সংকলন
বনু সাকিফের মিথ্যুক
ইতিহাস ইমরান রাইহান

মুখতার আস সাকাফি: বনু সাকিফের মিথ্যুক | ইমরান রাইহান

সময়টা উত্তাল।

নেতৃত্ব ও অধিকারের প্রশ্নে দ্বন্দ্ব চলছে আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা) ও মারওয়ানের মধ্যে। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে মক্কা ও আশপাশের এলাকা। অপরদিকে দামেশকসহ সিরিয়ার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল মারওয়ানের দখলে।

দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের মাঝে মাথা তুললো আরেকজন। তার উদ্দেশ্য বিরাজমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজেকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা। এই ব্যক্তির নাম মুখতার বিন আবু উবাইদ। বনু সকিফ গোত্রের সদস্য হওয়ায় ইতিহাস তাকে মনে রেখেছে মুখতার আস সাকাফি নামে।

তার পিতা আবু উবাইদ বিন মাসউদ সাকাফি ছিলেন একজন প্রখ্যাত তাবেয়ি। সাহসী যোদ্ধা হিসেবে তার সুনাম ছিল। হজরত উমর (রা) এর শাসনামলে যখন মুসলিম বাহিনী ইরাকে সামরিক অভিযান চালায়, তখন তিনি তাদের একাংশের সেনাপতি ছিলেন। এখানে অভিযান চলাকালে ‘মারিকাতুল জিসর’ বা ‘সেতুর যুদ্ধে’ তিনি শহীদ হন।

মুখতার নিজেও অনেক সাহাবিকে দেখেছিল। এই হিসেবে তাকেও তাবেয়ী হিসেবে গন্য করার কথা। কিন্তু সাহাবিদের সময়কাল পাওয়াই শেষ কথা নয়, নিজের ভেতরেও তো কিছু গুন থাকতে হয়। সার্বিক বিচারে মুখতার ছিল তার পিতার চেয়ে শতভাগ উল্টো চরিত্রের অধিকারী। সে যুগের সাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেমন তাকওয়া, পরেজগারিতা ইত্যাদি তার মধ্যে খুব কমই দেখা যেত। তবে ধূর্ততা, প্রতারণা এসবে সে ছিল বনু সকিফ গোত্রের শীর্ষ সারিতে।

বাল্যকাল থেকেই মুখতারের লোভ ছিল ক্ষমতার দিকে। হজরত আলী (রা) এর শাহাদাতের সময় মুখতার ছিল তরুণ। সে সময় তার চাচা সাদ বিন মাসউদ ছিলেন মাদায়েনের গভর্নর। মুখতার সে সময় তার চাচাকে প্রস্তাব দিয়েছিল, হজরত হাসানের সাথে যেহেতু হজরত মুয়াবিয়ার দ্বন্দ্ব চলমান তাহলে আমরা তাকে গ্রেফতার করে হজরত মুয়াবিয়ার হাতে তুলে দেই। তিনি খুশি হয়ে আমাদের বড় কোনো পদ দিতে পারেন।

সাদ বিন মাসউদ ভাতিজার প্রস্তাব শুনে চমকে উঠেন। এই প্রস্তাব তিনি ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। মুখতারের পরিকল্পনা ব্যর্থ হলো কিন্তু সে নিরাশ হলো না। অপেক্ষায় রইলো সঠিক সময়ের। যখন সে খুব সহজেই নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারবে।

অপরাধির জন্য অপরাধ প্রবনতা ঢেকে রাখা বেশ কঠিন। কোনো না কোনো অপরাধে তাকে জড়িয়ে পড়তে হয়। মুখতারের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছিল। নানা অপরাধে সে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিল। ইয়াযিদের শাসনামলে উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের কানে পৌঁছল মুখতারের এসব কর্মকান্ডের কথা। ডেকে এনে মুখতারকে একশো চাবুক মারলো সে। চাবুকের একটি আঘাত মুখতারের চোখে লাগলে তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যায়। বাকি জীবন এক চোখ নিয়েই কাটাতে হয়েছিল মুখতারকে।

ইয়াযিদের শাসনামলেই আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের সাথে উমাইয়াদের দ্বন্দ্ব শুরু হলো। মুখতার এ সময় দ্রুত আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের দলে ভিড়ে যায়। বিশেষ করে হুসাইন বিন নুমাইরের সাথে আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের যে লড়াই হয় তাতে সে আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের পক্ষে লড়াই করে। মুখতারের বড় একটি কৌশল ছিল সে নিজেকে বরেন্য ব্যক্তিদের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করতো, যেন সাধারণ মানুষের ভক্তি ও শ্রদ্ধা পাওয়া সহজ হয়।

যার উদ্দেশ্য যা সে তা বাস্তবায়ন করতে চাইবেই। মুখতার শুধু এক শিবিরে যোগাযোগ রেখেই ক্ষান্ত হলো না। একই সময় সে মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যার সাথেও সখ্যতা গড়ে তোলার জন্য তার কাছে যাতায়াত শুরু করে। কিন্তু মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যা ছিলেন বিচক্ষণ। মুখতারের চেহারায় তিনি আবিষ্কার করেছিলেন দুর্যোগের কালো মেঘ। ফলে নিজের কাছে ঘেঁষতে দিলেন না তাকে। মুখতারের উদ্দেশ্য সফল হলো না। তবে ভুল করলেন আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা)। শুরু থেকেই মুখতারের উপর তিনি আস্থা রাখলেন এবং তাকে নিজের ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন।

আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের (রা) শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর মুখতার তার কাছে ইরাক যাওয়ার অনুমতি চাইলো। নানা কথা বলে সে আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরকে (রা) বুঝালো, এ মুহুর্তে ইরাক সফর করা জরুরি। সেখানকার জনসমর্থন আদায় করতে পারলে তা আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের (রা) শাসনের জন্য উপকারিই হবে।

মুখতারের কথায় আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর প্রভাবিত হলেন। মুখতার পেলো ইরাক যাওয়ার অনুমতি।

৬৪ হিজরীতে মক্কা ত্যাগ করে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হলো মুখতার।

এ সময়টায় কুফার পরিস্থিতিও ছিল বেশ জটিল। সুলাইমান বিন সুরাদ (রা) নামে একজন সাহাবি সেখানে হজরত হুসাইন (রা) এর শাহাদাতের বদলা নেয়ার জন্য পরিকল্পনা সাজাচ্ছিলেন। হজরত আলী (রা) এর পক্ষের লোকেরা তার সাথে ছিল এবং তারা বিদ্রোহের জন্য অস্ত্রশস্ত্র জমা করছিল। কুফার লোকদের অনেকেই হজরত হুসাইনের শাহাদাতের ঘটনায় অনুতপ্ত ছিল, কারণ তাদের পত্র পেয়েই হজরত হুসাইন ইরাকে এসেছিলেন। ফলে তারা সুলাইমান বিন সুরাদ (রা) কে সমর্থন দিচ্ছিল। সুলাইমান বিন সুরাদের (রা) অনুসারীরা নিজেদের আন্দোলনের নাম দিয়েছিল হারাকাতুত তাওয়াবিন বা তওবাকারিদের আন্দোলন। এখানে তওবা দ্বারা উদ্দেশ্য কারবালার ময়দানে হজরত হুসাইনকে সাহায্য না করে তারা যে অপরাধ করেছিলেন তা মোচন করা।

এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল হজরত হুসাইনের (রা) হত্যাকারিদেরকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়া অথবা তাদের সাথে লড়তে লড়তে নিজে নিহত হওয়া। তাদের পরিকল্পনা ছিল বড় একটি বাহিনী তৈরী করে তারা সিরিয়ার দিকে যাবেন এবং কারবালার ঘটনার জন্য দায়ী উমাইয়াদের প্রশাসক বিশেষ করে উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের থেকে প্রতিশোধ নিবেন। তাওয়াবিনরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।

তাদের এই প্রস্তুতি ছিল প্রকাশ্য। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের প্রতিনিধিরা এই আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছিলেন কারণ তারা জানতেন দিনশেষে এই আন্দোলনে ক্ষতি হবে উমাইয়াদেরই।

মুখতার যখন কুফা পৌঁছল ততদিনে কুফার বেশিরভাগ লোক সুলাইমান বিন সুরাদের (রা) পতাকাতলে একত্র হয়েছে। মুখতার দেখলো কুফার লোকেরা আবেগের সর্বোচ্চ চুড়ায় অবস্থান করছে। চাইলে এখন সহজেই যে কোনো কাজ করিয়ে নেয়া যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো তারা একত্রিত হয়েছে সুলাইমান বিন সুরাদের (রা) পাশে। মুখতার তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়। তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ারও কোনো কারণ নেই।

মুখতার বুঝে ফেললো এখানে সহজে কিছু করা যাবে না। করতে হলে আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে আর তা করতে মুখতারের বিশেষ কোনো আপত্তিও নেই। সে দ্রুত মিথ্যা এক গল্প সাজিয়ে ফেলে এবং তা প্রচার করতে থাকে কুফার মানুষের সামনে। সে বলতে থাকে, আমি এখানে এসেছি মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়ার পক্ষ থেকে। তিনি আমাকে নিজের প্রতিনিধি বানিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন।

মুখতার প্রথমেই সুলাইমান বিন সুরাদের (রা) পরিকল্পনার বিরোধিতা করে বলে, সে নিজেও মরবে তোমাদেরকেও মারবে। তার তো যুদ্ধের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।

অপপ্রচারেরও প্রভাব আছে। দেখা গেল অনেকেই সুলাইমানের পক্ষ ত্যাগ করে মুখতারের পক্ষে চলে এসেছে। কুফার লোকজন দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। বেশিরভাগ রইলো সুলাইমান বিন সুরাদের পক্ষে আর কমসংখ্যক এলো মুখতার আস সাকাফির পক্ষে।

মুখতারের পরিকল্পনা ছিল শেষ দেখা এবং যে বিজয়ী হয় সেদিকে চলে যাওয়া। ফলে সে সরাসরি সামরিক কার্যক্রমে অংশগ্রহন করা থেকে বিরত হইলো।

এদিকে সুলাইমান বিন সুরাদের (রা) শিবিরে প্রস্তুতি চলতে থাকে জোরেশোরে। প্রায় ১৬ হাজার মানুষ তার সাথে লড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। কুফায় থাকা হজরত হুসাইনের হত্যাকারিদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় এই দৃশ্য দেখে।

কিন্তু কুফার লোকজনের আবেগ খুব দ্রুতই ফুরিয়ে গেল। দেখা গেল শেষ পর্যন্ত মাত্র ৪ হাজার মানুষ হজরত সুলাইমান বিন সুরাদের (রা) সাথে আছে। অভিজ্ঞ লোকরা সুলাইমানকে বললেন এত কম মানুষ নিয়ে উমাইয়াদের প্রশিক্ষিত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন সুলাইমান বিন সুরাদ।

এদিকে উমাইয়াদের কানে চলে গেছে সুলাইমানের প্রস্তুতির খবর। সংবাদ এলো বড় এক বাহিনী নিয়ে কুফার দিকে এগিয়ে আসছে উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ। কুফার প্রশাসক আবদুল্লাহ বিন ইয়াযিদ সুলাইমানকে বললেন, আপনি এখানেই অপেক্ষা করুন। তারা এখানে আসতে আসতে আমরা প্রস্তুতি আরো ভালো করে নিতে পারবো।

পরিস্থিতি বিবেচনায় এই পরামর্শ যথাযথ ছিল। কিন্তু সুলাইমান বিন সুরাদ অপেক্ষা করতে চাচ্ছিলেন না। তিনি চাচ্ছিলেন দ্রুত এগিয়ে যেতে।

৬৫ হিজরীর ৫ রবিউল আউয়াল তাওয়াবিনদের বাহিনী কুফা ত্যাগ করে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এ সময় তাদের কন্ঠে শ্লোগান ছিল ‘ইয়া লিসারাতিল হুসাইন’ (হুসাইনের প্রতিশোধের জন্য)। পথে দেখা হলো আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের (রা) নিযুক্ত প্রশাসক যুফার বিন হারিসের সাথে। তিনি বললেন, আপনারা আমার এলাকায় থাকুন। আমরা একসাথে সিরিয় বাহিনীর মোকাবেলা করবো। এত কম সেনা নিয়ে সামনে এগুনো ঠিক হবে না। কিন্তু সুলাইমান বিন সুরাদ নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন। নিরুপায় যুফার বিন হারিস কিছু সামরিক পরামর্শ দিয়ে তাকে বিদায় জানালেন।

সিরিয়ার সীমান্তের কাছে ‘আইনুল ওয়ারদাহ’ নামক এলাকায় এসে সুলাইমান বিন সুরাদের বাহিনীর সাথে সিরিয় বাহিনী মুখোমুখি হলো। এই বাহিনী পাঠিয়েছিলেন মারওয়ান ইবনুল হাকাম। টানা তিনদিন দুপক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই চলে। শেষে উমাইয়াদের বাহিনী বিজয়ী হয়। তাওয়াবিনদের প্রায় সকল শীর্ষ নেতা নিহত হন। সুলাইমান বিন সুরাদও (রা) ৭৩ বছর বয়সে নিহত হন।

সুলাইমান বিন সুরাদের (রা) বাহিনীর পরাজয়ের কারণ ছিল স্পষ্ট। প্রথমত তিনি কোনো যুদ্ধবাজ সেনাপতি ছিলেন না। তিনি শুধু তাওয়াক্কুল ও দ্বীনি জযবা থেকে এই অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, তার বাহিনীর সেনাসংখ্যা ছিল উমাইয়াদের থেকে অনেক কম। এবং তাদের মধ্যেও অভিজ্ঞ কোনো যোদ্ধা ছিল না। তৃতীয়ত, যুদ্ধ হয়েছিল সিরিয়ার সীমান্তে। যেখানে তাদের জন্য সহজে রসদ পাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। অপরদিকে উমাইয়া বাহিনীর জন্য রসদের ব্যবস্থা করা সহজ ছিল।

সুলাইমান বিন সুরাদের (রা) বাহিনী শহর ত্যাগ করতেই মুখতার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। লোকজনকে নিজের দিকে টানার জন্য সে নানা প্রচারনা চালাতে থাকে। শহরের প্রশাসক আবদুল্লাহ বিন ইয়াযিদ বাধ্য হয়ে তাকে বন্দি করেন। কিছুদিন কারাভোগের পর বেশকিছু সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির মধ্যস্ততায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়। মুখতার ওয়াদা করে সে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোনো সক্রিয়তায় অংশ নেবে না।

কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে মুখতার আবার নিজের প্রচারনায় নেমে পড়ে। সুলাইমান বিন সুরাদের বাহিনীর অবশিষ্ট সদস্যরা ইতিমধ্যে কুফাতে ফিরে এসেছে। মুখতার তাদের অনেককে নিজের দলে টেনে নেয়। এবার সে দাবী করে মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যাই হচ্ছেন প্রতিশ্রুত মাহদি। আর মুখতার তার প্রতিনিধি। সে একটি জাল চিঠি বানায়, যে চিঠিতে দেখা যায় মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যা সবাইকে মুখতারের আদেশ মেনে নিতে বলছেন।
মুখতারের দাবী নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিল কেউ কেউ। এই সংশয় দূর করতে মুখতার একটি দল পাঠায় মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যার কাছে, যাদের দায়িত্ব ছিল মুখতারের দাবির সত্যতা যাচাই করা।
প্রতিনিধিদল মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যার কাছে এলে তিনি বললেন, আমি চাই আল্লাহ তার সৃষ্টির মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে আমাদের শত্রুদের (অর্থাৎ উমাইয়াদের) কাছ থেকে প্রতিশোধ নিন।

অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যা মুখতারকে সমর্থন করা থেকে বিরত রইলেন। কিন্তু বিপত্তি ছিল অন্যখানে। প্রতিনিধিদলে মুখতারের নিজস্ব কিছু লোকও ছিল। ফেরার পথে এরা অন্যদের প্রভাবিত করে ফেলে। ফলে কুফায় এসে তারা বলতে থাকে, মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যা মুখতারকে সমর্থন করেছেন।

মুখতারের কার্যক্রম আরো বেগবান হলো।

চোরের সাথে বাটপারের দেখা হয়েই যায়। মুখতারের ক্ষেত্রেও তাই হলো। মুখতার নিজের শক্তি আরো মজবুত করার কিছু উপায় খুঁজছিল, আর সেই উপায় নিয়েই তার সাথে দেখা করলো তুফাইল বিন জা’দা। এই ব্যক্তি ছিল চরম প্রতারক ও লোভী। তার পিতার তেলের ব্যবসা ছিল। তেল বিক্রির সময় তিনি একটি চেয়ারে বসতেন। সেই চেয়ারে দীর্ঘদিন ধরে তেল পড়তে পড়তে পাতলা স্তর হয়ে যায়। তেলের স্তরের কারণে কাঠ দেখা যাচ্ছিল না।

তুফাইল এই চেয়ার নিয়ে এলো মুখতারের কাছে।
‘এই চেয়ারের অলৌকিক বৈশিষ্ট্য আছে। এটি আপনার জন্য নিয়ে এলাম’ বললো তুফাইল। তুফাইলের কথা মুখতার কতটুকু বিশ্বাস করেছিল তা জানা কষ্ট। কিন্তু সে বুঝতে পারে এই চেয়ার কাজে লাগিয়ে সে নিজের উদ্দেশ্য সাধন করতে পারবে। মুখতারের আদেশে তুফাইলকে এক হাজার দিরহাম দিয়ে বিদায় করা হয়।

মুখতার এবার এই চেয়ার নিয়ে একের পর এক গল্প বানাতে থাকে। সে বলতে থাকে, বনি ইসরাইলের কাছে যেমন তাবুত ছিল, তার কাছেও রয়েছে আলৌকিক চেয়ার। কুফার মসজিদে নিয়ে আসা হয় কাপড়ে আবৃত এই চেয়ার। ভক্তদের নানা গালগল্প শুনিয়ে মুগ্ধ করে মুখতার। তারপর কাপড় সরিয়ে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এই চেয়ার।

জনতা আনন্দের আতিশয্যে তাকবির দিতে থাকে। কুফার স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব শাবাস বিন রিবয়ি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রতিবাদ করে বলেন, লোকেরা, তোমরা ভুল করে কুফরের পেছনে যেও না’।

তার কথায় কর্নপাত করলো না কেউ। বরং তাকে ধাক্কা দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হল।

মুখতারের বানোয়াট গল্পগুলো ক্রমেই ডালপালা মেললো, বিস্তৃত হলো। এবার সে বলতে থাকে, তার কাছে জিবরাইল (আ) আসে এবং এই চেয়ারের উপর তিনি বসেন। একদিন মুখতারের সাথে দেখা করতে এলেন, রিফাআ বিন শাদ্দাদ। মুখতার তাকে বললো, আপনি আসার একটু আগে জিবরাইল (আ) এসেছিলেন এবং এই চেয়ারে বসেছিলেন। পরে চলে গেছেন।

অলৌকিক কল্পকাহিনী বিশ্বাস করার মতো লোকের অভাব কোনোকালেই হয়নি। মুখতারও প্রচুর অনুসারী পেয়ে গেল। সে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় ছিল। উপযুক্ত সময় উপস্থিত হয়েছে মনে হতেই ৬৬ হিজরির ১৪ রবিউল আউয়াল মুখতার বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কুফার সে সময়কার গভর্নর আবদুল্লাহ বিন মুতিকে অপসারণ করে মুখতার ক্ষমতা দখল করে। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের পক্ষের অনেকে বাধা দিতে গেলে নিহত হন।

মুখতার ক্ষমতায় এসেই হজরত হুসাইনের হত্যাকারিদের খুঁজতে থাকে। সংবাদ পেয়ে পালিয়ে যায় শিমার বিন জিল জওশন। তাকে ধাওয়া করে মুখতারের বাহিনী। শীঘ্রই তাকে ধরে হত্যা করা হয়। হজরত হুসাইনের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত যাকেই পাওয়া যায় তাকে হয়তো হাতপা কেটে ফেলা হয়, অথবা মাথা কেটে ফেলা হয়।

মুখতার ক্ষমতা দখল করে পত্র লিখে আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের কাছে। সে লিখেছিল, আবদুল্লাহ বিন মুতি আপনার বিরোধিপক্ষের প্রতি নরম। তাই তাকে সরিয়ে আমি ক্ষমতা নিয়েছি।

আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর বুঝলেন সবই, তবে রাজনৈতিক জটিলতা বিবেচনা করে তিনি তখনই কোনো পদক্ষেপ নিলেন না। সম্ভবত তিনি ভাবছিলেন, মুখতারের মাধ্যমে যদি উমাইয়াদের কিছু ক্ষতি হয়, হোক না।

মুখতারের পরের টার্গেট ছিল উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ। কারবালার নির্মম ঘটনার পেছনের হোতা। মুখতার বড় একটি সেনাবাহিনী দিয়ে ইবরাহিম বিন মালিক নাখয়িকে পাঠালো উবাইদুল্লাহর মোকাবেলা করতে। সেনাদের উজ্জীবিত রাখার জন্য মুখতার ঘোষণা করে, অলৌকিক চেয়ার যতক্ষন বাহিনীর সাথে থাকবে ততক্ষন এই বাহিনীকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। বিশেষ সম্মানের সাথে এই চেয়ারকে খচ্চরের পিঠে উঠিয়ে পাঠানো হয় সেনাবাহিনীর সাথে।

তীব্র যুদ্ধে পরাজিত হলো উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদ। তার মাথা কেটে পাঠানো হলো মুখতারের কাছে। বিস্ময়করভাবে দিনটি ছিল ৬৭ হিজরীর ১০ মহররম। ৬ বছর আগে এই দিনেই উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের বাহিনী হত্যা করেছিল হজরত হুসাইন (রা) কে।

মুখতারের সামনে রাখা আছে উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের মাথা। আচমকা কোথা থেকে ছুটে এলো একটি সাপ। সাপটি উবাইদুল্লাহর নাক দিয়ে প্রবেশ করে কিছুক্ষন মাথার ভেতর থাকলো। পরে মুখ দিয়ে বের হলো। তিনবার এমন করে চলে গেল সাপটি।

মাটিতে দাফন করার আগেই এই নরাধমের লাঞ্চনা শুরু হলো।

মুখতার চলছিল দুই নৌকায় পা রেখে। একদিকে সে আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরকে (রা) বলতো, আমি আপনার পক্ষের লোক। আপনার আনুগত্য আমার জন্য আবশ্যক। অপরদিকে নিজের লোকদেরকে সে আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের (রা) বিরুদ্ধে ক্ষেপাতো। মূলত মুখতার এ সময় কুফায় স্বাধীন শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। তার স্বপ্ন ছিল নিজের রাজ্যের সীমানা আরো বৃদ্ধি করা।

আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা) পরিস্থিতির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছিলেন। তিনি আবদুর রহমান বিন হারিসকে ৪০ হাজার দিরহাম দিয়ে কুফায় যেতে বললেন। বললেন, তোমাকে সেখানকার গভর্নর করে পাঠাচ্ছি।
‘সেখানে তো মুখতার আছে’ আবদুর রহমান বললেন।
‘সে দাবী করে সে আমার আনুগত্যে আছে। তাহলে তো তার উপর আবশ্যক তোমাকে গভর্নর মেনে নেয়া’

মুখতার জেনে গেল আবদুর রহমান বিন হারিস আসছেন। ৭০০ সেনা পাঠিয়ে পথেই আটকে দিল তাকে। হতাশ আবদুর রহমান ফিরে গেলেন মাঝপথেই।

পরিষ্কার হলো, মুখতার আসলে কাউকেই মানে না। সে নিজেকেই প্রতিষ্ঠিত করে চলছে ক্রমাগত।

এদিকে দামেশকে তখন চলছে ক্ষমতার পালাবদল। মসনদে বসেছেন আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান। অন্য শাসকদের মতো তার সামনেও চ্যালেঞ্জ ছিল আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরকে (রা) দমন করা।

ক্ষমতায় বসেই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সেনাবাহিনী পাঠিয়ে মদীনার উত্তরে অবস্থিত ওয়াদিউল কুরা নামক এলাকা দখল করে নিবেন। এই অঞ্চল যদি উমাইয়াদের নিয়ন্ত্রনে আনা যায় তাহলে সামরিক কৌশলের জায়গা থেকে আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর সংকটে পড়বেন। কুফায় বসে মুখতার সাকাফি জেনে গেলে আবদুল মালিকের পরিকল্পনার কথা। সে দেখলো এখানে তার জন্যও একটি সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। যেহেতু এই মুহুর্তে আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের সেনাসাহায্য দরকার তাই মুখতার তাকে সাহায্য করার বাহানায় মদীনায় সেনা পাঠাবে এবং পুরো এলাকা দখল করে নিবে। মুখতার আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরকে লিখলো,
আপনি বললে আমি এখনই সেনা পাঠিয়ে সাহায্য করবো’।

আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের সাহায্য দরকার ছিল কিন্তু একইসাথে মুখতারের চরিত্র সম্পর্কেও সচেতন ছিলেন তিনি। তিনি মুখতারকে সেনা পাঠাতে বললেন। একইসাথে আব্বাস বিন সাহলকে একটি বাহিনী দিয়ে বললেন, তোমরা মুখতারের বাহিনীর সাথে দেখা করে তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করো। যদি অবস্থা সুবিধের মনে না হয় তাহলে তাদেরকে সরিয়ে দিবে।

আব্বাস বিন সাহলের বাহিনীর সাথে মুখতারের বাহিনী মুখোমুখি হলো মদীনার বাইরে। আব্বাস বিন সাহল টের পেলেন মুখতারের বাহিনীর মতলব ভালো নয়। তারা এসেছে মূলত মদীনা দখল করে নিতে। তিনি সেখানেই শক্ত প্রতিরোধ করলে মুখতারের বাহিনী ফিরে যায়। মুখতারের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। মূলত আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের সতর্ক পদক্ষেপের কথা মুখতারের মাথায় ছিল না।
পরিকল্পনা ব্যর্থ হলেও দমলো না মুখতার। সে এবার মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যাকে বললো, আপনার সাহায্যে একটি বাহিনী পাঠিয়েছিলাম কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর সেই বাহিনী ফেরত পাঠালেন। আপনি বললে আমি আরেকটি বাহিনী পাঠাবো।

মুখতারের উদ্দেশ্য ছিল মদীনা আক্রমনের সুযোগ তৈরী করা। কিন্তু বিচক্ষণ মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যা টের পেয়েছিলেন মুখতারের মতলব। মুখতারের দূতকে তিনি বললেন, তাকে বলবে আল্লাহকে ভয় করতে এবং খুন খারাবি বন্ধ করতে।

মুখতার জিবরাইল (আ) এর আগমনের দাবী আগেই করেছিল, এবার দাবী করলো নবুওয়তের। সে দাবী করলো তার কাছে নিয়মিত অহী আসে। নবুওয়তের দাবী করে সে একের পর এক পত্র পাঠালো বিভিন্ন এলাকায়। এসব পত্রে বলা হলো, যদি মুখতারের নবুওয়ত মেনে নেয়া হয় তাহলে রয়েছে আখিরাতে জান্নাতের নিশ্চয়তা (নাউযুবিল্লাহ)।

বিখ্যাত তাবেয়ী আহনাফ বিন কাইস বসবাস করতেন বসরায়। তার কাছেও এমন পত্র পাঠালো মুখতার। ঘৃনাভরে তা প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি।

মুখতার দেখলো একদিকে ক্ষেপে আছেন আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর। অন্যদিকে যে কোনো সময় হামলা করতে পারে আবদুল মালেক ইবনু মারওয়ানের বাহিনী। সে ভাবলো অন্তত একজনের সাথে সুসম্পর্ক রাখা দরকার। একই সময়ে দুজনের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত সামর্থ তার নেই। সে আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরকে পত্র লিখলো,

‘আমি কুফাকে আমার কেন্দ্র বানিয়েছি। আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। আপনি আমাকে এক লাখ দিরহাম দিলে আমি সিরিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের শেষ করে দিব’।

আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর এই পত্র পড়ে বললেন, বনু সকিফের এই কাজ্জাব ও আমার মধ্যে ধোঁকার এই খেলা কবে শেষ হবে। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের (রা) ফিরতি পত্র ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। সেই পত্রে তিনি লিখেছিলেন,

‘আমি তোমাকে এক পয়সাও দিবো না’

আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর মুখতারকে কাজ্জাব বা মিথ্যুক বলেছিলেন। পরে এই নাম প্রসিদ্ধি পেয়ে যায়। তিনি মুখতারকে অযথাই মিথ্যুক বলেননি। আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরের (রা) মা আসমা বিনতে আবু বকর (রা) একটি হাদিস বর্ননা করেছেন, যেখানে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বনু সকিফে এক মিথ্যাবাদী ও এক খুনির আবির্ভাব হবে।

হজরত আসমা (রা) ও সে সময়ের উল্লেখযোগ্য আলেমদের মতে মুখতার সাকাফিই ছিল হাদিসে বর্নিত সেই কাজ্জাব বা মিথ্যুক। ফলে সবাই তাকে এই নামেই ডাকতে থাকে।

কুফার লোকেরা এই সময়ে ভাগ হয়ে যায় দুই শিবিরে। শহরের সম্ভ্রান্তরা ছিলেন মুখতারের বিপক্ষে। বিশেষ করে মুখতার নবুওয়তের দাবী করার ফলে মুখতারের সাথে তাদের সম্পর্কের চুড়ান্ত অবনতি হয়। অপরদিকে অপরাধপ্রবন ব্যক্তিরা ছিলেন মুখতারের পক্ষে।

আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা) দেখলেন নবুওয়তের দাবী করার পর মুখতারকে আর ছাড় দেয়া যায় না। নিজের ভাই মুসআব ইবনু যুবাইরকে তিনি বসরার গভর্নর নিযুক্ত করলেন এবং আদেশ দিলেন যে কোনো মূল্যে মুখতারকে দমন করতে হবে।

মুসআব ইবনু যুবাইরের আগমনের সংবাদ পেতেই ২০ হাজার সেনা নিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরী হলো মুখতার সাকাফি। কিন্তু পরপর কয়েকটি যুদ্ধে মুসআব মুখতারের বাহিনীকে পরাজিত করেন এবং কুফার ফটকে এসে কড়া নাড়েন।

মুসআবের বাহিনী শহরে প্রবেশ করে। মুখতার নিজের প্রাসাদে অবরুদ্ধ হয়ে লড়াই চালাতে থাকে। মুখতারের দলের অনেকে এ সময় পক্ষত্যাগ করে। কিন্তু মহিলারা ছিল মুখতারের ভক্ত। তারা গোপনে রসদ দিয়ে মুখতারকে সাহায্য করছিল। মুসআব এই সংবাদ জেনে মুখতারের প্রাসাদে মহিলাদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করেন। এবার মুখতার খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হয়।

মরিয়া হয়ে মুখতার সিদ্ধান্ত নেয় সে বাইরে এসে লড়বে। নিজের বিশ্বস্ত সাথীদের নিয়ে সে শপথ করে, মৃত্য পর্যন্ত তারা একসাথে লড়াই করে যাবে।

প্রাসাদ থেকে বের হওয়ার আগে নিজের বিশ্বস্ত বন্ধু সায়েব বিন মালিকের সামনে নিজের মনের কথা প্রকাশ করেছিল মুখতার। সে বলেছিল,

‘আমি একজন আরব। আমি দেখলাম আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর হেজাজ শাসন করছেন। খারেজিরা ইয়ামামাহ শাসন করছেন, বনু উমাইয়া শাসন করছে সিরিয়া। আমি ভেবে দেখলাম একজন আরব হয়ে আমি কেন পিছিয়ে থাকবো? আমি তো তাদের চেয়ে কম নই। ফলে আমিও শহর দখল করে নিলাম’

এভাবে মুখতার নিজের মুখেই নিজের উদ্দেশ্যের কথা জানান দিলো।

১৯ জন সহযোদ্ধাসহ নিজের প্রাসাদ থেকে বের হয়ে এলো মুখতার। সংক্ষিপ্ত লড়াইয়ের পর মুসআবের বাহিনীর হাতে মুখতার নিহত হয়। দিনটি ছিল ৬৭ হিজরীর ১৪ রমজান। মৃত্যুকালে মুখতারের বয়স ছিল ৬৭ বছর।

মুখতারের জীবন ছিল প্রতারণা ও ধোঁকার। নিজের মেধাকে সে ব্যয় করেছে প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের কাজে। তবে তার হাতে হজরত হুসাইনের হত্যাকারিদের অনেকে নিহত হয়েছিল। এই বিষয়টি ছিল ইতিবাচক। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ পাপাচারিদের দ্বারাও এই দ্বীনের সাহায্য করে থাকেন।

মুখতারের সামগ্রিক জীবন ও হজরত হুসাইনের হত্যাকারিদের সাথে তার আচরণ এই হাদিসকেই সত্যায়ন করেছে।

(তারিখে উম্মতে মুসলিমাহ থেকে সংক্ষেপিত)

Facebook Comments

Related posts

নির্মল জীবন-৭ | ইমরান রাইহান

সংকলন টিম

সংগ্রামী সাধক আবু মুসলিম খাওলানী রহ. | মঈনুদ্দীন তাওহীদ

ঈমানদীপ্ত দাস্তান এর স্বরুপ সন্ধানে (পর্ব- ২) | মূল – মাওলানা ইসমাইল রেহান

সংকলন টিম

1 comment

Sabbir March 18, 2021 at 12:33 pm

Nice Post. Onek kicu jaanlam

Reply

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!