সংকলন
দিরিলিস
সীরাত

‘ইসলামি উপন্যাস’ ও ‘দিরিলিস সিরিয়াল’ : বাস্তবতা ও পর্যালোচনা | ইমরান রাইহান

আলাপটা নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করি…

২০০৪ সালের কথা। ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন। সে সময় নসীম হিজাজি ও আলতামাশের বইপত্র খুব চলতো। আব্বুকে বললাম, এগুলো কিনে দিন। এখানে ইসলামের ইতিহাস আছে। পড়বো। আব্বু বললেন, কোনো বই নিজে পছন্দ করে পড়া ঠিক হবে না। আগে কোনো আলেমের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

তখন আমরা হাজারিবাগ থাকি। একদিন আব্বু মিরপুর নিয়ে গেলেন, মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন সাহেবের কাছে। হুজুরকে বললেন, আমার ছেলে নসীম হিজাজির বই পড়তে চায়। এই বইগুলো কেমন?

হুজুর বললেন, এগুলো উপন্যাস, ইতিহাস নয়। এখানে ইতিহাস আছে সামান্যই, বেশিরভাগই লেখকের কল্পনা। এসব বই পড়ে যা জানবে, তার কতটুকু সত্য, আর কতটুকু মিথ্যা তা যাচাই করার উপায়ও নেই।

কিছুটা হতাশ হলাম। তবে উপকার হলো বেশি। হুজুর এক কথায় আমার চিন্তা শুদ্ধ করে দিলেন। ঐতিহাসিক উপন্যাস যে ইতিহাস নয়, বরং উপন্যাসের একটা প্রকার মাত্র, একথা হুজুর আমার মাথায় গেঁথে দিলেন।

বছর দুয়েক পরে এক আত্মীয়ের বাসায় গেলাম, কুমিল্লায়। রাত কাটালাম সেখানেই। তার বাসায় আলতামাশের একটি বই দেখে পড়া শুরু করি। সেটি ছিল ঈমানদীপ্ত দাস্তান। সালাহুদ্দিন আইয়ুবী ও ক্রুসেডের ঘটনাবলী নিয়ে লেখা। বইটা বেশ ভালো লাগলো। সবচেয়ে ভালো লাগলো, আলতামাশ এই বইতে ঐতিহাসিকদের প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এই বই পড়ে আমার মনে হলো, মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন সাহেবের কথাগুলো নসীম হিজাজির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও আলতামাশের বইয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আলতামাশের বইতে কল্পনা থাকলেও এখানে ইতিহাসের পরিমান অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় কথা, আলতামাশ প্রচুর রেফারেন্স দিয়ে লিখেছেন, ফলে এটাকে নিছক উপন্যাস বলে ছোট করার মানে হয় না।

নিজের এই সিদ্ধান্তের উপর বেশ তৃপ্তি অনুভব হলো। দ্রুত বাজারে আলতামাশের যত বইয়ের অনুবাদ পেলাম সব কিনে ফেলি। কয়েক মাসের মধ্যে দেখা গেল আলতামাশের সব বই আমার পড়া শেষ। পড়া শেষে নিজেকে এগিয়ে থাকা পাঠক মনে হলো। অনেক ইতিহাস জেনে ফেলেছি, এটা অন্তরের গভীর থেকেই বিশ্বাস শুরু করলাম। বিভিন্নজনকে বলে বেড়ালাম, নসীম হিজাজি না পড়লেও আলতামাশ পড়। অনেক ইতিহাস জানতে পারবে।

আমার এই ভুল বুঝতে পারি প্রায় এক দশক পর। ২০১৭ সালের দিকে একজন উস্তাদ আমাকে কিছুদিন তার সান্নিধ্যে রেখেছিলেন। তার বাসায় আমার থাকার ব্যবস্থা হয়। উস্তাদের ব্যক্তিগত মাকতাবা আমার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। উস্তাদের সংগ্রহে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিল ফিত তারিখ, তারিখুত তাবারি, শাজারাতুয যাহাব, ওফায়াতুল আইয়ান এই বইগুলো ছিল। সে সময় আমার কোনো কাজ ছিল না। দিনের কিছু অংশ কাটতো উস্তাদের সাথে নানা বিষয়ে কথা বলে, বাকি সময় কাটতো এসব বইয়ের পাতা উল্টে। সে সময় একবার ইতিহাসের একটি তথ্য নিয়ে এক ভাইয়ের সাথে মৃদু তর্ক হলো। ভাইটি ইতিহাসের বিষয়ে আলতামাশের বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন কারণ, আলতামাশ ইবনু কাসিরের সুত্রে কথাটি লিখেছিলেন। এদিকে কদিন আগেই আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার ওই অংশ পড়ার কারনে আমার জানা ছিল ইবনু কাসির এই কথা বলেননি। তো একটা ধাক্কা খেলাম। আলতামাশ ইবনু কাসিরের নামে এমন এক কথা লিখেছেন, যেটা ইবনু কাসির লিখেননি। ভাবলাম, এক কাজ করি, বেকার বসে আছি, আলতামাশের বইগুলোর রেফারেন্স চেক করে দেখি। তার রেফারেন্সগুলো বিশুদ্ধ কিনা দেখা যাক।

বাসা থেকে আলতামাশের বইপত্র সব নিয়ে যাই। একের পর এক বই খুলে ইতিহাসগ্রন্থের সাথে মেলাতে থাকি। যতই সামনে এগুতে থাকি, ততই বুঝতে পারি, আলতামাশ সম্পর্কে আমার সিদ্ধান্ত স্পষ্ট ভুল ছিল। আমি যদি মুফতি সাহেবের পরামর্শ মেনে চলতাম তাহলে এই দশ বছরে এতগুলো ভুল ও বানোয়াট তথ্যকে বিশুদ্ধ ইতিহাস মনে করে বসে থাকতাম না।

আলতামাশের লেখার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এই ভদ্রলোক নিজের পক্ষ থেকে বানোয়াট একটা তথ্য দেন, তারপর একে কোনো ঐতিহাসিকের নামে চালিয়ে দেন। যেমন শমসিরে বেনিয়াম গ্রন্থে তিনি সাজ্জাহর সাথে মুসাইলামার সাক্ষাতের ঘটনা নিজের মত করে লিখে ঐতিহাসিক তাবারির নামে চালিয়ে দিয়েছেন। অথচ তারিখুত তাবারিতে এমন বর্ননা নেই। ‘আওর এক বুত শিকন পয়দা হুয়া’ গ্রন্থে তিনি সুলতান মাহমুদ গজনভীর সাথে আব্বাসি খলিফা কাদের বিল্লাহর সম্পর্কের যে ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন ঐতিহাসিক কাসেম ফেরেশতার নাম দিয়ে, তার কোনো সত্যতা নেই। তারিখে ফেরেশতাতেও এসব তথ্য নেই। তার প্রতিটি বইতেই এমন প্রচুর তথ্য পেলাম, যেখানে তিনি ঐতিহাসিকদের নামে নিজের কল্পনা চালিয়ে দিয়েছেন। এটি যে স্পষ্ট প্রতারণা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সম্প্রতি, মাওলানা ইসমাইল রেহান আলতামাশের ‘দাস্তান ঈমান ফারুশোকি’ বইয়ের সকল তথ্য ও রেফারেন্স পর্যালোচনা করে প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম ‘দাস্তান ঈমান ফারুশোকি এক তাহকিকি জায়েজা’। এখানে তিনি আলতামাশের এসব প্রতারণা বিশদভাবে আলোচনা করেছেন।

এই আলাপ তুললাম কেনো?

কারণ, এখনো আমাদের অনেকেই মনে করেন সাধারণ মানুষের ইতিহাস পড়ার জন্য নসীম হিজাজি আলতামাশের বইগুলো বেস্ট। এগুলো পড়লে ইতিহাস জানা যায়, জিহাদি প্রেরণা জাগ্রত হয়। মোটাদাগে দুইটি পয়েন্টই ভুল।

১। এসব বইতে বিশুদ্ধ তথ্যের পরিমান এতই সামান্য, যা কিনা খড়ের গাদায় করোনা ভাইরাস খোজার মতই কঠিন একটি বিষয়। আর কোন তথ্য বিশুদ্ধ কোনটা অশুদ্ধ এটা বুঝতে হলেও দীর্ঘ অধ্যয়ন ও জানাশোনা দরকার। আমার অভিজ্ঞতা তো বললামই। মুফতি দিলাওয়ার সাহেব (দা বা) তার গভীর পড়াশোনা দ্বারা এসব বইয়ের হাকিকত আমাকে বলে দিয়েছিলেন। অথচ, এর বাস্তবতা বুঝতে আমার সময় লেগেছে প্রায় এক যুগ।

২। এসব বইতে জিহাদ ও মুজাহিদদের যে চিত্রায়ন করা হয়, তা ইতিহাস বিকৃতির নামান্তর। মুসলিম মুজাহিদরা কখনো এমন প্রেমিক পুরুষ ছিলেন না। জিহাদের ফাঁকে ফাঁকে প্রেম করার যে চিত্রায়ন দেখানো হয়, মুজাহিদদের আঁচল এই কালিমা থেকে মুক্ত। এসব বইতে দেখানো হয় মুজাহিদরা অভিযানের ফাঁকে কারো প্রেমে পড়ে যান, কদিন দ্বীনি কথাবার্তা বলেন, পরে বিয়ে করে ফেলেন। রিজালের কিতাবে আমরা মুজাহিদদের যে জীবনের কথা পাই, তা মোটেও এমন নয়। আলতামাশ ও নসীম হিজাজির বই এসব প্রেমের বিবরণে ভরপুর। এক্ষেত্রে এই লেখকরা কোনো নীতি-নৈতিকতার ধার ধারেননি। যেমন, আলতামাশ তার শমসিরে বেনিয়াম গ্রন্থে হজরত খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রা) এর সাথে এক মেয়ের পাশাপাশি বসার কাল্পনিক ঘটনা খুব রসালো ভাবে উপস্থাপন করেছেন। নাউজুবিল্লাহ। এমন শত শত উদাহরণ দেয়া যাবে।

মোটাদাগে বলতে গেলে, ইতিহাস জানতে আমাদের ইতিহাসের বইই পড়তে হবে। জিহাদের ফজিলত জানতে, জিহাদের প্রেরণা জাগাতে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারকের ‘কিতাবুল জিহাদ’ কিংবা ইবনুন নাহহাসের ‘মাশারিউল আশওয়াক’ তো আছেই। এর বাইরে কেউ উপন্যাস পড়তে চাইলে সেটা তার নিজের সিদ্ধান্ত। তিনি উপন্যাস মনে করে পড়বেন। কিন্তু ব্যক্তিগত এই কাজের বৈধতা দিতে গিয়ে উপন্যাসকে ইতিহাসের বই বলে প্রচার করা কিংবা এখান থেকে জিহাদি প্রেরণা পাওয়া যায়, এটা বলা তো অন্যায়।

সম্প্রতি ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত বিভিন্ন সিরিয়াল নিয়ে বেশ আলাপ হচ্ছে। দ্বীনি ঘরানার অনেকে এগুলো বেশ উৎসাহের সাথে প্রমোট করছেন। এর পক্ষে নানা যুক্তিও দাঁড় করানো হচ্ছে। এসব সিরিয়াল দেখার বিধান কী হবে তা বিজ্ঞ মুফতিরাই ফতোয়া দিবেন ইনশাআল্লাহ। এ সম্পর্কে আমার বলার কিছু নেই। তবে কিছু পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্ন আছে। সেগুলো তুলে ধরি।

১। যারা এসব সিরিয়াল দেখেন তাদের সাথে আলাপে জেনেছি, এসব সিরিয়ালে মিউজিক থাকে। নারীদের উপস্থিতিও থাকে বেশ। এই দুইটি বিষয় কোন কোন শর্তে বৈধ? এক ভাই যুক্তি দিয়েছেন হিন্দি সিরিয়ালে নারীদের কূটনামী দেখানো হয়। তুর্কি সিরিয়ালে এসব কূটনামি নাই। এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। নারী কূটনা হোক কিংবা সরল, এতে দৃষ্টি হেফাজতের মাসআলায় কোনো পরিবর্তন আসে না।

২। অনেকে বলছেন যারা হলিউড মুভিতে অভ্যস্ত তারা এটা দেখতে পারে সমস্যা নাই। তাহলে দুই ক্ষতির অপেক্ষাকৃত কমটা বেছে নেয়া হল। এখানে প্রশ্ন হলো, এই সমাধান কি কোনো বিজ্ঞ ফকিহ ও মুফতি দিয়েছেন নাকি নিজে নিজে বানানো হয়েছে। আজকাল এক সমস্যা হচ্ছে, সবাই সব বিষয়ে ‘আমার মনে হয় ব্যাপারটা এমন’ বলে মতামত দিচ্ছে। অথচ, বাস্তবতা হলো সবার মনে হওয়ার লেভেল এক না। সবার মনে হওয়া গুরুত্বপূর্ণও না।
হাদিস শাস্ত্রের উপর পূর্ন দখল আছে এমন হাফেজে হাদিস যদি কোনো হাদিস সম্পর্কে বলেন, আমি এই হাদিসটি চিনি না, বা শুনিনি তাহলে সেই বর্ননা মুহাদ্দিসদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কিন্তু আমি আপনি যদি কোনো হাদিস সম্পর্কে এ কথা বলি? তাহলে এতে আমাদের অজ্ঞতা ও মূর্খতাই প্রকাশ পাবে। হাফেজে হাদিস কোনো হাদিস না জানা মানে ওই হাদিসের অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ, আর আমরা কোনো হাদিস না জানা মানে, আমাদের জানার পরিধি কত কম সেটা স্পষ্ট হওয়া। তফাতটা এখানে।

তো দিরিলিস বা এজাতীয় সিরিয়াল সম্পর্কে যারা এমন সমাধান বলে দিচ্ছেন, প্রশ্ন হলো তারা এই বিষয়ে এভাবে সমাধান দেয়ার যোগ্যতা রাখেন কিনা। বা তারা যাদের থেকে কপি করেছেন, তারাই এই সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকার রাখেন কিনা। কিছু মানুষ আছে মাইডিয়ার টাইপ। এদের কাছে দুনিয়ার সব গ্লাস অর্ধেক ভরা। কোনো কোনো গ্লাস যে পুরো খালি থাকে, এটা তারা মানতে চান না। এমন লোকদের বক্তব্য নেয়ার ক্ষেত্রেও সতর্কতা দরকার।

যদিও বলা হচ্ছে, হলিউড মুভির পরিবর্তে এসব সিরিয়াল দেখা হবে, কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে দেখছি, এসব সিরিয়ালের প্রতি মুভি এডিক্টদের ঝোঁক কমই, এগুলোর প্রতি মূল আকর্ষণ দ্বীনদার ঘরানার, যারা এতদিন মুভি সিরিয়াল এসব কিছুই দেখতেন না। তো এমন দ্বীনদার, যারা এতদিন এগুলো দেখতেন না, এখন দেখা শুরু করেছেন এই ব্যাপারটা আমরা কীভাবে দেখবো? এ সম্পর্কে করনীয়ই বা কী হবে?

এমন বহু মানুষ দেখেছি যারা দ্বীনের পথে এসে সাথে সাথে মুভি দেখা ছেড়ে দিয়েছেন। কোনো সমস্যা হয়নি। এখন যে নতুন উসুল বানানো হচ্ছে, হলিউড মুভি ছাড়ার জন্য কম ক্ষতিকর তুর্কি সিরিয়াল দেখা উচিত, এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? এই কম ক্ষতিকর তুর্কি সিরিয়াল দেখার সময়সীমা কতদূর? কী পরিমান তুর্কি সিরিয়াল দেখলে এই মুভি নেশা একেবারেই কেটে যাবে? মুভি নেশা কাটার পর এই তুর্কি সিরিয়ালের নেশা কাটাবে কীভাবে? এর জন্য কি আবার তুলনামূলক কম ক্ষতিকর কিছু নিয়ে আসতে হবে? এত ধাপ অতিক্রম না করে এক ধাপেই কি মুভি দেখা ছাড়ার সুযোগ নেই? ব্যাপারটা কি এতই অসম্ভব?

৩। এসব সিরিয়ালে যে ইতিহাস বলা দেখানো হচ্ছে, চরিত্রগুলো যেভাবে সত্যায়ন করা হচ্ছে এই বিষয়টি কি কেউ নিজে যাচাই করেছে ? বা ইতিহাসে পারদর্শী কাউকে জিজ্ঞেস করেছে ? নাকি নিজ থেকেই বলে দিচ্ছে ‘এখানে ইতিহাস খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে’।

৪। এসব সিরিয়ালে বরেণ্য মুসলিম ব্যক্তিত্বদের চরিত্রে যারা অভিনয় করছে তারা এ যুগের মানুষ। এরা স্রেফ অভিনেতা। টাকার জন্য যে কিছুতে অভিনয় করে। নানাভাবে এদের ফিসকও স্পষ্ট। এমনকি এদের কেউ কেউ আছে পাঁড় সেক্যুলার। কোনো ভিডিও দেখলে সাধারনত এর দৃশ্য আমাদের মাথায় গেঁথে যায়। এখন কেউ একজন এমন সিরিয়াল দেখলো। ধরা যাক, মুহাম্মদ আল ফাতিহকে নিয়েই। এরপর যখনই মুহাম্মদ আল ফাতিহর আলোচনা আসবে তার মাথায় ঘুরবে ওই সেক্যুলার নায়কের চেহারা। তার মনে হবে মুহাম্মদ আল ফাতিহের চেহারা, গঠন সবই ছিল ওই নায়কের মত।
এই বিষয়টি কেমন? কোনো অস্বস্তি লাগে কিনা? না লাগলে কেন লাগে না ?

৫। এসব সিরিয়ালে অবৈধ প্রেম ভালোবাসা ও নাজায়েজ সম্পর্ককে যেভাবে হালকা করে দেখানো হয়, এটা আমরা কীভাবে নেই? এই হারাম বিষয়টাকি সিরিয়ালের প্রভাবে আমাদের কাছে হালকা হয়ে উঠে?

৬। সর্বশেষ কথা, এই বিষয়ে যারা ধুমধাম ফয়সালা শুনিয়ে দিচ্ছি, একশো একটা শক্ত যুক্তি হাজির করছি, তারা কি এই বিষয়ে কথা বলার অথরিটি? যদি না হই, তাহলে আমরা কি এই বিষয়ে কোনো প্রাজ্ঞ আলেমের সাথে কথা বলেছি? না বললে কেন বলিনি?

এই প্রশ্ন ও পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরলাম। কোনো কিছু প্রমোট করার আগে এবং অন্যকে উৎসাহ দেয়ার আগে আমরা এই বিষয়ে আরেকটু চিন্তাভাবনা করতে পারি। শেষ করার আগে প্রিয় ভাই Omar Ali Ashraf এর একটা কথা উদ্ধৃত করবো, যা তিনি গতকাল এক লেখায় লিখেছেন,

‘যে জাতিকে জাগাতে কুরআনের আদেশ পারে না, রাসুলের হাদিস পারে না, সিরিয়া, ইরাকসহ বিধ্বস্ত জনপদগুলোতে মুসলামানের লাশ আর কান্না পারে না, পারে শুধু কিছু সিরিয়াল, তাদের ইনসাফের প্রতি আল্লাহ রহম করুন’।

Facebook Comments

Related posts

বাংলাভাষায় রচিত ও অনূদিত সিরাতগ্রন্থ : পরিচিতি ও পর্যালোচনা | মাহদি হাসান

সংকলন টিম

আলি নদভির সিরাতচর্চা | শারাফাত শরীফ

আকিদার মৌলিক বিষয়াদি : কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে | হাবিব আফনান

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!