতে চান্স না পাওয়া,পরিবারে অশান্তি ,, কোথাও যেন বরকত মিলছেনা।

একদিন হঠাৎ ফেইসবুকে ঢু মারতেই নিউজফিডে দ্বীনি ভাই জাভেদ কায়সারের আইডি পাই। ভাইয়ের নামটা ভাল লাগায় আইডিতে গিয়ে উনার একের পর এক ইসলামিক পোস্ট পড়ে চোখ থেকে শুধু অনবরত জল গড়াচ্ছিলো, আর শুন্য ঝুলি নিয়ে মৃত্যু ভয়ে অন্তর টা হাহাকার করছিলো। মনে হল মহান রাব্বুল আলামীন এই দুনিয়াতে কি জন্য পাঠিয়েছেন, আর আমরা কি করছি সেই ভেবে লজ্জায় নিজের উপর রাগ হল। তখনই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিলাম, না কাল কাল করে কালই চলে যাচ্ছে জীবন থেকে।কাল আর কখনো ফিরে আসবেনা।

সিনেমা হলের টিকেট গুলো টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলাম, গিটার টা ও ভেঙে ফেলেছি। ফোন থেকে সমস্ত গান ডিলেট করে কুরআন তিলাওয়াত ডাউনলোড করে প্রায়-ই শুনতে থাকি। অথচ যে গান না শুনলে মনে হতো ঘুম-ই আসবে না। আর এখন একের পর এক সূরা তিলাওয়াত শুনি আর চক্ষুশীতল হয়ে আসে। ঠিক বুঝতে পারিনি হঠাৎ এত প্রশান্তি, এত সুখ যে আল্লাহর স্মরণে! এ আমার আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া আর কিচ্ছুনা। আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ

নামায আর ইসলামি বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেল। বন্ধুদের সাথেও মেলামেশা কমিয়ে দিয়েছি৷ফেইসবুকের সব মেয়ে আইডিদের আনফ্রেন্ড করে ফেলেছি। শুধু আল্লাহর স্মরণেই যেন শান্তি লাগতো।

দুঃখের বিষয় যে ভাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহ আমার মরিচাধরা অন্তর কে পরিষ্কার করেছেন সেই দ্বীনি জাভেদ কায়সার ভাই আল্লাহর জিম্মায় চলে গেছেন৷ আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুক।

এভাবেই আমার দ্বীন ইসলামের   প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেল। আযান দেওয়ার কিছুক্ষণ আগেই নামাযের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাই। অথচ যে আমি আগে তাড়াহুড়ো করে নামায শেষ করতাম।  তারপর প্রতিদিন ইসলামি বই পড়া শুরু করি৷ যত পড়ছি নিজেকে শুধু আবিষ্কার করছি যেন৷

আমার জন্য এ পথ এত সহজ ছিল না। শয়তান রীতিমতো মনে কুমন্ত্রণা দিতো,ফজরে উঠতে ভীষণ কষ্ট হতো। কিন্তু যার অন্তরে একবার আল্লাহর ভালবাসা ডুকে যায় তাকে আর কোনো অশুভ শক্তি দমিয়ে রাখতে পারেনা। উঠে যাই ফজরে, যে আব্বা আম্মা বারবার ডেকেও ফজরে তুলতে পারতেন না। তাদেরই আমি ডেকে দিই। আলহামদুলিল্লাহ।

চলার পথে ভুলক্রমে কোনো মেয়ে দেখলে নিজেকে সংযত করতে কঠিন হয়ে পড়তো৷ এজন্য বিয়ে করে অর্ধেক দ্বীন পালনের জন্য মনস্থির করলাম। বাসায় সবার সম্মতিতেই বিয়ে করলাম। কিন্তু যাকে বিয়ে করেছি তাকে পুরোপুরি ভাবে না জেনেই বিয়ে করেছি। সে ইসলামের বিধিনিষেধ গুলা মানতে রাজি না। সে বেপর্দায় চলবে,মডেলিং করবে,যেভাবে ইচ্ছা চলবে, যদি মানতে রাজি তাহলে  আমার সাথে থাকবে৷ কিন্তু আমি তো তার এমন উদ্ধতপনা মানতে পারিনা,আমি আল্লাহ কে অসন্তুষ্ট করতে পারিনা৷ দ্বীনের পথে অটল থাকতেই তো বিয়ে টা করা,এখন ওর সান্নিধ্যে আমি যদি আবার জাহেলিয়াতে ফিরে যাই তাহলে কি করে আমি সহধর্মিণীকে নিয়ে একসাথে জান্নাতে যাবো, কি করে পথভ্রষ্ট মানুষের সাথে একজীবন কাটিয়ে দেব,সম্ভব না!! এমন অবস্থায় আমি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করি৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার জন্য উত্তম কিছু রেখেছেন। অনেক চেষ্টা করেছি ওকে বোঝাতে,দ্বীনের পথে ফেরাতে।কোনোভাবেই  পারিনি। অবশেষে আমার আল্লাহর জন্য আমি ওই মহিলাকে ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ তাকে হেদায়েত করুক।

এখন আমি শুধু আল্লাহর স্মরণেই, দ্বীন পালনেই পরম শান্তি অনুভব করি।আমি চিরসুখী জান্নাতের আবাস জিততে সর্বদা সচেষ্ট।দুনিয়ায় হেরে আমার কোনো আফসোস নেই,,  নিশ্চয়ই  আমার আল্লাহ আমায় নিরাশ করবেন না।

আমি আমার মুসলিম ভাইবোন দের কে বলতে চাই,তোমরা যারা নিজেদের বিভিন্ন হারাম কাজে নিমজ্জিত করে রেখেছো, পিতা-মাতার অবাধ্য হচ্ছ, আল্লাহর দ্বীন কে ভুলে আছো, দুনিয়াবি চিন্তায় আছো ওয়াল্লাহি এই দুনিয়া কিচ্ছু না! এই দুনিয়া ধোঁকা,মায়াজাল! একবার সেই মহান রবের দিকে ফিরে এসো যার অনুগ্রহ ছাড়া বিচারের দিন আমরা নিঃস্ব। ওয়াল্লাহি আমরা নিঃস্ব!

আমাদের হারাম উপার্জনের সম্পদ সেদিন কোনো কাজে আসবেনা! আমাদের স্ত্রী,সন্তান সেদিন কোনো কাজে লাগবে না। কেউ জাহান্নামের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচাতে পারবেনা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া ।

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ কে ভয় করে তার আদেশ নিষেধ মেনে চল।তোমাদের প্রত্যেক আত্মার ভেবে দেখা দরকার যে আগামীকালকের জন্য(পরকালের) জন্য তোমরা অগ্রিম কি সম্বল  সংগ্রহ করে রেখেছো।  আল্লাহ কে ভয় করে তার বিধিনিষেধ মেনে চল।নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কাজ ও আমল সম্পর্কে ওয়াকিফহাল।

সূরাঃআল হাশর ১৮।

 

Facebook Comments

Related posts

নীড়ে ফেরার গল্প-১১ | আমাতুল্লাহ মেহেরুন্নেসা

সংকলন টিম

নীড়ে ফেরার গল্প-৩৫ | সুজিত থেকে আব্দুল্লাহ

সংকলন টিম

নীড়ে ফেরার গল্প-২৫ | ইসরাত জাহান মুনিরা

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!