[ মূলত লেখাটি ‘প্রাচ্যবাদ ও হাদিসের প্রামাণ্যতা’ নিয়ে একটি আলোচনার সারসংক্ষেপ।গত কয়েকদিন আগে ইমরান ভাইয়ের বন্ধুবান্ধবের zoom দরসে এ আলোচনাটা করেছিলাম।ইমরান ভাইয়ের অনুরোধে সেটা সংক্ষেপে লিখে দিলাম।এখানে সাধারণ শিক্ষিত এবং তালিবুল ইলম সবার জন্য-ই চিন্তার খোরাক পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ, বর্তমান সময়ে প্রাচ্যবিদদের হাদিস অস্বিকার ও হাদিস বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশের ব্যাপারটা মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়েছে। তাদের দ্বারা প্রভাবিত ব্যাক্তিবর্গ শুধু আরব বিশ্বে নয়,আমাদের দেশেও প্রচুর আছেন।তাই এখানে হাদিসের প্রামাণ্যতা নিয়ে মৌললিক কিছু কথা তুলে ধরা হয়েছে, একটু সময় নিয়ে পড়তে পারেন….।জাযাকুমুল্লহা খায়রান]
কোরানে কারিমে বিশেরও অধিক স্থানে ‘আতিউল্লাহা ওয়া আতিউর রাসুল’ (তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করো) বলা হয়েছে। অদ্ভুর ব্যাপার হলো কোথাও শুধু মাত্র ‘আতিউল্লাহ’ (আল্লাহর আনুগত্য করো) বলেই থেমে যাওয়া হয় নি।সব স্থানেই আল্লাহ তায়ালা নিজের সাথে রাসুল সাঃ এর আনুগত্যের কথাও একই ‘সিয়াকে’ বলেছেন।কিন্তু এর বিপরীতে শুধু মাত্র ‘আতিউর রাসুল’ (রাসুলের আনুগত্য করো) এতটুকু বলা হয়েছে।এমন আয়াত আছে ছয় কিংবা সাতটি।এসব আয়াতের বেশীর ভাগের মর্ম হলো,যে ব্যাক্তি রাসুলের আনুগত্য করলো সে কেমন যেন আল্লাহরই আনুগত্য করলো।
এবার আরেকটা ব্যাপারে আসি,আল্লাহ তায়ালা সুরা নিসার উনষাট নং আয়াতে বলেছেন- ‘তোমরা আল্লার আনুগত্য করো,রাসুলের আনুগত্য করো,এবং উলুল আমর (শাসক কিংবা উলামা)দেরও’। এখানে দেখার বিষয় হলো,আল্লাহ এবং রাসুল শব্দের শুরুতে ‘আনুগত্য’ শব্দ স্বতন্ত্র ব্যাবহার হয়েছে,কিন্ত্য ‘উলুল আমরের’ শুরুতে আনুগত্য শব্দ ব্যাবহার হয় নি,বরং বাক্যের পূর্ববর্তী অংশের উপরে রেখে দেওয়া হয়েছে।ইবনুল কায়্যিম রাঃ বলেন- আয়াতের উদ্দেশ্য এ কথা বুঝানো যে,আল্লাহ তায়ালা যেমন শরিয়ার কোনো হুকুম দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র,রাসুল সাঃকেও আল্লাহ তায়ালা এই স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন।অর্থাৎ কোনো হুকুম যদি রাসুলের হাদিসে পাওয়া যায়,অথচ কোরানে সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই,তবুও এ অবস্থায় ‘তাশরীঈ’ হিশেবে হাদিস এবং কোরানের হুকুম সমান গুরুত্ব রাখে।বিপরীতে ‘উলুল আমরের’ শুরুতে ইতাআত শব্দ না আনার হেকমত হলো,উলুম আমরা কোনো স্বতন্ত্র শরিয়া প্রণেতা নন,তারা যতক্ষণ আল্লাহ ও রাসুলের শরিয়ার মাঝে থাকবে, তাদেরকে মানতে হবে অন্যথায় না।
এবার অন্য এক আয়াতে যাই,সুরা বাকারাতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন- ‘আপনি যে কিবলার উপরে ছিলেন,তা কেবল আমি এজন্য নির্ধারণ করেছিলাম, যেন আমি জানতে পারি-কে রাসুলের আনুগত্য করে,আর কে পশ্চাদগমন করে..’
এখানে মাদিনায় যাওয়ার পরে সতের মাস মুসলিমদের পরিবর্তিত কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাসের কথা বলা হয়েছে।একটু খেয়াল করুন,আয়াতে কিন্তু বলা হচ্ছে ‘আমি সে কেবলা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম’ অথচ আপনি কোরানে কারিমের আদ্যোপান্ত ঘেটে ফেললেও বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুসলিমদের কেবলা পরিবর্তন করে দেওয়ার প্রথম বিধান খুজে পাবেন না।এটা ছিলো রাসুল সাঃ এর আদেশ,কিংবা হাদিস।কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ তা’য়ালা রাসুলের এই আদেশকেই এমন ভাবে উপস্থাপন করছেন,কেমন যেন এটা আল্লারই আদেশ।
সুরা হাশরে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘তোমরা যেসকল খেজুর গাছ কেটেছিলে,কিংবা না কেটে যেগুলোকে নিজ কাণ্ডের উপরে রেখে দিয়েছিলে,এসব ছিলো আল্লাহর হুকুমেই…’
ঘটনা হলো,মুসলিমরা মদিনার প্রসিদ্ধ ইহুদী গোষ্ঠি বনু নাযীরের কেল্লা অবরুদ্ধকালে তাদেরকে হাতিয়ার নামিয়ে আত্মসমর্পণ করার ক্ষেত্রে জোর দেন,তারা মানছে না বিধায় কতক সাহাবী তাদের কেল্লার সামনের খেজুর গাছ কাটতে শুরু করেন।এটা নিয়ে ইহুদিরা পরবর্তীতে মুসলিমদের উপরে আপত্তি উঠায়।তাদের আপত্তির জবাবে এই আয়াত নাযিল হয়েছে।এখানে বলা হচ্ছে,তোমরা খেজুর গাছে কেটেছিলে,সেটা আমার হুকুমেই ছিলো।অথচ কেউ কোরানের কারিমের কোন আয়াতে এই খেজুর গাছ কাটার অনুমতির ব্যাপারে কোনো হুকুম দেখাতে পারবে না।এটা ছিলো রাসুল সাঃ এর আদেশ।তবুও আল্লাহ তায়ালা এমন ভাবে বলছেন,কেমন যেন রাসুলের আদেশ মানেই আল্লার আদেশ।
আমাদের যে সকল ওরিয়েন্টালিস্ট(প্রাচ্যবিদ,যেমন গোল্ড যেহের,উইলিয়াম ম্যুর,এ যে আরবেরি প্রমুখ) কিংবা তাদের দ্বারা প্রভাবিত কোনো লেখক (যেমন ত্বহা হুসাইন,মুহাম্মাদ আল খুশত,এমনকি বাংলাদেশে নব্য বুদ্ধুজীবি তাজ হাশমী)- হাদিসের উপরে আপত্তি উঠান,তাদের মৌলিক দাবী হলো, হাদিস ও কোরানের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য,হাদিস বলতে রাসুলের প্রাত্যহিক আলাপন মাত্র,পরবর্তী কালের জন্যও এটা কখনো অনুসরণীয় হওয়ার মত কোনো গুরুত্ব রাখে না। তাদের জন্য উপরের কথাগুলো বলা হলো যে,কোরানের দৃষ্টিতে হাদিসের মর্যাদা কেমন।
এবার আসি, তারা এই দাবির পক্ষে দলীল হিশেবে কী উপস্থাপন করে থাকেন।এর আগে বলে রাখি,এদের মাঝে কয়েকটা গ্রুপ আছে।কেউ কেউ বিবেক কিংবা বিজ্ঞানের ভুল ব্যাবহার করে আপত্তি করেন যে,কিছু হাদিস বিজ্ঞান সম্মত না,তাই সেগুলো তারা মানবেন না।আবার কেউ কেউ আপত্তি উঠান হাদিস সংকলনের ইতিহাস নিয়ে, তাদের বক্তব্য হলো-হাদিস তৃতীয় শতকের পরে এসে সংকলের রূপ দেখেছে।তখনকার সময়ে যার সামনে যা কিছু কল্প কাহিনী কিংবা অলিক কথাবার্তা ছিলো,সেসবই আপন আপন সংকলনে হাদিস হিসেবে তারা স্থান দিয়েছে।মোটকথা কোরানের মত প্রথম শতকেই হাদিস লেখা হয় নি,বরং তিনশ বছর পরে লেখা হয়েছে,তাই এর উপরে মোটেও আস্থা রাখা যায় না।
আমাদের আজকের আলাপে থাকবেন,এই দ্বিতীয় যুক্তির দল,যারা সংকলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।প্রথম কথা হলো- তাদের এই ধারনার কারন, গত এক শতাব্দি আগেও হাদিসের সব কিতাব আমাদের সামনে আসেনি। কমন কিছু কিতাব ও কুতুবে সিত্তাহ, এগুলোই সামনে ছিল। এর বাইরে হাদিসের শত শত কিতাব আছে যার সন্ধান তেমন জানা ছিল না। যেমন আর রিসালাতুল মুসতাতরফাতে হাদিসকেন্দ্রিক ১৪০০ কিতাবের নাম আছে। হাদিস, উলুমুল হাদিস মিলিয়ে। ওরিয়েন্টালিস্টদের এই প্রশ্নের কারন তাদের সামনে পর্যাপ্ত মাসাদির ও উতসগ্রন্থ ছিল না। তারা দেখছে কমন সব হাদিসের কিতাব দুই শতাব্দির পর লেখা। এই ধরনের আপত্তি আমাদের সালাফি ভাইরাও করেন ফিকহ নিয়ে। তারা বলেন ফিকহের তাদবিন, উৎপত্তি ও বিকাশ চতুর্থ শতাব্দির পর। এটাও ভুল। মাজহাবের সূচনা দ্বিতীয় শতাব্দির ভেতরেই শেষ হয়ে গেছে।
এবার দেখি,তাদের দাবির যৌক্তিকতা আছে কিনা।
১। হাদিস সংকলন নবিজির যুগেই শুরু হয়েছে।ইমাম বুখারিদের আগে বহু কিতাব লেখা হয়েছে।
২। বুখারিতে দেখবেন,তিনি হুমাইদি (আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর-মৃত্যু -২১৯) থেকে অনেক হাদিস এনেছেন । হুমাইদি ইমাম বুখারির উস্তাদ। তার কিতাব আছে মুসনাদুল হুমাইদি। এটি আগে পান্ডুলিপি আকারে ছিল, এখন বৈরুত থেকে ছেপে এসেছে। দেখুন এটি বুখারির আগের কিতাব। মুসনাদুল হুমাইদি আসার কারনে এটা বলারও সুযোগ নেই ইমাম বুখারি হুমাইদির নামে হাদিস বানিয়ে চালিয়ে দিয়েছেন। বুখারিতে হাদিস যে শব্দে আছে, সে হাদিস মুসনাদে হুমাইদিতেও একই শব্দে আছে।
৩। মুসলিমে দেখবেন,ইমাম মুসলিম ১৫০০ এর বেশি রেওয়ায়েত এনেছেন আবু বকর ইবনু আবি শাইবা(মৃত্যু -২৩৪হি:) থেকে। এখন তার ‘মুসান্নাফ’ কিতাব শায়খ আওয়ামার তাহকীকে ২৬ খণ্ডে ছেপে এসেছে,এটাও আগে প্রকাশিত রূপে ছিলো না। মুসলিম,ইবনে আবি শাইবা থেকে যা হাদিস এনেছেন, বেশিরভাগ তার কিতাবে আছে।
৪। তিরমিযি খোলেন,সেখানে হান্নাদ ইবনু সারি থেকে বহু হাদিস আছে। হান্নাদ ইমাম তিরমিযির উস্তাদ
( মৃত্যু -২৪৩হি:)। এখন তিন খণ্ডে ছেপে এসেছে তার কিতাবুয যুহদ।
৫। আবু দাউদে আছে সাইদ ইবনু মানসুরের নাম। তার সুনানে সাইদ ইবনে মানসুর ছেপে এসেছে দুই খন্ডে।
যে কিতাব সম্পর্কে হাফেয যাহাবী বলেছেন-
‘من نظر في (سنن سعيد) عرف حِفْظَ الرجل وجلالته’
৬। ইমাম বুখারির দাদা উস্তাদ আবদুর রাজ্জাক। ২১১ হিজরিতে তার ইন্তেকাল। তিনি ইমাম আবু হানিফার ছাত্র। এখন ছেপে এসেছে তার কিতাব মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক। দেখুন ইমাম বুখারির দাদা উস্তাদই বিশাল কলেবরে হাদিস সংকলন করে গেছেন। এখন কেউ যদি বলে বুখারি প্রথম এই কাজ করেছেন তা স্পষ্ট ভুল।
৭। আব্দুর রাজ্জাক আবার হাদিস এনেছেন তার উস্তাদ মামার ইবনু রাশেদ থেকে। মা’মারের কিতাব ‘জামে মামার’ও এখন ছেপে এসেছে। মামার ইবনু রাশেদ ১৫১ হিজরিতে মারা যান। তারমানে দেড়শো হিজরির মধ্যে হাদিস সংকলিত হয়েছে সেটাও প্রমান পেলাম। ইমাম বুখারি আরো অনেক পরে যেসব হাদিস লিখেছেন তার অনেকগুলো মামারের এই কিতাবে হুবহুই আছে।
৮- আব্দুর রাযযাকের অপর একজন বরেণ্য উস্তায হলেন ইমাম আ’জম আবু হানিফা রহঃ,খোদ ইমাম আবু হানিফার সংকলিত হাদিসেরর কিতাবও আমাদের সামনে রয়েছে,’কিতাবুল আসার’।এটি শুধু সাধারণ একটি সংকলনই না,বরং হাদিসের ইতিহাসে অনুচ্ছেদ ও বিষয় ভিত্তিক সংকলনের তালিকায় সর্ব প্রথম।হাম্মাদ ইবনু আবি হানিফা,কাযী আবু ইউসুফ,মুহাম্মাদ ইবিনুল হাসান শাইবানি,আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, যুফার ইবনুল হুজাইল সহ বরেণ্য দশ বারোজন শাগরেদ তার এ কিতাব বর্ণনা করেন।বলা বাহুল্য যে,এ কিতাবও একশ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মাঝেই সংকলিত হয়েছে।
বিস্তারিত জানতে দেখুন- মুকাদ্দিমাতু কিতাবিল আসার -শায়খ আবব্দুর রশীদ নোমানী,মুসনাদুল ইমামিল আ’জমের ভূমিকা-শায়খ আব্দুল হাফিয মাক্কি,ইমাম ইবনে মাজা ওর ইলমে হাদিস।
৯। বিখ্যাত অনেক রাবি যেমন কুতাইবা ইবনু সাইদ, মুহাম্মদ ইবনুল কাসেম এরা সবাই হাদিস এনেছেন ইমাম মালেক (মৃত্যু -১৭৯হিঃ)থেকে। তার নিজেরও কিতাব আছে ‘মুয়াত্তা মালেক’। এটিও তিনি সংকলন করেছেন দেড়শো হিজরির আগে। হাদিস ও আসার মিলে এগারোশ’র বেশী বর্ণনা আছে তার এ কিতাবে। এর অর্থ হলো,আমরা যতই পীছনে যাচ্ছি,প্রাচীন থেকে প্রাচীনতর হাদিসের সংকলন পেয়ে যাচ্ছি।
১০। মামার ইবনু রাশিদের আলাপে আসা যাক। তিনি হাদিস বর্ননা করেছেন হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ থেকে। তিনি সিনিয়র তাবেইদের অন্যতম, সরাসরি হাদিস নিয়েছেন আবু হুরাইরা রাঃ থেকে। তিনি আবু হুরাইরা রাঃ থেকে যা শুনতেন লিখে ফেলতেন। আবু হুরাইরা (রা) থেকে সাড়ে পাচ হাজারের বেশী হাদিস বর্নিত আছে বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থে। হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহর একটা সহিফাহ ছিল,যা গত শতাব্দির শেষ দিকে প্রফেসর ড. হামিদুল্লাহ রঃ এর তাহিকিকে প্রকাশিত হয়। তাহলে দেখুন আরো অনেক পীছনে পৌছে গেলাম আমরা। যিনি সরাসরি সাহাবি থেকে হাদিস শুনেছেন তার সংকলনকৃত কিতাবও আজ আমাদের হাতে। সুতরাং তৃতীয় শতাব্দি থেকে হাদিস সংকলন শুরু এটা যে অসার,এবং স্পষ্ট ভুল তা প্রমান হলো। এখানে পঞ্চাশ খণ্ডে প্রকাশিত মুসনাদে আহমাদের কথাও মাথায় রাখতে হবে,তিনি কিন্তু কুতুবে সিত্তার প্রায় সবারই উস্তাদ ও উপরের স্তরেরর মানুষ।
১১। হুজুর সাঃ এর একজন কনিষ্ঠ সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাঃ, নবিজির যুগে তার অনুমতিক্রমে হাদিস লিখতেন, এমন বর্ননা সরাসরি আবু হুরাইরা থেকেও আছে। তার এ সহিফা ইতিহাসে ‘আস সাদাহিকাহ’ নামে পরিচিত। এই পান্ডুলিপিও আমাদের সামনে আছে। অতএব, আমরা সরাসরি নবিযুগে হাদিস সংকলনের প্রমানও পেলাম।
১২।সাহাবিদের অনেকের হাদিসের সহিফাহ ছিল। জাবের ইবনু আবদুল্লাহ, আনাস ইবনু মালেকসহ অনেক সাহাবির নিজস্ব সহিফাহ ছিল। প্রায় ৪৮ জন সাহাবির এমন সহিফাহ ছিল।তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত লিখে দেখিয়েছেন প্রফেসর ড. মুস্তফা আ’যমী রাঃ ‘কুত্তাবুন নাবী সাঃ’ এবং তার ঐতিহাসিক ‘দিরাসাত ফিল হাদিসিন নাবাওয়ী ওয়া তারিখু তাদবিনি’ -কিতাবে।অর্থাৎ দেখা গেল, হাদিস সংকলনের সময়কাল সম্পর্কে ওরিয়েন্টালিস্টদের বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্ট ভুল। এ বিষয়ে আরো জানতে ডক্টর মুস্তফা সিবাঈ,ড. আবু শাহাবা,ড. মুস্তফা আজমীর কিতাব গুলো দেখা যেতে পারে……!
মোটকথা,হাদিসের মত দুর্ভেদ্য শক্তিশালী একটা শেকড়কে যারা দু চারটে ঠুনকো যুক্তি দিয়ে কাবু করে ফেলবেন ভাবেন,তাদের হয়তো জানার স্বল্পতা আছে,কিংবা জেনেও হঠকারিতা করে থাকেন।শুধু হাদিস নয়,রিজাল তথা ‘হাদিস বর্ণনাকারীদের জীবন চরিত’ শাস্ত্রের ব্যাপরেই দেখুন আজ থেকে দেড়শ বছর আগে ১৮৫০ সনে কত শক্তিশালী স্বিকারোক্তি দিয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ান প্রাচ্যবিদ স্প্রেনজার( Aloys Sprenger), তিনি হাফেয ইবনে হাজার রঃ লিখিত ‘আল ইসাবা’ গ্রন্থটি নিজ তাহকিকে প্রকাশ করেন কলকাতা থেকে।ভূমিকায় লেখেন-(সারকথা) ‘হাদিস সংকলনের ইতিহাস শুধু মুসলিমদের নয়,বরং গোটা মানোবেতিহাসের এক বিশাল অর্জন,কারণ বিশ্ব সভ্যতার সামনে মুসলিমরাই কেবল এমন এক জাতি, এক ব্যাক্তি(অর্থাৎ মুহাম্মদ সঃএর) কথা সংকলন করতে যাদের সাড়ে পাচ লক্ষ মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন,আজ আমরা চাইলেই এসকল মনিষীদের জীবনের আদ্যোপান্ত ইতিহাস বইয়ের পাতায় পাতায় জ্বলজ্বল করতে দেখি….’
আজ এ পর্যন্ত-ই…আগামীতে এ বিষয়ে আরো কিছু লেখার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ
গ্রন্থপঞ্জী
—————-
১-হুয্যিয়্যাতে হাদিস-মুফতী তাকী উসমানী
২-আল হাদীস কাবলাত তাদবীন
৩- আস সুন্নাতুন নাবাবিয়্যাহ,হুজ্জিয়্যাতুহা ওয়া তাদবিনুহা- ড. আব্দুল মাজেদ গাওরী
৪-তাদবীনে হাদিস-বাশশার আওয়াদ তাহকিকৃত
মানাযির আহসান গিলানী
৫-ই’লামুল মুওয়াক্কিয়িন-হাফেয ইবনুল কায়্যিম
৬-সুমুমুল ইসতিশরাক-মুহাম্মাদ আনওয়ার আল জিনদী
৭-মুকাদ্দিমাতু কিতাবিল আসার-মাওলানা আব্দুর রশীদ নো’মানী।
৮-মুকাদ্দিমাতুল ইসাবাহ-স্প্রেনজার।