আকিদাহ(العقيدة) শব্দটি উকদাহ(العقدة) শব্দ হতে নির্গত। যার অর্থ বন্ধন বা গিঁঠ। সেমতে আকীদাহ অর্থ দৃঢ় বিশ্বাস, যার আলোকে মানুষের জীবন পরিচালিত হয়।
দৃঢ় বিশ্বাসী মানুষের সংজ্ঞায় আল্লাহ বলেছেন,
اٰمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا
“আমরা তার উপর ইমান এনেছি, সবকিছুই আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে”(সূরা আলে-ইমরান)
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
(আল হুজরাত – ১৫)
তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।
আলোচ্য আয়াতে কারীমাদ্বয়ে বর্ণিত ইমান শব্দের শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
পারিভাষিক অর্থ হলো, ‘জরুরিয়াতে দ্বীন’-সর্বজনবিদিত বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটি বিষয়কে বিশ্বাস করা। ‘জরুরিয়্যাতে দ্বীন’ বলা হয় সে সকল বিষয়কে, যা সন্দেহাতীতভাবে যুগপরম্পরায় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং উম্মতের সাধারণ দ্বীনদার শ্রেণীও যে সকল বিষয়কে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা বলে জানে।
আল্লামা কাশ্মিরি রহ. বলেন, “দ্বীনের সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রত্যেকটা মুসলিম, চাই আলিম কি অ–আলিম, প্রত্যেকের জন্যই জরুরিয়্যাতে দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ জরুরী”। এসব জ্ঞানের অন্যতম হলো তাওহীদ। এই তাওহীদই সমস্ত ইসলামি শিক্ষার মূল ভিত্তি। বলতে গেলে তাওহীদ হচ্ছে রা’সুল ইবাদাহ(সমস্ত ইবাদাতের মাথা)। আর কালিমা হলো তাওহীদ প্রকাশের মাধ্যম।
আরবি ব্যাকরণানুসারে কালিমা(كلمة) বলতে কথা, বাক্য বা conversation বোঝায়। কিন্তু শরিয়াগত পরিভাষায় কালিমা হচ্ছে সমস্ত তাগুতকে ছেড়ে আল্লাহর প্রতি ইমান আনয়নের একটা সিস্টেম বা পদ্ধতি।
তাওহীদ যেন আসমান পর্যন্ত প্রলম্বিত, মোটা কাণ্ডবিশিষ্ট এক ফলবতী বৃক্ষ, আর কালিমা যেন তার ভিত্তি, যার সুস্থির মূল মাটির গভীরে প্রোথিত, এবং বৃক্ষের নির্যাস যুগিয়ে চলে প্রতিনিয়ত। পবিত্র আর গভীর মর্ম সমৃদ্ধ একটি বাক্য হলো কালিমা। কালিমার ক্ষমতা অনেক অনেক বেশী।
কালিমা পুরো মানবজাতিকে দুটি স্পষ্ট ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। সেই এক আদম আলাইহিস সালাম থেকে আসা মানব বংশধারা এখন শুধু এই কালিমার মাধ্যমে মুসলিম আর কাফির নামক দুই ভাগে বিভক্ত। এ কালিমা তার নিজস্ব শক্তিতে আপনার পাশে অবস্থিত আপনার রক্তধারাকে পর করে আপনার থেকে লক্ষমাইল দূরে থাকা এক নিগ্রো কৃষ্ণাঙ্গকে আপনার নিজের শরীরের অংশ বানিয়ে দিতে পারে। এই কালিমা শুধু দুনিয়াতেই কাজ করে না। আসমানেও রয়েছে এর প্রভাব। শুধু এই কালিমা পড়ার মাধ্যমে আপনার থেকে সহস্র বিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থিত আসমানের মালিক তার সুশৃঙ্খল মালায়িকার বাহিনী নিয়ে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে যাবে।
ইতিহাসের দিকে তাকালেও এ সত্য প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। এই কালিমার জন্যই আল্লাহ বদরে ৩১৩ জন অস্ত্রশস্ত্রবিহীন, প্রস্তুতিবিহীন কিছু নিরীহ, অপরিচিত মানুষকে সমৃদ্ধ, শক্তিশালী আর বিখ্যাত আরবনেতাদের বিরুদ্ধে হাজারে হাজারে ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করেছেন। খন্দকের সেই ভয়াল আর শীতলতম রাতে দুর্বল আর উৎকণ্ঠিত গুটিকয়েক মানুষকে গোটা আরবের বিরুদ্ধে ঝড়-ঝঞ্ঝা, ঘূর্ণি বায়ু আর সশস্ত্র মালায়িকার বাহিনী পাঠিয়ে সাহায্য করেছেন।
এই কালিমার জন্যই খলীফা মুতাসিম ছুটে গিয়েছিলেন বাগদাদ থেকে বহু দূরে সেই রোমান সাম্রাজ্যে নিজের মুসলিম বোনের জবাবে লাব্বাইক বলতে। পেছনে ফেলে গিয়েছিলেন নিজের সমৃদ্ধ রাজধানী, সিংহাসন সব। শুধু এই কালিমার জন্য মাত্র ১৭ বছর বয়সে মুহাম্মাদ বিন কাসিম সেই সূদুর আরব থেকে ছুটে এসেছিলেন এই উপমহাদেশে। কেনো এসেছিলেন? কীভাবে এসেছিলেন? এসেছিলেন নিজের মুসলিম বোনকে রক্ষা করতে।
হ্যা এই কালিমার মূল্য অনেক। কালিমা মানেই শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ না। এর মধ্যে লুকায়িত রয়েছে গভীর এক মর্মবোধ, যা মুহূর্তের মধ্যেই জাহেলকে বিশ্বের চালকের আসনে বসাতে পারে।
এই কালিমার ক্ষমতা শুধু এটুকু জানা থাকলেও চলে যে, খাঁটি দিলে বলা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ একজন মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। মুআজ রা.-এর হাদিসে, রাসুল ﷺ বলেছিলেন—“ইয়ামানবাসীকে বলো, জান্নাতের চাবিকাঠি হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাক্ষ্যপ্রদান”।
এখন আপনি কি ভাবছেন জান্নাত পেয়ে গেছেন? নাহ, আল্লাহর সেই কথাটা মনে নেই? “তবে কি আল্লাহ তোমাদের পরীক্ষা না করেই ছেড়ে দেবেন”? তো আল্লাহ কি এমনিতেই আমাদেরকে জান্নাত দিয়ে দিবেন?
আল্লাহর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চাইলে আপনার কালিমাকে আল্লাহর দেয়া প্রত্যেকটা শর্ত আদায় করতে হবে। শাইখ ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ রহ.-এর ভাষায়, “কালিমা যদি হয় জান্নাতের চাবি, তাহলে এসব শর্ত হলো সেই চাবির দাঁত। দাঁতবিহীন চাবি যেমন অগ্রহণযোগ্য তেমনি শর্তবিহীন কালিমাও অগ্রহণযোগ্য”।
এই শর্ত আদায় করতে চাইলে আপনাকে কালিমার শর্তাবলী ভালো করে জানতে হবে। আমাদের আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা কালিমার শর্তাবলী সম্পর্কেই কিছু জানার চেষ্টা করবো।
শাইখ হাফেয হিকমী রহ. ‘সুল্লামুল উসূল’ গ্রন্থে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাতটি শর্ত উল্লেখ করেছেন। সাতটি শর্ত বিস্তারিতভাবে নিচে তুলে ধরা হলো।
১. সুনিশ্চিত ইলম
আমরা যা বিশ্বাস করবো সে সম্পর্কে আমাদের ইলম থাকতে হবে। নতুবা আমাদের বিশ্বাস হবে তাসের ঘরের ন্যায়, যা মূহুর্তেই ভেঙে যায়। কালিমার ব্যাপারে সুনিশ্চিত ইলমের মধ্যে পড়ে আমার কালিমা আমার কাছে কী চায়? এই কালিমার অর্থ, স্বীকারোক্তি ইত্যাদি। এমনকি এই ইলমের মধ্যে পড়ে এটাও যে, কালিমা কী অস্বীকার করছে, কাকে অস্বীকার করছে, কালিমা কাকে বন্ধু বলছে, কাকে শত্রু বলছে সবকিছু সম্পর্কে জানা। আল্লাহর ভাষায়— فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ
অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। (সুরা মুহাম্মাদ, ১৯)।
অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন তাওহিদকে জানতে। উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে এমতাবস্থায় মারা গেল যে, সে জানে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (সহীহ মুসলিম, ২৮১)
এই কালিমার অর্থ কী? আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নাই, মুহাম্মাদ ﷺ তার রাসুল। এই? এটা তো অমুসলিমরাও জানে। তাহলে অর্থ কী?
কালিমার অর্থ হলো কালিমার সেই অন্তর্নিহিত শিক্ষা, যার প্রতি রাসুলুল্লাহ ﷺ দাওয়াত দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন, জিহাদ করেছেন। উল্লেখ্য, আল্লাহকে তখনকার কাফিররাও বিশ্বাস করতো, যার প্রমাণ কুরআনের অসংখ্য আয়াত। বস্তুত, কালিমার মধ্যগত অন্তর্নিহিত শিক্ষাই কালিমার মূল শিক্ষা। উল্লেখ্য, কালিমার ব্যাপারে সুনিশ্চিত ইলমের কাতারে এটাও একটা যে কালিমার শর্তগুলির ব্যাপারে জানবে এবং সাথে সাথে শর্তের বিপরীত দিকেও জানবে, যা তার জ্ঞানকে পূর্ণতা দান করবে।
২। সুনিশ্চিত বিশ্বাস বা ইয়াকীন
দ্বীনের বিষয় আমরা যা ইলম অর্জন করেছি, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। সংশয়-সন্দেহ ছাড়াই বিশ্বাস করতে হবে। সংশয়পূর্ণ ইলমের তো কোনো মূল্যই নেই আসলে।
ধরুন, আপনি জানলেন আল্লাহ এক। তাই তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলেন। আপনার জানা আল্লাহর এককত্বকেই আপনি সুনিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করলেন। বিনা দ্বিধা-সংশয়ে আপনার এই বিশ্বাস তখন ইমানের দ্বিতীয় শর্ত পূরণ করবে।
কিংবা আপনি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে খাতামুন্নাবিয়্যিন বলে জানলেন এবং এব্যাপারে সুনিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করলেন। এভাবে আপনার প্রাপ্ত ইলমকে সুনিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করলেন যে, অন্য কারো কোনো কথাই আপনার বিশ্বাসকে টলাতে পারবে না। যেমনটা ছিল সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের বিশ্বাস। শত বাধা-বিপত্তি, গোটা দুনিয়ার শত্রুতা, রাজকন্যা সহ রাজ্যের লোভ সব তারা পায়ে মাড়িয়েছেন। কুসুমাস্তীর্ণ রাস্তা বাদ দিয়ে শুধু এই বিশ্বাসকে বাঁচানোর জন্য তারা জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ কিংবা টগবগে তেলের কড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এটাই হলো এই ধাপের রহস্য। আর এর বিনিময় জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, এ দু’টি বাক্যে সন্দেহ পোষণ ব্যতীত কোনো বান্দা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে না, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (সহীহ মুসলিম, ২৯)
৩। কালিমার মর্ম কবুল করা
এটি সম্পূর্ণ বাতিনি বিষয়। কালিমার অন্তর্নিহিত মর্ম মাত্র ৩টি বিষয় দ্বারা বোঝানো হয়। যথা :
(i)তাওহীদ আর–রুবুবিয়্যাহ(توحيد الربوبية))
(ii)তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত(توحيد الأسماء والصفات)
(iii)তাওহীদ আল–উলুহিয়্যাহ(توحيد الألوهية)
ওহীদ আর–রুবুবিয়্যাহ বলতে স্রষ্টা ও পালনকর্তা হিসাবে আল্লাহর এককত্বকে বোঝায়। এর অর্থ হলো, পালনকর্তা, স্রষ্টা, আরোগ্যদাতা, মৃত্যুদাতা, রিজিকদাতা হিসেবে একমাত্র আল্লাহকে বিশ্বাস করা। কিছুসংখ্যক নাস্তিক ছাড়া কেউই আল্লাহর রুবুবিয়্যাতে অস্বীকার করে না। তৎকালীন মুশরিক আরবরাও আল্লাহর রুবুবিয়্যাতে বিশ্বাস করত(সুরা লুকমান)। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাবার নাম সেই জাহেলি যুগেই রাখা হয়েছিল আব্দুল্লাহ।
সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ তাওহীদ আর রুবুবিয়্যাহ এর পরিচয় খুব সুন্দরভাবে বর্ণণা করেছেন।
“বলুন, হে রাজাধিরাজ আল্লাহ, আপনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার নিকট হতে ইচ্ছা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন। যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন। সকল কল্যাণ তো আপনারই হাতে। নিশ্চয়ই আপনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। আপনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। আর মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন। আর যাকে চান বিনা হিসাবে রিজিক দান করেন। ” (সুরা আলি ইমরান : ২৬-২৭)
তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত হচ্ছে এরপরের ধাপ। তাওহিদ আল আসমা ওয়াস সিফাতের পদ্ধতি দুইটি।
যথা :
(১) কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত প্রত্যেক আসমা ও সিফাত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য বিশ্বাস ও স্বীকার করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى
‘আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। উত্তম সব নাম তো তাঁরই। ’ (সুরা তহা : ৮)
(২) এর সাদৃশ্যতাকে অস্বীকার করা অর্থাৎ, অন্য যে কারো জন্য আল্লাহর সিফাতগুলির গ্রহণযোগ্যতা অস্বীকার করা। বরং বান্দাগণ বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তাআলা এমন মহান যে : لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ “ “তার মতো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। ” [সুরা আশ-শুরা : ১১]
মোটকথা কুরআন-সুন্নাহতে বর্ণিত আল্লাহর সকল নাম, গুণাবলীকে কোনো ধরনের তাহরিফ (বিকৃতিসাধন), তাতিল (নিষ্কৃয়করণ), তাকয়িফ (ধরন নির্ধারণ) ও তামসিল (সাদৃশ্য প্রদান) ব্যতীত ইমান আনাই তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত।
তৃতীয় ধাপ হচ্ছে তাওহীদ আল উলুহিয়্যাত। তাওহীদের এই ধাপটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ পৃথিবীতে যত নবী রাসুল পাঠিয়েছেন সবাইকে এই ধাপের দাওয়াত সহ পাঠিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলত আরব মুশরিকদের এই তাওহীদ আল উলুহিয়্যাহই সংশোধন করতে চেয়েছেন। এর অর্থ হচ্ছে ইবাদাত, উপাসনা ও আনুগত্যের তাওহীদ।
তাওহীদের এ ধাপকে সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায় শুধু আল্লাহকেই ইলাহ মেনে নেয়া। ইলাহ মেনে নেয়া মানে সব কিছু মেনে নেয়া। আল্লাহর ৯৯ টি নাম বা সিফাত রয়েছে, সব গুলোই মেনে নেয়া।
তাওহীদ আল উলুহিয়্যারই আরেক নাম হলো তাওহীদ আল হাকিমিয়্যাহ। যার অর্থ হলো বিধানদাতা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা।
তাওহীদ আল উলুহিয়্যাহর বিপরীতে আছে তাগুত। কালিমার উদ্দেশ্যই তাগুতকে মিটিয়ে দেয়া।
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ ۚ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ
(আন নাহল – ৩৬)
আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কীরূপ পরিণতি হয়েছে।
তাওহীদের এই স্তরকে কালিমার ব্যাখ্যা থেকেই বোঝার চেষ্টা করি। কালিমার মূলত দুইটি অংশ। যা কালিমার রুকন বলে পরিচিত।
প্রথমত লা ইলাহা বা অস্বীকার এবং অতপর ইল্লাল্লাহ বা স্বীকার। এই স্বীকার ও অস্বীকার সমন্বয়েই আমাদের তাওহিদে বিশ্বাস গ্রহণযোগ্য হয়।
(i)লা ইলাহা অর্থ হলো কোনো উপাস্য নেই, কোনো বিধানদাতা নেই, কোনো পালনকর্তা নেই, কোনো হুকুমকর্তা নেই। কালিমার এই রুকন মূলত সমস্ত তাগুতকে বর্জন করার জন্য।
তাগুতের সংজ্ঞা এবং তাগুতকে মানুষ স্বীকার করে কিভাবে, সেটা না জানলে অস্বীকার ও অসম্ভব হবে।
আল্লামা ইবনুল ক্বইয়্যিম রহ.-এর ভাষ্যমতে, “তাগুত হলো উপাস্য, অনুসরণীয় কিংবা মান্যবরদের মধ্য থেকে যার ব্যাপারে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করা হয় এবং সে এর উপর রাজি থাকে।
সুতরাং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে তাগুত ঐ ব্যক্তি, লোকেরা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিপরীতে যার কাছে বিচার প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলাকে ছেড়ে যার উপাসনা করে, অথবা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিধানের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ না করে তাকে অনুসরণ করে বা এমন বিষয়ে আনুগত্য করে যে বিষয়ে তারা জানে না যে, এটাই আল্লাহর আনুগত্য”।
আর তাগুতকে বিশ্বাসের বা তাগুতের উপাসনার উপায় হলো :
➤আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো তন্ত্র, মন্ত্র, মতবাদ বা ইজমকে ভালো বা সাধারণভাবে বিশ্বাস করা।
➤সেই মতবাদ, মতাদর্শের কাছে বা তার কর্তাব্যাক্তিদের কাছে বিচার প্রার্থী হওয়া।
➤সেই মতবাদ, মতাদর্শ, তন্ত্র, মন্ত্র, ইজমের প্রচার প্রসার করা।
➤সেই মতবাদ, মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করা।
এগুলো সবগুলো কুফর। যেকোন একটা বৈশিষ্ট্যও যদি কোনো বিষয়ের মধ্যে পাওয়া যায়, তাহলে সেই বিষয় তাগুতে পরিণত হবে। আর সেই বিষয়কে বিশ্বাস করা কুফরি হবে।
(ii)এরপরের ধাপে আসে ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহর প্রতি ইমান আনয়নের ধাপ। ইল্লাল্লাহ অর্থ হলো কেবলই আল্লাহ ছাড়া।
এভাবে দুইটি অংশ মিলিয়ে আমাদের পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস আনয়ন করতে হবে। দুই রুকন মিলে কালিমার মূল অর্থ দাড়ায় কোনো ইলাহ নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো পালনকর্তা নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো ত্রাণকর্তা নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো রিযকদাতা নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো হুকুমকর্তা নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো বিধানদাতা নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো ভালবাসার পাত্র নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো মহান সত্ত্বা নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো দু’আ কবুলকারী নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো সাহায্যকারী নেই আল্লাহ ছাড়া, কোনো মালিক ও অধিপতি নেই আল্লাহ ছাড়া……। মক্কার কাফিররা জানত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করার অর্থ হবে—লা মাহবুবা ইল্লাল্লাহ, লা মাক্বসুদা ইল্লাল্লাহ, লা মাতলুবা ইল্লাল্লাহ। অর্থাৎ ভালোবাসার পাত্র, চরম ও চূড়ান্ত লক্ষ্য, ও প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই। এই অর্থ তারা ঠিক ঠিক বুঝত তাই কাফিররা রাগে ক্ষোভে ফুঁসে উঠত, যুদ্ধ ঘোষণা করত আর মুমিনরা আল্লাহর নিকট সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে মুসলিম বলে বিবেচিত হতো।
রিপূর্ণ বিশ্বাসের জন্য তাই প্রথমে তাগুতকে অস্বীকার করে নিজের অন্তরকে পরিষ্কার করতে হবে। অতপর সেই কলব বা অন্তরে লা শারিক আল্লাহকে রাখতে হবে। অর্থাৎ সবকিছুকে অস্বীকার করে অন্তর কেবল আল্লাহর জন্য উপযুক্ত করতে হবে। তারপর দাসত্ব কেবলই আল্লাহর।
ঠিক যেমন ধরুন, বিষ রাখা পাত্র ব্যবহারযোগ্য করতে চাইলে কী করবেন? প্রথমে বিষ ফেলে দিয়ে, ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে তারপর তা ব্যবহার করবেন। তদ্রুপ বহু শরীকের বিষাক্রান্ত কলবে আল্লাহর বিশ্বাস রাখতে চাইলে প্রথমে লা ইলাহা সাবান দ্বারা ধুয়ে পবিত্র করে তারপর আল্লাহর বিশ্বাস বসাতে হবে।
৪। আত্মসমর্পণ করা
কালিমার মর্ম কবুল করা যেমন বাতিনি বিষয়, তদ্রুপ আত্মসমর্পণ হলো জাহেরি বিষয়। ইমানের ৩টি দিক রয়েছে।
➤মুখে স্বীকার করা, কুফরে ইনাদার বিপরীত।
➤অন্তরে বিশ্বাস করা, কুফরে নিফাকের বিপরীত।
➤বাহ্যিকভাবে তা বাস্তবায়ন করা, অনেকটা কুফরে জাহদ এর বিপরীত।
উল্লেখিত প্রত্যেকটি দিকই অবশ্য করণীয়। শুধু মুখে বলে দিলাম আর ইমান আনয়নকারী হয়ে গেলাম এমনটা বিশ্বাস করা স্রেফ বোকামী। দিল ও যবানের একাত্মতাই ইমান। একটি ছাড়া আরেকটি স্পষ্টত নেফাকের চিহ্ন। যেমন আল্লাহ কুরআনে বলছেন, إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ قَالُوا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ(আল মুনাফিকূন, ১)
মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।
তাই, কালিমার মর্ম কবুল করার জন্য আপনার দিল ও যবানকে একসারিতে রাখতে হবে। অতপর সেই বিশ্বাসক আপনাকে বাহ্যিক বেশভূষায়ও প্রকাশ করতে হবে। এর অন্তর্গত হচ্ছে ইসলামি শিআর পালন করা, ফরজ ইবাদাতগুলি পালন করা, কালিমার শর্তগুলিকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা ইত্যাদি।
যেমন, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. ইবাদতের সংজ্ঞায় বলেন :
الْعِبَادَةُ هِيَ اسْمٌ جَامِعٌ لِكُلِّ مَا يُحِبُّهُ اللَّهُ وَيَرْضَاهُ: مِنْ الْأَقْوَالِ وَالْأَعْمَالِ الْبَاطِنَةِ وَالظَّاهِرَةِ
‘আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় সকল অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কথা ও কাজের সমষ্টির নাম হলো ইবাদত। ’ (মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়া)
৫। নিজের দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদি হওয়া
আপনি যে মুসলমান, ইসলামের কালিমা কবুল করেছেন এসব দাবীর পক্ষে আপনাকে সত্যবাদী হতে হবে। আমরা নিজেদের দাবীর উপর কতটুকু সত্য, আল্লাহ এটা পরীক্ষা করে যাচাই করার জন্যই আপনাকে আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
الم. أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُون.َ
وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ
(আল আনকাবুত – ১, ২, ৩)
আলিফ-লাম-মীম। মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।
কালিমার দাবি ও অর্থের দিকে খেয়াল রেখে নিজের দাবীতে সত্যবাদী হতে হবে। এর স্বরুপ হলো কালিমার প্রতি আমল করা। কারো অগোচরে হলেও আপনাকে এই কালিমার বিরোধিতা করা যাবে না। যেমনটা ছিলেন সাহাবা রাদিআল্লাহ আনহুম।
৬। নিষ্ঠাপূর্ণ বিশ্বাস
ইখলাস বলতে একনিষ্ঠভাবে কোনোকিছুর প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস। কোনোরকম ভয়, জোরাজুরি, চাপাচাপি সবকিছু ছাড়াই কালিমার প্রতি ইমান আনতে হবে। ধরুন আপনি কোনো মুসলিম ভূখণ্ডে বাস করেন। আপনার ইচ্ছা করে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে, কিন্তু মুসলিম সরকারের ভয়ে তা করতে পারছেন না। তাহলে আপনার বিশ্বাস ইখলাস পূর্ণ হবে না। সুরা বায়্যিনাহতে (৫) আল্লাহ বলেন,
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন।
এক্ষেত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসটিও প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে সে ব্যক্তি, যে নিজের অন্তরের অন্তস্থল বা মন থেকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে”। (সহীহ বুখারী)
৭। ভালোবাসা
ইমানের সপ্তম স্তর হলো, আপনার ভালোবাসাকে কালিমার মুখাপেক্ষী করা। কালিমা যাকে বন্ধু বলছে তাকে বন্ধু বলা। যদিও ব্যাক্তিগতভাবে তাকে শত্রু মনে হয়। আর আদতে বন্ধু লাগলেও কালিমার জন্য তাকে শত্রু ভাবা। আল্লাহ বলছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ
হে মুমিনগণ, তোমাদের কোন কোন স্ত্রী ও সন্তান–সন্ততি তোমাদের দুশমন। অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাক। (আত তাগাবুন – ১৪)
কালিমার এই সপ্তম ধাপ বর্তমানে সবচেয়ে মজলুম একটি ধাপ। এর অপর নাম হলো আল ওয়ালা ওয়াল বারা। সহজ ভাষায় আল-হুব্বু ফিল্লাহ আর আল-হুব্বু ফিদ্দীন।
আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা এর বিশ্বাস আজকে বিলুপ্তপ্রায়। কিন্তু আল্লাহ ধমক দিয়ে বলছেন, أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ تَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِم مَّا هُم مِّنكُمْ وَلَا مِنْهُمْ وَيَحْلِفُونَ عَلَى الْكَذِبِ وَهُمْ يَعْلَمُونَ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا ۖ إِنَّهُمْ سَاءَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
(আল মুজাদালাহ্ – ১৪, ১৫)
আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি, যারা আল্লাহর গযবে নিপতিত সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব করে? তারা মুসলমানদের দলভুক্ত নয় এবং তাদেরও দলভূক্ত নয়। তারা জেনেশুনে মিথ্যা বিষয়ে শপথ করে। আল্লাহ তাদের জন্যে কঠোর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। নিশ্চয় তারা যা করে, খুবই মন্দ।
রাসুলুল্লাহ সাঃ ﷺ বলেছেন “ইমানের সবচেয়ে দৃঢ় রজ্জু হলো আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং তারই জন্য বিদ্বেষ পোষণ করা”। (মুসনাদে আহমাদ)
Facebook Comments