আলহামদুলিল্লাহ ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা এই অধমকে পরম মমতায় হেদায়েত ও রহমতের চাদরে জড়িয়ে নেন। সেই থেকে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তনের চেষ্টা সংশোধনের চেষ্টায় রত থেকেছি। আত্নসমালোচনায় নিজেকে ব্যাস্ত রেখেছি।
,
এক আলেমা আপুর সাথে দেখা হয়েছিল। উনি তালিম করতেন। কত বোন এই (হালিমা আপুর) উছিলায় হেদায়েতের পথে এসেছেন। আলহামদুলিল্লাহ তাদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। একদিন উনার বয়ান শুনেছিলাম, সেদিন থেকেই নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি আর নিজের গোনাহের জন্য অনুতপ্ত এ হৃদয় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় নিজেকে পরিবর্তনের। (আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার সেই আলেমা বোন (হালিমা আপু) কে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন,উনি যেখানেই থাকুন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে হেফাজতে রাখুন)
যদিও আমি আগে থেকেই হিজাব-নিকাব পরতাম কিন্তু শুধু বাহিরের লোকদের সামনে। মাহরাম- ননমাহরাম সম্পর্কে খুব একটা ধারণা ছিল না। আমার সেই আলেমা (হালিমা)আপু মাহরাম কারা,ননমাহরাম কারা অর্থাৎ আত্নীয়দের মধ্যেও কাদের সামনে দেখা দেওয়া জায়েজ নেই এ বিষয়ে আলোচনা করলেন।
[ সূরা আন-নূরের ৩১ নং আয়াতে রেফারেন্স আছে দেখতে পারেন ]
তখনই পরিপূর্ণ পর্দা করার তীব্র বাসনা জেগে ওঠল মনে।
,
গল্পটা এখানে শেষ হলেই পারতো কিন্তু না দ্বীনে ফেরার পরের গল্পটা এতোটাও সহজ ছিল না। অনেক বাধা,বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। দ্বীনের পথে টিকে থাকার লড়াই করার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। পরিপূর্ণ পর্দা শুরু করার পর বুঝতে পারি বাহিরের লোকদের সামনে পর্দা করা যতটা সহজ নিজের ঘরের বা আত্নীয়দের সামনে পর্দা করা ততটাই কঠিন। প্রথম প্রথম বাসায় কোন নন মাহরাম আত্নীয় যেমন খালু,ফুপা,কাজিন আসলে সহজে তাদের সামনে যেতাম না। আমার পরিবর্তনের কথা ও পর্দার কথা সবাইকে বললে সবাই এটাই বুঝাতো এ যুগে এরকম খাস পর্দা করা কি আদৌ সম্ভব?
,
কিন্তু কোরআন তো এমনই এক কিতাব যা কালের বিবর্তনে কখনোই পরিবর্তন হবে না। আর আল্লাহর আদেশ সব যুগেই পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে গড়িমসি করলে চলবে না। আর এসব ভেবে সবসময় নিজের নফসের সাথে যুদ্ধ করতাম। কখনো জিতে যেতাম আর কখনো হেরে যেতাম। প্রথমে খুব চেষ্টা করতাম মাহরাম-ননমাহরাম মেনটেইন করার। অনলাইনে অফলাইনে সব জায়গায় ননমাহরাম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রয়াস করলাম।
,
প্রথমে পরিবারে কারো সাপোর্ট পাই নি। আত্নীয়রা কি বলবে,সবাই কি ভাববে এই কথা শুনতে শুনতে কখনোও বা বাধ্য হয়ে মাথা নিচু করে শুধু সালাম করে কুশল বিনিময় করে চলে আসছি। কিন্তু যতবারই কোন ননমাহরাম কারো সামনে পড়েছি হোক ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত সেদিন দোয়াতে খুব কান্না করতাম। মনে হতো আমার রব বুঝি আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। শুধু নয়নে নয় হৃদয়েও রক্তক্ষরণ এর মতো অশ্রুর বন্যা বইতো। অনুতপ্তে কেঁদে ওঠতো এ হৃদয়। তখন দোয়া করতাম,”হে রাব্বে কারীম আমার জন্য পর্দা করাটা সহজ করে দিন”।
,
২০২০ সালের রামাদ্বান মাস আমার জন্য অনেক বড় নেয়ামাত ছিল আলহামদুলিল্লাহ। এ বছর জীবনে প্রথমবারের মতো ইতিকাফ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। ১০ দিনের ইতিকাফের পর আমি খুব দৃঢ় ও শক্তভাবে সিদ্ধান্ত নেই আজকের পর থেকে আমি মাহরাম ব্যাতীত আর কারো সামনে যাব না। যদি খুব প্রয়োজনে যেতে হয় তাহলে পরিপূর্ণ পর্দা করেই যাব। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম এরপর থেকে আমার পরিবারের সবাই মোটামুটি সাপোর্ট করেন
আলহামদুলিল্লাহ।
,
আর এদিকে সমাজের অনেকেই আমাকে অসামাজিক ভাবতে শুরু করেছে। এ নিয়ে প্রায়ই অনেক কটু কথা শুনতে হয়। কাজিনদের সাথে কথা না বলায় আমি অমিশুক,ক্ষ্যাত,গাইয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। বিশেষ করে আমার সমবয়সী বা বয়সে আমার চেয়ে ছোট কাজিনদের সামনে পর্দা করায় অনেকে এটিকে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের মনে করেন। আবার অনেকে সরাসরি কিছু না বললেও আড়ালে অনেক সমালোচনার মন্তব্য করেন।
যাইহোক আমি অন্তরে কারো প্রতি কোন ক্ষোভ পুষে রাখি না,আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবাইকে হেদায়েত দান করুন এই দোয়াই করি।
,
আমার সদ্য দ্বীনে ফেরা বোনদের উদ্দেশ্য বলবো দ্বীনের পথে চলতে গেলে নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়,নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়,তাই কে কি বললো এসব কথাকে অগ্রাহ্য করে শুধুমাত্র রবের সন্তুষ্টির রাস্তা বেছে নিন। আর কারো নীড়ে ফেরা যদি হয় আমার মতো একদম জেনারেল লাইন থেকে তাহলে কি পরিমাণ কাঠখড় পুড়তে হয় দ্বীনের পথ আঁকড়ে ধরে রাখতে এই বৈরীপরিবেশে টিকে থাকতে তা আমি খুব ভালোই জানি।
যাইহোক আমার দ্বীনি বোনদের জন্যও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সিরাত্বে মুস্তাক্বিমের পথ চলা সহজ করে দিন।
এখনোও দ্বীনের পথে চলতে গেলে অনেক চড়াই উৎরাই পার করতে হয়। নিজের নফসের সাথে প্রতিনিয়ত জিহাদ করে চলতে হয়।
( সত্য ঘটনা অবলম্বনে, আমার জন্য অনেক দোয়া করবেন বোনেরা যাতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হেদায়েতের পথে চলতে পারি। আমার নীড়ে ফেরার গল্প শুনে যদি কেউ সামান্য অনুপ্রেরণা পান তাহলে আজকে থেকেই নিজেকে পরিবর্তন এর চেষ্টা করুন বোন শুধুমাত্র রবের সন্তুষ্টির জন্য, এই দুনিয়া সামান্য ক’দিনের জন্য আর আখিরাত অনন্তকালের জন্য এখন একটু ভাবুন তো বোন আপনি কি সামান্য ক’দিনের দুনিয়া চান না কি অনন্তকালের জীবন চান?
সিদ্ধান্ত টা আপনারই বোন 🙂
Facebook Comments