ভূমিকা : বাংলার যমীন যে উলামায়ে দ্বীন, আওলিয়ায়ে কেরাম ও মাশায়েখে ইযামের অবদানে ঋণী তাঁদের মধ্যে হযরত মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রাহ. (জন্ম : আনুমানিক ১৩১৭ হিজরী ‘বযমে আশরাফ কে চেরাগ’ কিতাবে মুদ্রিত আত্মজীবনীর বিবরণ অনুযায়ী-মৃত্যু : ১৪০৭ হিজরী) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
হযরত রাহ.-এর কীর্তি ও অবদান এবং তাঁর ‘সাদাকাতে জারিয়া’র তালিকা অনেক দীর্ঘ। কুরআন মজীদের বাণী-(তরজমা) ‘তাঁদের ঘটনায় রয়েছে বুদ্ধিমানদের জন্য শিক্ষার উপাদান।’ অনুযায়ী পূর্বসূরীদের জীবন ও কর্ম সংরক্ষণ করা অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ। এটা প্রতি যুগের লোকদের উপর পরবর্তী প্রজন্মের হক ও অধিকার। কিন’ আমাদের অবস্থা তো এই যে, আমরা এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজে উদাসীনতা প্রদর্শন করে থাকি। তাহলে এ বিষয়ে আর বলার কী আছে!
রচনা ও লেখালেখির এই যুগেও হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ. ও তাঁর সমকালীন ব্যক্তিদের জীবন ও অবদানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক এখনো অপ্রকাশিতই রয়ে গেছে। বহু দিন পর হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ.-এর উপর একটি স্মারকগ্রন’ প্রকাশিত হয়েছে, যা অবশ্যই শুকরিয়া লাভের উপযুক্ত। কিন’ তথ্য, ও নির্ভরযোগ্যতার দিক থেকে চিন্তা করা হলে বোঝা যাবে, এখনো কত বড় শূন্যতা রয়ে গেছে। অথচ হযরত রাহ.-এর শীষ্য-শাগরিদ, মুরিদ-খলীফা এবং তাকে সরাসরি দেখেছেন এমন অনেকেই এখনো জীবিত আছেন। উপরোক্ত স্মারক গ্রনে’ হযরত রাহ.-এর যে জন্ম-তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে তা হযরতের স্বরচিত আত্মজীবনীর বিবরণের সঙ্গে মিলে না। প্রফেসর আহমদ সায়ীদ-এর কিতাব ‘বযমে আশরাফ কে চেরাগ’ কিতাবে ওই আত্মজীবনী মুদ্রিত হয়েছে। এরপরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের শুকরিয়া লাভের হকদার। কেননা, এর দ্বারা এই কাজ একটি পর্যায় পর্যন- তো অগ্রসর হয়েছে। এ অবস্থায় প্রয়োজন হচ্ছে, যার কাছেই আকাবির ও মাশাইখের জীবন ও ইতিহাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য আছে তা সংরক্ষণ করা এবং একাধিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা।
আনন্দ ও কৃতজ্ঞতার বিষয় এই যে, আমাদের শায়খ ও মুরব্বী, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়ার তত্ত্বাবধায়ক ও মাসিক আলকাউসারের উপদেষ্টা হযরাতুল উস্তায মাওলানা আবদুল হাই পাহাড়পুরী দামাত বারাকাতুহুম অত্যন্ত- অসুস্থতার মাঝেও তাঁর পাণ্ডুলিপিসমূহের মধ্যে থাকা এই কয়েকটি পৃষ্ঠা আলকাউসারের জন্য পাঠিয়েছেন। এটা প্রকৃতপক্ষে একটি দীর্ঘ সফরনামার প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা, যা হযরতের লেখার ইচ্ছা ছিল। কিন’ আফসোস, সুস’তার সময় নানা ব্যস-তার কারণে এর বেশি লেখা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সফরনামাটি সমাপ্ত করার জন্য তাঁকে তাকলীফ দেওয়ার কথা চিন্তাও করা যায় না। আমরা আল্লাহ তাআলা দরবারে হযরতের সুস’তার জন্য কয়মনোবাক্যে দুআ করছি, আল্লাহ তাআলা তাঁকে সিহহত ও আফিয়তের সঙ্গে হায়াতে তাইয়েবা নসীব করুন। আমীন। বর্তমান পৃষ্ঠাগুলোতেও আমাদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পূর্ণ ফায়েদা হাসিলের তাওফীক দান করুন। আমীন।-তত্ত্বাবধায়ক
১৯৭৫ সালের আগস্ট মাস। পবিত্র হজ্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে জিয়ারতে হারামাইনের প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ শুরু হইল। সঙ্গে হযরতের মেঝো ছাহেবযাদা মরহুম হাজী ওবায়দুল্লাহ ও পীরানী আম্মাসহ মোট ১০ জনের কাফেলা। তখনও সৌদী আরবের সহিত বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়িয়া উঠে নাই। সেই হেতু সৌদী ভিসা গ্রহণের কোনো উপায় বাংলাদেশে ছিল না। উল্লেখ্য যে, সরকারী ব্যবস্থায় মাধ্যমে বেশ কিছু সংখ্যক হাজী বিমানযোগে সেই বছর হজ্ব করিবার সুযোগ পাইলেও হযরত সেই পথ গ্রহণ করেন নাই। কারণ সরকারী ব্যবস্থায় রমযানের পর সফর করিতে হয়। ঐ বছর হযরতের অন-রে এক বিশেষ আকাঙ্খার উদয় হইল যে, তিনি এই বারের পবিত্র রমযানুল মুবারক মক্কা ও মদীনার পাক ভূমিতেই কাটাইবেন। আর সরকারী ব্যবস্থায় রমযানের পূর্বে সফর করিবার সুযোগই ছিল না। তাই পি ফরমের মাধ্যমে ভিসা গ্রহণ করতঃ রমযানের আগেই সফরের এরাদা করিলেন। কিন’ সৌদী সরকারের সহিত বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সর্ম্পক না থাকায় বাংলাদেশ হইতে সৌদী ভিসা গ্রহণের কোনো সুযোগ ছিল না। তাই ভারতে অবসি’ত সৌদী দূতাবাস হইতে ভিসা গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রথমে ভারত সফরেরই ব্যবস্থা করা হইল। মরহুম হাজী ওবায়দুল্লাহর অক্লান- পরিশ্রমে ১৫ দিনের জন্য ভারত রাষ্ট্রদূত কর্তৃক ভিসা প্রাপ্তির পর পরম করুণাময় আল্লাহ পাকের অনুগ্রহের ভরসায় সফর শুরু হইল। দিনটি ছিল ১৮ আগস্ট রোজ সোমবার। সময় সকাল ৮ টা। ফজরের নামায আদায় করতঃ অনতিবিলম্বে হযরতের লালবাগস’ কিল্লার মোড়ের বাসা হইতে সফরসঙ্গীদেরকে নিয়া পুরাতন বিমান বন্দর তেজগাঁয়ের দিকে রওয়ানা করিলেন। পথিমধ্যে কিছু সময়ের জন্য স্বপ্রতিষ্ঠিত মাদরাসা লালবাগ জামেয়া কুরআনিয়ায় অবতরণ করতঃ দুআ-মুনাজাত করিয়া আবার রওয়ানা করিলেন। উল্লেখ্য যে, তিন দিন পূর্বে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালের দিকে বিশেষ দোআ ও মুনাজাতের মজলিস করিয়াছিলেন তাহার সর্বাধিক প্রিয় প্রতিষ্ঠান মাদরাসা নূরিয়ায়।
লালবাগ মাদরাসা হইতে দুআ-মুনাজাত শেষে সোজা বিমান বন্দরে গিয়া যখন পৌঁছিলেন তখন সময় প্রায় সকাল ৯টা। বিমান ছাড়িতে হাতে সময় মাত্র ১ ঘণ্টা। বিমানবন্দরে পৌঁছিয়া সকল ভক্তবৃন্দের নিকট হইতে বিদায় গ্রহণ করতঃ কাউন্টারের অভ্যন-রে তশরিফ নিয়া গেলেন। আমরা বিশেষভাবে লক্ষ করিলাম যে, তিনি যেন এখন এই জগতে থাকিয়াও অন্য জগতের সহিত সম্পর্ক করিয়া ফেলিলেন। কাউন্টারে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে মোসল্লা বিছাইয়া আল্লাহু আকবার বলিয়া নামাজ আরম্ভ করিয়া দিলেন এবং বিমানে আরোহণের পূর্ব পর্যন- নামায আদায়ে রত রহিলেন। এইভাবে তাহার পবিত্র সফরের সূচনা হইল।
বিমানে আরোহণের ঘোষণা হইলে হযরত তাঁহার সফরসঙ্গী ১০ জনের কাফেলা নিয়া বিমানে আরোহণ করিলেন। তখন সময় বেলা ১০ টা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানের দরজা বন্ধ হইয়া গেল এবং তাহা আকাশ-অভিমুখে উড্ডীয়মান হইতে লাগিল। দিল্লীতে অবতরণের পর
বিমানবন্দর হইতে ভাড়াকৃত ২টি টেক্সিতে হযরত তাঁহার সঙ্গীদের নিয়া বিশ্ব তাবলীগী জামাতের মারকায বস্তি- নিযামুদ্দীনে তশরিফ নিয়া গেলেন, যা হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রাহ.-এর কবর সংলগ্ন একটি প্রাচীন ও জনাকীর্ণ স্থা অবস্থিত। তখন ভারত সময় বেলা প্রায় সাড়ে ১২ টা। সেখানে পৌঁছিয়া আমাদের পীরানী আম্মা তাবলীগী জামাতের বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা এনামুল হাসান ছাহেব (হযরতজী) এর বাসায় অবস্থান গ্রহণ করিলেন, যাহা মারকায সংলগ্ন পশ্চিম প্রানে- অবসি’ত। দিল্লীতে অবস্থানরত মোট ১৪ দিন তিনি হযরতজীর উক্ত বাসায় বিশেষ মেহমান হিসেবে সমাদৃত হইলেন। আর এইদিকে আমাদের হযরতজী ও অপর সঙ্গীদের জন্য মারকায কর্তৃপক্ষ ১টি কক্ষ অবস্থানের জন্য নির্ধারিত করিয়া দিলেন। উক্ত কক্ষেই হযরত পূর্ণ ১৪ দিন অত্যন- আরাম ও ইতমিনানের সহিত অতিবাহিত করিলেন।
তাবলীগী মারকাজে ১৪ দিনএই ১৪ দিন সময়ে একদিকে যেমন হযরত ইবাদত-বন্দেগী আর তাসবীহ-তাহলীলের মাধ্যমে কাটাইতেছিলেন এবং অবসর সময়কে গনীমত মনে করিয়া প্রাণ ভরিয়া আল্লাহ পাকের জিকিরে এক চরম আনন্দ লাভ করিতেছিলেন অপরদিকে বায়তুল্লাহ ও রওজায়ে পাকের যিয়ারতের বিরল আকাঙ্খা নিয়া দিনের পর দিন সৌদী ভিসার অপেক্ষায় এক অস্বসি-কর অবস্থারও সম্মুখীন ছিলেন।
দিল্লী পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে কাফেলার নায়েবে আমীর মরহুম হাজী ওবায়দুল্লাহ ছাহেব সৌদী ভিসার প্রচেষ্টায় অবিরাম চেষ্টায় লাগিয়া গেলেন এবং ভিসা প্রাপ্তির সব রকম তদবীর চালাইতে লাগিলেন। কিন’ চেষ্টা তদবীরের সকল পথ অবলম্বন করিয়াও সফলকাম হওয়া গেল না। সৌদী দূতাবাস একসঙ্গে এত লোকের ভিসা প্রদানে অস্বীকৃতি জানাইল। আমরা যত রকম চিৎকারই করিলাম, সবই যেন তাহাদের নিকট নিস্ফল কান্না। অবশেষে কেবল ১ জনের ভিসা প্রদানের স্বীকৃতি পাইলে হযরত বলিলেন, ঠিক আছে। তাহাই হউক। হাজী ওবায়দুল্লাহ ছাহেব ভিসা গ্রহণ করিলেন। হযরতের নির্দেশে পরদিন তিনি সৌদী চলিয়া গেলেন। সিদ্ধান- করা হইল, তিনি সৌদী আরব যাইয়া সেখান হইতে বাকি ৯ জনের ভিসার জন্য সৌদী সরকার কর্তৃক বিশেষ কোনো ব্যবস্থা করিয়া পাঠাইবেন।
তিনি সৌদী চলিয়া গেলে হযরতসহ আমরা বাকি ৯ জন দিল্লী থাকিয়া গেলাম। এখানে আমরাও ভিসার জন্য নানা উপায়ে তদবীর করিতে লাগিলাম। নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনার পর আমরা ভারতে অবসি’ত বাংলাদেশ দূতাবাসের শরণাপণ্ন হইলাম। এক দিন, দুই দিন করিয়া বেশ কয়েক দিন আমরা সেখানে আসা-যাওয়া করিলাম। কিন’ ভাগ্যের পরিহাস, তাহাদের পক্ষ হইতে তেমন কোনো সাড়া পাইলাম না। এমনকি তখন পর্যন- কর্তৃপক্ষের সাক্ষাৎ লাভেরও কোনো সুযোগ হইল না। প্রতিদিনই সাক্ষাতের আশা ও প্রতীক্ষায় রিসিপশন রুমেই সময় শেষ হইয়া গেলে পরবর্তী দিন পুনরায় আসিবার জন্য বলা হইত। আমরা চলিয়া আসিতাম। দিনের পর দিন এমনি করিয়া কাটিয়া যাইতেছিল। কিন’ কর্তৃপক্ষের সাক্ষাৎ আমাদের ভাগ্যে জুটিল না। প্রতিদিন বিকালে হযরতের কাছে ফিরিয়া আসিলে কাজে অগ্রগতি কতটুকু হইয়াছে জানিতে চাহিতেন। হযরত যেন পেরেশান না হন সেই খেয়াল করিয়া আমরা কেবল আশ্বাসই প্রদান করিতাম।
এত দিন পর্যন- আমরা ভাবিয়া ছিলাম যে, অফিস-আদালত সংক্রান- কাজ-কর্মে হযরতকে সঙ্গে নিয়া গেলে তেমন কী লাভ হইবে। হযরত কি আর এই সকল ব্যাপারে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করিতে পারিবেন। এইসব কাজের জন্য তো আমরাই যথেষ্ট। তাই এত দিন এত সব চেষ্টা-তদবীর হযরতকে বাদ দিয়া কেবল আমরাই করিয়া যাইতেছিলাম। অথচ হযরত মাঝে মধ্যে দুই-একবার প্রকাশও করিয়াছিলেন যে, তোমরা কোথায় কী করিতেছ, আমাকেও সঙ্গে লইয়া যাও। কিন’ পূর্ববর্তী ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এদিক সেদিক একটি জবাব দিয়া হযরতকে রাখিয়া চলিয়া যাইতাম। কিন’ আমাদের সকল চেষ্টাই যখন ব্যর্থ হইতে লাগল তখন হঠাৎ গভীর মানসপটে এই কথা উদয় হইল যে, আমাদের সকল যোগ্যতা ও পারদর্শিতা তো খুব প্রমাণ হইয়া গিয়াছে। এইবার হযরতের নিকট আত্মসমর্পণ ছাড়া হয়তো আর কোনো পথ নাই। সি’র করিয়া নিলাম যে, আর দেরী নয়, এক্ষুণি হযরতকে সর্ববিষয়ে অবগত করিতে হইবে। অবশেষে তাহাই হইল। সেইদিন বিকালে হযরতের খেদমতে হাজির হইয়া আদ্যোপান- সকল ঘটনা প্রকাশ করিলাম এবং আরজ করিলাম, হযরত! আমরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইয়া ঠিক করিয়াছি যে, আগামী দিন হযরতকে সঙ্গে নিয়া দূতাবাসে যাইব।
হযরত হয়তো মনে মনে ভাবিয়া ছিলেন যে, এতক্ষণে আমার প্রয়োজনীয়তার কথা মনে স্থান পাইল? আমি তো আগেই বলিয়াছিলাম যে, আমাকে সঙ্গে রাখিও। তখন গুরুত্ব হয় নাই। এই সকল কথা মনে পড়িয়া আমরাও লজ্জা অনুভব করিতে লাগিলাম।এইভাবে দিনের বাকি অংশ ও রাত যখন কাটিয়া গেল, পরদিন সকাল আনুমানিক ৮/৯ টার সময় তাবলীগী মারকায হইতে টেক্সিতে করিয়া হযরতসহ আমরা ৪/৫ জন বাংলাদেশ দূতাবাস অভিমুখে রওয়ানা করিলাম। দিল্লীতে অবস্থানের দীর্ঘ এত দিনের মধ্যে আজ যেন সম্পূর্ণ আলাদা একটি দিন। ক্রমান্বয়ে গাড়ি অগ্রসর হইতেছিল। প্রতিদিন এই পথে কতবার গমনাগমন করিয়াছি। কিন্তু আজকের দৃশ্য যেন আর দেখি নাই। এতদিন পথ অতিক্রম কালে মনে হইত, কোনো অচেনা দেশের অচেনা মরুভূমির কণ্টকময় পথ অতিক্রম করিয়া চলিতেছি। আর আজ মনে হইতে লাগিল, শস্য-শ্যামল, শুভ্র কাননের পার্শ্বে বহিয়া যাওয়া সূর্যালোক-শোভিত নদীর তীরে শীতল বায়ূর সংস্পর্শে ধীরে ধীরে যেন কোনো সফলতার দিকে অগ্রসর হইয়া যাইতেছি।
কিছুক্ষণের মধ্যে দূতাবাস প্রাঙ্গণে পৌঁছিলাম। গাড়ি হইতে অবতরণ করিবার পর হযরত এক হাতে লাঠি অপর হাতে তাসবীহ, মুখে আল্লাহর যিকির, মাথায় সফেদ পাগড়ি, ধীর গতিতে দূতাবাসের রিসিপশন কক্ষে প্রবেশ করিলেন। হযরতের পিছনে পিছনে আমরাও বিগত দিনগুলোতে অপেক্ষায় বসিয়া থাকা, তিক্ত পরিচিত সেই রিসিপশন রুমটিতে এক নতুন ও ব্যতিক্রম মনোভাব নিয়া প্রবেশ করিতে লাগিলাম। প্রবেশ করিতেই একটি বিশেষ আসনে হযরত বসিয়া পড়িলেন। আশপাশের চেয়ারগুলোতে আমরাও বসিয়া পড়িলাম। সেখানে উপসি’ত ব্যক্তিবর্গ হযরতের সহিত মোসাফাহা ও সালাম বিনিময় করিতে লাগিলেন। সালাম-মুসাফাহা করতঃ একজন চলিয়া গেলে আরেকজন আসেন। এমনিভাবে পরপর কতক্ষণ সালাম ও মুসাফাহার পালাবদল হইতেছিল। দৃশ্যটি দেখিয়া মনে হইতেছিল হযরত যেন তাহাদের কত কালের পরিচিত।
কিছুক্ষণের মধ্যে ফার্স্ট সেক্রেটারি জনাব মুহিউদ্দীন ছাহেব, যার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় বিগত দিনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়া থাকিয়াও সাক্ষাত প্রাপ্তির সৌভাগ্য অর্জন করিতে পারি নাই, আজ তিনি নিজেই তাহার বিশেষ চেম্বারে হযরতকে আহ্বান করিলেন। হযরত আহ্বানে সাড়া দিলেন। সেক্রেটারির পক্ষ হইতে একজন লোক আসিয়া হযরতকে লইয়া গেলেন। সঙ্গে ছিলাম আমরা ২ জন। চেম্বারে প্রবেশমাত্রই সেক্রেটারি মুহিউদ্দীন ছাহেব হযরতকে সালাম করতঃ বিশেষ সম্ভাষণ জ্ঞাপন করিলেন। আরজ করিলেন, হুজুর! কি জন্যে কষ্ট করিয়া তশরীফ আনিলেন। সংক্ষিপ্ত ২/৪ টি বাক্যে হযরত সব কিছু বলিয়া দিলেন এবং সৌদী ভিসা প্রাপ্তির ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করার থাকিলে করিতে অনুরোধ জানাইলেন।
সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সৌদী ফার্স্ট সেক্রেটারিকে ফোন করিলেন। ইংরেজিতে কথা বলিতেছিলেন। মনে হইতেছিল যেন বেশ কিছুটা কথা কাটাকাটি চলিতেছে। দুই সেক্রেটারি বেশ অনেক সময় পর্যন- কথা বিনিময় করিতেছিলেন। মাঝে মাঝে আমাদেরকে কোনো কোনো জ্ঞাতব্য বিষয় সম্পর্কে প্রশ্নও করিয়া যাইতেছিলেন। কথার সারমর্ম বুঝিতে না পারিলেও এতটুকু অনুভব হইল যে, ভিসা প্রদানের জন্য সৌদী ফার্স্ট সেক্রেটারিকে তিনি জোর সুপারিশ জানাইতেছেন, যাহা প্রত্যাখ্যান করিবার মতো বিবেক হয়তো সৌদী সেক্রেটারির নাও থাকিতে পারে।
এদিকে হযরত নিশ্চিন- মনে সি’র মানসিকতায় তাঁহার স্বাভাবিক কাজ আল্লাহ, আল্লাহ যিকিরে লাগিয়া আছেন। এদিকে কি হইতেছে না হইতেছে তিনি কোনো ভ্রূক্ষেপই করিতেছিলেন না। অল্প সময়ের মধ্যে টেলিফোনে তাহাদের আলাপ শেষ হইয়া গেল। রিসিভারটা রাখিয়া দিয়া তিনি বলিলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, কথা হইয়া গিয়াছে। আপনারা আগামী দিন ৭ টার দিকে সৌদী দূতাবাসে চলিয়া যাইবেন। ইনশাআল্লাহ সব কয়টি ভিসাই দিয়া দিবেন।’ তাহার এই বাক্য আমাদের মনে এমন এক আনন্দের ঢেউ বহিয়া আনিল, যাহা হয়তো ভাষায় ব্যক্ত করা যাইবে না। ফার্স্ট সেক্রেটারি জনাব মুহিউদ্দীন ছাহেবের এই ইহসান চির স্মরণীয় হইয়া থাকিবে। অন-র দিয়া তাঁহাকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিলাম। আর সাথে সাথে আর একটি কথা উপলব্ধি করিলাম যে, এতদিন হযরতকে বাদ দেওয়া আর নিজেদেরকে উপযোগী মনে করিবার উচিৎ ছবকও পাইয়া গেলাম। কেবল এই ব্যাপারে কেন, বহু বার বহু পরীক্ষা পাইয়াছি যে, আসলে এই জগতের সকল সমস্যার সমাধান একমাত্র আল্লাহওয়ালাদের বরকতেই হইয়া থাকে। বহির্দৃষ্টিতে আমরা আমাদেরকে যতই যোগ্য মনে করিয়া থাকি না কেন প্রকৃতপক্ষে এইসব সেই আল্লাহপ্রেমিক বুযুর্গানে দ্বীনেরই বরকত ও দোআতেই হইয়া থাকে। মাঝে মাঝে এই ধরনের ২/১টি ঘটনার দ্বারা আল্লাহ পাক আমাদেরকে উপলব্ধি করিবার অবকাশ দান করিয়া থাকেন। যাহারা অন-রের দৃষ্টি হারাইয়া ফেলে নাই তাহাদের বুঝিতে দেরি হয় না। অবশ্য একশ্রেণীর লোক যাহারা চক্ষু থাকিবার পরও তাহা বুঁজিয়া রাখিতে অভ্যস-, তাহারা হয়তো কথাটির স্বীকৃতি নাও দিতে পারেন।
আমরা প্রথমত আল্লাহ পাকের অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করিলাম। দ্বিতীয় পর্যায়ে হযরতের আন-রিক শুকরিয়া জ্ঞাপন করিলাম আর জনাব মুহিউদ্দীন ছাহেবকে আন-রিক ধন্যবাদ জানাইয়া বাংলাদেশ দূতাবাস হইতে বিদায় গ্রহণ করিলাম। বিদায়কালে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ হযরতকে বিদায় সংবর্ধনা জ্ঞাপন করিলেন। দূতাবাস হইতে সোজা তাবলীগী মারকাযে চলিয়া আসিলাম। পরদিন সৌদি দূতাবাসে যাওয়ার প্রস’তি গ্রহণে লাগিয়া গেলাম। পরদিন যথাসময়ে তাবলীগী মারকায হইতে ভিসা সংক্রান- কাজে অভিজ্ঞ একজন লোক আমাদের সহযোগিতার জন্য দেওয়া হইল। তাহাকে লইয়া আমরা সৌদী দূতাবাসে চলিয়া গেলাম। সেখানে যথাসময়ে উপসি’ত হইলাম। প্রাথমিক ফরম ফিলাপ ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করিয়া পাসপোর্ট দাখিল করতঃ কিছু সময় বসিয়া অপেক্ষা করিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে কাজ সমাধা হইয়া কাগজপত্র হাতে আসিয়া গেল। সেখান হইতে বিমান অফিসে গিয়া পরদিনের জন্য টিকেট ওকে করা হইল। বিমানটি ছিল কুয়েত এয়ারওয়েজের। প্রথম হইতে আমাদের টিকেট এইভাবে ছিল : ঢাকা-দিল্লী আই এয়ারলাইন্স, দিল্লী-কুয়েত কুয়েত এয়ারওয়েজ, কুয়েত-জিদ্দা : সৌদী এয়ারলাইন্স। ভিসা, টিকেট ও অন্যান্য সবকিছু সমাধা করিবার পর আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করতঃ বাকি সময়টুকু হযরতের সাথে বিশেষ দোআ ও যিকিরের মাধ্যমে কাটাইতে চেষ্টা করিলাম।সেই দিনটি ছিল দিল্লীতে আমাদের অবস্থানরত সময়ের ১৩তম দিন। ভারতের ভিসা ছিল মোট ১৫ দিনের। আল্লাহ পাক ঠিক এমনি সময় সৌদী ভিসা মিলাইয়া দিলেন যে, উক্ত ১৫ দিনের মধ্যে ১ দিন হাতে থাকিতেই আমরা ভারত ত্যাগ করিতে সক্ষম হইলাম। নতুবা সৌদী ভিসা সমস্যার সাথে সাথে ভারত ভিসা বৃদ্ধির নতুন সমস্যারও সম্মুখীন হইতে হইত। যাহা হয়তো ‘কাটা ঘায়ে লবনে’র মতো হইয়া যাইত। এখানে উল্লেখ্য যে, দিল্লীতে অবস্থানকালে ফাকে ফাকে হযরত আমাদেরকে নিয়া কতিপয় ঐতিহাসিক স্থানেও গিয়াছেন। একদিন ভোর বেলায় হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রাহ.-এর কবরে যাওয়ার সুযোগ হইল এবং কিছু সময় হযরতের সঙ্গে থাকিয়া যিয়ারত, দোআ-ইসে-গফারের মাধ্যমে কাটাইবার সৌভাগ্য নছীব হইল। অপর একদিন হযরতের সাহচর্যে দিল্লী জামে মসজিদ যিয়ারতেরও সুযোগ হইল। এইখানে আর একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ভিসা সংক্রান- কাজের জন্য আমাদের ২/৩ জনকে দিল্লীতে রাখিয়া হযরত বাকি সাথীদের নিয়া দেওবন্দ, সাহারানপুর ও থানা ভবনের যিয়ারতে যাওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করিলেন। এই অবসর সময়টিকে ‘গনীমত’ মনে করিয়া উক্ত মুবারক সফরটিও সারিয়া লইতে মত প্রকাশ করিলে আমরা খুশি মনে সম্মতি প্রকাশ করিলাম। হযরত চলিয়া গেলেন এবং মাত্র ৪/৫ দিনের সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করতঃ দিল্লী প্রত্যাবর্তন করিলেন। ভিসা সংক্রান- কাজ না থাকিলে হযরতের উক্ত সফরের সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য আমাদেরও হইয়া যাইত এবং পূর্ণ ৪ মাসের সফরে এই কয়টি দিন হযরতের সাহচর্য হইতে বঞ্চিত থাকার নৌবত আসিত না, যা মনে পড়িলে এখনো কিছুটা দুঃখ বোধ করিয়া থাকি। (সবই আল্লাহর ইচ্ছা।)
যেহেতু দেওবন্দ থানাভবনের উক্ত সফরে লেখক সঙ্গে ছিল না তাই উক্ত ঝটিকা সফরের ঘটনাবলি এইখানে বিবৃত করা লেখকের পক্ষে সম্ভব হইল না। ফলে সফরনামার উক্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশটি বাদ পড়িয়া যাওয়ায় লেখক আন-রিক দুঃখ অনুভব করিতেছি। কারণ সফরটি সংক্ষিপ্ত হইলেও তাহা ছিল আধ্যাত্মিক পিতার কাছে পুত্রতুল্য মুরিদের সফর। পিতার মমতাময়ী ছায়া হইতে আদরের সন্তান দূরে থাকিয়া পুনঃ পিতার সোহাগভরা সাক্ষাতের আশায় যখন এক পা দুই পা করিয়া তাহার সান্নিধ্যে আগাইতে থাকে সেই মুহূর্তটি যে কত আনন্দঘন মুহূর্ত হইয়া থাকে তা একমাত্র সেই সন্তানই উপলব্ধি করিতে পারে। ঠিক এমনিভাবে হযরতের রূহানী পিতা, পীর ও মুরশিদ, হাকীমুল উম্মত-এর কবর অভিমুখে দীর্ঘ বিয়োগ-বেদনা সহিয়া সহিয়া সান্নিধ্য লাভের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যখন ক্রমাগত অগ্রসর হইতেছিলেন সেই মুহূর্তগুলোতে হযরতের মন-মানসিকতায় আনন্দের কি ঢেউ খেলিতেছিল, ভাব-ভঙ্গি, আর আকার-ইঙ্গিতে কোন প্রতিক্রিয়ার উদয় ঘটিয়াছিল তাহা একমাত্র তাহারাই উপলব্ধি করিতে সক্ষম হইয়াছেন যাহারা প্রত্যক্ষ দর্শনের সৌভাগ্য লাভ করিতে পারিয়াছিলেন। (বিশেষত থানাভবনের খানকাহে যখন উপসি’ত হইয়াছিলেন আর ছাত্রজীবনে মুর্শিদের ছোহবতে থাকাকালীন সময়ের সকল দৃশ্য চোখের সামনে ফুটিয়া উঠিতেছিল, পুরাতন সেই স্মৃতিগুলো যখন এক একটি করিয়া দৃশ্যমান হইতেছিল আরেকটু আগে বাড়িয়া একেবারে মুর্শিদের কবর সম্মুখে দাঁড়াইয়া যখন তাহাকে প্রাণঢালা সালাম জানাইতেছিলেন আর হয়তো মনে মনে মুর্শিদের কাছে কতই না সোহাগভরা আলাপ করিতেছিলেন, সেই আনন্দ, বেদনার সমন্বিত মুহূর্তগুলো হযরত কি ভাব-ভঙ্গিতে কাটাইতেছিলেন তা মুর্শিদ প্রেমের যাতনার যাহারা ভুক্তভোগী তাহারাই আন্দাজ করিতে সক্ষম হইবেন। কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে কভু আসি বিষে দংশেনি যারে।
তাই লেখকের পক্ষে সেই বিষয়ে কিছু কলমবন্দ করা আদৌ সম্ভব নহে বলিয়া উক্ত সফর সর্ম্পকে আলোচনার এখানে ইতি টানা হইল। যাক, এখন আবার পূর্বের আলোচনায় প্রত্যাবর্তন করিলাম। তাবলীগী মারকায হইতে সেখানকার সকল কর্তৃপক্ষ, বিশেষতঃ জামাতের বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা এনামুল হাসান ছাহেব-এর নিকট হইতে বিদায় গ্রহণ করতঃ হযরত আমাদের সবাইকে লইয়া বিমান বন্দর অভিমুখে রওয়ানা করিলেন। ভাড়াকৃত টেক্সিতে করিয়া অল্প সময়ে আমরা বিমানবন্দরে পৌঁছাইলাম। বন্দর সম্পর্কিত কার্যাবলি শেষ হওয়ার পর বিমানে আরোহণ করিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানটি আকাশে উড়িল। কয়েক ঘণ্টা আকাশ পথে ভ্রমণ করিলাম। হঠাৎ মাইক্রোফোনে আরবী ও ইংরেজি ভাষায় ঘোষণা করা হইল, কিছুক্ষণ পর আমরা দুবাই বিমান বন্দরে অবতরণ করিব। প্রস’তি নিতে আরম্ভ করিলাম। আর তখনই টের পাইলাম যে, বিমান ভূ-পৃষ্ঠের দিকে ছুটিয়া চলিতেছে। দেখিতে দেখিতে বিমানটি রানওয়েতে অবস’ান গ্রহণ করিয়া ফেলিল। দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। একে একে সবাই দুবাই বন্দরে প্রবেশ করিলাম।
প্রায় এক দেড় ঘণ্টাকাল সেখানে অবস্থান করিবার সুযোগ হইল। মরুভূমির মাঝে কাঁচঘেরা সুন্দর ও সুবিশাল বন্দরটির প্রায় সবটুকু ঘুরিয়া ঘুরিয়া দেখিলাম। বন্দর কেন্টিন হইতে কিছুটা চা-নাস্তা করিয়া নিলাম। বিরতির সময় শেষ হইয়া গেলে পুনরায় বিমানে আরোহণের ঘোষণা হইল। অনতিবিলম্বে হযরতকে নিয়া আরোহণ করিলাম। বেশ কিছু সময় আকাশপথে ভ্রমণের পর কুয়েত বিমান বন্দরে পৌঁছাইলাম। বিমান হইতে বন্দরে প্রবেশের পর ওযু-ইস্তেঞ্জা করিয়া অবসর গ্রহণ করতঃ যোহরের নামায আদায় করিলাম। নামায আদায়ের পর আমরা যাহারা পান খাওয়ায় অভ্যস- ছিলাম, দিল্লী হইতে সঙ্গে আনা পানের অবিশষ্ট ২/১ খিলি ভাগ-বাটোয়ারা করিয়া পান খাওয়ার মজলিস জমাইয়া বসিলাম। এমনি সময় বিমান বন্দরে কর্তব্যরত এক ব্যক্তি আমাদের এই দৃশ্য দেখিয়া কিছুটা হতবাক স্বরে বলিয়া উঠিলেন, আপনারা এ কী করিতেছেন! আপনারা রোযা রাখেন নাই? উত্তরে আমরা বলিলাম, এখন কীসের রোযা? তিনি বলিলেন, কেন, রমযানের রোযা। তার কথায় আমরাও হতবাক না হইয়া পারিলাম না। কারণ এই তো আজ সকাল বেলায় পবিত্র রমযান আগমনের সম্ভাব্য আরো ১ দিন হাতে রাখিয়া দিল্লী হইতে রওয়ানা হইলাম। ফলে সময়ের ব্যবধানজনিত কারণে সে রমযানের তিনটি রোযাই আমাদের কাযা হইয়া গেল।
কুয়েত বন্দরে আমাদের যে নির্ধারিত সময় ছিল তা প্রায় শেষ হইয়া আসিতেছিল। সেখান হইতে কুয়েত বিমানে জিদ্দা যাত্রার সময় যখন একেবারে কাঁটায় কাঁটায় তখন হঠাৎ ঘোষণা হইল যে, অনিবার্য কারণে এখনকার জিদ্দার ফ্লাইট বাতিল করা হইল। আজও নয়, কালও নয়; বরং তৃতীয় দিন সকাল ৮ টায় তাহা রওয়ানা হইবে, সেই ঘোষণাটি শুনিয়া বেশ কিছুটা বিব্রত না হইয়া পারিতেছিলাম না। এখন আমরা কোথায় যাই? প্রচুর পয়সা ব্যয় করিয়া হোটেলে থাকিবার মতো পরিসি’তিও তেমন আমাদের ছিল না। হযরতকে এই ঘোষণা সম্পর্কে অবগত করিলাম। হযরত যোহরের পর হইতে তখন পর্যন- বরাবর নামাযই পড়িতেছিলেন। হুজুর বলিলেন, চিন্তার কারণ নাই। আল্লাহ এক ব্যবস্থা অবশ্যই করিবেন।
সোর্সঃ https://www.alkawsar.com/bn/article/28