সংকলন
শিয়াদের আকিদা
আকিদা মাহদি হাসান কাসেমি

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত সম্পর্কে শিয়াদের আকিদা-১ | মাহদি হাসান কাসেমি

কিতাব: কাশফুল আসরার
মূল: সাইয়্যেদ হুসাইন আল-মুসাওয়ি
ভাষন্তর: মাহদি হাসান কাসেমি

শিয়া ফকিহ ও মুজতাহিদদের মত ও তাদের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদি গভীরভাবে অধ্যায়নের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হওয়া যায় যে, শিয়াদের কেবল একটাই শত্রু। আর তা হলো আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত। এই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতকে শিয়ারা কয়েকটি নামেই অভিহিত করে থাকে। তার মধ্যে দুটো হলো আম্মা আর নাওয়াসিব। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত বংশগতভাবেই অপদস্ত ও অপবিত্র—শিয়াদের আকিদার মধ্য এটাও অন্যতম। এ কারণেই তারা যখন পরস্পরকে গালি দেয়, বলে: (غطم سني فى قبر ابيك) তোর বাপের কবরে সুন্নী অনুপ্রবেশ করুক।

শিয়াদের দৃষ্টিতে একজন সুন্নী এ পরিমাণ নাপাক যে, সে যদি হাজার বারও গোসল করে, তবে না সে পাক হবে না তার নাপাকি দূর হবে!
আমার সর্বদাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ের একটি ঘটনা মনে পড়ে। আমার পিতা সর্বদাই নেক কাজ করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতেন। একবার তিনি বাজারে গেলেন এবং একজন মুসাফির পেলেন। নেকি কামানোর অধিক আগ্রহে তিনি তার রাতের অবস্থান ও থাকার জন্য আমাদের গৃহে নিয়ে এলেন। রাতের খাবারের পর কথাবার্তার মাধ্যমে তার সুন্নী হওয়ার কথা জানতে পারলেন। যিনি কোনো এক কাজের তাগিদে নাজফে এসেছেন আবার সকাল হতেই চলে যাবেন। যথারীত রাত্রি যাপন করলেন। সকালে যখন নাস্তা খেয়ে তিনি রওনা হওয়ার ইচ্ছে করলেন, বাবা তার পাথেয়স্বরূপ কিছু টাকাও হাদিয়া দিলেন। মেহমানও আমাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চলে গেলেন। তার গৃহ থেকে বের হওয়ামাত্রই বাবা তার রাত্রিযাপনের বিছানা পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। তার খাবারের জন্য প্রদানকৃত পাত্রও খুব ভালোভাবে ধৌত করতে বললেন। কারণ তাদের আকিদাই হলো—সুন্নী নাপাক।

ঘটনাটা আমি উদাহরণস্বরূপই উল্লেখ করলাম। কারণ প্রতিটা শিয়া, তাদের মুজতাহিদ উলামায়ে কিরাম এবং ফুকাহাদের আকিদাই হলো সুন্নী—কাফির, মুশরিক ও শুকুরের মতোই নাপাক।

আহলুসু সুন্নাত সম্পর্কে শিয়াদের কতক আকিদা নিম্মে উল্লেখ করা হলো:

সুন্নীদের সঙ্গে মতবিরোধ করা ওয়াজিব:
১. ক. সুদুক আলি ইবনু আসবাত থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি একবার ইমাম রেযা আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করলেন: আমি যদি কোনো মাসআলার সম্মুখীন হই, আর সে শহরে কোনো শিয়া না থাকে, তবে আমার করণীয় কি? তিনি বললেন: সে শহরের আহলুস সুন্নাহের বড় ফকিহের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে, সে যে ফতোয়া দিবে, তার বিপরীত আমল করবে। কারণ এটাই হক। (উয়ুনু আখবারির রিযা—১/২৭৫)

খ. হুসাইন ইবনু খালিদ ইমাম রেযা থেকে বর্ণনা করেন, তারাই আমাদের (শিয়া) অনুসারী, যারা আমাদের নির্দেশ মান্য করে এবং আমাদের মত গ্রহণ করত: আমাদের শত্রু আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বিরোধীতা করে। যারা এমনটা না করবে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। (আল ফুসুলুল মুহিম্মাহ—২২০)

গ. মুফাদ্দল ইবনু আমর বর্ণনা করেন, সে ব্যক্তির দাবি মথ্যিা, যে বলে সে শিয়া অথচ সমর্থন করে সুন্নী। (আল ফুসুলুল মুহিম্মাহ—২২০)

পর্ব-২. আহলুস সুন্নাহর কৃতকাজের অনুসরণ করা অবৈধ

যে কাজ আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কাজের সঙ্গে সাদৃশ্যতা রাখে, শিয়াদের কাছে সে কাজ করাই অবৈধ। —এ সম্পর্কে হারমালী ‘ওসায়েলুস শিয়া’ গ্রন্থে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায়ই লিপিবদ্ধ করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন যে, আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরোধীতা করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদিস মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সুতরাং ইমাম সাদিক বলেন: যখন দুটো হাদিসের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হবে, তখন হাদিসদ্বয়কে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের হাদিসের সঙ্গে মিলিয়ে নিবে। সুতরাং যে হাদিস তাদের হাদিস অনুযায়ী হবে, তাকে পরিত্যাগ করবে আর যেটা তাদের বিরোধী হবে, গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন: মতভেদপূর্ণ দুটো হাদিসের ক্ষেত্রে যেটা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিপরীত হয়, তার ওপরই আমল করো।
তিনি আরো বলেন: বিরোধপূর্ণ হাদিসের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরোধী হাদিসই গ্রহণ করো। কেননা হক তাদের বিপরীতই থাকে।

তিনি এটাও বলেন: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত যে আকিদা ও আমলের ওপর অবস্থান করে, আল্লাহর কসম! সেটা তোমাদের আকিদা ও আমল না। কাজেই তোমরা তাদের বিরোধীতা করো। কেননা তাদের কাছে বাস্তবিক কিছুই নেই।

ইমাম সাদিক আরো বলেন: আল্লাহর কসম! যে ব্যক্তি আমাদের বিরোধী তথা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসরণ করে, তার মধ্যে কল্যাণ বলতে কিছুই নেই। তবে যারা আমাদের পথে চলবে, তাদের অবশ্যই আমাদের শত্রুদের বিরোধীতা করতে হবে। কিন্তু যারা (শিয়া হয়েও) আমাদের শত্রুদের কথা বা কাজকে সমর্থন করবে, তাদের সঙ্গে আমাদের না কোনো সম্পর্ক আছে না আমরা তার কোনো কল্যাণের জিম্মাদার।

তিনি এটাও বলেন যে, বিরোধপূর্ণ দু রেওয়ায়েত থেকে তাদের বিরোধী মতকে গ্রহণ করো আর সমর্থক মতকে পরিত্যাগ করো।
ইমাম রিযা বলেন: যখন বিরোধপূর্ণ দুটো হাদিসের সম্মুখীন হবে, তখন আহলুস সুন্নাহর বিরোধীটা গ্রহণ করবে আর সম অর্থের হাদিস পরিত্যাগ করো।

ইমাম সাদিক বলেন: আল্লাহর শপথ! ইস্তিকবালে কিবলার মাসআলা ব্যতীত আহলুস সুন্নাতের কাছে কোনো হকই নেই। (আল ফুসুলুল মুহিম্মাহ—২২৫, ২২৬)

হারমালি বলেন: এই প্রকার রেওয়ায়েত এতো বেশি বর্ণিত হয়েছে যে, তার সীমা মুতাওয়াতিরের সীমাকেও ছাড়িয়ে গেছে। অথচ মুতাআখখিরিনে শিয়াগণ ধারণা করেন, শিয়াদের সমস্ত দলিলই খবরে ওয়াহিদ নির্ভর। সত্যিই তাদের ওপর বিস্ময়। কাজেই তাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, এ সব মুতাওয়াতির রেওয়ায়েত দ্বারা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কিতাবে বিদ্যমান সব উসূল এবং নিয়মাবলী প্রত্যাখ্যাত হয়ে যায়। (আল ফুসুলুল মুহিম্মাহ—৩২)

আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত সম্পর্কে শিয়াদের আকিদা (৩য় পর্ব)

আহলুস সুন্নাহের সঙ্গে ঐক্য অসম্ভব

সাইয়্যেদ নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়িরি বলেন: আহলুস সুন্নাহর সঙ্গে আমরা কোনোদিক থেকেই একমত নই। না তাদের রবের ওপর, না নবি না ইমামের ওপর। কেননা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের রব তিনি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার নবি আর আবু বকর তার খলিফা। তবে রব ও নবি সম্পর্কে আমরা এমনটা বলি না। বরং বলি নবির খলিফার ব্যপারে। কেননা নবির খলিফাই রব। আর আবু বকর না আমাদের রব না তার নবি আমাদের নবি ন। (আল আনওয়ার—২/২৭৮)

সাইয়্যেদ নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়িরি স্বীয় কিতাবে এ সম্পর্কে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় কায়েম করেন। যেখানে তিনি ইমামিয়্যাহকে দ্বীনের হাকিকত বলে উল্লেখ করে আহলুস সুন্নাহর সঙ্গে বিরোধীতা ওয়াজিব হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন।

কিন্তু বাস্তবতা তো এই যে, আল্লাহ তাআলা বিশ্ব জগতের পালনকর্তা। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নবি আর আবু বকর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলিফা। যখন এ কথার প্রমাণিকতা হয়ে গেছে, তখন বুঝা যায় যে নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়িরি বড় ভুলের মধ্যে ছিলেন। কেননা তিনি এই রব ও তার রাসুলকে অস্বীকার করেন। আমি সায়্যিদ নিয়ামাতুল্লাহ জাযায়িরির নাম কিংবা কোনো কিতাবের হাওয়ালা উল্লেখ ব্যতীতই ইমাম খোয়ির কাছে (আবুল কাসেম খোয়ি) এমন আকিদা পোষণকারী সম্পর্কে মাসআলা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি তখন বললেন: এমন ব্যক্তি আল্লাহ, তার রাসুল ও আহলে বাইতকে অস্বীকারকারী।

ইমাম সুদুক স্বীয় গ্রন্থ ‘আসালুশ শারায়ে’ এর মধ্যে এ সম্পর্কে একটি অধ্যায় কায়েম করেছেন। আইম্মায়ে কিরাম যাকে গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যেমন আবু ইসহাক আরজানি থেকে মারফু সুত্রে একটি হাদিস রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেন: আবু আবদুল্লাহ বলেছেন: আপনি কি জানেন আমরা কেনো আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরোধী মতকে গ্রহণ করা ওয়াজিব সাব্যস্ত করি? আমি বললাম: না। তিনি বললেন: আলি আল্লাহ তাআলার প্রকৃত দ্বীনকে এ কারণে প্রকাশ করেন নি, যেন মানুষ এ সত্য দ্বীনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন না করে। কারণ তখন সবাই এ দ্বীনের বিপরীত আমল নিমগ্ন ছিলো। কাজেই লোকজন যখন আলির কাছে মাসআলা জিজ্ঞেস করতো আর তিনি তাদের বিপরীত ফতোয়া দিতেন, তখন জনসাধারণের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে যেতো।

এ কিচ্ছা পড়তেই তাৎক্ষণিক কতক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। কোনো মাসআলার ক্ষেত্রে যদি অত্যবশ্যকীয়ভাবে জানা যায় যে, আহলুস সুন্নাত সত্যের পথে আছে, তখন কি আমাদের জন্য তাদের বিরোধীতা করা ওয়াজিব? এ প্রশ্নের উত্তরে মুহাম্মাদ বাকির আসসদর আমাকে বলেছিলেন, হ্যাঁ, তখনো তাদের বিরোধীতা করা আমাদের জন্য ওয়াজিব। যদিও এক্ষেত্রে তাদের বিরোধীতা করা ভুল, কিন্তু তাদের সমর্থন করা এরচেয়েও বড় ভুল।

শিয়াদের এ অপছন্দের ধারা আজ থেকে শুরু হয় নি। আবার এ ব্যপারে তাদের কখনো শীথিলতা করারও সম্ভাবনা নেই। বরং এটা এমন এক ঘৃণাবৃক্ষ, যার শিকড় প্রথম যুগ থেকেই এত গভীরে সমহিত হয়েছে যে, তার গোড়ার নাগাল পাওয়া অসম্ভব।

এ কথার দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হলো: মিকদাদ, সালমান ফারসি ও আবু যর গিফারি রদিয়াল্লাহু আনহুম ব্যতীত সমস্ত সাহাবীদের সঙ্গেই রয়েছে তাদের শত্রুতা। সুতরাং কুলায়নি আবু জাফর থেকে বর্ণনা করেন: রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর তিন সাহাবা ব্যতীত সমস্ত সাহাবাই মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলো। তারা হলো আবু যর, মিকদাদ ও সালমান। (রওযাতুল কাফি—৮/২৪৬)
অথচ ইহুদিদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কারা? তাদের উত্তর হবে: মুসার (আ.) আসহাবগণ। যদি খ্রিস্টানদের জিজ্ঞেস করা হয়, মাসিহের উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জামাআত কোনটি? তাদের উত্তর হবে ঈসার (আ.) হাওয়ারিগণ। কিন্তু শিয়াদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের আকিদামতে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি কারা? তারা বলবে মুহাম্মাদের সঙ্গীগণ।
চলবে…

নোটঃ লেখাগুলো মুহতারাম মাহদি হাসান কাসেমী সাহেবের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া। তাঁর লেখা ৩ পর্ব একসাথে এখানে সংকলন করা হয়েছে।

Facebook Comments

Related posts

মুরতাদ, যিন্দিক ও মুলহিদের পরিচয় (পর্ব-১) | আবূ উসামা জাফর ইকবাল

সংকলন টিম

শিয়া: ইছনায়ে আশারিয়াদের বিধান | মুফতি সালমান মানসুরপূরি

সংকলন টিম

আকীদার প্রাথমিক পাঠ : কিছু সরল সমীকরণ । হোযাইফা আওয়াদ

সংকলন টিম

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!