হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলি থানভী (র) এর জন্ম ১৮৬৩ সালে, ভারতের উত্তর প্রদেশে। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম দিকের ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম। পড়াশোনা শেষে তিনি কানপুরের ফয়জে আম মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। সারাজীবন তিনি লেখালেখি ও বয়ানের মাধ্যমে মানুষের মাঝে দ্বীনের দাওয়াত প্রচার করেছেন। একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি ছিলেন সুপরিচিত। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যান। তাঁর বিভিন্ন রচনাবলী ও আলোচনা থেকে সংকলন করা কিছু কথা নিম্মে তুলে ধরা হল।
আজকে ৬স্ট পর্ব দেওয়া হল…
৩১। মানুষ এখন স্বাধীনতা চায়। তারা রবের আদেশ ও বিধিনিষেধ থেকেও স্বাধীন থাকতে চায়। অথচ রবের আনুগত্য ও গোলামির মধ্যেই রয়েছে জীবনের পূর্নতা ও সাফল্য।
৩২। বদদ্বীনদের শত্রুতা মারাত্মক হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে না, ফলে তাদের শত্রুতারও কোনো মাপকাঠি থাকে না। তার যা ইচ্ছা করে বসে, যা ইচ্ছা বলে ফেলে ।
৩৩। অনেকে তাদের রাগ সম্পর্কে জানায়। আমি তাদের জিজ্ঞাস করি রাগ কি মানুষের ইচ্ছাধীন নাকি অনিচ্ছাকৃতও আসে? তারা বলে এটি অনিচ্ছাকৃত। তখন বলি, আচ্ছা রাগ আসার পর রাগের কারণে কোনো কাজ করে বসা এটিও কি অনিচ্ছাকৃত? নাকি এতে ইচ্ছা থাকে? তারা বলে, এটি তো ইচ্ছাধীন। তখন বলি, তাহলে রাগ আসুক। রাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ না করলেই তো হয়। আর রাগ আসলে হাদিসে যেসব নির্দেশনা আছে তা আমল করে নাও। যেখানে থেকে রাগ হচ্ছে সেখান থেকে সরে যাও। যার উপর রাগ হচ্ছে সাময়িক সময়ের জন্য তাঁর কাছ থেকে সরে যাও।
– নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়, তাহলে তার উচিত সাথে সাথে বসে পড়া। নইলে শুয়ে পড়া। (আবু দাউদ, ৪৭৬৪)
৩৪। অনেকে চিন্তা পেরেশানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আমি তাদেরকে বলি যে বিষয়ে চিন্তা বা পেরেশানি হচ্ছে তা বারবার স্মরণ করা থেকে বিরত থাকো। অন্য কিছু চিন্তা কর। এতে দ্রুত পেরেশানি দূর হবে।
– কিছু পেরেশানি আছে এমন যার কোনো সমাধান নেই। হজরত থানভী এখানে এমন ধরণের পেরেশানি সম্পর্কে বলেছেন। কিছু বিষয় আছে যা চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুলে যায়। সেক্ষেত্রে তো চিন্তা করাই কাম্য।
৩৫। দুনিয়া পরিশ্রমের জায়গা। বিশ্রামের জায়গা আখেরাত। মনে রাখবেন, আখেরাতে যে বিশ্রামের সুযোগ পাওয়া যাবে তার জন্য দুনিয়াতে নেক আমলের মাধ্যমে পরিশ্রম করা জরুরি। দুনিয়ার এই পরিশ্রম আখেরাতে বিশ্রামের সুযোগ করে দিবে।
৩৬। অনেকের ইলম আছে, কিন্তু সে অনুপাতে আমল নেই। তাদের অবস্থা হলো এমন এক সৈনিকের মত, যার কাছে অস্ত্র আছে কিন্তু সে শত্রুর মুখোমুখি হয়ে তা ব্যবহার করলো না। ইলম হলো অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়ে শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে আমলের মাধ্যমে। যদি আমলই না থাকে তাহলে ইলম নামক এই অস্ত্র কোনো কাজেই আসবে না। আজকাল লোকজন বুজুর্গদের লিখিত বইপত্র পড়ার আগ্রহ রাখে। কিন্তু তাদের আমলের আগ্রহ কমে গেছে।
৩৭। শাসক শ্রেনীর লোকজন অনেক সময় আলেমদের ডেকে বসে। আলেমদের উচিত এসব দাওয়াত গ্রহন করার আগে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা। ভেবে দেখতে হবে, সেখানে গিয়ে কোনো হক কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হয় কিনা, কিংবা দ্বীনের কোনো বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিতে হয় কিনা। যদি এমন সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে যাওয়া যেতে পারে। তবু সতর্ক থাকাই ভালো। তাদের সান্নিধ্য ক্ষতি থেকে খালি নয়।
৩৮। অনেকে সোহবত জিনিসটি বুঝতে চায় না। তারা বলে অমুক আলেমের সোহবতে থাকলাম, কিন্তু দিলের ভিতর কোনো হালত বা বিশেষ অবস্থা এলো না। আসলে হাল আসা সোহবতের উদ্দেশ্য নয়। সোহবতের উদ্দেশ্য হলো, ধীরে ধীরে দুনিয়ার প্রতি মহব্বত কমে যাওয়া, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাওয়া। যদি এটি অর্জিত হয় তাহলে বুঝা যাবে সোহবত দ্বারা ফায়দা হয়েছে। হ্যা, কখনো যদি অন্তরে হাল বা বিশেষ অবস্থা আসে সমস্যা নেই। তবে মনে রাখতে হবে এটি সোহবতের মূল উদ্দেশ্য নয়, বা সোহবতের ফায়দা বুঝার মাপকাঠিও নয়।
৩৯। অহংকারের একটি পরিনতি হলো অন্যদের সাথে দুরত্ব বাড়তে থাকে। অহংকারী একা হয়ে যায়।
৪০। অনেক সময় বাহ্যিকভাবে বিনয় দেখা গেলেও ভেতরে অহংকার লুকানো থাকে। অনেকে মুখে মুখে বলে থাকে, আমি অধম, আহকার। যদি তখন তাদেরকে বলা হয়, জি ভাই আপনি আসলেই অধম, আহকার। তখন দেখা যাবে তাদের চেহারা পরিবর্তিত হয় কিনা। যদি তারা এতে কষ্ট পায় তাহলে বুঝা যাবে এই বিনয় বাহ্যিক। মন থেকে বলেনি।
Facebook Comments