বিষয়: আমলের রুহানিয়াত কাকে বলে?
অনেক সময় আমরা মনে করি, এবাদত বা আমলের রুহানিয়াত হলো, অন্তরের মধ্যে এক বিশেষ কাইফিয়্যাত সৃষ্টি হওয়া। বিশেষ ভাব পয়দা হওয়া। এবাদতে স্বাদ ও লজ্জত অনুভূত হওয়া।
,
কিন্তু আমাদের হযরতওয়ালা ডা. আব্দুল হাই আরেফি রহ. বলতেন, এটা ভ্রান্ত ধারণা। এটা এবাদতের রুহ বা রুহানিয়্যাত নয়।
>
এবাদতের রুহানিয়্যাত ও প্রকৃত অবস্থা হলো আল্লাহর হুকুম রাসূল সা,এর সুন্নত তরিকায় পূরণ করা।
বিষয়টা বোঝানোর জন্য হযরত একটি উদাহরণ দিতেন। হযরত বলতেন,
.
মনে করুন, দুজন মানুষের মধ্যে একজন রিটায়ার্ড পার্সন। তার কোনো যিম্মাদারি-দায়িত্ব নেই। কোনো কাজ-কাম নাই।
এই লোক নামাজের খুব ইহতিমাম করে। নামাজের আযান হওয়ার সাথে সাথে ওযু করে নেয়। এরপর মসজিদের প্রথম কাতারে বসে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ে, তাহিয়্যাতুল ওযু পড়ে। এরপর সুন্নত নামাজ আদায় করে ফরজের অপেক্ষায় বসে থাকে। মোদ্দাকথা, দুনিয়ার সবকিছুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিবিষ্ট চিত্তে আল্লাহর এবাদত করতে থাকে। এভাবে সে নিজেকে আল্লাহর এবাদতে নিবেদন করে দেয়।
তো, এমন মানুষ যেহেতু ইহতিমামের সাথে ওযু করে নফল-সুন্নত পড়ে ফরজ নামাজ আদায় করছে। এজন্য তার নামাজে এক বিশেষ স্বাদ ও অনুভূতি লাভ হয়। সে অন্তরে মজা অনুভব করে।
.
আরেকজন ব্যক্তি। সে তরকারি বিক্রেতা। একটি ভ্যানে তরি-তরকারি সাজিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে। এভাবে সে স্ত্রী-সন্তানের জন্য রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে।
যখন আযান হয়ে যায়, তখন এই তরকারি-বিক্রেতা জলদি জলদি গ্রাহকদের বিদায় করে দিয়ে দ্রুত ওযু করে জামাতে হাজির হয়। একটু দ্রুত সুন্নত নামাজ পড়ে ফরজ সালাতে অংশগ্রহণ করে। তরকারির ডালা মসজিদের বাহিরে রেখে আসার কারণে তার মনে কিছুটা দুশ্চিন্তাও কাজ করছে। আবার তার মাথায় গ্রাহকদের সাথে যে কথাবার্তা বলেছে সেসবও এসে থাকে।
.
এই দোনো উদাহরণে দেখা যাচ্ছে, প্রথমজন, যিনি সব দায়িত্বমুক্ত হয়ে রিটায়ার্ডের জীবন যাপন করছেন, তার এবাদতেই রুহানিয়্যাত বেশি। যেহেতু সে সবকিছু থেকে অন্তরকে পৃথক করে আল্লাহর এবাদতে নিয়োজিত হয়েছেন সেহেতু বাহ্যিকভাবে তো মনে হয়, তার এবাদতই বেশি গ্রহণযোগ্য ও রুহানিয়্যাতপূর্ণ।
হযরতওয়ালা আব্দুল হাই আরেফি রহ. বলতেন, আমি বলি, দ্বিতীয়জনের রুহানিয়্যাত বেশি। কারণ, সে দুনিয়ার হাজারো ব্যস্ততা থেকে নিজেকে মুক্ত করে, যে ব্যস্ততায় লিপ্ত থাকলে তার ও তার সংসারের বহুত উপকার হতো, আল্লাহর হুকুমের সামনে মাথা নত করেছে।
>
সুতরাং, অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা ও প্রয়োজন সত্বেও যে ব্যক্তি দুনিয়ার সবকিছুকে পিছে ফেলে আল্লাহর হুকুমের সামনে দাঁড়ায় যায় তার এবাদতের মধ্যেই রুহানিয়্যাত ও আল্লাহর ভালোবাসা বেশি রয়েছে।
শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী হাফিঃ এর নির্বাচিত বয়ান একত্রে