হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিরিয়ার এক ব্যক্তিকে বসরার কাজী নিযুক্ত করেন। তার নাম ছিল আবু হুমাইর। এক শুক্রবারে আবু হুমাইর মসজিদে যাচ্ছিল জুমার নামাজ আদায় করতে। পথে এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত।
‘আবু হুমাইর, কোথায় যাচ্ছো?’ সেই ব্যক্তি প্রশ্ন করে।
‘নামাজ পড়তে’
‘তুমি জানো না, হাজ্জাজ শুক্রবারে সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করেছে’
একথা শুনে আবু হুমাইর নামাজ না পড়েই গৃহে ফিরে গেল।
পরদিন হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলেন,
‘আবু হুমাইর গতকাল নামাজে আসো নি কেন?’
‘আপনি তো শুক্রবারে সাপ্তাহিক ছুটি দিয়েছেন’ আবু হুমাইরের জবাব শুনে হাজ্জাজ হেসে দিলেন।
–
ইবনে মারওয়ান নামে এক ব্যক্তির নির্বুদ্ধিতার গল্পগুলো আজো প্রসিদ্ধ।
সে গলায় হাড়ের তৈরী একটি হার ঝুলিয়ে রাখতো। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতো, যদি আমি কখনো বাজারে কিংবা ভীড়ে হারিয়ে যাই, তাহলে এই হার দ্বারা নিজেকে চিনতে পারবো। একরাতে সে ঘুমালে তার ভাই হার খুলে নিজের গলায় পরে। সকালে সে তার ভাইকে দেখে বললো, আচ্ছা, তুমি যদি আমি হও, তাহলে আমি কে?
ইবনে মারওয়ান বকরি চড়াতে গেলে মোটা তাজা বকরিগুলোকে ভালো চারনভূমিতে নিয়ে যেত। দূর্বল বকরিগুলোকে নিয়ে যেত শুষ্ক ভূমিতে। সে বলতো, আল্লাহ যাদের দূর্বল করেছেন, আমি কেন তাদের সবল করবো।
–
আব্দুর রহমান বিন মিসহারকে হারুনুর রশিদ এক এলাকার কাজি নিযুক্ত করেন। একবার খলিফা প্রধান বিচারপতি কাজি আবু ইউসুফ সহ সেই এলাকায় গেলেন। খলিফার আগমনের সংবাদ পেয়ে আব্দুর রহমান স্থানীয়দের বলে দেয়, খলিফা শহরে প্রবেশ করলে সবাই তার কাছে আমার প্রশংসা করবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে স্থানীয়দের কেউই ঘর থেকে বের হলো না। বাধ্য হয়ে আব্দুর রহমান নিজেই স্থানীয়দের পোশাক পরে শহরের ফটকে দাঁড়িয়ে গেল। খলিফা শহরে প্রবেশ করার সময় সে এগিয়ে গিয়ে খলিফাকে সালাম দিল। বললো, আমাদের শহরের কাজি খুবই বিচক্ষণ।তিনি এই শহরে ন্যায়পরায়নতা ফিরিয়ে এনেছেন। একথা শুনে কাজি আবু ইউসুফ হাসতে থাকেন। খলিফা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন , আপনি হাসছেন কেনো? কাজি আবু ইউসুফ বললেন, সে নিজেই এই শহরের কাজী। সে ছদ্মবেশে এসে নিজেই নিজের সুনাম গাইছে। একথা শুনে খলীফা নিজেও হাসতে থাকেন।
–
এক মুয়াজ্জিন আযান শেষ করেই দৌড়াতে থাকে। একজন জিজ্ঞাসা করলো, কই যাও ? মুয়ায়জ্জিন বললো, দেখে আসি আমার আযান কতদূর থেকে শোনা যায়।
–
এক ব্যক্তি ইমামের পেছনে নামাজ পড়ছিল। নামাজের মধ্যে ইমামের অযু ভেংগে গেলে ইমাম তাকে সামনে ঠেলে দিয়ে অযু করতে যায়। সে সামনে গিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এক পর্যায়ে লোকেরা বিরক্ত হয়ে উসখুশ করতে থাকে। তবু সে দাড়িয়েই থাকে। শেষে পেছন থেকে একজন এসে তাকে সরিয়ে দেয়। নামাজ শেষে তাকে গালমন্দ করা হলে সে বলে, আমি ভেবেছি ইমাম আমাকে দাড় করিয়েছে যেন আর কাউকে ওখানে দাঁড়াতে না দেই এজন্য।
–
জাহেজ এক মূর্খ ইমামের কথা লিখেছেন। এই ইমামের বড় বড় সুরা মুখস্থ ছিল। সে নামাজে দাড়ালেই লম্বা কেরাত পড়তো। দূর্বল ও বৃদ্ধদের কষ্ট হতো। একদিন সবাই তাকে বললো নামাজে কেরাত ছোট করতে না পারলে এই মসজিদ ছেড়ে দাও। আমরা নতুন ইমাম রাখবো। পরদিন এশার নামাজে সে সুরা ফাতিহা পড়ে চুপ রইলো। কতক্ষন পর জোরে জোরে বললো, আমি কি সুরা আবাসা পড়তে পারি? মুসল্লিরা নীরব রইলো। পেছনের কাতার থেকে একজন জবাব দিলো, হা। এটা পড়া যায়।
–
এক গ্রাম্য লোক নামাজে দাড়ালো। পাশে কয়েকজন বসে তার বিভিন্ন গুনাবলী আলোচনা করছিল। লোকটি নামাজের ভেতর থেকেই বললো, আমি আজকে রোজাও রেখেছি।
–
কয়েকজন বসে তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়ে কথা বলছিল। সেখানে এক গ্রাম্য ব্যক্তিও বসা ছিল। তাকে প্রশ্ন করা হলো, তুমি রাতে উঠো? (উদ্দেশ্য ছিল তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে কিনা তা জানা)। সে বললো , উঠি। জিজ্ঞেস করা হলো, উঠে কী করো? ‘উঠে পেশাব করি তারপর আবার ঘুমিয়ে যাই” গ্রাম্য ব্যক্তির সরল জবাব।
(সবগুলো ঘটনা ইবনুল জাওযি রহিমাহুল্লাহ রচিত ‘আখবারুল হামকা ওয়াল মুগাফফালিন’ থেকে চয়ন করা হয়েছে)