অনুবাদ: মানসূর আহমাদ
প্রশ্ন—১: সুরা ফাতিহার একটি আয়াত সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, এই আয়াতটি রিয়া (লোকদেখানো মনোভাব) ও অহংকার দূর করে দেয়।
—এটি কোন আয়াত?
উত্তর: আয়াতটি হচ্ছে—
اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ ؕ﴿۴﴾
(অর্থ: আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। [সুরা ফাতিহা : ৪]) এই আয়াতের اِیَّاکَ نَعۡبُدُ আয়াতাংশ রিয়া দূর করে এবং وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُؕ আয়াতাংশ অহংকার দূর করে দেয়।
প্রশ্ন—২: সুরা ফাতিহায় তাওহিদের তিন প্রকার তথা তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ (সৃষ্টি, প্রতিপালন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ), তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ (ইবাদত-উপাসনার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ) ও তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত (আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও উত্তম গুণাবলির একত্ববাদ) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উক্ত সুরার আয়াতগুলো থেকে তিন প্রকারের তাওহিদ নির্ণয় কর।
উত্তর: (১) তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ রয়েছে এই আয়াতাংশে—
رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۙ﴿۱﴾
(অর্থ: যিনি বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক। [সুরা ফাতিহা : ১])
(২) তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ রয়েছে এই আয়াতাংশে—
اِیَّاکَ نَعۡبُدُ
(অর্থ: আমরা আপনারই ইবাদত করি। [সুরা ফাতিহা : ৪])
(৩) তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত রয়েছে এই আয়াতে—
الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ۙ﴿۲﴾
(অর্থ: যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু। [সুরা ফাতিহা : ২])
প্রশ্ন—৩: মহান আল্লাহ সুরা ফাতিহায় বলেছেন, “আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন— তাঁদের পথ, যাঁদের ওপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন।” [সুরা ফাতিহা : ৫-৬]
—কাদের ওপর আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করেছেন?
—কোন সুরায় তাঁদের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা যাঁদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন, তাঁরা হচ্ছেন— নবিগণ, সিদ্দিকগণ, শহিদগণ ও সৎকর্মশীলগণ।
আল্লাহ তাআলা সুরা নিসায় তাঁদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “আর যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করে, তারা থাকবে তাদের সাথে, যাদের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন— নবি, সিদ্দিক, শহিদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম।” [সুরা নিসা : ৬৯]
প্রশ্ন—৪: (ক) কুরআনের প্রথম দোয়া কোনটি? (খ) কুরআনের প্রথম আহ্বান কী?
উত্তর: (ক) কুরআনের প্রথম দোয়া হচ্ছে—
اِہۡدِ نَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ۙ﴿۵﴾
(অর্থ: আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন। [সুরা ফাতিহা : ৫])
এটি হচ্ছে সবচে আবশ্যিক-অপরিহার্য দোয়া। আল্লাহ তাআলা দিনে-রাতে অনেকবার এই দোয়া পড়া আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। (নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব হিসেবে ফাতিহার অন্তর্গত এই দোয়া পড়াও ওয়াজিব।) আমরা কেবল ফরজ নামাজেই প্রতিদিন ১৭বার এই দোয়া পাঠ করি। আমরা বান্দার সবচে মর্যাদাপূর্ণ স্থান তথা মহান রবের সামনে দাঁড়িয়ে এই দোয়া পাঠ করে থাকি। একজন মুসল্লি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজে দাঁড়িয়ে এই মহিমান্বিত দোয়ার মাধ্যমে দোয়া করে।
(খ) কুরআনুল কারিমের প্রথম আহ্বান হচ্ছে—
“হে লোকসকল, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তাদেরকে; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” [সুরা বাকারা : ২১] মানুষের রব তাদেরকে একমাত্র তাঁরই ইবাদতের প্রতি আহ্বান করছেন। তাই সবকিছুর পূর্বে কুরআনের প্রথম আহ্বান হচ্ছে তাওহিদ তথা একত্ববাদের আহ্বান।
প্রশ্ন—৫: মহান আল্লাহ সুরা বাকারায় বলেছেন, “অতঃপর আদম তার রবের পক্ষ থেকে কিছু বাণী লাভ করল, ফলে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করলেন।” [সুরা বাকারা : ৩৭]
—আদম আলাইহিস সালাম তাঁর মহান রবের কাছ থেকে কোন বাণীগুলো লাভ করেছিলেন?
—এই বাণী কোন সুরায় বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: আদম আলাইহিস সালাম তাঁর মহান রবের কাছ থেকে এই বাণীটি লাভ করেছিলেন—
رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ﴿۲۳﴾
(অর্থ: হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আর আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। [সুরা আরাফ : ২৩])
কারো কারো মতে সেই বাণী ছিল—
سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك، لا إله إلا أنت. ظلمت نفسي فاغفرلي. إنه لا يغفر الذنوب إلا أنت.
(অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আপনার প্রশংসা করছি; মহিমান্বিত আপনার নাম, সুউচ্চ আপনার মর্যাদা। আপনি ছাড়া কোনো (প্রকৃত) ইলাহ বা উপাস্য নেই। আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ছাড়া পাপ মার্জনাকারী কেউ নেই।)
কেউ কেউ অন্য বাণীর কথাও বলেছেন। তবে অধিকাংশ আলেমের মত অনুযায়ী উল্লিখিত আয়াতই ছিল সেই বাণী।
ইমাম কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ তাঁর তাফসিরে উল্লেখ করেছেন, এক আহলে ইলম (কুরআন-হাদিস বিশারদ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোনো পাপী যদি তাওবা করতে চায়, তবে সে কী বলবে?
তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ওই পাপী বান্দা তা-ই বলবে, যা তার আদি পিতা-মাতা বলেছিলেন—
رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ﴿۲۳﴾
(অর্থ: হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আর আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। [সুরা আরাফ : ২৩])
প্রশ্ন—৬: মহান আল্লাহ সুরা বাকারায় বলেছেন, “অতঃপর তোমাদের অন্তরসমূহ এর পরে কঠিন হয়ে গেল যেন তা পাথরের মত কিংবা তার চেয়েও শক্ত।” [সুরা বাকারা : ৭৪]
—অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়াকে অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনা না করে পাথরের সঙ্গে তুলনা করার কারণ কী?
উত্তর: শাইখ সাদি রাহিমাহুল্লাহ তাঁর তাফসিরে বলেন, জগতে পাথরের চেয়ে কঠিন পদার্থ (যেমন: লোহা, সীসা ইত্যাদি) থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়াকে পাথরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর কারণ হচ্ছে, লোহা, সীসা ইত্যাদিকে আগুনে গলানো হলে সেগুলো গলে যায়। কিন্তু পাথর হচ্ছে এর বিপরীত। (পাথরকে আগুনে পোড়ালেও গলে না। একইভাবে ইহুদিদের অন্তর এতটাই কঠিন যে, কোনো কিছুতেই তাদের অন্তর বিগলিত হয় না।)
প্রশ্ন—৭: সুরা বাকারায় একটি আয়াত রয়েছে, যে আয়াত সম্পর্কে সায়িদ বিন জুবাইর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, এই বাণীগুলো আমাদের নবির পূর্বে কোনো নবিকে দেওয়া হয়নি। ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যদি এই বাণীগুলো জানতেন, তবে তিনি এ কথা বলতেন না, “ইউসুফের জন্য আফসোস!” [সুরা ইউসুফ : ৮৪]
—এটি কোন আয়াত?
উত্তর: এটি হচ্ছে মহান আল্লাহর বাণী—
الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡہُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰہِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡہِ رٰجِعُوۡنَ ﴿۱۵۶﴾ؕ
(অর্থ: যখন কোনো বিপদ তাদেরকে আক্রান্ত করে, তখন তারা বলে, ‘নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’।) [সুরা বাকারা : ১৫৬]
Facebook Comments