১.
উমাইর ঘোড়ার পিঠে বসে আছে। ঘোড়ার পিঠে বসার জন্য তৈরি করা আসন বেশ শক্ত ধরনের হয়েছে, বসে তেমন আরাম পাওয়া যাচ্ছে না। তার বিরক্তি ক্রমেই বাড়ছে। সূর্যের তীব্র উত্তাপ চামড়াকে ঝলসে দেবে মনে হয়। চাদরটার উপরের অংশ মাথায় আরো ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিলো সে। লম্বা চাদরের নিচে ইস্পাতের তলোয়ার লুকানো, বাইরে থেকে দেখে বুঝতে পারার কথা নয়। চাবুক মারলো উমাইর, সাথে সাথে ঘোড়াটা ছুটতে শুরু করলো ধুলো উড়িয়ে। উমাইরের পিপাসা পেয়ে গেল। পানি খাওয়া দরকার। সাথে পানির মশক আনা হয়নি। পানির অভাবে পড়তে হচ্ছে এখানে আসার পর থেকেই। বেশ কয়েকটি কূপ থাকলেও একটা থেকেও পানি সংগ্রহ করা সম্ভব না, কূপগুলো দখল হয়ে গেছে আগেই। পানি সাবধানে খরচ করতে হচ্ছে তাদের।
ঘোড়া কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রতিপক্ষের সেনা ছাউনিতে পৌঁছে গেল। ক্ষিপ্রতার সাথে সতর্ক দৃষ্টি মেলে চারদিক দেখতে লাগলো উমাইর। কারো চোখে পড়ার আগেই বেরিয়ে যেতে হবে এখান থেকে। দূরে কয়েকজনকে চোখে পড়ছে। নিরস্ত্র অবস্থায় হাঁটাচলা করছে লোকগুলো, অথচ প্রত্যেকের চোখেই অদ্ভুত এক দৃঢ়তা। উমাইর ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে দিলো। দ্রুত নিজের শিবিরে পৌঁছুতে হবে। রেকি করার কাজ আপাতত শেষ।
২.
সাদ উঁচু টিলার দিকে তাকিয়ে আছেন। একটা তাঁবু খাটিয়ে ফেলতে হবে টিলার উপর। সূর্যের উত্তাপে খোলা ময়দানে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কষ্টকর, ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মাথার উপর শীতল ছায়া দরকার। তাছাড়া টিলার উপর থেকে পুরো প্রান্তরটা দেখা যায়। তাঁবু তৈরির জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা পাওয়া যাবে না। কিছুদিন আগে ভরা মজলিসে সেনাপ্রধানকে লক্ষ্য করে তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! যদি আপনি বলেন ঘোড়া ছুটিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে, তবে আমরা তাই করবো।’ সেনাপ্রধান অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন তার সাহসী শব্দমালায়।
ঘোড়া ছুটিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়ার প্রয়োজন হবে না, তার প্রশ্নও আসছে না। তাদের কাছে ঘোড়া আছেই মাত্র দুটি। শত্রুদের কাছে ঘোড়া আছে একশর কাছাকাছি, উট আছে কয়েকশ।
সাদ বিন মুয়ায তাঁবু তৈরির নির্দেশ দিলেন। তাঁবুতে অবস্থান করবেন মুসলিম বাহিনীর সেনাপ্রধান। অদ্ভুত সুন্দর তাঁর কণ্ঠ, কথা বলার সময় যেন গমগম করে পুরো সমাবেশ। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে ইচ্ছে হয় তার বক্তৃতা। এই তো, যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার সময় তাঁর জাদুকরী ভাষণে মাত্র তিনশ তের জন যোদ্ধা সিদ্ধান্ত নিলেন এক ব্রিগেড শত্রুসেনার সাথে অসম লড়াইয়ে নামার। সাদের বন্ধু মিকদাদ সবার সামনে বলেছিলো, ‘আপনি শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করুন। আমরা চারদিক থেকে তাদের উপর হামলে পড়বো।’ পবিত্র কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেছিলেন তাদের সেনাপ্রধান, ‘তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করছিলে স্বীয় প্রভুর নিকট, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদেরকে সাহায্য করব।’ [সূরা আনফাল, আয়াত ৯]
শত্রুদের শেষ করে দেয়ার জন্য এই তিনশ তের জন সৈন্য আজ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, হয় নিজেরা মরবে, নাহয় শত্রুদের শেষ করবে। অথচ মাত্র একবছর আগেও এই শহরের অবস্থা ছিল ভিন্ন। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-ফ্যাসাদ আর গৃহযুদ্ধেই বছর ঘুরতো তাদের। এমন সময় আল্লাহ্র রহমত হয়ে আসলেন আব্দুল্লাহর ছেলে মুহাম্মাদ, মদিনা সনদ প্রণয়ন করলেন, শাসন করতে শুরু করলেন মদিনার রাষ্ট্রপতি হিসেবে। মদিনায় নেমে এসেছিলো এক টুকরো জান্নাত!
৩.
মুসলিম বাহিনীর শিবির স্থাপন করা হয়েছে বদর প্রান্তরের শেষভাগে অবস্থিত কূপের পাশেই। পানির জন্য চৌবাচ্চা নির্মাণ করা হয়েছে, কূপের পানি জমা হচ্ছে চৌবাচ্চায়। পানির অভাবে কুরাইশরা বেশ বিপদেই আছে। উমাইর মুসলিম শিবিরের খবর সংগ্রহ করে এনেছে। প্রায় তিনশর মতো সৈন্য আছে মুসলিম পক্ষের, সাথে আছে মাত্র দুইটি ঘোড়া, ছয়টি তলোয়ার আর সত্তরটি উট। কুরাইশদের তুলনায় একেবারেই অল্প। স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়লো কুরাইশ শিবিরে। মুহাম্মাদের বাহিনী তাহলে এখনো তেমন শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি।
আবু জাহাল নিজের তাঁবুতে অস্ত্রশস্ত্র সাজাচ্ছে। তার লোহার বক্ষবর্মটা বেশ মজবুত, শত্রুপক্ষের তলোয়ারের আঘাত কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না এই বর্মের। বর্মটা পরে নিলো সে। তলোয়ারটা হাতে তুলে পরীক্ষা করলো, বেশ ভারি। বাতাসে বারকয়েক তলোয়ারটা ঘুরিয়ে আনলো সে, বাতাস কাটার আওয়াজ কানে মধুবর্ষণ করলো। এমন সময় বাইরে বেশ চিৎকার-চেঁচামেচি কানে আসলো আবু জাহালের। বিরক্ত হয়ে তাঁবুর পর্দা উঠিয়ে বাইরের দিকে তাকালো সে। হাকিম ঢুকলো তার ঘরে। আবু জাহাল কৌতূহলী হয়ে হাকিমকে বললো, ‘ঘটনা কী রে?‘
হাকিম বললো, ‘উতবা লোকেদের যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার কথা বোঝাচ্ছে।’
আবু জাহাল অবাক হয়ে বললো, ‘উতবা এমনটা কেন করছে?’
‘উমাইরের বক্তব্য উতবার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। সে বলেছে, মুসলমানদের একদল লোককে দেখলাম, তাদের কাছে কয়েকটা তলোয়ার ছাড়া কিছুই নেই। অথচ তাদের প্রত্যেকেই আমাদের অন্তত একজনকে হলেও হত্যা করার আগে মরতে রাজি না। যদি তারা প্রত্যেকে আমাদের একজন করেও হত্যা করার সংকল্প করে, তাহলে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়?
‘বকরীর বাচ্চা!’ আবু জাহাল মনে মনে গাল দিলো উতবাকে। তারপর হাকিমকে ইশারা করলো চলে যেতে। হাকিম যাওয়ার পর ডেকে পাঠালো নিজের এক ভৃত্যকে। তাকে দিয়ে খবর পাঠালো আমিরের কাছে। আমিরের ভাই কিছুদিন আগে মুসলিমদের সাথে এক সংঘাতে নিহত হয়েছে। তাকে উত্তেজিত করে তুলতে পারলেই কুরাইশদের রক্ত গরম করে তোলা যাবে। আবু জাহালের ভৃত্য গিয়ে আমিরকে বললো, ‘তোমার ভাইয়ের শরীর থেকে তাজা রক্ত ঝরতে দেখেছো তুমি। অথচ এখন? উতবা সৈন্যদের রক্তের বদলা নেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। কুরাইশ সৈন্যদের মনে করিয়ে দাও তোমার ভাইয়ের রক্তের বদলা নেবার কথা।’
আবু জাহাল কুরাইশ শিবিরে রটিয়ে দিলো, উতবার ছেলে আবু হুযাইফা মুসলমান হয়ে মুহাম্মাদের বাহিনীর সাথে যোগ দিয়েছে। ছেলের নিরাপত্তার চিন্তায় অস্থির হয়েই উতবা যুদ্ধ থেকে লোকেদের বিরত থাকতে বলছে। উতবা লজ্জা পেয়ে গেল। জাতীয়তাবাদী চিন্তা তার রক্তে মিশে আছে। উতবা ঘোষণা দিলো, মুহাম্মাদের সাথে চূড়ান্ত বোঝাপড়া না হওয়া পর্যন্ত সে ঘরে ফিরে যাবে না।
৪.
আরবে যুদ্ধের নিয়ম হচ্ছে, শুরুতেই দ্বন্দ্বযুদ্ধ হবে। দ্বন্দ্বযুদ্ধের জন্য মুসলিম বাহিনী থেকে উবাইদা, রাসুলের চাচা হামযা আর রাসুলের চাচাতো ভাই আলি এগিয়ে গেলেন। কুরাইশদের পক্ষে এগিয়ে গেল সেনাপতি উতবা, উতবার ছেলে ওয়ালিদ আর উতবার ভাই শায়বা। মুসলিমদের তলোয়ারের আঘাতে তিনজনেরই মৃত্যু হলো। মুসলিমদের পক্ষে উবাইদা আহত হলেন। তিনদিন পর তার মৃত্যু হয়।
দ্বন্দ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হলো সর্বব্যাপী যুদ্ধ। সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হলো মুসলিমদের সাথে কুরাইশরা।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার তাঁবুতে বসে যুদ্ধের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এখান থেকে যুদ্ধের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। তাঁর নির্দেশে মুসলিম তীরন্দাজরা কুরাইশ বাহিনীকে লক্ষ্য করে তীর ছুঁড়তে শুরু করলো। সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হতেই তিনি আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে বললেন, ‘হে প্রভু! যদি এ দলটি আজকে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তবে পৃথিবীর বুকে আপনার ইবাদাত করার মতো কেউ থাকবে না।’
বারবার তাঁবু থেকে নিচে নেমে আসছেন আল্লাহ্র রাসুল। মুসলিমদেরকে বীরবিক্রমে লড়াই করার জন্য অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। একসময় তিনি উচ্চস্বরে বললেন, ‘ সেই আল্লাহর শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ নিবদ্ধ! আজকের দিনে যে ব্যক্তি ধৈর্যের সাথে আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করে নিহত হবে, আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’
রাসুলের সহচর ইবনে হিমাম খেজুর খাচ্ছিলেন। রাসুলের ঘোষণা শুনে তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘আমার থেকে জান্নাতের দূরত্ব কতটুকু?” রাসুল বললেন,“ কাফিরদের নেতাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পরিমাণ।” ইবনে হিমাম তার হাতের খেজুরগুলো তিনি দূরে নিক্ষেপ করলেন এবং যুদ্ধে লিপ্ত হলেন।
আল্লাহ্র রাসুল এক মুঠো মাটি নিয়ে কাফিরদের উদ্দেশে নিক্ষেপ করে বললেন, “তোমাদের মুখমণ্ডলসমূহ বিকৃত হোক!” এরপর সম্মিলিত আক্রমণের নির্দেশ দিলেন। মুসলিমরা স্লোগানে স্লোগানে যুদ্ধক্ষেত্র মুখরিত করে তুললো। মুসলিমদের সমরনৈপুণ্যের কাছে মক্কার কুরাইশ বাহিনী খুব দ্রুত পরাস্ত হতে শুরু করলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লো কুরাইশরা।
আবু জাহালের সামনে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান করলেন মুয়ায ইবনে আমর ও মুয়ায ইবনে আফরা। কুরাইশদের সর্বাধিনায়ক আবু জাহাল তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই মুয়ায আবু জাহালকে হত্যা করেন।
আফ্রিকান নিগ্রো বিলাল ইসলামের আবির্ভাবের আগে ছিলেন ক্রীতদাস। মনিবের অত্যাচারে তার জীবন ছিল অতিষ্ঠ। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি মদিনায় হিজরত করেন।
তার সাথে লড়াই হলো তার সাবেক মনিব উমাইয়া ইবনে খালাফের। বিলালের আঘাতে টুকরো হয়ে গেলো উমাইয়ার দেহ। উমর ইবনে খাত্তাবের হাতে তার মামা আস ইবনে হিশাম ইবনে মুগিরা নিহত হলো।
বিকেলের মধ্যেই যুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি ঘটলো। কুরাইশ পক্ষের সত্তরজন নিহত হলো, যার মধ্যে চব্বিশজনই ছিল কুরাইশদের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা। সত্তরজন কুরাইশ বন্দি হলো মুসলিমদের হাতে। বাকিরা পালিয়ে গেল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে। মুসলিমদের মধ্যে চৌদ্দজন শহিদ হলেন। বদরের ময়দানে তাদের দাফন করা হলো। কুরাইশদের লাশগুলোকে একটি কূপে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
কুরাইশদের পরাজয়ের সংবাদ মক্কায় পৌঁছে দেয়া হলো। মক্কার ঘরে ঘরে শুরু হলো শোকের মাতম। মক্কার নতুন নেতা নির্বাচিত হলেন আবু সুফিয়ান। তিনি ফরমান জারি করলেন, মক্কায় কেউ নিহতদের জন্য শোক করতে পারবে না। মদিনার মুসলমানরা আনন্দিত হয় এমন কোনো কাজ যেন মক্কার লোকেরা না করে।
মুসলিমদের অবিশ্বাস্য বিজয়ের সংবাদ মদিনায় পৌঁছে দেয়ার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাকে মদিনার দিকে পাঠালেন। কুরাইশ নেতাদের লাশের দিকে লক্ষ করলেন তিনি। এই সেই নিকৃষ্ট লোকেরা, যারা প্রত্যেকেই তাঁর আত্মীয়, অথচ তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে এসেছিলো। আল্লাহ্ তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছেন। তারা নিজেরাই নিহত অবস্থায় লাশের স্তূপে পড়ে আছে!
মুসলিমরা আল্লাহ্কে ধন্যবাদ জানালো। আলহামদুলিল্লাহ্ ধ্বনি উঠতে লাগলো তাদের কণ্ঠে।
৫.
আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মদিনায় নিজের বাসায় বসে আছে। তার হাতে খেজুরের একটি ছড়া, বেশ আয়েশ করে খেজুর খাচ্ছে সে। বসন্তকাল চলছে, পাকা খেজুর কাটা হচ্ছে হরহামেশাই। একটা খেজুর খেয়ে তার বিচি পাশের জমিতে ছুঁড়ে মারলো সে। আব্দুল্লাহর সাথে বসে আছে তার এক সঙ্গী। বদরের ময়দানে মক্কার কুরাইশদের সাথে মদিনার মুসলমানদের তীব্র যুদ্ধ চলছে। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মুসলমানদের লক্ষ করে মনে মনে একটা গাল দিলো। মুহাম্মাদের প্রতি তার রাগ হচ্ছে। হবে নাইবা কেন? মুহাম্মাদ আসার আগ পর্যন্ত তাকেই মদিনার ভবিষ্যত নেতা হিসেবে ভাবা হতো। মদিনায় তার প্রভাব দিন দিন বাড়ছিলো। হঠাৎ মক্কা থেকে একদল রিফিউজি আসলো, সাথে মুহাম্মাদ নামে এক নেতা। মুহাম্মাদ বোধহয় জাদু জানে, নিজের ভাষণ শুনিয়ে মদিনার লোকেদের এমনভাবে বশ করলো যে, মুহাম্মাদকে মদিনার সবাই একবাক্যে নিজেদের নেতা মেনে নিলো। ভালো হয়েছে, মরুক এখন। আবু জাহাল আর তার সেনাবাহিনীকে তো এখনো চিনতেই পারেনি এরা, তলোয়ারের একেকটা কোপে সব কয়টার গর্দান যাবে এখন। কিংবা কে জানে, এতক্ষণে হয়তোবা মুহাম্মাদ আর তার তিনশ সঙ্গী মরে পড়ে আছে বদরের প্রান্তরে। আবু জাহাল নিশ্চয়ই তার দলবল নিয়ে আঙুরের মদের আসর বসিয়েছে, মুহাম্মাদের মৃতদেহ ঘিরে উল্লাস চলছে। তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের ঠোঁটে। আসলে, এদের দ্বীন এদের ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে।
আরেকটা খেজুর মুখে দিলো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই। দূরে ধুলো উড়তে দেখা যাচ্ছে। কে যেন ঘোড়া ছুটিয়ে এগিয়ে আসছে। আরে, আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা না? মুসলিমরা তবে সব মরে সাফ হয়ে গেছে নাকি? সে একাই পালিয়ে এসেছে নিশ্চয়ই?
পানির পাত্র নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেলো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই। মুসলিমরা নিশ্চয়ই যুদ্ধে হেরে গেছে। এক হাজার কুরাইশ সৈন্যের সামনে নিরস্ত্র তিনশজনের হারা ছাড়া উপায়ই নেই। এখন এসব দাড়িওয়ালা শয়তানদের হাত থেকে দেশটা রক্ষা পেলো, যাক!
মদিনার ইসলামি সংবিধান সরিয়ে নতুন সেক্যুলার সংবিধান কেমন হবে, সেটা ভাবতে ভাবতে চিন্তায় ডুবে গেল মদিনার মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই।
আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) তখন ঘোড়া ছুটিয়ে এগিয়ে আসছেন পরম তৃপ্তিতে!
(যুদ্ধের বর্ণনা, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবিদের বর্ণনা বিশুদ্ধ সূত্র থেকে গৃহীত।
তথ্যসূত্র:
১. মুখতাসারু যাদুল মা’আদ; ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম র.
২. ইসলামে প্রতিরক্ষা কৌশল; জেনারেল আকবর খান)
Facebook Comments